Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

ধ্রুব তারা

১০ বছর আগে

বাংলা ফিচার

ফিচার কি?

ফিচার পড়তে কে না পছন্দ করে! বিভিন্ন সংবাদপত্রে ও ম্যাগাজিনে প্রতিদিন নানা বিষয়ের উপর লিখিত ফিচার প্রকাশিত হচ্ছে। ফিচার পড়ার মধ্যে সুখপাঠ্যতা আছে। পাঠকদের মাঝে এর আকর্ষণ ও গুরুত্ব অনেক বেশি। এমন অনেক পাঠক আছেন, যারা খবর পড়ার চেয়ে ফিচার পড়তে বেশি পছন্দ করেন। তাই বলে খবর আর ফিচার পরস্পরের প্রতিপক্ষ নয়। সংবাদপত্রের সংবাদ, অভিমত ও বিজ্ঞাপন বাদ দিয়ে যা থাকে প্রচলিত অর্থে সেগুলিই ফিচার। এদের বেশির ভাগ প্রতিবেদনকে বলা যেতে পারে ফিচারধর্মী প্রতিবেদন। ফিচারও মূলত একধরনের তথ্যজ্ঞাপনকারী খবর। এটা সমসাময়িক ঘটনার উপর হতে পারে অথবা সমসাময়িক নয়, কিন্তু তার সংবাদমূল্য আছে। আমরা বিষয়টি এভাবে দেখতে পারি। খবর বা NEWS হলো N: North, E: East, W:West এবং S: South এ সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনার তথ্য। স্বরূপ বিশ্লেষণে খবর দু ধরনের হয়ে থাকে। যেমন: . Hard News অর্থাৎ একেবারে তথ্য জানানো। যা অনেকক্ষেত্রে আমাদের আবেগ অনুভূতিতে খুব একটা আন্দোলন জাগাতে নাও পারে। ২. Soft News অর্থাৎ লঘু সংবাদ। এটা পড়তে ভালো লাগে। আবেগ-অনুভূতিতে সাড়া জাগায়। এটি মূলত স্বস্তিদায়ক খবর। Hard News পড়ার ক্ষেত্রে সবসময় স্বস্তিদায়ক বিষয় থাকবে এমন কথা নেই। কিন্তু Soft News পড়ার ক্ষেত্রে সুখপাঠ্যতার স্পর্শ থাকে। ফিচার আসলে একধরনের Soft News আওতাভুক্ত।

ফিচারের সংজ্ঞা কি হবে?

ফিচারের কোনো সুনির্ধারিত সংজ্ঞা তেমন একটা নেই। কেউ কেউ সংজ্ঞা নিরুপন করেছেন; তবে তা পূর্ণাঙ্গ বৈশিষ্ট বিধৃত করার ক্ষেত্রে সীমিত। বলা হয়, ফিচার পাঠকের কাছে নিরস বিষয়কে সরস করে উপস্থাপন করে থাকে। যেন অনেকটা এ রকম যে, ফিচার হলো a lemon turned into lemonade। ফিচার হলো এমন একধরনের রমনীয় লেখা যা পাঠকের মনকে আকর্ষিত করে, পড়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে শেষে মুগ্ধতার সাথে পরিতৃপ্ত করে। ‘ফিচার’ প্রত্যয়টি সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকদের মধ্যে সর্বাধিক ব্যবহৃত শব্দ। ‘The Complete Reporter’ গ্রন্থে তাই বলা হয় “The word ‘feature’ may be one of the most overworked words in the lexicon of journalists.” ফিচার সম্পর্কে ‘নিউ সার্ভে অব জার্নালিজম’ গ্রন্থে জর্জ ফক্স মর্ট ও সহ লেখকগণ বলেন: “ফিচার প্রতিবেদন নিছক সংবাদের চেয়ে মানবিক আবেদন স্পর্শ দিককে বেশি প্রাধান্য দেয়, যে কারণে সাধারণ পাঠক ফিচারের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং তারা এর প্রতি মনোযোগী হয়; আর এতে করে ফিচার পাঠকের আবেগকে নাড়া দিতে সক্ষম হয়”।

ফিচার ও খবরের মধ্যে পার্থক্য

 

খবর আর ফিচার দুটোই তথ্য প্রদানকারী লেখা। তবে এ দুইয়ের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হলো: খবর কোনো ঘটনা সংঘটিত না হলে লেখা হয় না, কিন্তু ফিচার সংঘটিত ঘটনা অথবা কোনো ঘটনা নয় তার উপরও লেখা যেতে পারে। যেমন: দেশের অর্থব্যবস্থায় মুদ্রাস্ফীতি ১৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি খবর। আর এই খবরের ভিত্তিতে সাধারণ মানুষের জীবনপ্রবাহ কতটা দুর্দশায় নেমে গেছে তা ফিচারের বিষয়বস্তু হতে পারে। অথবা তেমন কোনো খবর নয় সে বিষয়কে নিয়েও ফিচার লেখা যেতে পারে। যেমন: পদ্মা নদী বা কান্তজিউ মন্দিরের উপর লেখা ফিচার। খবরের দুনিয়া সীমিত, ঘটনা না ঘটলে খবর লেখা যায় না। কিন্তু ফিচারের দুনিয়া সারাবিশ্বের সমস্তকিছু। বলা হয়ে থাকে: The whole world is the workshop of a feature writer। খবর মানুষকে ভাবায় আর ফিচার মানুষের মনে আড়োলন তোলে। খবর মস্তিষ্কে ঢেউ জাগায় আর ফিচার ঢেউ জাগায় হৃদয়ে। খবরে মানবিক আবেদন অপরিহার্য নয় কিন্তু ফিচারে তা থাকতে হবে। খবরে লেখক কোনো মন্তব্য করতে পারেন না, কিন্তু ফিচারে লেখক তার মতামত বা দিকনির্দেশনার ইঙ্গিত দিতে পারেন।

খবর লেখা শুরু করতে হয় ষড় ‘ক’ দিয়ে অর্থাৎ কে, কি, কখন, কোথায়, কেন, কিভাবে প্রশ্নের উত্তর সংক্রান্ত তথ্য জানিয়ে। ইংরেজিতে একে চমৎকারভাবে সাজিয়ে বোঝানো হয়। Five `W’ives and 1 `H’usband বাক্য দিয়ে; অর্থাৎ কি না who, what, when, where, why and how প্রশ্ন দিয়ে। আমরা যদি খবরের প্রথম অংশটি দেখি তাহলে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর সংক্রান্ত তথ্য শুরুতেই পেয়ে যাব। এই অংশটিকে বলা হয় খবরের ইন্ট্রো বা সূচনা । পাঠক এটি পড়েই খবরের ভেতরের অংশে বিস্তারিত তথ্য পেয়ে যান। খবর লেখার ধারাক্রম পিরামিড আকৃতির মতো। শুরুতে ছোট হয়ে ধীরে ধীরে নিচে বড় অংশ। অন্যদিকে ফিচার অনুসরণ করে উল্টো পিরামিড আকৃতিতে। কোনো কোনো লেখক অবশ্য এ রীতি মানতে নারাজ। তবে যাই হোক, খবর খুব জমিয়ে লেখা বাতুলতা। কেননা এতে সতর্ক পাঠকের বিরক্তি আসতে বাধ্য। অন্যদিকে ফিচার জমিয়ে লেখা চলে যাতে পাঠকের সুখপাঠ্যতা আসে। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় রচিত ফিচারগুলোর বিচারে এটাই সত্য যে ফিচার পড়ার মধ্যে একটি মানবিক আবেদন ও উপলব্ধি খবরের তুলনায় বেশি।

উদ্দেশ্য বিচারেও খবর আর ফিচারের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। খবরের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র তথ্য জানানো। ফিচারের উদ্দেশ্য কয়েকটি:

অবহিত করা (To inform)
শিক্ষা দান করা (To educate)
আনন্দ দান করা (To entertain)
উদ্ধুদ্ধ করা (To motivate)

তবে লক্ষ্যণীয় যে, একটি ফিচারে সবগুলো উদ্দেশ্যের সমাহার দেখা যাবে তা নয়। আবার শুধুমাত্র আনন্দ দেবে তাও সত্য নয়। মানবিক উপলব্ধি জাগ্রত করাও এর অন্যতম উদ্দেশ্য। সময়ের বিচারে খবরের একটি নির্দিষ্ট ডেডলাইন থাকে। নির্দিষ্ট তারিখের পর কোনো খবরের উপযোগিতা থাকে না। সেকন্ডহ্যান্ড ইনফরমেশনের কোনো গুরুত্ব নেই। কিন্তু ফিচারের কোনো ডেডলাইন নেই। তবে সমসাময়িক হওয়া বাঞ্ছনীয়। এতকিছুর পরও আসল কথা, ফিচারের অন্যতম বৈশিষ্ট হলো যে, তাকে মানুষের মন ছুঁয়ে যেতে হবে।

 

ফিচারের প্রকৃতি বৈশিষ্ট্য কি?
ফিচার এক ধরনের সরস বিবরণ
সাদামাটা ও গুরুগম্ভীর খবর থেকে এর আবেদন ভিন্নতর।
ফিচারের আবেদন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফুরিয়ে যায় না।
হার্ড নিউজের মতো ফিচারের বৈশিষ্ট্য তাৎক্ষণিক টাটকা না হলেও এর আবেদন শেষ হয়ে যায় না।
সাদামাটা সংবাদে থাকে আঁটসাট তথ্যের ছড়াছড়ি, সময়ের তাগিদ থাকে এত কড়াকড়ি; কিন্তু ফিচারের সে ধরনের কোন বাধ্যবাধকতা থাকে না।
কিছু না ঘটলেও ফিচার লেখা যায়। কোন ঘটনা ঘটার জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। ফিচার গদ্যময় রচনা হলেও এতে ফুটিয়ে তোলা যায় বিভিন্ন মাত্রার আবেগ, অনুভূতি, ভালবাসা ও কৌতুহল।
উপস্থাপনের দিক থেকে এতে নাটকীয়তারও সুযোগ রয়েছে প্রচুর।
এটি এমন একটি রচনা, এমন একটি বিবরণ যা তুচ্ছ বা নগন্য কোন ঘটনাকেও সুখপাঠ্য করে তোলে।
একে কখনও কখনও কিছুটা রম্য ও ব্যঞ্জনাময় মনে হলেও বাস্তবের সঙ্গে থাকে এর প্রত্যক্ষ সংযোগ।
ফিচারে একটি বিষয়ই প্রাধান্য পায়।
নিছক খবর ছাড়াও মানবিক আবেদনসহ আরও কিছু তথ্য পাঠক চায়।

 

ফিচারের বিশেষ দৃষ্টিকোন?
সফল ফিচারের দিক নির্দেশনা দেয় একটি বিশেষ প্রত্যয়; যার নাম বা ‘slant’ বিশেষ দৃষ্টিকোন
বিশেষ দৃষ্টিকোণ ফিচারের গুরুত্বপূর্ণ ও অনিবার্য বৈশিষ্ট্য
• Feature is a slanted article
বিশেষ দৃষ্টিকোন ছাড়া ফিচার লেখক গন্তব্যহীন পথের যাত্রী।

ফিচারের প্রকারভেদ

ফিচার কয়েক রকমের হতে পারে। মূলত

. ব্যক্তিত্ব চিত্রণ,

. স্বীকারোক্তিমূলক

. ইতিহাস ভিত্তিক

. সংবাদ ভিত্তিক

. সাক্ষাতকার

. ভ্রমণ বৃত্তান্ত

. মানবিক আবেদন ও

. উন্নয়ন ফিচার।

ফিচারের গঠন কিরূপ হবে?

খবর লেখার ক্ষেত্রে ষড় ‘ক’ কে সামনে রেখে সূচনা তৈরি করতে হয়। তারপর পিরামিড আকৃতিতে ধীরে ধীরে তথ্য বা বক্তব্য সাজাতে হয়। কিন্তু ফিচার লেখার জন্য যে সূচণা তা ষড় ‘ক’ কে সামনে রেখে লিখতে হবে এমন কথা নেই। একটি সূচণা ধরেই লেখক ফিচার লিখতে শুরু করতে পারেন। ফিচার লেখার ক্ষেত্রে যে সূচণা তা হতে হবে আকর্ষণীয়। সেজন্য লেখক তার নিজস্ব মেধা দিয়ে সূচণা নির্বাচন করবেন। সেটি সারমর্ম সূচণা হতে পারে। কিংবা উদ্ধৃতি সূচণা, প্রশ্ন সূচণা, চিত্র সূচণা, সাদৃশ্য বা বৈসাদৃশ্য সূচণা, ব্যতিক্রমি সূচণা ইত্যাদি। যেভাবেই শুরু করা যাক না কেন, ফিচার লেখকের তিনটি মৌলিক শর্ত পুরন করতে আবেদন রাখে। আর তা হলো: . অধ্যয়ন ২. গবেষণা ও ৩. সাক্ষাতকার।

ফিচার পরিকল্পনার মূলমন্ত্র: আগ্রহের ত্রিবলয়?
তথ্য সংগ্রহ ও প্রতিবেদন রচনায় যেমন ‘ষড়-ক’ (বা 5Ws+H) এর কথা মনে রাখতে হয়; ফিচার লেখার ক্ষেত্রেও লেখককে অনুরুপভাবে আগ্রহের ত্রিবলয় Three Rings of Interest এর কথা মনে রেখে ফিচার লেখার পরিকল্পনা করতে হয়। আগ্রহের এই ত্রিবলয় হল:
পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতি (Editorial Policy)
পাঠকের সম্ভাব্য আগ্রহ (Reader’s Presumable)
পাঠকের প্রকৃত আগ্রহ (Reader’s Actual Interest)

ফিচারের প্রকরণ
সংবাদ ফিচার (News Feature)
মানবিক আবেদনমূলক প্রতিবেদন (Human Interest Story)
ব্যক্তিত্ব চিত্রনমূলক ফিচার (Presonality Feature)
আত্মকথনমূলক ফিচার (Auto-biographical Feature)
ঐতিহাসিক ফিচার (Historical Feature)
সাক্ষাৎমূলক ফিচার (Interview-based Feature)
ব্যাখ্যামূলক ফিচার (Interpretative Feature)

ঝরঝরে গদ্যের আকর্ষনীয় একটি ফিচার লিখতে হলে কি করতে হবে
প্রকাশ করার জন্য লিখুন। চমক বা নাটকীয়তা তৈরির অতিরঞ্জিত অতিকথন করবেন না।
পরিচিত শব্দাবলি ব্যবহার করুন। নিজের পান্ডিত্য জাহিরের জন্য দুর্বোধ বা অপ্রচলিত (প্রয়োজন দেখা দিলে ভিন্ন কথা) শব্দ ব্যবহার করবেন না। ভারি ভারি শব্দের ভারে লেখাটি যাতে পাঠকের পড়তে কষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
ছোট ছোট প্যারাগ্রাফে লেখাটিকে বিন্যাস করুন। এতে পাঠকের চোখ স্বস্তি পাবে। পড়তে সুবিধা হবে।
বহুদিন ধরে বারবার ব্যবহৃত শব্দ বা শব্দাবলি ব্যবহার করবেন না।
বিশেষণ ব্যবহারে সতর্ক থাকুন। অযথা বেশি বেশি বিশেষণ ব্যবহার করবেন না।
যেভাবে সহজে সবার সঙ্গে লোকে কথা বলে সেভাবে লিখুন।
ছোট ছোট বাক্য ব্যবহার করুন। গদ্যের চলনে যে একটি ছন্দ রয়েছে তা বজায় রাখুন। বাক্য যত ছোট হবে মনের ভাব তত বেশি পরিস্কারভাবে প্রকাশ করা যাবে। বাক্যের শব্দ সংখ্যার পরিমাণে বোঝা যাবে বাক্যটি আমরা কতটুকু বুঝতে পারছি। শব্দ সংখ্যার হিসাবে বাক্য কি অর্থ নেয় তা নিচে দেওয়া হল:
খুব সহজ= ৮ শব্দ বা তার কম
সহজ= ১১ শব্দ
মোটামুটি সহজ = ১৪ শব্দ
প্রমিত বা স্ট্যান্ডার্ড= ১৭ শব্দ
কঠিন= ২১ শব্দ
বেশ কঠিন= ২৫ শব্দ
খুবই কঠিন= ২৯ শব্দ বা তার বেশি।

৩ Likes ১০ Comments ০ Share ২১০৬ Views

Comments (10)

  • - শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

    ধন্যবাদ

    • - ধ্রুব তারা

      আপনাকেও ধন্যবাদ

    - ঘাস ফুল

    শীতের জন্য উপযুক্ত পরামর্শ। এখন মেনে চলার দায়িত্ব আমাদের। স্বাস্থ্য সচেতনামুলক পোস্টের জন্য ধন্যবাদ কালের পুতুল। আর প্রথম পোস্টের জন্য রইলো অনেক অনেক অভিনন্দন। নক্ষত্রব্লগে আপনার পথচলা মসৃণ এবং সুন্দর হোক। 

    • - ধ্রুব তারা

      ধন্যবাদ ঘাস ফুল ভাইয়া/আপা

    - রোদেলা

    খুব ভালো পরামর্শ।কিন্তু আমার খালি আইস্ক্রীম খাইতে মন চায়।কিযে করি।

    • - ধ্রুব তারা

      আমারও একি অবস্থা