Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

বাংলাদেশের প্রথিতযশা ও জনপ্রিয় আলোকচিত্র শিল্পী রশীদ তালুকদারের ৭৪তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা


মানুষের চোখের তারায় হরহামেশাই বন্দি হয় নানান রকম দৃশ্য। আবার তা মুছেও যায়। তবে এমন কিছু দৃশ্য বা প্রিয় মানুষের মুখ আছে যা ব্যক্তির হৃদয়কে আলোড়িত করে। ক্যামেরার পেছনে থেকে যে মানুষটি দিনের পর দিন জাতির জন্য মানুষের জন্য কাজ করে চলেছেন নিরবধি তিনি বাংলাদেশের প্রথিতযশা ও জনপ্রিয় আলোকচিত্রশিল্পী রশীদ তালুকদার

রশীদ তালুকদারের ডাক নাম কাঞ্চন এবং সহকর্মীদের কাছে তিনি 'রশীদ ভাই' নামে পরিচিত ছিলেন। যৌবনে রাজশাহীতে পরিচিত ছিলেন 'প্রিন্স রশীদ' নামে। ক্যামেরার ফ্রেমে তিনি বন্দি করেছেন অনেক ইতিহাস, বাস্তবতা, মানবতা। ছবি দিয়ে তিনি প্রকাশ করেছেন অনেক সত্যকে। তাঁর ছবি বলেছে অনেক নির্যাতিতদের অব্যক্ত কথা। বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় এই আলোকচিত্র শিল্পীর আজ ৭৪তম জন্মদিন। জন্মদিনে তাঁর জন্য ফুলেল শুভেচ্ছা।

(তরুণ বয়সে রশীদ তালুকদার)
আলোকচিত্র শিল্পী রশীদ তালুকদার ১৯৩৯ সালের ২৪শে অক্টোবর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের চব্বিশ পরগণায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আবদুল করিম তালুকদার ছিলেন চাকুরীজীবি এবং মা রহিমা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। বাবা স্টেশন মাস্টার হওয়ায় পৈত্রিক ভিটা মাদারীপুরের কালকীনি থানার দক্ষিণ রমজানপুর গ্রামের পরিবর্তে তাঁর জন্ম হয় চব্বিশ পরগণায়। বাবার চাকুরীগত কারণে তিনি বিভিন্ন জায়গায় লেখাপড়া করতে বাধ্য হন। তিনি প্রাথমিক শিক্ষালাভ করেন 'এম ই প্রাথমিক বিদ্যালয়', 'টাওয়ার এম ই প্রাথমিক বিদ্যালয়' এবং 'মহসীন উচ্চ বিদ্যালয়ের' সাথে সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশোনা করেন - রাজশাহীর 'লোকনাথ হাই স্কুল', 'কক্সবাজার হাই স্কুল' এবং 'রাজা হাই স্কুলে'। ১৯৫৪ সালে তিনি কঙ্বাজার হাই স্কুল থেকে মেট্রিক পরীক্ষা দেন কিন্তু তিনি অকৃতকার্য হন। এর পরে তিনি আবার সিলেটের রাজা হাই স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে তিনি ঐ স্কুল থেকে মেট্রিক পরীক্ষা দেন। শুধু অংকে পাশ মার্কস না থাকায় তিনি কম্পারমেন্টাল চান্স্ পান। এরপর শুধু অংক পরীক্ষা দিয়ে তিনি তৃতীয় বিভাগ নিয়ে মেট্রিক পাশ করেন। মেট্রিক পাশের পর সিলেট থেকে পালিয়ে, কাউকে কিছু না বলে তিনি খুলনায় পরিবারের সাথে মিলিত হন। ১৯৫৭ সালে তাঁর বাবা আবার বদলী হয়ে খুলনা থেকে রাজশাহী চলে আসেন।

(২১শে ফেব্রুয়ারীতে শহীদ মিনারের সামনে রশীদ তালুকদার)
পড়াশুনার পাট চুকিয়ে পেশা হিসেবে ফটো সাংবাদিকতাকে বেছে নিয়েছিলেন রশীদ তালুকদার। কর্মজী্বনে ১৯৫৯ সালে ফটো টেকনিশিয়ান হিসেবে পিআইডি বা প্রেস ইনফরমেশন ডিপার্টমেন্টে ৮০ টাকা বেতনে যোগ দেন। এর পর ১৯৬২ সালে দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় ফটো সাংবাদিক বা আলোকচিত্রী হিসেবে যোগদান করেন। ফটো সাংবাদিক হিসেবে তাঁকে জীবনের প্রথম অ্যাসাইনমেন্টটি দিয়েছিলেন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবি শহীদুল্লাহ কায়সার। ১৯৭১ সালে পেশাগত জীবন থেকে কিছুটা দূরে সরে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে মিশে যান তিনি। নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করতে শুরু করেন বীরসেনানীদেরকে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে রশীদ তালুকদার দৈনিক সংবাদ থেকে চলে এসে যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায়। সেখানে তাঁর সহকর্মী হিসেবে ছিলেন ইত্তেফাকের সাবেক সম্পাদক রাহাত খান। দৈনিক ইত্তেফাকে তিনি একাধারে ২৯ বছর চাকরি করে ২০০৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, রশীদ তালুকদার ছিলেন বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি হালিমা রশীদকে (বিবাহ-পূর্ব: হালিমা খাতুন) বিয়ে করেন। তাঁর স্ত্রী ২৩ মে, ২০০৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

(৬৫র গণ অভ্যুত্থানের এই ছবিটা তুলে অমর হয়ে আছেন চিত্রশিল্পী রশীদ তালুকদার)
বীর বাঙালীদের স্বাধিকারের দাবিতে স্বাধীনতা-পূর্ব ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের স্থিরচিত্র ধারণ করে নিজেকে স্মরণীয় করে রেখেছেন রশীদ তালুকদার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পূর্ব তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গণ-অভ্যুত্থানের স্থির চিত্র হিসেবে মিছিলের সম্মুখভাগে টোকাই বা পথশিশুর ছবি তুলে সকলের নজর কাড়েন তিনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পূর্ব তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গণ-অভ্যুত্থানের স্থির চিত্র হিসেবে মিছিলের সম্মুখভাগে টোকাই বা পথশিশুর ছবি তুলে সকলের নজর কাড়েন তিনি। ছাত্রদের অসহযোগ আন্দোলনে শহীদ আসাদের মৃত্যুর প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন রশীদ তালুকদার। তাঁর ক্যামেরায় স্থিরচিত্র হিসেবে ফুঁটে উঠেছিল ছাত্র-জনতার দীর্ঘ মিছিলসহ আসাদের শার্টের ছবি। ১৯৭০ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের অসহযোগ আন্দোলনকেও ক্যামেরায় ধারণ করেন রশীদ তালুকদার। পরবর্তীতে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ঢাকার রায়েরবাজার বধ্যভূমি থেকে বুদ্ধিজীবীদের লাশ উত্তোলনের ছবিও তিনিই ধারণ করেন।

(জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সাথে রশীদ তালুকদার)
বাংলাদেশের বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে তাঁর আলোকচিত্র। বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব - মাদার তেরেসা, মাওলানা ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান কিংবা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ, বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম, বুদ্ধিজীবিদের লাশ উত্তোলনের স্থিরচিত্র ধারণ করে রশীদ তালুকদার স্মরণীয় হয়ে আছেন। আলোক চিত্রকলায় অসামান্য অবদানের জন্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে স্বর্ণপদকসহ প্রায় ৭৭টি পুরস্কার লাভ করেন রশীদ তালুকদার। তন্মধ্যে ১। ২০০৬ সালে তাঁকে 'ছবি মেলা আজীবন সম্মাননা পুরস্কার ২। ২০১০ সালে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অলাভজনক বিজ্ঞান ও শিক্ষা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি'র পক্ষ থেকে ‘পাইওনিয়ার ফটোগ্রাফার অ্যাওয়ার্ড’৩। জাতিসংঘ কর্তৃক ‘নিরাশ্রয়ের জন্য আশ্রয়’ শীর্ষক প্রতিযোগিতায় একত্রে ৬টি পুরস্কার ৪। জাপান ফটোগ্রাফিক সোসাইটি ও আসাহি সিমবুন পত্রিকার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় পরপর দুইবার পুরস্কৃত হওয়া অন্যতম।

(নভোচারী নীল আর্মস্ট্রং ও পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর আহসান-এর সাথে রশীদ তালুকদার)
বহু ঘটনার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী রশীদ তালুকদার মাথায় আঘাতজনিত কারণে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে ৭২ বছর বয়সে ২০১১ সালের ২৫ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি এক ছেলে - মিজানুর রশীদ এবং দুই মেয়ে - শাহানা চৌধুরী ও সোনিয়া রশীদকে রেখে যান। অক্টোবরের ২৪ তারিখ জন্ম নেয়া চিত্রশিল্পীর জীবনবসান ঘটে ২৫ অক্টোবর।

১৯৫৯ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তাঁর এই দীর্ঘ কর্ম জীবনে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে অন্যান্য ক্ষেত্রে বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের সমৃদ্ধশালী ফটো ডকুমেন্টেশন তাঁর মত এমন আর কারো নেই। কিন্তু এই বিপুল ভান্ডারের যথাযথ সংগ্রহ ও যত্ন না থাকায় অনেক দুর্লভ আলোকচিত্র হারিয়ে আমরা শূন্য হয়ে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে সকলের আরও বেশি মনোযোগী ও সচেতন হওয়া উচিত।

কালের স্বাক্ষী জনপ্রিয় এবং কিংবদন্তি এই আলোকচিত্র শিল্পীর আজ ৭৪তম জন্মদিন জন্মদিনে তাঁর জন্য ফুলেল শুভেচ্ছা।

০ Likes ০ Comments ০ Share ৭৩৭ Views

Comments (0)

  • - লুৎফুর রহমান পাশা

    নিয়মিত সাথেই থাকুন। একদিন অবশ্যই ভাল লেখক তথা ব্লগার হয়ে উঠতে পারবেন।

    - নীল সাধু

    আররেহ মুক্তমন দেখি

    - নীল সাধু

    স্বাগতম ব্লগে