বাংলাদেশে বিজ্ঞানের পথিকৃত রসায়নবিদ, গ্রন্থকার এবং শিক্ষাবিদ ড.মুহাম্মদ কুদরত-এ- খুদা। তিনি ছিলেন বিজ্ঞান বিমুখ বাঙালি মুসলমান সমাজের বিজ্ঞানীদের অন্যতম। বিজ্ঞান চর্চায় বাংলা ভাষা প্রবর্তনের উদ্যোগেও তিনি ছিলেন পথিকৃৎ। আমরা চা তৈরি করার পর যে চা-পাতা ফেলে দেই ,তা থেকে তিনি ‘ক্যাফিন’ নামক একটা ঔষধ তৈরি করেছিলেন। ঘাস থেকে সুগন্ধী তেল, কাগজ এমনকি কৃত্রিম রেশমও তৈরি করেছিলেন। পারটেক্সে’র প্রবক্তাও ছিলেন কুদরত-এ খুদা। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিক্ষাকমিশন রিপোর্ট প্রণীত হয়। বাংলাদেশের এ কৃতি সন্তান ১৯০০ সালের আজকের দিনে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহণ করেন। আজ ১১৩তম জন্মদিনে তাঁকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি।
(পরিবারের সাথে ড.মুহম্মদ কুদরত-এ-খুদা)
কুদরাত-এ-খুদা ১৯০০ সালের ১ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের মাড়গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা খোন্দকার আব্দুল মুকিদ, মাতা ফাসিহা খাতুন। ড. কুদরাত-এ-খুদার শিক্ষাজীবন শুরু হয় মাড়গ্রাম এম.ই. স্কুলে। পরবর্তীতে তিনি চলে আসেন কলিকাতা উডবার্ন এম.ই. স্কুলে এবং কলিকাতা মাদ্রাসায়। কলিকাতা মাদ্রাসা থেকে তিনি ১৯১৮ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন। তারপর তিনি ভর্তি হন বিখ্যাত প্রেসিডেন্সি কলেজে। সেখান থেকেই তিনি ১৯২৫ সালে রসায়নে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে এম.এস.সি পাশ করেন। পাশ করার পর তিনি উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড পাড়ি জমান। ১৯২৯ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় হতে Stainless Configuration of Multiplanmet Ring বিষয়ে গবেষণার জন্য তিনি রসায়নে ডি.এসসি. ডিগ্রী লাভ করেন। দেশে ফিরে এসে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। বাংলাদেশের বিজ্ঞানচর্চা, বিজ্ঞান গবেষণার ইতিহাসে ড. কুদরত-এ-খুদা চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। বিংশ শতাব্দীতে তিনি ছিলেন বিশ্বের খ্যাতনামা বিজ্ঞানীদের একজন। বিজ্ঞানকে সাধারণ মানুষের কাজে লাগানোর জন্য তাঁর প্রচেষ্টা ছিল নিরন্তর। পানি ও সৌরশক্তির মতোই আমাদের চারপাশের বিশাল উদ্ভিদজগৎ একটি বড় সম্পদ। তার প্রতি দৃষ্টি দিয়েছিলেন তিনি এবং পাটকাঠি দিয়ে পারটেঙ্ তৈরি করেছিলেন। ঢেউটিনের মতো দেখতে হাল্কা এক রকমের পাতও তিনি তৈরি করেছিলেন পাটকাঠি দিয়ে। আমরা চা তৈরি করার পর যে আধাসেদ্ধ চা পাতা ফেলে দিই তা থেকে তিনি ক্যাফেইন নামে একটা দামি ওষুধ তৈরি করেছিলেন। ঘাস থেকে তিনি সুগন্ধি তেল, লেখার কাগজ, কৃত্রিম রেশমও তৈরি করেছিলেন। বিজ্ঞানসংক্রান্ত গবেষণায় তাঁর আবিষ্কারের বহু পেটেন্ট আছে। এই গবেষণাগুলো হয়েছে দেশজ উপাদান নিয়ে। ১৮টি আবিষ্কারের যে পেটেন্ট রয়েছে তার মধ্যে ৯টি পাটসংক্রান্ত। আখের রস ও গুড় থেকে ভিনেগার, পাটকাঠি থেকে কাগজ তাঁরই আবিষ্কার। বর্তমানে যারা বাংলাদেশকে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এগিয়ে নিতে চান তারা সবাই এই মহান মানুষটিকে স্মরণ করেন সশ্রদ্ধচিত্তে।
কর্মজীবনে ১৯৩১ সালে তিনি কলকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৩ সালে চাকুরি থেকে অবসর নিয়ে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পরে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা পুনর্গঠনের জন্য যে শিক্ষাকমিশন গঠন করা হয় ড. কুদরাত-এ-খুদা তার সভাপতি নির্বাচিত হন। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিক্ষাকমিশন রিপোর্ট প্রণীত হয়। ১৯৭২ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত কাজ করে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট শেষ করেন। তাঁর নাম অনুসারে পরবর্তীকালে রিপোর্টটির নাম রাখা হয় 'ড. কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষাকমিশন রিপোর্ট'। দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন বিখ্যাত গবেষণামূলক পত্রিকায় তাঁর রচিত প্রায় ১০২টি গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
কর্মক্ষেত্রে তার অসামান্য অবদানের জন্য তিনি তমঘা-ই-পাকিস্তান, সিতারা-ই-ইমতিয়াজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। ১৯৭৬ সালে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন। এছাড়াও ১৯৮৪ স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার((মরণোত্তর) লা্ভ করেন।
বাংলাদেশের এ কৃতি সন্তান ১৯৭৭ সালের ৩ নভেম্বর ৭৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। আজ তাঁর ১১৩তম জন্মদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়।
Comments (4)
বই আলোচনা ভালো লাগলো। গল্পগ্রন্থ 'পাকিস্তান' এ স্থান পাওয়া নয়টি গল্পেরই বিষয়বস্তু সংক্ষেপে তুলে ধরেছেন। 'পাকিস্তান' গল্পের সংক্ষিপ্ত আলোচনাটা পড়ে মনে হল লেখক পাকিস্তানকে নিয়ে নিজের মিশ্র অনুভূতির কথা প্রকাশ করেছেন। গল্পের কিছু কিছু বক্তব্য এই সময়ের জন্য বেশ সাহসী উচ্চারণ। তবে আমি তার পক্ষে নই। লেখক মশিউল আলম প্রকারন্তরে কিছুটা হলেও পাকিস্তানের প্রতি মনে হয় সহানুভূতি দেখিয়েছেন। বই আলোচনায় বইটির একটা বর্ণনা থাকা উচিৎ ছিল। যেমন কে প্রচ্ছদ করেছেন, লেখক সত্ত্ব কার, পাবলিশার্স কে, মূল্য কত ইত্যাদি। সাথে লেখকেরও একটা সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরা যেত। ধন্যবাদ শেরিফ।
ঠিকই বলেছেন। ইনফরমেশনগুলো দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু আসলে, এই রিভিউটা অনেক আগে করা। পোস্ট করার সময় বইটা খুজলাম। পেলাম না। পেলে অবশ্যই দিয়ে দিতাম।