‘‘১৯৭১ সালে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যে যুদ্ধ হয়েছিল তাতে পাকিস্তান ভারতের কাছে হেরে যায় এবং পাকিস্তানের ৯৩ হাজার সৈন্য ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করে । যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়” না পাঠক, এটা আমার কথা নয় । সাম্প্রতিক সময়ে বলিউড থেকে মুক্তি পাওয়া ‘যশদেব সিং প্রোডাকশনের ব্যানারে নির্মিত গুন্ডে ছবিতে এমন করেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে । শুধুমাত্র উপমহাদেশের মধ্যেই নয় বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী বলিউডের সেন্সর বোর্ডও গুন্ডে ছবিটিকে মুক্তি দেয়ার আগে ইতিহাস বিকৃতির ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে ছবিটিকে মুক্তি দিয়েছ । অনেকেই ধারণা করছেন, আগামী পঞ্চাশ বছর বা তার চেয়েও কম সময়ের মধ্যে হুন্ডে ছবির ইতিহাসই এদেশের শিক্ষার্থীদের পাঠ করতে হবে । অন্তত বাংলাদেশে সরকার বদলের সাথে স্বাধীনতার ইতিহাস যেভাবে বদলায় তাতে ভারত আমাদের অঙ্গরাজ্য বানাতে চাইলে আমরা তেমন কোন প্রতিবাদ করব বা করতে পারব সেটা আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় না । হুন্ডে ছবির পরিচালক বা স্ক্রিপ্ট লেখকের দোষ দিয়ে লাভ নাই বরং দোষটা আমাদের কপালের । নইলে বিশ্বের অন্যসব দেশ রেখে আমরা ভারতের প্রতিবেশী হতে যাব কেন ?
স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠার পেছনে ভারতের ভূমিকা অনেক তবে সেটা হুন্ডে ছবির কাহীনির মত অতটা গভীর নয় । হুন্ডে ছবির পরিচালক ইতিহাস বিকৃতির জন্য ক্ষমা চেয়েছেন কিন্তু ছবির ঐ অংশটা বাদ দেয়ার কোন কথা বলেন নি । ক্ষমা মহত্বের লক্ষণ । যিনি ক্ষমা করতে জানেন তিনিই মহৎ । আমাদের ভূলে গেলে চলবে না, কতটুকু অপরাধ করলে তার জন্য ক্ষমা চাওয়া যায় বা করা যায় । বর্তমান সময়ে সমাজে সবচেয়ে প্রচলিত শব্দ `sorry’ । যত্রতত্র এই শব্দটির ব্যবহার দেখে আশ্চার্য না হয়ে উপায় নাই । যে যতবড় অপরাধ করুক না কেন সবাই যেন `sorry’ বলে মাফ পেতে চায় । হুন্ডে ছবির পরিচালকও বোধ হয় সে পথেই হাটছেন । এ যেন স্ত্রী স্বামীর গালে কষে চড় মেরে `sorry’ বলার অবস্থা । দিনের পরিক্রমায় হয়ত ইতিহাস বিকৃতির কালিমা বাংলাদেশীদের মন থেকে চিরতরে মুছে যাবে কিন্তু ভারতের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা ইতিহাস বিকৃতির সে সূচনা করেছেন সে ধারা রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে প্রবেশ করতে কতক্ষণ ? কোন জাতিকে পরিবর্তন করার জন্য সবার আগে পরিবর্তন করতে হয় তার সংস্কৃতিকে । ভারত সেটাও খুব কৌশলে বাংলাদেশে শুরু করেছে । ভারতে পারিবারিক কাঠামো অনেক আগেই ভেঙ্গে গেছে এখন সে আগ্রাসন চালানে শুরু হয়েছে বাংলাদেশে । এর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে স্টার জলসাসহ বেশ কয়েকটি চ্যানেল । ভারতীয় সংস্কৃতির এমন কোন নোংরামী নাই যা দিনের ২৪ঘন্টা জুড়েই এদেশে ঢোকানো হচ্ছে না । সমাজে এর প্রতিফলনও বেশ ভালভাবে শুরু হয়েছে । বীজ রোপণ করলে তাতে অঙ্কুর তো গঁজাবেই, আর একটু যত্ন করলে বিশাল বৃক্ষ হতে দোষ কোথায় ?
এইতো কয়েকবছর আগে স্বতন্ত্র, স্বাধীন ও সার্বভৌম শক্তিময় একটি রাষ্ট্র ছিল নেপাল । কিন্তু আজ নেপালের ইতিহাস বরই করুন । মেরুদন্ডহীন একটি রাষ্ট্র হিসাবে নেপাল বিশ্বদরবারে আজ বেশ পরিচিত । বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ভারতের শাসকগোষ্ঠীর যতটুকু কর্তৃত্ব আছে তার চেয়ে ঢের বেশি কর্তৃত্ব নেপালে । নেপালের সমাজনীতি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রনীতি পর্যন্ত সবকিছুই ভারতীয় শাসকগোষ্ঠীর ইশারায় চলে । একসময়ের অত্যন্ত শক্তিশালী সিকিম আজ ভারতের অন্যতম অঙ্গরাজ্য । অথচ এই সিকিমমের উপর বৃটিশরাও কর্তৃত্ব করতে ব্যর্থ হয়েছিল । একজন লেন্দুপ দর্জির বিশ্বাস ঘাতকতায় সিকিমের করুণ পরিনতি । বাংলাদেশে লেন্দুপ দর্জিদের অভাব নাই । অর্থনৈতিকভাবে বাঙালী যতদিন গরীব থাকবে ততদিনই সেটা বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশীদের জন্য মঙ্গল । অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হলেই রাক্ষসগোষ্ঠী আর বসে থাকবে না । এখন যে অবস্থায় বাংলাদেশ চলছে সেটা ভারতের জন্য কম কীসে ? না চাইতেই যদি জীবন-যৌবন সব পাওয়া যায় তবে আর চেয়ে লাভ কি ? বিদ্যুত পাচ্ছে, ট্রানজিট পাচ্ছে, গ্যাস পাচ্ছে, সমুদ্রসীমা পাচ্ছে আর কি চাই ? যখন যা লাগবে সেটাই পাওয়া যাবে । এমনভাবে জাল বুনিয়েছে কোন গতি নাই । বাংলাদেশের মঙ্গলের জন্য গোটা বিশ্ব একদিকে আর ভারত অন্যদিকে জয়টা ভারতেরই হচ্ছে ? পাকিস্তানের সাথে যুক্ত থাকাকালীন সময়ে পাকিস্তান যতটা ক্ষতি করতে পারে নি তার চেয়ে অনেক বেশি আমাদের কথিত বন্ধু ভারত নির্বিগ্নে করে চলছে । নীরব দর্শক হয়ে দেখা ছাড়া আর কিছু করার নাই । বাংলাদেশের পররাষ্ট্র, স্বররাষ্ট্রসহ সকল বিষয়ের সিদ্ধান্ত ভারত দিয়ে যাচ্ছে আর আমরা সেমতেই চলছি । বড় দাদাদের কথা না রাখলে বেয়াদবী হবে না ? আমরা কি অত বেয়াদব ! বিশ্বের অন্যকোন দেশ বাংলাদেশের ব্যাপারে কোন কথা বললে তাতে কত ধরণের প্রতিবাদ অথচ বর্তমান সরকার ভারতের ব্যাপারে একেবারে নির্বিকার । দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে ভারতের এত জঘণ্য মিথ্যাচার নিয়ে দেশব্যাপী যখন প্রতিবাদের দাবানল জ্বলছে তখনও সরকারী বা বিরোধীদল একেবারে নির্বিকার । এমনকি অন্যকোন রাজনৈতিকদলও এব্যাপারে এখনও কোন আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানায়নি । এটা আমাদের জন্য অবশ্যই হতাশার এবং দুঃখের ।
পাকিস্তান থেকে মুক্ত হয়ে কিছুদিন স্বাধীন স্বাধীন মনে হয়েছিল । কিন্তু কালের বিবর্তনে ধারণা বদলাতে শুরু করেছে । ভূত ছাড়াতে গিয়ে শয়তান ঝেঁকে ধরেছে । কতদিন এভাবে চলবে সেটা বলা মুশকিল । ভারত আমাদের গিলছেওনা আবার ওগড়াচ্ছেও না । যেভাবে আছি তার চেয়ে একেবারে গিলে ফেলা ভালো । আমরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভারতের গোলামী করে চলছি । এ যেন স্বেচ্ছায় বাধ্যতামূলক অবস্থা । ভারতকে আহ্বান করব, একেবারে গিলে ফেলূন । অবশ্য সেটা বাঙালীলরা সহজে মানবে না । আবার একটা যুদ্ধ হবে। হয় আমরা জয়ী হব নতুবা চিরতরের জন্য গোলামী করব । দোদ্যুল্যমান অবস্থা আর ভালো লাগে না । একটু সুযোগ চাই । আমাদের সন্তানেরাও মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় চাকরি পাক অথবা আমাদের রাজাকার হিসেবে বিচার হোক । ..... আজ থেকে সময় গুনতে শুরু করলাম । কবে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তির আওতাভূক্ত হতে পারি !
রাজু আহমেদ
raju69mathbaria@gmail.com
Comments (6)
ভালবাসা যদি চোখের সম্মুখ দিয়ে
দমকা হাওয়ায় বেগে ভেসে চলে যায়,
চোখের জল ফেলে লাভ কি বলো?
ভালাবাসা যখন আসার তখন ঠিক আসবেই
হোক ঝড় বৃষ্টি কিংবা বৈশাখী কোন কাল দিন।
-------------------সুন্দর।
ধন্যবাদ সরোয়ার ভাই।
ভালো তো বাসবেনি ভালো বাসা ছাড়া
কি বা আছে-- ভাল বেসে যান সাথে আছি
সাথে আছেন বলেই তো ভালবাসার সাহস পাই দাদা।