পর্বঃ দুই
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে প্রতিদিন সামান্থার অনেক ব্যস্ততা। বোন দুলাভাই দুজনে নিজেরা রেডি হয়ে অফিসে চলে যায়। ভাগ্নে ভাগ্নী দুটোকে ঘুম থেকে তোলা থেকে শুরু করে নাশতা খাওয়ানো, পোশাক পরানো, টিফিন রেডি করে সাথে দিয়ে দেওয়া, স্কুলে দিয়ে আসা এবং ছুটির পরে বাসায় আনা সবই ওর একার কাজ। বোন-দুলাভাই দুজনেরই অফিস সামলে এসব দিকে সময় দেয়াটা বেশ কষ্টকর হয়ে উঠে।
দুজনেরই অফিস সেই গুলশানে। আর বাসা-স্কুল সব ধানমন্ডিতে। নেহাত সামান্থা পড়াশুনা শেষ করে অবসরই বসে আছে। এখনো কোন চাকরি শুরু করেনি। তাই এসবে ওর কোন সমস্যা হচ্ছে না।
কালরাতে ভালো ঘুম হয়নি। ভোরবেলাতেই ও বিছানা ছেড়েছে আজকে। অন্যান্য দিন যা সে কখনো করেনা। আজ সকালে নাশতা না খেয়েই আগে নেট কানেকশন লাগালো। ফেসবুক লগ-ইন করে দেখতে পেলো, ইনবক্সে একটা ম্যাসেজ। মাউস ড্রাগ করে ম্যাসেজ ওপেন না করেই যতটূকু পড়লো, “সরল আহমেদঃ ‘আপনার অনুমতি ছাড়াই আপনার ছবি...”
“কি লিখেছে? ‘আপনার ছবি’ মানে? আমার ছবি? আমার ছবি কী করেছে? কোন্ ছবি? পেইন্টিং?”
পুরো ম্যাসেজটা ওপেন হওয়ার পরে দেখতে পেলো, “আপনার ছবি অনুমতি ছাড়াই ব্যবহার করার জন্য দুঃখিত। আমার মনে হয় আপনার ভালো লাগবে।”
কালরাতের সেই লোকটা। ম্যাসেজটার মাথামুন্ডু কিছুই বুঝলোনা। “যাক্। রাতে অস্থিরভাবে না ঘুমানোর মত কোন কারণ ঘটেনি। অযথাই সন্দেহ করেছিলাম!”
এরপর সারাদিন নিশ্চিন্ত মনে ঘর কন্যায় ডুবে গেলো।
বিকেলে মেহজুবার ফোন এলো। সামান্থার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। দুজনে একই সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই বছর মাস্টার্স সমাপ্ত করেছে। মেহজুবা মনোবিজ্ঞানে। সামান্থা গণিতে।
“এই, সিদ্ধেস্বরী কলেজে নিয়োগের সার্কুলার হয়েছে। দেখেছিস? ইত্তেফাক পেপারে গতকাল প্রকাশ হয়েছে বিজ্ঞপ্তিটা। বিভিন্ন বিষয়ের সাথে গণিতেও প্রভাষক নেবে। সার্কুলারটার বিস্তারিত তুই বিডিজবসডটকম থেকে দেখে নিস। ফোনে তো এত ডিটেইল বলা যায়না।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। দেখবো।”জবাব দিলো সামান্থা।
সন্ধ্যায় নেট কানেকশন লাগিয়ে ফেসবুক, বাংলা ব্লগ, বিডিজবসডটকম সব জায়গাতেই লগ-ইন করে আগে চাকরির বিজ্ঞপ্তিটা দেখে নিলো। তারপরে,ফেসবুক ট্যাব ওপেন করলো। ফেসবুক ওয়ালে চোখ পরলো। একটা ভিডিও। গানের। কে যেনো ওকে ভিডিওতে ট্যাগ করেছে। হর হামেশাই ফেসবুক বন্ধুদের কেউ না কেউ ফটোগ্রাফিক ছবি, গল্প, কবিতায় ওকে ট্যাগ করে। দেখার জন্য। কেমন বানানো হলো জিনিসটা। কিন্তু নাম ট্যাগ করাই সার। ওর কখনোই এসবের সবগুলো সময়মত দেখা হয়ে ওঠে না। কমেন্টও করা হয়না বেশিরভাগেই। কিন্তু,আজই হঠাৎ ওর এই ভিডিওটা দেখার শখ হলো। কেননা ওটা গানের ভিডিও। গান তো সামান্থার ভীষণ পছন্দ! বিশেষ করে আধুনিক বাংলা গান।
“পলাশ ফুটেছে। শিমুল ফুটেছে। (তপন চৌধুরী)”
“নাহ। এই গানটা তো মনে হচ্ছে কখনো শুনি নাই।” গানটালোড করে কানে হেড-ফোন লাগিয়ে ও শুনতে শুনতে ভাবলো “নাহ্! গানটা মন্দ লাগছে না। ভিডিও গান! বাহ! গানের কথাগুলো তো ভালোই... পলাশ ফুটেছে ... শিমুলফুটেছে... এসেছে দারুন মাস... আমি জেনি গেছি... তুমি আসিবে না ফিরে...মিটিবে না পিয়াস...পলাশ ফুটেছে... শিমুল ফুটেছে... এসেছে দারুন মাস । ...আমি জেনে গেছি ...তুমি আসিবে না ফিরে... মিটিবে না পিয়াস... কতদিন কত আশার স্বপন দেখেছি সংগোপনে ...কতদিন কত আশার স্বপন দেখেছি... সংগোপনে... হৃদয় আমার ভরেছিলাম দখিনা ...”
কানে হেড ফোন লাগিয়ে শুনতে শুনতে ও ভিডিওটি দেখতে লাগলো। দেখতে দেখতে ভিডিওটার মাঝ বরাবর এসে ওর মাথা গরম! “ওওওহ, নো!!!এটা কি! ভাগ্যিস খেয়াল করেছিলাম!”
(চলবে...)
Comments (22)
খুবি ভাল লাগল ---
জেনে ভালো লাগলো ! পাশে থাকুন
দারুণ...
বেশ ভাল। আমার পছন্দ হয়েছে কবিতাটি।
থ্যাঙ্কু !!