Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচয়িতা, সংস্কৃত বিশারদ ও সংরক্ষণবিদ মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ৮৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি


বিখ্যাত বাঙালি ভারততত্ত্ববিদ, সংস্কৃত বিশারদ, সংরক্ষণবিদ ও বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচয়িতা মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী।
‘ভারতবর্ষের ইতিহাস’ গ্রন্থ রচনা ও প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে প্রাপ্ত লেখা থেকে পাঠোদ্ধার এবং পুঁথি আবিষ্কার ও টীকা রচনা করে যিনি ভারতবর্ষের প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখেন। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ছিলেন এক খ্যাতনামা হিস্টোরিওগ্রাফার। তিনি অনেক প্রাচীন গ্রন্থ সংগ্রহ করে প্রকাশ করেছিলেন। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদের আবিষ্কর্তাও ছিলেন তিনি। ১৯১৬ সালে চর্যাপদের পুঁথি নিয়ে রচিত তাঁর গবেষণাপত্র হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় রচিত বৌদ্ধ গান ও দোঁহা নামে প্রকাশিত হয়। তিনি বহু গবেষণাপত্রও রচনা করেন। তাঁর বিখ্যাত বইগুলি হল বাল্মীকির জয়, মেঘদূত ব্যাখ্যা, বেণের মেয়ে (উপন্যাস), কাঞ্চনমালা (উপন্যাস), সচিত্র রামায়ণ, প্রাচীন বাংলার গৌরব ও বৌদ্ধধর্ম। তাঁর উল্লেখযোগ্য ইংরেজি রচনাগুলি হল মগধান লিটারেচার, সংস্কৃত কালচার ইন মডার্ন ইন্ডিয়া ও ডিসকভারি অফ লিভিং বুদ্ধিজম ইন বেঙ্গল। তাঁর রচিত ৫২টি নিবন্ধের মধ্যে ঐতিহাসিক নিবন্ধের সংখ্যা বেশী হলেও সময়তত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব এবং শাসনতন্ত্র বিষয়েও কয়েকটি আলোচনা আছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষৎ থেকে তাঁর রচিত সকল গ্রন্থ 'হরপ্রসাদ শাস্ত্রী রচনা-সংগ্রহ' নামে চারখণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। আজ মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ৮৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৩১ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচয়িতা পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৮৫৩ সালের ৬ ডিসেম্বর ব্রিটিশ বাংলা প্রদেশের খুলনা জেলার কুমিরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তাঁদের আদি নিবাস ছিল ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার নৈহাটিতে। তাঁর পারিবারিক পদবী ছিল ভট্টাচার্য। তার প্রকৃত নাম শরৎনাথ ভট্টাচার্য। শৈশবে ‘হর’ বা শিবের প্রসাদে জটিল অসুস্থতা থেকে সেরে ওঠায় নাম বদলে রাখা হয় হরপ্রসাদ। তার পিতার নাম রামকমল ন্যায়রত্ন। ১৮৬৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে সংস্কৃত কলেজে প্রবেশ করেন। আট বছর বয়সে বাবার মৃত্যু হলে আর্থিক সঙ্কটে পড়ে টিউশনি করে লেখাপড়ার ব্যয়নির্বাহ করেন। নানারকম প্রতিবন্ধকতার মধ্যে থেকেও ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এন্ট্রান্স পাশ করেন। এর পর ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দে এফ.এ পাশ করেন। ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দ তিনি প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে ৮ম স্থান অধিকার করে বি.এ পাশ করেন এবং ১৮৭৭ খ্রিষ্টাব্দে সংস্কৃত কলেজ থেকে এম.এ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে ‘শাস্ত্রী’ উপাধি পান। উক্ত পরীক্ষায় হরপ্রসাদই ছিলেন প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ একমাত্র ছাত্র।

কর্মজীবনের সুচনায় কলিকাতা হেয়ার স্কুলের শিক্ষক ছিলেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। ক্রমে লক্ষ্ণো ক্যানিং কলেজ, কলিকাতা প্রেসিডেন্সী কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কলিকাতা সংস্কৃত কলেজে অধ্যাপনা করেন। পরে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। অধ্যাপনা ও সরকারি কাজের পাশাপাশি হরপ্রসাদ শাস্ত্রী দু বছর এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি, বারো বছর বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি এবং লন্ডনের রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটির সাম্মানিক সদস্য ছিলেন। পুরাতন পুঁথি সংগ্রহের মাধ্যমে চর্যাপদ গবেষণা করে বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনত্বকে প্রমাণিত করেন হরিপ্রসাদ শাস্ত্রী। ‘গোপাল তাপনি’ উপনিষদের ইংরেজী অনুবাদে তিনি রাজেন্দ্রলাল মিত্রের সহযোগী ছিলেন। ‘ভারতবর্ষের ইতিহাস’ গ্রন্থ রচনা ও প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে প্রাপ্ত লেখা থেকে পাঠোদ্ধার এবং পুঁথি আবিষ্কার ও টীকা রচনা করে ভারতবর্ষের প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখেন। ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দে রাজেন্দ্রলাল মিত্রের মৃত্যুর পর এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক সংস্কৃত পুঁথিসংগ্রহের কাজে অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। অল্প কয়েকজন সহকারী নিয়ে হরপ্রসাদ এশিয়াটিক সোসাইটির দশ হাজার পুঁথির ক্যাটালগ প্রস্তুত করেন। এই ক্যাটালগের যে দীর্ঘ মুখবন্ধটি তিনি রচনা করেছিলেন, তা সংস্কৃত সাহিত্যের একটি মূল্যবান ইতিহাস। সংস্কৃত পুঁথি নিয়ে চর্চা করতে করতেই হরপ্রসাদ বাংলা পুঁথির বিষয়েও আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পুঁথির সন্ধানে তিনি অনেকবার নেপাল,তিব্বত ভ্রমণ করেন।সেখানেই ১৯০৭ সালে তিনি আবিষ্কার করেন চর্যাগীতি বা চর্যাপদের পুঁথি। এই পুঁথিগুলি নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেন এগুলিই বাংলা সাহিত্যের আদিতম নিদর্শন। স্বীয় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ লাভ করেছিলেন বহু পুরস্কার ও সম্মান। ‘ভারত মহিলা’ প্রবন্ধ রচনা করে হোলকার পুরস্কার পান তিনি। ‘বঙ্গদর্শন’-এ প্রবন্ধটি প্রকাশিত হলে বঙ্কিমচন্দ্রের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা হয়। এছাড়া তিনি বাল্মীকির জয় (১৮৮১), মেঘদূত ব্যাখ্যা (১৯০২), হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধ গান ও দোহা (১৯১৬), প্রাচীন বাংলার গৌরব (১৯৪৬) প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করেছেন। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ‘লোকায়ত’ নামে ইংরেজীতে একটি ছোট্ট প্রবন্ধ লিখেছিলেন। ১৯২৫-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রবন্ধটি স্বতন্ত্র পুস্তিকা আকারে প্রকাশিত হয়েছিলো। পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৮৯৬ সালে ‘মহামহোপাধ্যায়’ ১৯১১-তে সি,আই,ই উপাধি লাভ এবং ১৯২৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-লিট উপাধিতে ভূষিত হন।

আজ মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ৮৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৩১ সালের ১৭ নভেম্বর মহাপ্রয়াণ ঘটে এই বিদ্বজ্জন মনীষীর। শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, বহু ভাষাবিদ, দার্শনিক, প্রত্নতত্ত্ববিদ ও ঐতিহাসিক হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রাচীন সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের বহু নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কারের তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচয়িতা পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

০ Likes ০ Comments ০ Share ৬৬২ Views

Comments (0)

  • - টোকাই

    ভালো বলেছেন ভাই ।