Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

রাজু মল্লিক

৯ বছর আগে

ফালতু গল্প ১৮ +......


   ধরেই নিয়েছি যূথী পালিয়ে বিয়ে করে এখন আর ফিরে আসবে না লজ্জায় । সুখেই আছে সে । দীর্ঘশ্বাস ফেলতে ফেলতে বললো মামুন । দেয়ালে হেলান দিয়ে বসা সোহেল শুনছে আর মুচকি মুচকি হাসছে ।

-ঐ বেহায়া !! হাসিস কেনো ? মামুন রেগে যায় ।

-না দোস্ত , হাসি না ।

-তাহলে গান গাস নাকি !

এখনো মুচকি হাসছে সোহেল । “তোর লাভ বার্ড উড়ে গেলো । এমন একজনের খাঁচায় বন্ধী হলো । সেটা ভেবে পেটের বাতাস বের হতে গিয়ে হাসি বের হয়ে গেছে । ভাগ্যিস আর কিছু বের হয় নাই ।”

-মাম্মা ! তোমার কথায় জব্বর রস ! মামুন হালায় দেবদাস অয়া বয়া রইছে । আর তুমি মামা ঢাকনা খুলতে চাও । কথাগুলো বললো মামুন আর সোহেলের ঢাকাইয়া বন্ধু , নাম বাদশা । ভালো নাম মাহফুজ । কিন্তু “বাদশা” নামটা অনেক আগে থেকে চাউর হয়ে গেছে । ছোট বেলা থেকে শাহ্‌রুখ খানের সিনেমা দেখার পোকা । শাহ্‌রুখ হলো বলিউডের সিনেমা জগতের বাদশা আর মাহফুজ হলো ঢাকাইয়া বাদশা । অবশ্য নামে বাদশা হলে কি হবে কামেও বাদশা ।

-চুপ কর ! ধমক দেয় সোহেল । “কথায় কথায় অশ্লীল ইঙ্গিত । ঢাকনা খুলতে চাই মানে কিরে ??”

-আররে!! বুঝ না ? সবার লগেই একটা কইরা ঢাকনা থাকে । ম্যানহোলের ঢাকনা । খুললে জব্বর সেন্ট বাইর অয় । বলতে বলতে বাদশা পিছন ফিরে দাঁড়াতে যায়...

-ঐ থাম ! এক্সাম্পল দিতে হবে না । মামুন বলে উঠে বাদশাকে উদ্দেশ্য করে । “চল হেডমাস্টারের কাছে যাই ।”

-খাঁড়াও ! খাঁড়াও ! যামুইতো । সিগারেট খায়া লই । বাদশা সিগারেট এগিয়ে দেয় । তিনজন সিগারেট ফুঁকতে থাকে ।
 
      ওরা তিনজন , যূথী নামক মেয়েটির বাবার বাড়ির ছাদে বসে আছে । মামুন এই বাড়ির ভাড়াটিয়া আর বাড়িওয়ালার মেয়ে হচ্ছে যূথী । সোহেল পাশের বিল্ডিংয়ে থাকে । আর বাদশা ওরফে মাহফুজ ওরফে ওস্তাদ পুরান ঢাকায় থাকে । বন্ধুদের মুখরোচক খবর শুনলেই চলে আসে সে । না , উড়ে আসে সে উড়াল পঙ্খীর মত । নয়তো ওর দেখা পাওয়া আর আমাজনের জঙ্গলে হারিয়ে যাওয়া একই কথা । তবে দিলদরিয়া টাইপ বাদশা । বন্ধুর বিপদে জান না দিলেও অন্তত ওর টাকা পয়সা সব উজাড় দিয়ে দেবে । ওহ! ‘ওস্তাদ’ নামকরণের কাহিনী আরেকদিন বলা যাবে । এখন না । ঐটা আবার ২০+ ।

      যাইহোক , ওরা তিনজন ভালো বন্ধু । সবাই তুই তুই করে কথা বললেও , বাদশা কিন্তু তুমি করে বলে । কেবল সিরিয়াস কথা বলার সময় শুধু তুই করে বলে সে । এটা সবাই ভালো করে জানে যে , ওর তুমি করে বলা মানে হচ্ছে মজা করে কথা বলা । তাই ওর কথা নিয়ে কারো কোনো অভিযোগ নেই । আবার ঢাকাইয়া ভাষায় গালাগালি শুরু করে রেগে গেলে । তাই ওর কথায় কেউ তর্কেও জড়ায় না । আর ঐযে আছে একটা ইঙ্গিত ১৮+ । না বুঝলে নাই । এসব টপিক বাদ এখন । মূল ঘটনায় আসি ।

      যূথী পাশের বাসার আলফিকে ভালোবাসে । হোঁদল কুতকুত আর সবজান্তা শমশের টাইপ এই আলফি । যূথীর পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কেউ ভাবে নাই এই মগা মানে আলফি , রূপবতী-গুণবতী-মেঘবরণকেশী-হরিণীনেত্রি ক্লিওপেট্রা মানে যূথীর মন পুরোটাই জিতে নিয়েছিলো গোপন লটারির মাধ্যমে গোপনে । ঘুণাক্ষরে কেউ জানতে পারেনি । দুইদিন হয়ে গেলো এখনো কোনো খবর নেই তাদের । শোনা গেছে ,আলফির রচিত সেই মান্ধাতার আমলের কবিতায় পটে গেছে । আফসোস , ওরা তিনজন কবিতা লিখতে পারে না ।

      সূর্যেরও চার্জ ফুরিয়ে যাচ্ছে । রিচার্জের জন্য রেডি হচ্ছে । চারিদিকে আর মাত্র এক পারসেন্ট আলো আছে সূর্যদেবের । সেইসাথে ওদের তিনজনের সিগারেটও শেষের পথে । অমনি হুরমুর করে পলি চলে আসলো ছাদে । যূথীর ছোট দুষ্ট বোন । বানর প্রজাতির । মানে হলো এক জায়গায় স্থির থাকে না । সম্ভবত ব্যালেন্সের সমস্যা ।

-ভাইয়া , সিগারেট খাচ্ছেন ? আশ্চর্য হয়ে মামুনকে উদ্দেশ্য করে বললো পলি ।

-নাগো বইন । সিগারেট না । কয়েল , ছাদে অনেক মশা অইছে । টিটকারি করলো বাদশা ।
মামুন বললো , ‘তুই চুপ কর ।’  সিগারেট দেখিয়ে পলিকে বললো, ‘হ্যাঁ খাচ্ছি । কিছু বলবে তুমি ?’
‘দাঁড়ান , আমি অ্যান্টিকে বলে দেবো ।’  বলেই পলি দৌড় দিলো ।

-মাম্মা । চীজ একখান ! পুরা ছাদ কাপায়া গেলো গা । কত অইবরে ?
একশ পাঁচ । সোহেল উত্তর দিলো বাদশাকে ।

-আমি ভাবছিলাম তিন মণ তো অইবই । যাউগগা , সিগারেট খাওনের কথা যে খালাম্মা জানে , রিকিশি পাথো মনে অয় জানে না ।

-সমস্যা নেই । ওর টিউটর , ফরহাদ আমার ভার্সিটির বন্ধু । বলে দিলেই হবে । ওর দুই দিনের খাবার বন্ধ । আর...
মামুন তাড়া দিলো । “চল , হেডমাস্টারের কাছে যাই । দেরী হয়ে যাচ্ছে । তাড়াতাড়ি না গেলে পাবো না তাঁকে ।”

      হেডমাস্টার হচ্ছেন একজন আদু ভাই । মামুনদের চাইতে অন্তত দশ বছরের বড় । এখনো পড়াশোনা করেন । তবে অনেক জ্ঞানী লোক । এক সময় ‘লাভ গুরু’ ছিলেন । কাজী ছিলেন কিছুদিন । বিয়ে পড়িয়েছেন অনেক । রিয়েল স্টেট বিজনেসের সিনিয়র এক্সেকিউটিভও ছিলেন ।  ছয়মাসের দারোয়ানের অভিজ্ঞতা আছে । লেখালেখিতে সিদ্ধহস্ত । সৃজনশীল প্রতিযোগিতায় পুরস্কার প্রাপ্ত । মঞ্চ নাটক করেন । সেই সুবাদে লোকাল রেস্টুরেন্টে ওয়েটারের টিপস দিয়ে কেনা টিভি দেখে রাত কাটান । নিশাচর প্রাণীতো তাই । একসময় ভার্সিটি ভর্তি কোচিংয়ের জনপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন । তবে তিনি একজন ইঞ্জিনিয়ার ।  সমাজসেবক ।  আবার বড় ব্যবসায়ী । আবার তিনি ললনাদের আইডলও । কারণ তিনি কন্যা রাশির জাতক তা নয় । কারণ তিনি এলাকায় একটি স্কুল খুলে দিয়েছেন । সেখানে কিছু শিক্ষিত মেয়েদের কর্মসংস্থান হয়েছে সে কারণে । আচ্ছা এখন থামি । তার সম্পর্কে বলতে গেলে নতুন গল্প শুরু করতে হবে । আর নয়তো গুল মারছি ভেবে বসবেন ।
এই আদু ভাইয়ের চেলা হচ্ছে ওরা তিনজন । খুব স্নেহ করেন তিনি এদেরকে ।

বাসা থেকে নেমে মামুন হেডমাস্টারকে কল দিচ্ছে ফোনে ।

ধেৎ!! একটা বিজ্ঞাপন বিরতি চলে আসলো । ধুর!! আবার কারেন্টও চলে গেলো । এক ঘণ্টার আগে আসবে না । নাটকটা তো শেষ হয়ে যাবে ততোক্ষণে । গল্পটা শেষ করি কীভাবে এখন ? নাটকটা দেখে দেখে লিখছিলাম ।
যাক , যতটুকু মাথায় ছিলো লিখে ফেলেছি । এখন আর মনে নেই । থাক আর দরকার নেই লিখে । তাছাড়া আমার গল্প তো আর নোবেল প্রাইজ জিততে যাবে না । তাই না??

যাইহোক , একটা গোঁজামিল দিয়ে শেষ করেই দেই । যেহেতু এইটিন প্লাস । আঠারো বছরের কম পোলাপাইনরা বুঝবে না । তাদের কল্পনা শক্তি কম । বুঝবে আঠারো বছরের বেশী বয়স্করা । লিখব একটা বুঝে নিবে আরেকটা । এতোই প্রখর তাদের চিন্তা শক্তি ।

আহ ! কারেন্ট আসছে । টাইপিং শুরু ।

মামুনের ফোন কল ধরছেন না হেডমাস্টার । রাস্তার কিছু দূরেই দেখা গেলো হেডমাস্টারকে টং দোকানের পাশে । চা পান করছেন রাস্তার দেয়ালে লাগানো বিজ্ঞাপন পড়তে পড়তে । ওরা তিনজন ওদিকে এগিয়ে গেলো । বাদশা চিৎকার দিয়ে উঠলো , “গুরু ! ফোন ধরেন না ক্যারে ?”

হেডমাস্টারের কোনো ভাবান্তর নেই । ওরা তিনজন চুপ । বিজ্ঞাপনটা পড়া শেষ করে তিনি বললেন , “ফোন বাসায় । সাথে নিয়ে বের হইনি । যূথী বাসা থেকে পালায়নি । যূথীর বান্ধবী আজমি এই গুজব ছড়িয়েছে যে যূথী পালিয়েছে । আসলে ও বেড়াতে গেছে নানা বাড়ি । আর আলফি পুলিশের কাছে ধরা খেয়েছে আজে বাজে কবিতা লিখে । এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে যূথী দেখে নিতে চাচ্ছে মামুন কি করে দেখার জন্য । বুদ্ধিটা আমিই দিয়েছি ওকে । আমি জানি যে তোরা নিজেরাই আলোচনা করবি , তারপর আসল খবর খোঁজ না নিয়ে আগে আমার কাছেই আসবি ।  এখন যদি তোদের কিছু বলার থাকলে আগে চা খেয়ে নে । তারপর বল । ” পুনরায় ব্যাচেলর রুমমেট আবশ্যক বিজ্ঞাপন পড়তে লাগলেন তিনি ।

ওরা তিনজন হাঁ করে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে । বাদশা বললো , “গুরু আমগোরে টুট টুট টুট বানায়া দিলো! বিপ্ বিপ্ বিপ্...” বাদশা রেগে গেছে এখন... তখন হেডমাস্টার একটা রুমমেট আবশ্যক ফোন নাম্বার টুকে নিলো ঠাণ্ডা চা খেতে খেতে ।।


৬ Likes ৩৮ Comments ০ Share ২১৯৬ Views