Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমানের ৮৫তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা



বাংলাদেশের প্রধান শক্তিমান ও প্রতিবাদী কবি শামসুর রাহমান। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ভাগে দুই বাংলায় তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও জনপ্রিয়তা প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ওপর লিখিত তাঁর দুটি কবিতা 'স্বাধীনতা তুমি' ও 'তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা খুবই জনপ্রিয়। কবির জীবনকথা থেকে জানা যায়, ছাত্রজীবন থেকেই তাঁকে কবিতা পেয়ে বসেছিল, এজন্য তার প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া সমাপ্ত করা হয়নি। আধুনিক কবিতার সাথে তার পরিচয় ও আন্তর্জাতিক-আধুনিক চেতনার উন্মেষ ঘটে ১৯৪৯-এ, এবং তার প্রথম প্রকাশিত কবিতা ১৯৪৯ মুদ্রিত হয় সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকায়। নিভৃতচারী, শান্তিপ্রিয় কবি হওয়া সত্ত্বেও শামসুর রাহমানের বিবেক তাঁকে দিয়ে লেখিয়ে নেয় ‘১৯৫৯’ শীর্ষক কবিতা। এ কবিতার মধ্য দিয়ে তিনি প্রথম বহির্মুখী হয়েছিলেন। প্রতিবাদী এই কবি ১৯২৯ সালের আজকের দিনে ঢাকার মাহুতটুলিতে জন্মগ্রহণ করেন। আজ কবির ৮৫তম জন্মবার্ষিকী। জন্মদিনে কবিকে স্মরণ করছি ফুলেল শুভেচ্ছায়।

নাগরিক কবি শামসুর রাহমান ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর ঢাকার মাহুতটুলি মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মুখলেসুর রহমান চৌধুরী ও মা আমেনা বেগম। পৌত্রিক বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরায় পাড়াতলী গ্রামে। পুরোনো ঢাকার পোগোজ স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন ১৯৪৫ সালে। ১৯৪৭ সালে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আই এ পাশ করেন। পাসকোর্সে বিএ পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে এম,এ ভর্তি হন এবং তিন বছর নিয়মিত ক্লাসও করেন তবে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ (প্রিলিমিনারী) পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করলেও শেষ পর্বের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি।

১৯৫৭ সালে শামসুর রাহমান সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন দৈনিক মর্ণিং নিউজ-এ। কিছুদিন এখানে কাজ করার পর এ বছরেই যোগ দেন রেডিও পাকিস্তানের অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসেবে এখানে তিনি ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। এরপর তিনি আবার ফিরে আসেন তার পুরানো কর্মস্থল দৈনিক মর্ণিং নিউজ-এ। সেখানে ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত সহযোগী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। শামসুর রাহমান স্বৈরশাসক আইয়ুব খানকে বিদ্রুপ করে ১৯৫৮ সালে সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত সমকাল (পত্রিকা) পত্রিকায় লেখেন 'হাতির শুঁড়' নামক কবিতা। শামসুর রহমান ১৯৬৪ সালের নভেম্বর থেকে সরকারি দৈনিক দৈনিক পাকিস্তান (স্বাধীনতা উত্তর দৈনিক বাংলা) এর সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন ১৯৭৭ এর জানুয়ারি পর্যন্ত । বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান যখন কারাগারে তখন তাঁকে উদ্দেশ্য করে লেখেন অসাধারণ কবিতা 'টেলেমেকাস' (১৯৬৬ বা ১৯৬৭ সালে)। ১৯৬৭ সালের ২২ জুন পাকিস্তানের তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী রেডিও পাকিস্তানে রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্প্রচার নিষিদ্ধ করলে শামসুর রাহমান তখন সরকার নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা দৈনিক পাকিস্তান-এ কর্মরত থাকা অবস্থায় পেশাগত অনিশ্চয়তার তোয়াক্কা না করে রবীন্দ্রসঙ্গীতের পক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন যাতে আরো স্বাক্ষর করেছিলেন হাসান হাফিজুর রহমান, আহমেদ হুমায়ুন, ফজল শাহাবুদ্দীন। ১৯৬৮ সালের দিকে পাকিস্তানের সব ভাষার জন্য অভিন্ন রোমান হরফ চালু করার প্রস্তাব করেন আইয়ুব খান যার প্রতিবাদে আগস্টে ৪১ জন কবি, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী এর বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন যাদের একজন ছিলেন শামসুর রাহমানও। কবি ক্ষুদ্ধ হয়ে লেখেন মর্মস্পর্শী কবিতা 'বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা'। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি গুলিস্তানে একটি মিছিলের সামনে একটি লাঠিতে শহীদ আসাদের রক্তাক্ত শার্ট দিয়ে বানানো পতাকা দেখে মানসিকভাবে মারাত্মক আলোড়িত হন শামসুর রাহমান এবং তিনি লিখেন 'আসাদের শার্ট' কবিতাটি।

১৯৭০ সালের ২৮ নভেম্বর ঘূর্ণিদুর্গত দক্ষিণাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় ও মৃত্যুতে কাতর কবি লেখেন 'আসুন আমরা আজ ও একজন জেলে' নামক কবিতা । ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পরিবার নিয়ে চলে যান নরসিংদীর পাড়াতলী গ্রামে। এপ্রিলের প্রথম দিকে তিনি লেখেন যুদ্ধের ধ্বংসলীলায় আক্রান্ত ও বেদনামথিত কবিতা 'স্বাধীনতা তুমি' ও 'তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা'। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম ফসল তার কাব্যগ্রন্থ-বন্দী শিবির থেকে। শামসুর রাহমানের অবিনাশী পঙক্তিমালায় যেমন দেশ-ইতিহাস বিমূর্ত, তেমনি জীবনের যে বিচিত্র অনুষঙ্গ শিল্পের উপকরণ, তাঁকে তিনি লিখেছেন বুকের ভেতরের শুভ্র কালিতে সোনার কলম চুবিয়ে পাথরের পৃষ্ঠায়। তাঁর বেঁচে থাকা হয়ে উঠেছে ইতিহাসের সব কালের পৃষ্ঠায় যা মুছবার নয়। তাঁর প্রথম কাব্য গ্রন্থ ‘প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’।

(সামনের সারিতে বাম থেকে নাতনী দিপীতা রাহমান, স্ত্রী জহুরা রাহমান)
শামসুর রহমান ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দৈনিক বাংলা ও সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৮৭ সালে এরশাদের স্বৈরশাসনের প্রতিবাদে দৈনিক বাংলার প্রধান সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। অতঃপর তিনি অধুনা নামীয় মাসিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৭ থেকে পরবর্তী চার বছরের তিনি প্রথম বছরে 'শৃঙ্খল মুক্তির কবিতা', দ্বিতীয় বছরে 'স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কবিতা', তৃতীয় বছরে 'সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কবিতা' এবং চতুর্থ বছরে 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কবিতা' লেখেন । ১৯৯১ সালে এরশাদের পতনের পর লেখেন 'গণতন্ত্রের পক্ষে কবিতা'। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও জনমানুষের প্রতি অপরিসীম দরদ তাঁর চেতনায় প্রবাহিত ছিল। শামসুর রাহমানের বিরুদ্ধে বারবার বিতর্ক তুলেছে কূপমণ্ডুক মৌলবাদীরা। তাঁকে হত্যার জন্য বাসায় হামলা করেছে। এতকিছুর পরও কবি তাঁর বিশ্বাসের জায়াগায় ছিলেন অনড়।

কবি তার কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন পদকে ভূষিত হন। তার প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য পুরস্কারঃ ১। বাংলা একাডেমী পুরস্কার, ২। একুশে পদক, ৩। স্বাধীনতা পদক এবং ৪। আনন্দ পুরস্কার। কবি শামসুর রাহমান ২০০৬ সালের ১৭ই আগস্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টা ৩৫ মিনিটে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর ইচ্ছানুযায়ী ঢাকাস্থ বনানী কবরস্থানে, তাঁর মায়ের কবরে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়

প্রিয় কবি শামসুর রাহমানের আজ ৮৫তম জন্মবার্ষিকী। স্বাধীনতার কবির জন্মদিনে তাঁকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।
০ Likes ১ Comments ০ Share ৬৯১ Views

Comments (1)

  • - ধ্রুব তারা

    emoticons