Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

মোঃ জিয়াউল হক

১০ বছর আগে

প্রবঞ্চনা

(এক)

পথটা সরু। দু’পাশে গাছ-গাছালিতে ঘেরা।  দু’তিন জায়গায় তার বক্রতা ঠিক ‘দ’-এর মতো। দৈর্ঘ্য বেশী নয় বড় সড়কটা পর্যন্ত। তবে প্রস্থে দু’জনের বেশী এক সঙ্গে যাওয়া মুশকিল। তবু গ্রাম থেকে বের হবার একমাত্র পথ।
    পাড়ার সর্বশেষ বাড়িটার উঠানে পা দিয়েই সামনে দেখি, সরু পথটার সর্বশেষ বাঁক ঘুরে একটা মেয়ে আসছে এদিকে। লাল রঙের সালোয়ার-কামিজ পড়া। সবুজের মাঝে লাল রঙ দৃষ্টি আকর্ষন করে। আসছে লম্বা লম্বা পা ফেলে। যদিও লম্বা পা ফেলে হাঁটা মেয়েদের মানায় না। তবু সে আসছে সারিবদ্ধ কিশোর গাছগুলোকে একের পর এক পেছনে ফেলে।
    প্রথমে চিনতে পারিনি। পথের বাঁকটা পেরিয়ে আসার পর চিনতে পারলাম, সে ‘জয়ন্তী’।
    এক সময় যার ছায়া দেখে চিনতে পারতাম, হাঁটা দেখে চিনতে পারতাম, অনেক দূর থেকে গলার আওয়াজ শুনে চিনতে পারতাম। অথচ তাকে আজ কাছে না এলে চিনতে পারি না। নিজের ভিতরকার এই অদ্ভুত পরিবর্তন কী করে সম্ভব হলো সেও এক রহস্য ! একবার এক প্রতিবেশী মেয়ের বিয়েতে বরযাত্রীদের এক মেয়েকে পেছন থেকে অবিকল জয়ন্তীর মতো বেণী গাঁথা চুল আর বেগুনী রঙের জামা গায়ে দেখে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য পেছন থেকে ঢিল ছুড়ে মেরে কী বোকাই না সেজেছিলাম। মনে হলে আজও আমার হাসি পায়। লজ্জা পায় ! সারাক্ষণ তার জন্য মনটা আনচান করতো। দৃষ্টি থাকতো পথে পথে। তার বয়সী কোন মেয়েকে দেখলেই আমার কৌতুহল হতো তাকে আবিস্কার করার।
    জয়ন্তী আমাদের গ্রামেরই চৌধুরী পাড়ার এক সাধারন কৃষক পরিবারের মেয়ে। অতি সাধারন পোষাকে আচ্ছাদিত সহজ সরল চেহারার এই মেয়েটির চোখে কী একটা দ্যুতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতো। আমি রোজ সকালে তাদের উঠান মারিয়ে প্রাইভেট পড়তে যেতাম তাদের পাড়ারই যাদু স্যারের কাছে। যেতে আসতে দেখতাম, সে জানালার ধারে পাতানো টেবিলে পড়াশোনা করছে। বোধ হয় ওটাই ছিল তার পড়ার নির্দিষ্ট টেবিল। কারণ সে টেবিলে সাজানো থাকতো বই আর খাতাপত্র। আর একটি ফুলদানিও থাকতো। যাতে সে প্রতিদিন একটি করে তাজা ফুল সাজিয়ে রাখতো। তাদের উঠানের একধারে  ছোট্ট একটি ফুলের বাগানও ছিল। মাঝে মধ্যেই আমি সেই বাগান থেকে যাতে কেউ দেখতে না পায় এমন ভাবে টুপ করে একটা ফুল ছিড়ে নিতাম। একদিন সে দেখেও ফেলেছিল। তবে কিছু বলেনি। আমার চুরি করবার ভঙ্গি দেখে হেসেছিল শুধু। হাতেনাতে ধরা পড়ায় আমি বেশ লজ্জা পেয়েছিলাম।
    একদিন তার বাবার চোখেও ধরা পড়েছিলাম। সেদিন রাতে বৃষ্টি হয়েছিল। সকালবেলা বৃষ্টির পানিতে স্নাত হওয়া লাল গোলাপগুলি যেন টগবগ করছিল। দেখে আর লোভ সামলাতে পারিনি। জানালা তখনো খোলেনি। তবু এদিক ওদিক একবার দেখে নিয়ে সবচেয়ে বড় গোলাপটি তোলার জন্য হাত বাড়িয়েছি অমনি জয়ন্তীর বাবা আঙ্গিনা থেকে বেড়িয়ে এলেন। আমার নিজেকে সংবরন করতে দেখে মধ্য বয়সী ভদ্রলোক মৃদু হাসলেন। সঙ্গে সঙ্গে জানালার কপাট খুলে গেল। আমি আরেকবার লজ্জা বোধ করলাম। কারণ এবার বাগানের আসল মালিক দেখে ফেলল। এক মূহুর্ত ইতস্তত করে ফুল না নিয়েই দ্রুত উঠান পেরিয়ে গেলাম। ভদ্রলোকের আরেকটা হাসির শব্দ শোনা গেল।
    এর পর থেকে কেন জানি ঐ বাগানের ফুলের চেয়ে বাগান মালিকের জানালা খুলেছে কি না সেটাই এক নজর দেখার কৌতুহল হতো আমার। আমি জানালার দিকে তাকাতে তাকাতে যেতাম। দেখতাম সে মাথা নিচু করে পড়ছে নয়তো লিখছে। একদিনও সে মাথা তুলে তাকাতো না। জানালা পেরিয়ে যাবার পর আমার কৌতুহল তীব্র হতো। আবার পেছন ফিরে তাকাতাম। কিন্তু একদিনও সে আমার দিকে তাকায় না। সে কী কৌতুহল শূন্য ?
    তবে একদিন লক্ষ করলাম তারও কৌতুহল আছে। সেও তাকায়। তাকায় আমি জানালা পেরিয়ে যাবার পর। একদিন আমি পেছন ফিরে তাকাতেই চোখে চোখ পড়েছিল এবং দ্রুত চোখ নামিয়ে নিয়ে পড়ার টেবিল ছেড়ে উঠে গিয়েছিল। বোধ হয় সে লজ্জাই পেয়েছিল। সেদিন আমার ভিতরে একটা তীব্র শিহরন খেলে গেল। প্রাইভেট পড়ায় একেবারেই মন বসাতে পারলাম না।
    তারপর সে প্রায়ই আমার আসার পথেও তাকিয়েছে, যাবার পথেও তাকিয়েছে। কিন্তু চোখে চোখ পড়া মাত্রই অন্য দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতো। একদিন আমার মনে হলো সে আসলে চুরি করে তাকায়। সেটা বুঝতে পেরে আমার ভিতরে একটা ভাব তৈরী হলো। আমি আর সরাসরি জানালার দিকে তাকাই না। আমি তাকাই আঁড় চোখে। একপ্রকার না তাকানোর ভান করে রোজ রোজ তাদের উঠান মাড়িয়ে যাই। নিজের অজান্তেই মনে একটা তীব্র অথচ প্রতিপক্ষশূন্য অভিমান তৈরী হলো। আমি কেন তাকাবো ? সেই আমার দিকে তাকিয়ে দেখুক !
    এভাবে বিনা বাক্যে অনেক দিন পেরিয়ে গেল। তারপর একদিন কথা হলো। সেদিন আমি প্রাইভেট পড়তে সকাল সকাল বেরিয়েছি। কারণ যাদু স্যার আমার উপর ক্ষেপে গিয়েছেন আমি দেরি করে যাই বলে। তাই আমি এত সকালে বেড়িয়েছি। তাদের উঠানে পা দেওয়া মাত্রই কেন জানি বাগানের ফুলগুলির দিকে চোখ পড়লো। শেষবার ফুল চুরি করে ধরা পড়বার পর অনেক দিন হলো তাদের বাগানের ফুল ছেড়া হয়নি আর। হঠাৎ ইচ্ছে হলো একটা ফুল ছেড়ার। অত সকালেও দেখি জানালাটা খোলা। আসলে মেয়েরা আর শিশুরা সবার আগে ঘুম থেকে জাগে। কিন্তু জানালার ওপাশে পড়ার টেবিলে কেউ নেই। আমি চলন্ত অবস্থাতেই একটা অর্ধ ফুটন্ত ফুলকে টার্গেট করলাম। এবং ক্ষিপ্র গতিতে এক রকম চিলের মতো ছোঁ মেরে ফুলটা পাতাসমেত ছিড়ে নিয়ে উঠানটা পার হয়ে গেলাম। তারপর পরের উঠানটায় গিয়ে পিছন ফিরে তাকালাম। নাহ্ কেউ দেখেনি !
    সেদিন তাড়াতাড়ি পড়তে যাওয়ায় যাদু স্যার খুশি হলেন, কিন্তু অসম্ভব রেগে গেলেন একটা কলম চাওয়ায়। তিনি বাংলা ব্যকরণের একটি ভাবসম্প্রসারণ লিখতে দিয়েছেন। লিখবার খাতাটা মেলে রেখে পকেটে হাত দিয়ে দেখি কলম নেই। এই ভুলে যাওয়া নিয়ে স্যার খুব ভর্ৎসনা করলেন আমাকে। বললেন, ‘পড়ায় মনোযোগ নেই।’ একদিন হাতে ফুল দেখেছিলেন তা উল্লেখ করে আরও বললেন, (অবশ্যি আজকের ফুলটি পকেটে লুকিয়ে রেখেছিলাম) ‘কোথায় কার বাগানে ফুল ফোটে তাই খুঁজে বেড়াই, ইত্যাদি ইত্যাদি...।’
    বকাঝকা শুনে মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল। ফেরার পথে ফুলটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে ভাবছিলাম, হঠাৎ কলম ছেড়ে আসার মতো ছোট্ট একটি ভুল কিভাবে হলো। এইটুকু ভুলের কথাও বাবা নিশ্চয়ই জেনে যাবেন। কারণ বাবার সঙ্গে যাদু স্যারের খুব খাতির। আমি কোন্ বিষয়ে কেমন পারদর্শি তাও তিনি বাবার কাছে গল্প করেন। আজকের এই বেখেয়ালের কথাটাও তিনি যে বাবার কাছে গল্প করবেন তাতে সন্দেহ নেই। সব শুনে বাড়িতে এসে বাবা হয়তো বলবেন, মনোযোগ কোথায় গেল ? কী এমন চিন্তা কর যে, কলম নেওয়ার কথা মনে থাকে না ?...ইত্যাদি।
    ভাবতে ভাবতে জয়ন্তীদের উঠানের কাছে এসে ফুলের কথা মনে হলো। ফুলটা হাতে দেখলেই হয়তো ভাববে আবারও তাদের বাগানের ফুল ছিড়েছি। তাই সঙ্গে সঙ্গে ফুলটা লুকিয়ে ফেললাম এবং জানালার দিকে তাকাবো না এমন একটা ভাব নিয়ে যাচ্ছি। ঠিক জানালা অতিক্রম করার মূহুর্তে ক্ষীণ কণ্ঠে কেউ বলল, ‘এই যে শুনুন।’ আমি ¯িপ্রংয়ের মতো দাঁড়িয়ে গেলাম। আমার দেহের অভ্যন্তরে  তড়িৎ বেগে একটা শিহরণ বয়ে গেল। আশে পাশে তাকালাম কেউ নেই। বোধ হয় আমাকেই বলছে। আমার ক্ষীণ সন্দেহ হলো কোন ভাবে হয়তো ফুল ছেড়ার ব্যাপারটা জেনে গেছে। মনে মনে খুব আশ্চার্য হলাম। এত সাবধানতার পরেও দেখলো কিভাবে ? ভিতরে ভিতরে খুব লজ্জায় আমার শ্বাসরুদ্ধ হয়ে এলো। জানালার দিকে ফিরে তাকাতেই আমার দু’কান গরম হয়ে উঠলো। থতমত খেয়ে আগ বাড়িয়ে বললাম, নাহ্ কই ? ফুল তো ছিড়িনি? জয়ন্তী ফিক করে হাসল। আমি বোকার মতো তাকিয়ে আছি। সে হাসতে হাসতে তার টেবিল থেকে একটা কলম নিয়ে জানালার ফাঁক দিয়ে হাত বাড়িয়ে বলল, ‘আপনার কলম।’
    আমি বিস্মিত চোখে কয়েক মূহুর্ত তাকিয়ে থাকলাম কলমটার দিকে। আমার কলম তার কাছে কিভাবে গেল আমার মাথায় ঢুকছে না। নিজের বিস্ময় গোপন করে বললাম, ‘আমার কলম মানে ?’
    হ্যাঁ আপনার।
    কোথায় পেলেন ?
    ঐ ফুল গাছটার নিচে পড়ে ছিল।
    আমার দেহের অভ্যন্তরে আরেকটা শিহরণ বয়ে গেল। আমি এবার হতভম্ব হয়ে তার দেখানো ফুল গাছটার দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। লজ্জায় আমার মাথা নত হয়ে এলো। হাত বাড়িয়ে কলমটা নিতে গিয়ে আরেক কান্ড হলো। বাম হাত ফসকে বগলের নিচে বইয়ের চাপে থাকা ফুলটা মাটিতে পড়ে গেল। সেদিকে তাকিয়ে সে আবার ফিক করে স্ব-শব্দে হেসে উঠলো। আমি প্রাণহীন বৃক্ষের মতো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ঊর্দ্ধশ্বাসে হাঁটা দিলাম। এবার পেছন থেকে একটা খিল খিল হাসির আওয়াজ ঢেউয়ের মতো কানে এসে বাজতে লাগলো। আমার কর্ণমূল আগের চেয়েও বেশি গরম হয়ে উঠলো লজ্জায়।
    সেই থেকে আর কোন দিন আমি তাদের বাগানে ফুল ছিড়তে যাইনি। কারণ, আমার মনের বাগানেই একদিন সেই ফুল স্ব-মহিমায় ফুটে উঠে সুবাস ছড়াতে লাগলো। মনের জানালা দিয়ে আসা দখিনা হাওয়ায় সে ফুল দুলতো আর দুলতো। মনের চোখ দু’টো সারাক্ষণ তাকিয়ে থাকতো সেই জানালার দিকে।
    অথচ জয়ন্তী আজ জানেনা আমি আমার হৃদয়টাকে আবার আমার মাঝেই ফিরিয়ে নিয়েছি। দৈবাৎ যদি সে কখনো আমাকে ভুলে যায় আমার কোন দুঃখবোধই হবে না। যদিও আমাকে ভুলবার সম্ভাবনা তার মধ্যে নেই।
    তবে আমি তাকে এ কথা বুঝতেই দেই না। বুঝবার চেষ্টাও হয়তো বা সে করে না যে, আমিও তাকে একদিন ভুলে যেতে পারি। আর করবেই বা কি করে ? ঠকেরা দুনিয়ার সব মানুষকেই ঠক মনে করে। তেমনি সাধুরাও সব মানুষকে সাধু মনে করে। আর সে জন্যই বোধ হয় সাধুরা বেশী ঠকে। সে যে আমাকে খাঁটি ভাবেই ভালবাসে এবং আমার জন্য সে সব কিছুই ত্যাগ করতে পারবে; তা আমি কেন হাবা কালারাও বুঝতে পারবে তাকে দেখলে। কারণ, তার মন ঝরনার জলের মতো স্বচ্ছ, আকাশের মতো অকৃপন। মানুষের মনের প্রতিবিম্ব তো মুখেই বিকাশমান।
    অবশ্য মুখ দেখে সবাই মনের অবস্থা বুঝতে পারে না। যেমন, সে পারে না আমার মুখ দেখে আমার মনের অবস্থা বুঝতে। এই যে, আমি তাকে দেখলেই আত্ম গোপন করি কিংবা তাকে এড়িয়ে চলবার চেষ্টা করি, সে হয়তো দৈবক্রমেও জানে না বা বুঝতে পারে না। সে এইটুকু জানে যে অনেক দিন হলো আমার সঙ্গে তার দেখা হয় না। অথবা দেখা হলেও কথা হয় না। কি জন্য হয় না তা সে জানে না। আমি তাকে দেখলেই এমন ভাব করি, যেন আমি মহা ব্যস্ত অথবা এখন কথা বলার সময় না। আসল ব্যাপার জানলে হয়তো তার মন খারাপ হতো, অভিমান হতো, চোখ ভরে জল পড়তো।
    আমি ভাবছিলাম কোন ছুঁতা করে বাড়িটার অন্দরে ঢুকে পড়ি। এমনি কারো বাড়িতে ঢুকলেই বা কে কি বলবে ? আমি তো এ গাঁয়েরই ছেলে। অতএব বাড়িটার অন্দরে ঢুকে পড়াই ভাল হবে। আজকের মতো তার সামনে পড়া থেকে বাঁচি তো। আমি তার সঙ্গে যে আর মিশতে চাই না ; এতো লুকোচুরির পরিবর্তে তার মুখের উপর সাফ বলে দেওয়া যেতো, কিন্তু প্রথম যৌবনের ঢেউয়ের তালে যে একদিন তার মনের সাথে মিশে গিয়েছিলাম, সেই হচ্ছে চক্ষু লজ্জার কারণ। সে সময় সামাজিক বাস্তবতা বিচার করে দেখবার বুদ্ধি এবং বিবেক ছিল না বলে হয়তো আবেগের বশবতী হয়ে একদিন মধুচন্দ্রিমায় লুকোচুরি খেলেছিলাম। কিন্তু এখন যে সামাজিক বাস্তবতায় তা আর খাটে না। পিতা-মাতার ভাল-মন্দ আর চাওয়া-পাওয়ার উপরেই আমার জীবন ন্যাস্ত। তাদের থেকে আমার যে বিমুখ হবার উপায় নেই।
    অতএব জয়ন্তী নিকটে আসার আগেই আমি বাড়িটার ভিতরে ঢুকবার গলিতে ঢুকে পড়লাম। আমি নিশ্চিত ছিলাম সে আমাকে দেখেনি। কিন্তু গলিটার শেষ প্রান্তে গিয়ে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখি জয়ন্তী আমার মুখের সামনে দাঁড়িয়ে। সীমাহীন বিস্ময়ে আমি চোখ নামাতে পারলাম না। আমি যেন আচমকা শত্রুর হাতে ধরা পড়বার মতো হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। সে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে বড় বড় করে তাকানো প্রতিক্ষীত চোখে। সে চোখে দেখতে না পাওয়ার অভিমান, কাছে না পাওয়ার আকাংখা। তবে তার ঠোঁটে কিছু বলবার ব্যগ্রতা দেখা গেল না। হয়তো ভাষা হারিয়ে ফেলেছে দীর্ঘ প্রতিক্ষায়।
    কিন্তু আমি মুখে মুখোশ এঁটে স্নিগ্ধ হেসে বললাম, ‘জয়ন্তী তুমি হঠাৎ এখানে কোথা থেকে এলে ? তুমি দেখি আজকাল আর দেখাই দাও না। একটা চিঠিও লেখো না। ফাঁকি দিয়ে চলছো বুঝি ?’
    কী আশ্চর্য ! তখনো তার মুখে কথা নেই। পাথরের মতো শক্ত চোখে তাকিয়েই আছে। চোখের পাতা পর্যন্ত নড়ছে না। আমার সন্দেহ হলো সে হয়তো এড়িয়ে চলবার কারণটা ইতোমধ্যেই ধরে ফেলেছে। আমি সেটা না বোঝার ভান করে সান্তনা দেওয়ার ভঙ্গিতে জয়ন্তীর মুখখানা দু’হাতে চেপে ধরতেই বড় বড় চোখ দু’টি জলে ভরে উঠলো। এবং কী আশ্চর্য মূহুর্তেই শ্রাবণের বৃষ্টি ধারার মতো চোখ উছলিয়ে সে জল দু’কপোল বেয়ে ঝড়তে লাগলো। আমি অবাক হয়ে আচ্ছন্নের মতো তাকিয়ে রইলাম।
    এমন মনোরম বৈকালে যদি এমন অপ্রত্যাশিত দৃশ্যের অবতারনা হয়, তবে কোন পাষাণ বুক বেঁধে রাখতে পারে। মূহুর্তে আমার হৃদয়ের কোন এক গভীর থেকে একটা অনিচ্ছাকৃত মায়া পৃথিবীর সকল বাস্তবাদী সিদ্ধান্তকে ছাপিয়ে দিয়ে জেগে উঠলো এবং ব্যকুল হয়ে বলতে লাগলো, না না তাকে নিরাশ করো না। সে যে তোমাকে আশা করে আছে। তুমিও তাকে একদিন আশা করেছিলে। তুমি হয়তো তোমার আশা ছেড়ে দিয়েছো, কিন্তু সে যে তার আশা ছাড়তে পারেনি। আর তুমি তাকে আশা করেছিলে বলেই তো সে তোমাকে আশা করেছিল।
    আমি আসলে কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। কি বলে যে তাকে সান্ত¡না দিবো তারও ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। কয়েকটি শ্বাসরুদ্ধকর মূহুর্ত কেটে গেল আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ বাড়িটার ভিতরে কার পায়ের আওয়াজে যেন
আমি সংবিত ফিরে পেলাম। তারপর তড়িঘড়ি ‘আচ্ছা জয়ন্তী তুমি এখন যাও, আমি তোমার সঙ্গে পরে দেখা করবো’ বলেই দ্রুত পায়ে হাঁটা দিলাম। তার সঙ্গে এমন অন্তরঙ্গ মূহুর্তে কেউ দেখে ফেললে মহা কেলেংকারী হয়ে যাবে। কারণ, আমার আংটি বদল হয়েছে অন্য কারো সাথে।

(চলবে ...)

১ Likes ৭ Comments ০ Share ৪২৮ Views

Comments (7)

  • - লুৎফুর রহমান পাশা

    এই তাজুল ইসলামরা আছে বলেই দেশ এখনো টিকে আছে। আমি দেখেচি এই দেশের সবচেয়ে বড় শত্রু দেশের তথাকথিত শিক্ষিত রা।

    • - ফেরদৌসা রুহি

      এই তাজুল ইসলামরা আছে বলেই দেশ এখনো টিকে আছে।  

      হুম তারাই আসল মানুষ।

      ধন্যবাদ আপনাকে

    - নীল সাধু

    তাজুল ইসলাম আমাদের মতন সাধারন মানুষ। আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি দেশ নিয়ে তারাই ভাবেন বেশী। তাকে স্যালুট 

     

    আপনার জন্য শুভেচ্ছা

    আছেন কিরাম? 

    • - নীল সাধু

      আলহামদুলিল্লাহ ফাইন

      এই অবরোধের জটে পরে গেছি এই যা! এ ছাড়া কোন সমস্যা নেই

    • Load more relies...
    - ফেরদৌসা রুহি

    কেউ দেশ ও দশের কথা ভাবে, সেভাবে কাজ করে আর কেউ দেশ ধ্বংস করার কথা ভাবে, এভাবেই চলছে।

    আছি ভাল। আপনি কেমন আছেন

    Load more comments...