Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

ফাতিন আরফি

৯ বছর আগে

ফিলিস্তিনিদের আমার খুব বলতে ইচ্ছে করে...

সময়ের এপিটাফ...
████████████████  
প্রতিটি সামাজিক মানুষের সাধারণ একটি বর্হিপ্রকাশ হলো- নিজ নিজ জায়গা থেকে শুদ্ধ আর সুন্দরের স্বীকৃতি প্রদান করা। ব্যক্তিটি যতই নিকৃষ্ট হোক না কেন তার প্রকাশ্য দৃষ্টিভঙ্গি সহজাত গড়পড়তা মানুষের মতো। আমরা খারাপ কে খারাপ বলি, ভালো কে ভালো। যাকে ভালো লাগে না তার সঙ্গ ত্যাগ করি। যে অন্যের উপর জুলুম করে, সুযোগ থাকলে তার জুলুম বন্ধের চেষ্টা করি। সৃষ্টির সবচেয়ে বুদ্ধিমান জীব হয়েও কেবলমাত্র এই একটি জায়গায় নিজেকে আসলেই মানুষ ভাবতে গর্ববোধ করি- আমার মনুষ্যত্ব নামে একটা বৈশিষ্ট্য আছে যার রূপ ভালোবাসা, বিসর্জন, সহানুভূতি।

পথ চলতে অভাবীদের দেখে কষ্ট লাগে, অবুজ শিশুর কান্না মাখা মুখ দেখে জল আসে, হয়ত না চাইতেও বোবা-অন্ধ লোকটি দেখে ভয় লাগে- মানবিক ভয়। সবচেয়ে লম্পট যুবকটি যে কোন যুবতীকে ধর্ষণের পর লুটিয়ে পড়েছিল নিদ্রায়, সেও একবার চোখ মেলে উপরে তাকায়- একটা হাহাকার থেকে, একটা মানবিক লজ্জা থেকে। হয়ত এসব খুবই ক্ষণিকের তবুও আমি গর্ববোধ করি। হয়ত নুন্যতম লজ্জা ঢাকতে, তাতে কি! আমি তো এখনও পশু হয়ে যাইনি জগতের বিরল কিছু মানুষখোরের মত যারা মানুষের রক্ত খেয়ে বাঁচে! যাদের দেখলে বীভৎসতার ছবি চোখে ভাসে, যাদের দেখলে হায়না- নেকড়ের হিংস্রতা ভুলে যাই, যাদের দেখলে মায়ের কথা মনে পরে- চোখের জলই যেন যে মায়ের লজ্জার আঁচল। যে মা জন্মের পরেই প্রহর গুনে কখন তার সন্তান জলসানো মাংসপিন্ড হবে...

আমি কারাগারে খুনির চোখে ভালোবাসা দেখেছি, হয়ত সেটা লজ্জা- মানবিক হীনমন্যতা। তবুও এরশাদ শিকদারের মতো ব্যক্তিদের আমার ভালো লাগে। হেল্যাগু খাঁর স্কেচে আমি ক্লান্তির ছাপ পাই, সিনেমা-ডকুমেন্টারিতে তে যখন হিটলারকে দেখি, যখন তার আত্মজীবনী গ্রন্থ মাইন ক্যাম্ফ পড়ি, আমি খুব তৃপ্ত হই- এই লোকটিরও লজ্জা ছিল- পৃথিবী থেকে লুকিয়ে বিদায় নিয়েছে। আমি গুলি খাওয়া পাখির ছটফটানিতে যতটা না বিচলিত হই, রুগ্ন, দুর্বল পাখিকে যখন পিপীলিকার দল বিষাক্ত কামড়ে কামড়ে জীবন্ত খুটে খায়- আমার অনেক বেশি কষ্ট লাগে- মানবিক কষ্ট। মাঝে মাঝে হলোকাস্টকে গুলি খাওয়া পাখির মত মনে হয়, আর প্রাচীরের কারাগারে যুগের পর যুগ ধরে ক্ষুধা, অত্যাচার, নিষ্পেষণ, বর্বরতা দিয়ে গাযার মানুষগুলিকে যখন নিঃশেষ করা হয় তখন সেই পিপীলিকার জীবন্ত পাখি খুটে খাওয়ার স্মৃতি মনে পরে। আমার তখন হিটলার, হেল্যাগু খাঁ কে অনেক মহৎ মনে হয়, হিরোসিমা-নাগাসাকির ধ্বংসযজ্ঞকে অনেক তুচ্ছ মনে হয়...

মৃত্যুটা খুব কষ্টের, কিন্তু মৃত্যুর প্রহর গোনা তার চেয়ে ঢের বেশি কষ্টের। গাযার মানুষগুলো দেখলে আমার অষ্টম শ্রেনীর ক্লাস টিচারের কথা মনে পরে, ষাটোর্ধ হলেও মানুষটির মুখটি ভরা ছিল কালো চাপদাড়িতে। সবসময় হাসিখুশি থাকতেন। ক্লাসে পড়া জিজ্ঞেসের আগে আমাকে বলতেন, "কিরে চোরা? আছোছ কেমোন?" ক্লাসের সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ত। আমিও হাসি মুখে উত্তর দিতাম, "কি চুরি করেছি স্যার!" স্যার বেতের ছরা দিয়ে পিঠে আঘাত করে বলতেন, "ক্যান তুই জানো না কি চুরি করছো?" ভাবতেই খুব কান্না পায়- হটাত একদিন গ্রামের বাড়ি গিয়ে শুনি- কয়েকমাস আগে স্যার মারা গেছেন। হায়! মৃত্যু সংবাদটা আমার কাছে পৌঁছল না। স্যারের সাথে শেষবারের মত আমার সাক্ষাৎ হলো না! সেই থেকে আমার খুব আক্ষেপ, স্যারকে একটা বলা বাকি ছিল- স্যার, স্কুল জীবনে আপনার মত কেউ আমাকে ভালবাসেনি। আমার মাঝে মাঝেই জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হতো- স্যার, আপনি আমাকে কেনো এতো ভালোবাসেন। অথচ কোনদিন আপনাকে বলতে পারিনি, স্যার, আমি আপনাকে খুব ভালোবাসি, অনেক ভালোবাসি স্যার... আমার প্রচন্ড কান্না আসে, আক্ষেপ হয়, আপনাকে একবার যদি আমি বলতে পারতাম- স্যার, আপনি ছিলেন আমার বাবার মত... আমি বলতে পারিনি, আর কখনই বলতে পারবো না... গাযার মানুষগুলো দেখলে আমার সেই স্যারের কথা মনে পরে, হাসিমাখা মুখগুলো দেখে বলতে ইচ্ছে করে- তোমাদের খুব ভালোবাসি, অনেক অনেক ভালোবাসি, কিন্তু বলতে পারিনা, বলতে পারিনা- “হে গাযাবাসী! মৃত্যুর জন্য প্রতি মুহুর্তের অপেক্ষার কষ্টটা আমাকে একটু দাও। আমার বুকে তোমাদের একটু জড়িয়ে নিতে চাই, জড়িয়ে নিতে চাই যেন অন্তিম বুলেটটি আগে আমাকে বিদ্ধ করে- দীর্ঘ একটা কষ্ট থেকে বাঁচতে- একটা মানবিক দুর্বলতা থেকে মুক্তি পেতে- এ চোখে যেন দেখতে না হয় অবুঝ শিশুর ঝলসিত খুলি, ট্যাঙ্কের তলায় পিষ্ট পাথর নিক্ষেপের দায়ে দন্ডিত বালকের জীবন্ত ফসিল, লক্ষ প্রাণের বিয়োগ বিধুর অশ্রুসজল মায়ের মুখ।”
আমার খুব বলতে ইচ্ছে করে... 
████████████████
৬ Likes ৭ Comments ০ Share ৬৩৫ Views

Comments (7)

  • - পিয়ালী দত্ত

    ভাল