Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

রাজীব নূর খান

১০ বছর আগে

ফোটোগ্রাফি -১

(মানুষের একটাই তো মাত্র ছোট্র জীবন, যার যেটা ভালো লাগে সেটাই তো করা উচিত।)

অনেক কাল আগে,একসময় শিল্পী-সাহিত্যিকদের রিয়েলিজম বা বাস্তববাদ শব্দটি খুব পীড়িত করেছে।রনেশাঁসের সময় সকলের দৃষ্টি ফিরে গিয়েছিল ক্লাসিকাল যুগের দিকে।তারপরেও তো আবার কয়েকশো বছর কেটে।এখন সবাই বুঝতে পেরেছে, সমসাময়িক কালকে বাদ দিলে শিল্প হয় না।চোখের সামনে যা দেখছি, তার থেকে চোখ ফিরিয়ে অতীত ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে থাকাটা একঘেয়েমি পর্যায়ে এসে যায়।সৌন্দর্যনির্মানই শিল্পের শেষ কথা,কিন্তু আধুনিক জীবন, বাস্তব জীবনে কি সৌন্দর্য নেই?কোন পদ্ধতিতে ফুটিয়ে তোলা হবে সেই বাস্তব?সেটা খুঁজে পাওয়াই তো শক্ত।বাস্তব মানে কি হুবহু বাস্তব? আমরা চোখের সামনে যা দেখি,সবসময় কি তার সামগ্রিক গভীরতা দেখতে পাই?সাহিত্য,শিল্প কি শুধু আয়না? কিংবা সেই আয়নার প্রতিফলনের ওপর একটা বক্তব্য চাপিয়ে দেওয়াই কি বাস্তবতা?অনেকেই হয়তো বলবেন, চাক্ষুষ দৃশ্যই আসল সত্য, তার বাইরে আর কিছু শিল্প হতে পারে না।তাহলে,পরীদের আর আঁকা যাবে না।কারণ, পরীদের কেউ দেখতে পায় না।'কুরবে' নামে একজন শিল্পী যেমন জোর দিয়ে ঘোষনা করেছিলেন, 'শিল্প হচ্ছে একটা বস্তুগত ভাষা, যার শব্দগুলি দৃশ্যমান জিনিস।'তবে অনেকেই মেনে নিতে পারেননি শিল্প মানেই বাস্তবের প্রতিচ্ছবি।

১৮৩৯ সালে এল জে এম ডাগের নামে এক ভদ্রলোক হঠাৎ এক গোপন খবর জানিয়ে দিলেন।সিলভার নাইট্রেট মাখানো তামার পাতের ওপর সূর্যের আলো নিয়ে পরীক্ষা করতে করতে তিনি যে কোনও জিনিসের ছবি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন।কালি, কলম, রং দিয়ে আঁকা নয়, তবু ছবি!এ যেন ম্যাজিক!তামার পাতের ওপর যে-কোনও জিনিস, যে কোনও মানুষের প্রতিচ্ছায়া স্থায়ী হয়ে যাচ্ছে।এই জিনিসটার নাম প্রথম দিক ছিল ডাগেরোটাইপ, কিছুদিনের মধ্যেই তা ফোটোগ্রাফি নামে পরিচিত হয়।এই আবিস্কার শুধু বিজ্ঞানের জগতে নয়,মানুষের সভ্যতার ইতিহাসেও একটা বিস্ফোরণের মতন।উনবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানের বিস্ময়ের মধ্যে ফোটোগ্রাফি যে অন্যতম প্রধান তাতে কোনও সন্দেহ নেই।শিল্পের ইতিহাসেও এর গুরুত্ব অসাধারণ।যারা বাস্তবতার দাবি তুলেছিল তাদের তখন অনায়াসে বলা যেতে পারে,এবার নাও, কত হুবহু বাস্তব চাও! ফোটোগ্রাফ মিথ্যে বলে না।চোখের সামনে যা দেখছ, তা সবই ফুটে উঠেছে।তা হলে রং-তুলি নিয়ে আঁকাবেটা কী? যারা শুধু পোর্ট্রেট এঁকে দু'চার পয়সা রোজগার করত তাদের ভাত মারা যাওয়ার উপক্রম হলো।সাধারণ মানুষ ফোটোগ্রাফির অভিনবত্বই লুফে নিল।

প্রথম যুগে কেউ কেউ অবশ্য ফোটোগ্রাফিকে 'প্রকৃতির ওপর জোচ্ছুরি' বলে আখ্যা দিয়েছে।আবার অনেক শিল্পীও ফোটোগ্রাফির দিকে আকৃষ্ট হয়েছে।নাদার নামে একজন সে খুব সাহসী অ্যাডভেঞ্চারার,তেমনই ভালো ফোটোগ্রাফার,বেলুনে চড়ে সে আকাশ থেকে প্যারিস শহরের ছবি তুলেছে,এরকম দৃশ্য কেউ আগে দেখেনি, তাই নাদারের অনেক খাতির ছিল।এই নতুন জিনিসটার প্রতি কৌতুহল রইল বটে, কিন্তু অনেক শিল্পী ও কবি নিছক বাস্তবতার দায়িত্ব ফোটোগ্রাফির কাঁধে চাপিয়ে দিয়ে অন্যদিকে মুখ ফেরাল।দর্পনের ছবির বদলে এলো বিমূর্ত রুপ।

শিল্পীরা ফোটোগ্রাফির ব্যাপারটা মেনে নিতে পারলেন না।কিন্তু যারা পন্ডিত, যারা বিশেষজ্ঞ, যারা সমাজের হর্তাকর্তা,ওরাও দারুন খেপে উঠলেন,তাদের মনে হলো, এ যেন শিল্প-সাহিত্যের ব্যভিচার।যে ছবি সুন্দর, নিঁখুত করে আঁকা নয়, তা কী করে শিল্প হবে? যে কবিতা পড়া মাত্র বোঝা যায় না, তা আবার কী কবিতা? সবাইকে মানতে হবে শিল্প ও সাহিত্য পাশা-পাশি হাত ধরাধরি করে চলে,একটা পেছনে পড়ে থাকলে অন্যটা বেশি দূর এগোতে পারে না।ফোটোগ্রাফি জনপ্রিয় হতে লাগল দিন দিন।কিন্তু বাস্তবতা ও বিমূর্ততার লড়াই চলতেই থাকল।একদল ধরে রইল যে বাস্তবের প্রতিচ্ছবিকে শিল্প-সাহিত্যে কিছুতেই অস্বীকার করা যাবে না।আর একদল লেখক-শিল্পী বাস্তবের কোনও রকম অনুকরনকেই শিল্প বলতে রাজি নয়।চাক্ষুষ দৃশ্যের চেয়ে অবচেতনের অনুভূতিই তাদের কাছে মুখ্য।

নিঁখুত শিল্প,সুন্দর শিল্প এবং ফোটোগ্রাফির বাস্তবতা থেকে সরতে সরতে শিল্প-সৃষ্টি এত বেশি বিমূর্ততায় চলে যায় যে তা চূড়ান্ত দুর্বোধ্যতায় পৌছে যায়।ছবির মধ্যে কোনও কাহিনী থাকবে না,চরিত্র থাকবে না,এই নীতি মানতে মানতে ছবি হয়ে যায় একটা আয়তনের মধ্যে কিছু রঙের ছোপ।বিশেষ এক শ্রেনীর শিল্পবোদ্ধা ছাড়া সেসব ছবির রস গ্রহন করা সাধারণ মানুষের সাধ্যের অতীত হয়ে গেল।সমাজতান্ত্রিক এবং বাস্তবতার দর্শনে বিশ্বাসী, তারা এক সময় উচ্চ গলায় বলেছিলেন, এত কাল ছবি আঁকা হতো দেবতা এবং রাজা-বাদশাদের জন্য।কিন্তু এখন সময় এসেছে শিল্প হবে সাধারণ মানূষের জন্য।বাস্তববাদীদের মতবাদ আঁকড়ে রইলেন সমাজতান্ত্রিক দেশের নীতি-নির্ধারকেরা। সেখানে এর নাম হলো সোসালিস্ট রিয়েলিজম, যার মধ্যে আবার বিমূর্ততার কোনও স্থান নেই।কল্পনার খেলা নিষিদ্ধ।সেখানেও বাস্তবতার নামে যেসব রাশি রাশি ছবি আঁকা হতে লাগল, তা গতানুগতিকতারই নামান্তর।তার দু-চারখানা দেখার পরেই মনে হয়, এর বদলে রঙিন ফোটোগ্রাফই বা মন্দ কী!
(চলবে...)

 

০ Likes ০ Comments ০ Share ৪৪৭ Views

Comments (0)

  • - পাভেল

    এই লিখাটির সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব আমার ফেইসবুক বন্ধু "কলিযুগের কমলাকান্ত" এর। ফেইসবুকের ইনবক্সে পাঠানো মেসেজটি আমি শুধু কপি-পেস্ট করে ব্লগে পোস্ট আকারে দিয়ে দিলাম।

    - নুসরাত জাহান আজমী

    ভাবতে পারিনি আমার ছোটখাটো কোন লেখায় কারো দ্বারা এতো ভালো কোন লেখা তৈরি হতে পারে। ভালো লাগলো লেখাটা।

    • - পাভেল

      ধন্যবাদ! তবে গল্পটির আসল স্রস্টা আপনি।