Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

আবোলতাবোল বালক

১০ বছর আগে

ফুলপরীর দেশে আমি একজন।।

অনেকদিন পর আবার লিখতে বসলাম।আসলে কাজের চাপে তেমন একটা বসা হয় না,তারপরও চেষ্টা করি আপনাদের সাথে থাকতে। এই কয়দিন আপনাদের খুব মিস করেছি। সবাই কেমন আছেন?

আমি বসে আছি জিয়াউদ্যানের চন্দ্রিমাউদ্যান নামক একটা সাইনবোর্ডের পাঁশে।জিয়াউদ্যানের এই অংশের নাম চন্দ্রিমাউদ্যান।এখানে আমি প্রতি বিকেলে আসি।আসি বললে ভুল হবে,বাধ্য হয়ে আসতে হয়।কারণ,আমি ঢাকায় নতুন।ঠিকমতো কারো সঙ্গে জানাশুনা হয়নি।সরকারি বিজ্ঞান কলেজে Hsc প্রথম বষে ভর্তি হওয়ার সুবাদে নাটোর থেকে ঢাকায় আসা।এখনো ক্লাসের কারো সঙ্গে ভালভাবে পরিচয় হয়নি।তাই ক্লাস শেষে অপুরন্ত সময়টুকু কাটানোর জন্য এখানে এসে আনমনা হয়ে বসে থাকা।জায়গাটা খুব নিরিবিলি।পুরো জিয়াউদ্যান জুড়ে লোকের বিচরণ থাকেলেও এখানে লোকবিচরণ খুবি কম।সে কারনে জায়গাটা আমার খুব পছন্দের।এখানে বসে উদ্যানে আসা বিভিন্ন লোকের বিশেষ করে প্রেমিকযুগলের কৃত্তিকলাপ দেখে খুব মজা পাই বলেই জায়গাটাতে প্রতিদিন বসি।তাছাড়া নিরিবিলি পরিবেশ আমার খুব পছন্দ।গ্রামে থাকাকালে গভীর রাতে ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে কোন উচু গাছে পা এলিয়ে বসে থাকতে খুব পছন্দ করতাম।তখন পুরো পরিবেশ এতই নিরিবিলি থাকতো যে বাতাসের শব্দের মধ্যেও একধরণের ছন্দ খুজে পেতাম।পাতার সাথে পাতার স্পর্শও যেন একধরণের শ্রুতিমধুর ছন্দ তৈরি করতো।সাথে যোগ হতো ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক।আশেপাশের জোনাকি পোকার বিচরণ দেখে মনে হতো একগুচ্ছ তারকা আকাশ থেকে ছুটে এসেছে এবং তারকাগুলো একধরণের নৃত্তে মেতে উঠেছে।তখন কেমন অনুভুতি হতো বলে বুঝানো যাবে না।

আমি বসে আছি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লিখা “আরণ্যক” নামক বইটি হাতে নিয়ে।বইটি একজন শিক্ষিত বেকারকে নিয়ে লেখা।এধরণের গল্প আমার তেমন একটা পছন্দের না।তারপরও বইটি পড়তে কেমন জানি ভালোই লাগছে।পড়ার ফাঁকে ফাঁকে চোখ তুলে এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখছি আশেপাশে কি কি ঘটেছে।প্রেমিকযুগলের জুটি ছাড়া তেমন কিছুই চোখে পড়ছে না।তারা তাদের মতো করে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।এগুলো আমার দেখা ঠিক হবে না ভেবে বইতে নজর দিলাম।বই থেকে মাথা তুলবো না এটা মনে মনে স্থির করে নিলাম।আশেপাশে যা হওয়ার হোক।প্রামিকযুগলের প্রেমের মধ্যে দাঁড়কাকের মতো বাঁধা হতে চাই না।বই পড়ার মতো অতি উত্তম কর্মটি করা উচিত নিষ্ঠার সাথে।আমি নিষ্ঠার সাথে উত্তম কর্মটি চালিয়ে যাচ্ছি।শিক্ষিত বেকারের জীবনে একধরনের মোড় নিচ্ছে।বেকারত্ব জীবনের অবসান ঘটানোর জন্য তার বন্ধু হাত বাড়িয়ে দিতে চাচ্ছে।হয়তো বেকারত্ব জীবনের এবার অবসান ঘটবে।বাকি অংশটুকু আর নিষ্ঠার সাথে পড়া গেল না।পড়ার মধ্যে বাঁধা তৈরি করলো একটা ৭-৮ বছরের ফুলওয়ালা মেয়ে।মেয়েটি কানের কাছে এসে ঘ্যানঘ্যান শুরু করেছে,একটা ফুল নেন না ভাই,একটা ফুল নেন।পড়ার মাঝখানে এইধরনের ঘ্যানঘ্যান খুব বিরক্তিকর।মনে চাচ্ছে দুইএকটা ধমক দিয়ে সরিয়ে দেই।আমি বই থেকে মাথা তুলে তাকালাম।মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ধমক দেয়ার ইচ্ছে হারিয়ে ফেললাম।চেহারা খুব মায়াবী।চোখগুলো হরিণের চোখের মতো।মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে এক আটি গোলাপ নিয়ে।আমি ধমকের পরিবর্তে মৃদু হেঁসে বললাম,ফুল লাগবে না।মেয়েটি করুন চেহারায় বলল,নেন না একটা।হাতের ইশারায় একটা প্রেমিকযুগলকে দেখিয়ে বললাম,ফুলতো ওদের দরকার।আমি ফুল দিয়ে কি করবো?ছোট্ট মেয়েটি বলল,অদের কইচিলাম,নিবার চায় না।আপনে একটা নেন না।বললাম,ঠিক আছে ফুল নিবো, কিন্তু টাকা দিবো না;রাজি?মেয়েটি মায়াকাঁড়া হাঁসি দিয়ে বলল,আইজ না থাকলে কাইল দিয়েন।তারপরও একটা ফুল নেন।আমি হেঁসে বললাম,তুমি খরিদ্দারকে ফুল বাঁকি দাও নাকি!মেয়েটি বলল,দেই না।তয় আপনেরে দিমু।কারন আমি আপনেরে পেরাই এহানে বইসা থাকতে দেহি।আমি বললাম,ও আচ্ছা;

নাম কি তোমার?

গোলাপি বানু।তয় বাপে কয় “গোপী”

আমি মৃদু হেঁসে বললাম,তুমি গোলাপ বিক্রি কর,এই জন্য তোমার নাম গোলাপি?

মেয়েটি মিসকি হাসল,কিছুই বলল না।

আমি হেঁসে বললাম,যারা গাঁদাফুল বিক্রি করে তাদের নাম হওয়া উচিত গাঁদি।ঠিক বলছি না?মেয়েটি প্রশ্ন করলো,গাঁদি কি?

গাধা চিনো? “হু”

মেয়ে গাধাদের বলা হয় গাধী।গাধী থেকে এসেছে “গাঁদি”।মেয়েটি কথা শুনে হাঁসি শুরু করলো।

আমি বললাম,তোমাকে কি নামে ডাকবো?গোলাপি বানু না গোপী?

মেয়েটি বলল,আপনের ইচ্ছা।বললাম,ঠিক আছে তোমাকে গোলাপি ডাকবো।গোলাপি এখন ট্রেনে,না হয়নি গোলাপি এখন চন্দ্রিমা উদ্যানে।মেয়েটি মিসকি হাসল এবং ঘাড় কাত করে আমার সাথে একাত্মতা পোষণ করলো।

বললাম,তো গোলাপি,তোমার গোলাপ কতো করে?

একটা ১০ টেকা;

আমি বললাম,তোমার সাথে তো ওয়াদা করছি ফুল নিবো।না নিলে তো সমস্যা,ওয়াদার বরখেলাপ হবে।আর ওয়াদার বরখেলাপ কি জানো?

গোলাপি না-সূচক মাথা নাড়ল।

ওয়াদার বরখেলাপ হচ্ছে মুনাফিকের একটি চিহ্ন। আমি মুনাফিক হতে চাই না। সুতারং তোমার থেকে একটা ফুল নেবো।দাও একটা ফুল,ভালো থেকে দিবে ঠিক আছে?বলতে বলতে পকেটে হাত দিলাম।সাথে সাথে বুঝতে পারলাম কেল্লা খতম।পকেটমার সাহেব মানিব্যাগ নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নিয়েছে।

মেয়েটি বলল,এই নেন এক্কেরি বাইছা দিচি।গোলাপি একটি গোলাপ আমার দিকে এগিয়ে দিলো।আমি মৃদু হেঁসে বললাম,গোলাপি গোলাপ দিতে হবে না।পকেটমার মানিব্যাগ মেরে দিয়েছে।

গোলাপি বলল,ঠিক আছে টেকা আইজ দিতে অইব না।কাইল দিয়েন।

বললাম,কালকে যদি তোমাকে না পাই অথবা যদি আমি আসতে না পারি?তাইলে পরের দিন দিয়েন।

মেয়েটি নাছোড়বান্দা।মনে হয় একটা ফুল দিয়েই ছাড়বে।অবশেষে বাকিতে একটা ফুল নিলাম গলাপির কাছ থেকে।ফুল নেয়ার পর বুঝতে পারলাম গোলাপি আমাকে একটা ফুল দিতে পেরে খুব আনন্দিত বোধ করছে।চেহারা দেখে বুঝতে পারলাম।কেন এই আনন্দ এর অর্থ বুঝতে পারলাম না।এখানে আনন্দিত হওয়ার কিছুই নেই।টাকা দেই নাই,কবে দিবো তারও কোন ঠিক ঠিকানা নেই।

জিজ্ঞেস করলাম,গোলাপি থাকো কোথায়?মেয়েটি হাত উঁচিয়ে একটা বস্তির মতো জায়গা দেখিয়ে দিয়ে বলল,অই হানে।বললাম,কাল তোমাক এখানে না পেলে তোমার ঘরে নিয়ে টাকা দিয়ে আসবো,ঠিক আছে?

মেয়েটি বলল,আইচ্চা।বললাম,তাহলে এখন যাও।বাকি ফুলগুলো বিক্রি কর।সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেছে,আমিও উঠবো।

মেয়েটি মৃদু হেঁসে অন্য দিকে চলে গেল।আমিও নিজ গন্তব্য কর্ণফুলী মেসের দিকে রওয়ানা করলাম। মানিব্যাগ খোয়া যাওয়ার কারণে পায়ে হেঁটেই চলতে শুরু করলাম।আমি কর্ণফুলী মেসে থাকি।ঢাকায় পরিচিত আত্মীয়স্বজন না থাকার কারণে মেসে উঠলাম।আমার রুমে আমি সহ ৩ জন।তিনজনের মধ্যে আমিই একমাত্র ছাত্র বাকিরা চাকরিজীবী।

মেসে ঢুকা মাত্রই দবির সাহেব এগিয়ে এলেন।উনি আমাদের মেস ম্যানেজার।আধাপাকা চুলের ছোটখাটো মানুষ।কথায় আছে খাট লোক খুব চতুর হয়।উনি সেই বৈশিষ্টের অধিকারী।(চলবে............)

আপনাদের উৎসাহ পেলে বাঁকি অংশ শুরু করবো।।

ফেইজবুকে আমি  আবোলতাবোল বালক ।।

সবাই ভালো থাকবেন।।

 

 

 

 

 

০ Likes ৪ Comments ০ Share ৫৯৬ Views

Comments (4)

  • - ছড়াবাজ

    যে ঠোঁট চুমায় পাইকারী রেটে,
    অচিন যুবক তরে,
    সহজেই পেলে সস্তায় পথে,
    হইলি পাগল ক্যা রে?

    সাহস করে একটু এগিয়ে,
    চাইলে একটুখানি,
    লক্ষণ বলে করবে না মানা,
    বলি ঠিক, আমি জানি।

    • - বাঙলা বেলায়েত

      ছড়াবাজের ছড়ায় মুগ্ধ হলাম।

    - মাইদুল আলম সিদ্দিকী

    অশেষ ভালোলাগা জানালাম

    • - বাঙলা বেলায়েত

      ধন্যবাদ আর ভালবাসা জানিবেন।

    - মাসুম বাদল

    খুব খুব ভাললাগা জানালাম...

    • - বাঙলা বেলায়েত

      অনেক ধন্যবাদ মাসুম বাদল ভাই।

    Load more comments...