Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

রাজু আহমেদ

৯ বছর আগে

প্রয়াত এবিএম মূসার দুইটি স্বপ্ন ও সাংবাদিকতা

(০৮-০৪-২০১৫ ইং তারিখে দেশের বহুল প্রচারিত দৈনিক ইনকিলাবে আমার এ লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে । পত্রিকার লিংক লেখার শেষাংশে দেয়া হল)

 

যেদিন তুমি এসেছিলে ভবে, কেঁদেছিলে তুমি একা, হেসে ছিল সবে....এমন জীবন তুমি করিও গঠন, মরনে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভূবন’-কবির এ উক্তি যাদের জীবনের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে, তেমনি একজন মহীরুহ ছিলেন এদেশের সাংবাদিকতার অন্যতম পথিকৃৎ কিংবদন্তীতুল্য এবিএম মূসা   বাংলাদেশের সাংবাদিকতার অঙ্গনে যিনি নতুন ধারা সৃষ্টির জন্য আমরণ সংগ্রাম চালিয়েছেন সেই  স্পষ্টভাষী, সজ্জন এবিএম মূসা আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েছেন দীর্ঘ এক বছর হতে চললসাংবাদিক ও সংবাপত্রের দুর্দিনে পরম শ্রদ্ধাভাজন মূসার শুণ্যস্থান আজও পূরণ হয়নি বরং ক্ষতের শূণ্যতা বেড়েই চলছে । সংবাদপত্রের পাঠক সমাজের একাংশ এবিএম মূসার কলাম পড়ার আশায় আজও বসে থাকে কিংবা টিভিতে তার স্পষ্ট ভাষণ শোনার জন্য আগ্রহের কমতি হয়নি কারো মধ্যে কিন্তু বাস্তবতা বড় নির্মম । মূসার লেখা কিংবা কথার ফুলঝুড়ি আর কোনদিন শুনতে পাবেনা এ ধরণীর মানুষ ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল বুধবার সোয়া একটায় রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগের মাধ্যমে আপদমস্তক গুনী মানুষটি বিশ্বব্যাপী তার ভক্তকূল এমনকি সমালোচকদেরকেও চোখের জলে ভাসিয়ে চির বিদায় নেন । সাঙ্গ হয় দীর্ঘ ৮৪ বছরের একটি বর্ণাঢ্য জীবনের গল্প

 

যার সমগ্র জীবনজুড়ে ছিল ভোগের চেয়ে ত্যাগের ইতিহাস বেশি । গণমাধ্যমকে নিয়ে আমরণ স্বপ্ন আঁকা মানুষটির অনেক স্বপ্নই হয়ত বাস্তবতায় রূপ পায়নি তবে তার সরব উপস্থিতি এবং অবদানের কথা এদেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া কোনদিন ভুলতে পারবে না এমননি শোধ দেয়া যাবে তার ঋণ । আপদমস্তক গুণী এবিএম মূসার সারা জীবন ছিল নানা বৈচিত্র্যে ভরপূর ১৯৩১ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারী ফেনীর জেলার ফুলগাজী থানার ধর্মপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে সাংবাদিক এবিএম মূসা জন্মগ্রহন করেন তার শিক্ষাজীবন কেটেছে চট্টগ্রামের সরকারি মোসলেম হাইস্কুল, নোয়াখালী জিলা স্কুল, ফেনী কলেজ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ-এ বিএ প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়েছেন চৌমুহনী কলেজ থেকে ছাত্রজীবনেই সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি হয় চৌমুহনী থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক কৈফিয়তপত্রিকার সম্পাদক হিসেবে এ সময়েই তিনি বাম-রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন ছাত্রজীবনে নিয়মিত লিখতেন সাপ্তাহিক সংগ্রাম ও পাকিস্তান অবজারভারে

 

এবিএম মূসার প্রথম মৃত্যু বার্ষিকিতে স্মরণ পড়ে তার বর্ণিল পেশা জীবনের কথা । একজন বস্তুবাদী সাংবাদকর্মী হিসেবে এবিএম মূসার পেশা জীবন ছিল অনেক দীর্ঘ এবং সফলতায় ভরপূর   ১৯৫০ সালে তার পেশা জীবনের সূচনা হয় যা মৃত্যুর আগে অসূস্থ হওয়া পর্যন্ত চলমান ছিল দীর্ঘ ছয় দশক তথা ৬৩ বছরের পেশা জীবনে তিনি তার সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছিলেন বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন নামজাদা প্রতিষ্ঠানে যেখানেই যে কাজ করেছেন সে কাজের সাথে হৃদয়ের মাধুরী মিশিয়েছিলেনপেশাজীবনে তার এ অকৃত্রিমতাই তাকে সফলতার শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছিলবিভিন্ন ক্ষেত্রে তার রেখে যাওয়া অবদানের কারণে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ তাকে শ্রদ্ধা ও ভক্তির সাথে অনন্তকাল হৃদয়ে গেঁথে রাখবে  ১৯৫০ সালে দৈনিক ইনসাফ- পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে তার প্রাতিষ্ঠানিক পেশাজীবনের সূচনা হয়েছিল একই বছরে তিনি ইংরেজী দৈনিক পাকিস্তান অবজারভারেযোগ দেন ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান অবজারভারে রিপোর্টার, স্পোর্টস রির্পোটার, বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার পাকিস্তান অবজারভার বন্ধ করে দিলে তিনি দৈনিক সংবাদেযোগ দেন ১৯৫৪ সালে পূনরায় পাকিস্তান অবজারভার চালু হলে তিনি তার পূর্বের কর্মস্থলে ফিরে যান ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিবিসি, সানডে টাইমস প্রভৃতি পত্রিকায় সংবাদদাতা হিসেবে এবিএম মূসা রণাঙ্গন থেকে সংবাদ প্রেরণ করতেন বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি বিটিভির মহাব্যবস্থাপক, মর্নিং নিউজের সম্পাদক হিসেবে গুরুদায়িত্ব পালন করেন তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন   শুধু বাংলাদেশের গন্ডীর মধ্যেই এ অকুতোভয়ী সাংবাদিকের পেশা জীবন সংকীর্ণ ছিলনা ১৯৭৮ সালে এ মহান সাংবাদিক থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অবস্থিত জাতিসংঘের পরিবেশ কার্যক্রমের (এসকাপ) এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক পদে যোগ দেন তিন বছর সেখানে সফলতার স্বাক্ষর রেখে ১৯৮০ সালের শেষ দিকে তিনি দেশে ফিরে আসেন দেশে ফিরে তিনি ১৯৮১ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এবং ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন ২০০৪ সালে তিনি কিছুদিন বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এছাড়াও নির্ভীক সাংবাদিক এবিএম মূসা জাতীয় প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য এবং আজীবন সদস্য ছিলেন তিনি চারবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও তিনবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন

 

 

এবিএম মূসা ছন্দের জাদুতে লিখতে এবং যৌক্তিভাবে কথা বলায় বিশেষ পারদর্শী ছিলেন মৃত্যুর পূর্ববর্তী বছরগুলোতে তিনি টেলিভিশন টক-শোতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মানুষের গনতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে কথা বলে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিলেনসরকার এবং সরকারী দলের কর্মকান্ডের সমালোচনা করায় তাকে অনেক গঞ্জনার শিকার হতে হয়েছেকালজয়ী এ লেখক, সম্পাদক মুজিব ভাইনামের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় বই রচনা করেন এবিএম মূসার পছন্দের সাংবাদিকদের মধ্যে অতীতে হ্যারি ইভান্স এবং বর্তমানে গার্ডিয়ানের রবার্ট ফিস্ক ছিলেন শীর্ষে সাংবাদিকতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় এবিএম মূসা শতাধিক পুরস্কার অর্জন করেছেন এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে একুশে পদক (১৯৯৯), জেফারসন ফেলোশিপ (১৯৭০), কমনওয়েলথ প্রেস ইউনিয়ন ফেলোশিপ (১৯৬১) প্রভৃতি এবিএম মূসা তার বৈপ্লবিক কর্মকান্ড এবং নির্ভীক সত্যের সৈনিক হিসেবে বাংলাদেশের তরুনদের মনের গভীর স্থান করে নিয়েছিলেন   তার জীবদ্দশায় সম্পাদিত মহৎ কর্মের কারনে তার এ স্থান তার অনুপস্থিতিতেও তার অনুসারীরা সারা জীবন ধারণ করবে

 

পেশার জগতে সাংবাদিকতা মহান পেশা হিসেবে স্বীকৃত সেই সাংবাদিকরা বিভিন্ন দলের অন্ধ সমর্থন করুক সেটা এবিএম মূসা কখানো চাইতেন না কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষপাতিত্ব করতে গিয়ে সাংবাদিকরা সত্যের প্রকাশ থেকে বিচ্যুত হবে এটা তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মেনে নিতে পারেন নি বাংলাদেশের জাতীয় প্রেস ক্লাব দুটি ভাগে বিভক্ত   তার একটি ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন অন্যটি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন এ দুটি দলের একটি আওয়ামীলীগ এবং অন্যটি বিএনপি সমর্থিত সাংবাদিক সংগঠন আজ থেকে ৯১ দিনে আগে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার পর প্রবীন সাংবাদিক এবিএম মূসা বারবার সাংবাদিকদেরকে একতাবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেনতিনি মনে প্রাণে কামনা করতে একটি অভিন্ন সাংবাদিক সংস্থা যেখানে কোন দলীয় ব্যানার থাকবে না একজন সাংবাদিকের বিপদে সকল সাংবাদিকরা ঝাঁপিয়ে পড়বে   সত্যকে প্রকাশ করাই হবে সাংবাদিকদের প্রধান এবং একমাত্র ব্রত   কতিপয় সাংবাদিকদের হীনমন্নতা এবং স্বার্থলোভীতারকারণে এবিএম মূসার এ উদ্যোগ সফলতার মূখ দেখে নি বিভিন্ন টকশোতে গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে আলোচনা করা এবিএম মূসার জীবনের একটি অন্যতম লক্ষ্য ছিল তিনি একটি ব্যতিক্রমী স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল চালু করবেন   নবম জাতীয় সংসদের বর্তমান সরকারের কাছে এ দাবী উত্থাপন করেও তিনি সরকারের মর্জি লাভ করতে সামর্থ হননি

 

এবিএম মূসা তার জীবদ্দশায় সাংবাদিকতা পেশাকে একটি পূর্ণাঙ্গ পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠায় অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তিনি যেমন এ পেশাকে অনেক কিছু দিয়েছেন তেমনি এ পেশাও তাকে অনেক উঁচু স্থানে আসীন করেছে তার জীবনের অন্তিম ইচ্ছা দুটির দ্বীতয়টি পূরণ করার সুযোগ না থাকলেও বাংলাদেশের সাংবাদিকরা যদি আন্তরিক হয় এবং প্রকৃতপক্ষেই হৃদয় দিয়ে তাকে ভালবাসে, শ্রদ্ধা করে তবে প্রথম স্বপ্নটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব যদি এটা করা যায় তাহলে এবিএম মূসার বিদেহী আত্মা যেমনি শান্তি পাবে তেমনি দেশব্যাপী সাংবাদিক নির্যাতনও বন্ধ হবে জাতি প্রকৃত সত্যকে জানতে পারবে দেশ থেকে অন্যায় অপরাধ চিরতরে বিদায় হবে  এবিএম মূসার জীবদ্দশায় আমরা তার প্রাপ্য সম্মান যথাযথ ভাবে শোধ করতে পারি নি তবে সাংবাদিকদের নমনীয়তা ও সহিষ্ণুতায় যদি তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় তবে তার ঋণ কিছুটা শোধ হবে বলে বিশ্বাসসাংবাদিকদের স্বতন্ত্র স্বার্থ রক্ষার্থেই মূসার স্বপ্নের বাস্তবায়ন করা সময়ের বড় দাবী । তার লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়নের মাধ্যমে মূসা ভাইয়ের প্রথম মৃত্যু বার্ষিকিতে আমাদের পক্ষ থেকে তার আত্মার প্রতি এটাই হোক আমাদের পক্ষ থেকে প্রতিদান ।

 

 

(পত্রিকার লিংক-

http://www.dailyinqilab.com/details/3438/

 

রাজু আহমেদ কলামিষ্ট

raju69mathbaria@gmail.com

০ Likes ০ Comments ০ Share ৩২৩ Views

Comments (0)

  • - আলমগীর সরকার লিটন

    বৌবন আসলেই যে ভালোবাসা আসবে এ কথা ঠিক নয়

    ভালোবাসার রুপ বৈচিত্রময়

    শুভ কামনা দাদা

    • - মনজুরুল আলম প্রিন্স

      ভালবাসা যতই বৈচিত্রময় হোক না কেন। যাদের যৌবন এসেছে তাদের কাছে ভালবাসা কিছুক্ষনের জন্য হলেও ধরা দিয়েছে।

      ধন্যবাদ ভাই

    - সুমন সাহা

    ভালো লাগলো।

    শুভকামনা ও শুভেচ্ছা রইলো।emoticons

    • - মনজুরুল আলম প্রিন্স

      আপনারে ভাল লেগেছে কথাটি শুনে আনন্দ পেলাম।

      ধন্যবাদ প্রিয়

    - টোকাই

    ভোট দিলাম । আশা করি খুশী করতে পেরেছি ।

    • - মনজুরুল আলম প্রিন্স

      অাবার জিগায়........ভাই আপনি দিলে কি হবে আরতো কেউ দেয়নাemoticons

      ধন্যবাদ মাই ডিয়ার ব্রাদারemoticons

    Load more comments...