Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

বহুমুখী প্রতিভাধর সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ আ,ন,ম বজলুর রশীদের ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি


বাংলা সাহিত্যে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী প্রখ্যাত বাঙালি সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ আ, ন, ম, বজলুর রশীদ। বাংলাদেশের সাহিত্যের সূচনালগ্নে থেকেই অসামান্য অবদান রেখেছেন আ,ন,ম, বজলুর রশীদ। ‘জানি না ফুরাবে কবে এই মধুরাতি’- সমর দাসের সুরারোপিত এই একটি গানের জন্য হলেও আ,ন,ম, বজলুর রশীদকে আমাদের মনে না রেখে উপায় নেই। কারণ এটি বাংলাদেশের জনপ্রিয় গানগুলোর একটি। জনপ্রিয়তাই এই গানের একমাত্র গুরুত্ব নয়, শিল্পসম্মত গান হিসেবেও এটি যথেষ্ট স্বীকৃতি লাভ করেছে। নাট্যকার হিসেবে তাঁর স্বীকৃতি বেশি জুটলেও তিনি কবি ও প্রাবন্ধিক হিসেবে সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। কী কবিতা, কী নাটক, কী উপন্যাস, কী গীতরচনা, কী প্রবন্ধ, কী অনুবাদ- সকল ক্ষেত্রেই তিনি সৃজন-মননের ছাপ রেখেছেন। বিশেষত ষাটের দশকে লেখা তাঁর নাটকগুলো তো সমকালে যথেষ্ট প্রশংসা পেয়েছিল। কারণ, পাকিস্তান শাসনামলে নাটকের ওপর যে ধরনের বাধা-নিষেধ ছিল, সেসব উপেক্ষা করেই আনম. বজলুর রশীদ নাট্যচর্চা করেছেন। শিক্ষাবিদ হিসেবেও তিনি দেশের শি্ক্ষাবিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছন। কেবল শিক্ষকতা নয়, শিক্ষার্থীদের পাঠচাহিদা পূরণে তিনি পাঠ্যপুস্তক রচনায়ও আত্মনিয়োগ করেছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করলেও পরে মহাবিদ্যালয়ে এবং শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আ,ন,ম, বজলুর রশীদ। "আমাদের দেশ তারে কত ভালবাসি, সবুজ ঘাসের বুকে শেফালির হাসি" কবিতার কবি আ,ন,ম, বজলুর রশীদ ১৯৮৬ সালের আজকের দিনে মৃত্যুবরণ করেন। বহুমূখী প্রতিভার সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ আ,ন,ম, বজলুর রশীদের ২৮তম মৃত্যু বার্ষিকীতে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

আবু নয়ীম মুহম্মদ বজলুর রশীদ (আ, ন, ম, বজলুর রশীদ) ১৯১১ সালের ৮ মে ফরিদপুর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম হারুনুর রশীদ আর মায়ের নাম নছিমুননেসা। তাঁর বাবা নদীয়া জেলায় তৃতীয় মুসলিম গ্র্যাজুয়েট এবং পেশায় ছিলেন আইনজীবী। বজলুর রশীদ ফরিদপুর জি.টি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। পড়ালেখায় তিনি অত্যান্ত মেধাবী ছিলেন। ১৯২৮ সালে তিনি ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ১৯৩১ সালে রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আই এবং ১৯৩৩ সালে বিএ পাস করেন। ১৯৩৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিটি এবং ১৯৫৪ সালে এমএ পাস করেন। বিএ পাসের ২১ বছর পরে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে তিনি কলকাতা বিশঙ্কবিদ্যালয় থেকে বাংলায় এম.এ পাস করার মতো ধৈর্য তিনি ধারণ করেছিলেন। এর ফলও তিনি পেয়েছিলেন। স্কুল শিক্ষক থেকে ঢাকা টিসার্চ টেইনিং কলেজের অধ্যাপক হয়েছেন। কলেজের চাকরি থেকে ১৯৭২ সালে অবসরের পরে তিনি ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ধ্বনিবিজ্ঞান পড়ানোর জন্য খণ্ডকালীন অধ্যাপক এবং ১৯৭৫ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে পূর্ণকালীণ অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ফরিদপুর জিলা স্কুলে পড়ার সময় ওই স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক মন্মথনাথ চক্রবর্তীর প্রেরণায় ইংরেজিতে কবিতা লিখতে শুরু করেন বজলুর রশীদ। স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালে তিনি প্রবন্ধ লিখে ‘ভগবতীচরণ স্মৃতি পদক’ লাভ করেন। এটিই তাঁর সাহিত্যের প্রথম স্বীকৃতি। তখন থেকেই তিনি কবিতা লেখার প্রতি আকৃষ্ট হন। তাঁর চার কাস উপরে পড়তেন কবি জসীমউদ্দীন। জসীমউদ্দীন সে সময়ে আ.ন.ম. বজলুর রশীদের কবিতা সংশোধন করে দিতেন। সেই বিচারে বলা যায়, জসীমউদ্দীনও তাঁর কাব্যগুরু। আ,ন,ম, বজলুর রশীদ ছিলেন জসীমউদ্দীন-প্রভাবিত কবি। জন্মসূত্রে তিনি জসীমউদ্দীনের প্রতিবেশী। জসীমউদ্দীন তখন এমএ পড়ার জন্য কলকাতায়। বাড়িতে এলে আ.ন.ম. বজলুর রশীদ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান। এসময় জসীমউদদীন তাঁর যন্তস্থ ‘বালুচর’ কাব্যের ভূমিকা লেখার জন্য বজলুর রশীদকে অনুরোধ করেন। বজলুর রশীদ সেই অনুরোধ রক্ষা করেন। এভাবে জসীমউদ্দীনই সম্ভবত তাঁর কাব্যপ্রতিভাকে যথাযথ সনাক্ত করতে পেরেছিলেন। বজলুর রশীদ ১৯৩৪ সালে ঢাকা সরকারি মুসলিম হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এর ধারাবাহিকতায় স্কুল শিক থেকে ঢাকা টিসার্চ টেইনিং কলেজের অধ্যাপক হয়েছেন। তিনি বিভিন্ন সরকারি স্কুলে চাকরি করার পর ১৯৫৫ সালে তিনি ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে প্রভাষক পদে যোগদান করেন এবং এখান থেকেই ১৯৭২ সালে অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৭৫ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে খণ্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে অধ্যাপনা করেন।

আ,ন,ম বজলুর রশীদের প্রকাশিত গ্রন্থাবলীঃ
কাব্যগ্রন্থঃ ১। পান্থবীণা (১৯৪৭), ২। মরুসূর্য (১৯৬০), ৩। শীতে বসন্তে (১৯৬৭), ৪। রঙ ও রেখা (১৯৬৯), ৫। এক ঝাঁক পাখি (১৯৬৯), ৬। মৌসুমী মন (১৯৭০), ৭। মেঘ বেহাগ (১৯৭১), ৮। রক্ত কমল (১৯৭২)
নাটকঃ ১। ঝড়ের পাখি (১৯৫৯), ২। যা হতে পারে (১৯৬২), ৩। উত্তরফল্গুনী (১৯৬৪), ৪। সংযুক্তা (১৯৬৫), ৫। ত্রিমাত্রিক (১৯৬৬), ৬। শিলা ও শৈলী (১৯৬৭), ৭। সুর ও ছন্দ (১৯৬৭), ৮। উত্তরণ (১৯৬৯), ৯। রূপান্তর (১৯৭০), ১০। একে একে এক (১৯৭৬), ১১। ধানকমল
উপন্যাসঃ ১। পথের ডাল (১৯৪৯), ২। অন্তরাল (১৯৫৮), ৩। মনে মনান্তরে (১৯৬২), ৪। নীল দিগন্ত (১৯৬৭),
ভ্রমনকাহিনীঃ ১। দ্বিতীয় পৃথিবীতে (১৯৬০), ২। পথ বেঁধে দিল (১৯৬০), ৩। দুই সাগরের দেশে (১৯৬৭), ৩। পথ ও পৃথিবী (১৯৬৭)
প্রবন্ধঃ ১। আমাদের নবী (১৯৪৬), ২। আমাদের কবি (১৯৫১), ৩। রবীন্দ্রনাথ (১৯৬১), ৪। জীবন বিচিত্রা (১৯৬২), ৫। পাকিস্তানের সুফীসাধক (১৯৬৫), ৬। স্কুলে মাতৃভাষা শিক্ষণ (১৯৬৯), ৭। ইসলামের ইতিবৃত্ত (১৯৭২)

আ,ন,ম, বজলুর রশীদ তাঁর সাহিত্যের স্বীকৃতি হিসেবে ‘ভগবতীচরণ স্মৃতি পদক’ ছাড়াও বাংলা একাডেমী পুরস্কার, ঢাকা বেতার-এর শ্রেষ্ঠ নাট্যকার ও শ্রেষ্ঠ গীতিকার এবং পাকিস্তান সরকারের ‘তমঘায়ে ইমতিয়াজ’ উপাধি লাভ করেন। সাহিত্যের প্রায় সকল শাখায় সফলতার পরিচয় থাকা সত্ত্বেও আ.ন.ম. বজলুর রশীদকে যেন ভুলতে বসেছি। তাঁর কাজের মূল্যায়ন না করে তাঁকে বিস্মৃতির দিকে ঠেলে দেয়ার দায় বাঙালি হিসেবে আমাদেরকেই বহন করতে হয় কারন আ,ন,ম, বজলুর রশীদকে নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা-সমালোচনা প্রকাশিত হয়নি। বহুমূখী প্রতিভার সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ আ,ন,ম, বজলুর রশীদ ১৯৮৬ সালের ৮ ডিসম্বের মৃত্যুবরণ করেন। আজ তাঁর ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। বহুমূখী প্রতিভার সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ আ,ন,ম, বজলুর রশীদের মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

০ Likes ০ Comments ০ Share ৪৪৯ Views