Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

প্রথম প্রহর (প্রতিযোগিতা- ৩য় পর্ব ক্যাটাগরি-২)

আমাদের কিভাবে দেখা হয়েছিল?

সেই প্রথমবার? নতুন কাউকে দেখার অনুভূতিতে প্রগলভ হওয়ার সেই মুহুর্তগুলো কেমন ছিল? এমন একজন... যাকে দেখলে ভালোলাগার ডানায় ভর করে ঝড়ো বাতাসে পরমশূন্য অনুভূতিতে হাল্কা হলুদ পাতার মত এলোমেলো ভেসে বেড়াতে মন চায়! সবারই কি এমন কিছু মুহুর্ত থাকে না?

আমার ও ছিল।

আমি তো আমিই। আর ও হল

সেই সময়ে আমরা দুজনে কিন্তু আমরা হতে না পেরেও অদৃশ্য এক পলকা বাঁধনে কিভাবে যেন মানসিকভাবে কাছে ছিলাম। তারপরও প্রতিটি বিরূপ পরিস্থিতি এবং খারাপ সময়গুলোতেও আর আমি আমরা হয়ে যেতাম। দুজনের আলাদা জগত-পরিবার এবং প্রকৃতি-প্রবণতা স্বত্বেও কিছু মিল তো অবশ্যই ছিল।

আমাকে বুঝত। সময়ে আমার সাথে ঝুঝত। দূরে থেকেও অনুভূতিতে আচড়ে খামচে বিপর্যস্ত করে তোলার এক আশ্চর্য সক্ষমতা ওর ছিল।

 যা বলছিলাম। র সাথে আমার প্রথম দেখা হবার দিনটির কথা।

তখন সবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে নতুন চাকরিতে যোগ দিয়েছি। নতুন পরিবেশ-মানুষ, নতুন চিন্তাভাবনা পুরনো কিছু কাছের মানুষদের সান্নিধ্যে খুব আনন্দে কেটে যাচ্ছিল।

তখন নতুন মোবাইল নিয়েছি। ঐ সময়ে খুবই দামী ছিল মোবাইল। আজকের মত সবার কাছে ছিল না। মোবাইলেই ওর সাথে ক্রস-কানেকশন দ্বারা প্রথম কথা হয়। ভুলে অচেনা একজন হিসাবে প্রথম কথা হল। ইথারে ভেসে আসা একটি জড় বস্তুর ভিতর দিয়ে সেদিন যে প্রাণের শাব্দিক পরশ হৃদয়কে আলোড়িত করেছিল- সে কি আজও ভুলবার! জীবনে চলার পথে তখন একজন সঙ্গীর প্রয়োজনীয়তা ভী...ষ...ণ ভাবে অনুভব করছিলাম। এমন একজন সাথী... একেবারে হুমায়ুন আহমেদ এর গল্পের নায়িকার মত। যে অনুভূতিতে দীঘির শান্ত  জলের প্রশান্তিময় সন্তরণের প্রগাড় অনুভবের উপলব্ধি এনে দেয়! আমাকে আমার সকল সম্পর্কগুলোকে সহই অণুক্ষণ ভাবে... কাছে থাকার চমৎকার কিছু উপলব্ধিতে মনকে আপ্লুত করে তোলে। এমনই একজনকে দিবানিশি এ মন ভাবতো। কাঁদত। খুঁজত।

দিনগুলো এমনই ছিল ঐ সময়ে আমার।

কিভাবে যেন রাতের পর রাত র সাথে মোবাইলে কথা বলে বলে সেই অপরিচিতা একজন আমার পরিচিত হয়ে গেল। আমি ডুবে গেলাম ওর মাঝে। সে থেকে হবার পরে ও কি আমার ভিতরে ডুবছিল না? একেবারে ভেসে না গিয়ে ধীরে ধীরে আমরা কাছে আসছিলাম। কিন্তু ভিন্ন অবস্থানে থেকে। তখনো সামনা সামনি আমাদের দেখা হয়নি। তবে আমরা দুজন নিজেদের যার যার ছবি একে অন্যকে দিয়েছিলাম। র ছবি নিয়ে মোবাইলে কথা বলে বলে কে নিয়ে ভাবতাম কেবলি।

দুজনে দুই ভিন্ন শহরে তখন। তবে দূরত্ব ছিল মাত্র দুই ঘন্টার। দুটো সীমান্তবর্তী শহরের একেবারে প্রান্তসীমায় ছিলাম দুজনে।

দুটি হৃদয়

এক যুবক আর এক যুবতী

যারা এক হতে চাচ্ছিল।

মনে পড়ে সেই দিনের কথা...

প্রতিদিনের মতো সেদিনও একই সময়ে ঘুম থেকে উঠলাম। বিছানায় শুয়েই চিন্তা করলাম আজকের প্ল্যান কি কি ভোর রাতে একটু শীত লাগাতে বিছানার চাদরটাই শরীরে জড়িয়ে নিয়েছিলামরুমমেট ফজরের আজান দিতেই মসজিদে চলে গেছে

রুমে আমি একা

একটু একটু শীত এখনো করছেউঠে রেডিওটা ছাড়লামযদিও একটা টিভি রয়েছেতারপরও প্রতিদিন রেডিওতে সকাল সাতটার নিউজ শোনাটা এখন নেশার মতো হয়ে গেছে এটা শুরু হলেই কীভাবে যেন ঘুম ভাঙ্গে

একটা অ্যালার্ম ঘড়ির কাজ করে এখন রেডিওর এই খবরটি।

 অফিসে এসে অন্যদের থেকে জানলাম আজ পহেলা ফাল্গুন!

মেয়েরা বাসন্তি রং এর শাড়ি পড়ে এসেছেকলিগদের ও ফাগুনের আগুন রাঙা পোষাক! আর আমি কিনা এসেছি মান্ধাতার আমলের সেই চিরাচরিত ফুল হাতা পোলো শার্ট পরে?

মনের ভিতর একটু অভিমানের জমাট কুয়াশা অনুভব করলাম

একবার ফোন ও তো করতে পারত!

কেন করল না?

মোবাইলটা হাতে নিয়ে একবার মনে করলাম ফোন করিপরক্ষণেই সেটা বাতিল করে দিলামদৃঢ় চোয়ালে হৃদয়ের রুক্ষতা প্রকাশ পেল

থাকুক সে একা... তার মত

এগারটা পর্যন্ত একটানা কাজের ভিতরে ডুবে থাকলাম।

কিন্তু ভিতরে ভিতরে একটা অস্থিরতা কাজ করেই যাচ্ছিলদুবার জেনারেল ম্যানেজারের রুমে ডাক পড়লজটিল কিছু ইস্যুতে নতুন করে নোট দিলেনসেগুলো দ্রুত শেষ করার নির্দেশ পেয়ে আবার নিজের কেবিনেকাগজগুলো টেবিলে সব এলোমেলো

ঠিক আমার মনটার মতই

বার বার মোবাইলের কী-গুলো একটি বিশেষ নাম্বারে প্রেস করার জন্য মনটা নিশপিশ করছেকিন্তু ঐ যে কাঠখোট্টা মনের একাংশ জমাট বেঁধে রয়েছে!

অভিমানী মন!!

 সিকিউরিটি ফোন করল

'স্যার, আপনার একজন গেস্ট  এসেছে'

' কোথায় এখন?'

' গেস্ট রুমে...'

'আচ্ছা আমি আসছি'

কে হতে পারে? কোনো সাপ্লাইয়ার? আজকাল অপরিচিত বিভিন্ন নতুন সাপ্লাইয়ার এসে প্রায়ই বিরক্ত করছেসেরকমই কেউ হবে হয়ত

তবে গেস্ট রুমে যেয়ে যাকে দেখলাম...

এতোটা আশা করিনিহৃদয়ে একটা মিশ্র অনুভুতি খেলা করে গেলোআনন্দ চেপে ভ্রু কুঁচকে বললাম

'তুমি?'

'হ্যা, আমি... কেন অন্য কাউকে আশা করেছিলে নাকি?'

বাসন্তি রঙের শাড়ি পরা কে কেমন স্বপ্নের রাজকন্যার মত লাগছে! ওকে চুপ করে থাকতে দেখে বললাম,

'কি হল? হা করে দাঁড়িয়ে আছ কেন? এই নাও... তোমার ফতুয়াপরে ছুটি নিয়ে নাওআমি রিক্সা নিয়ে এসেছি...'

'এতো দূর থেকে রিক্সায় করে এসেছ!?

'ওমা, এতোদূর কোথায়? সেই স্টেশন থেকে। তোমাকে নিয়ে আজ সারাদিন রিক্সায় ঘুরব।'

 
১০ মিনিট পর...

 হাইওয়ে দিয়ে রিক্সায় করে আমি এবং ফাল্গুনের প্রথম দিনে সোনাঝরা রোদ্দুর মেখে নিয়ে চলছিবাতাসে র চুলগুলো উড়ে এসে আমার মুখে লাগছে! অন্য সময় হলে হয়তো আমার বিরক্ত লাগতআজ লাগছে নার একটা হাত নিজের হাতে নিয়ে বললাম,

'আমাকে ভালোবাসো?'

'জানি না...'

বলেই হাসলো...অন্য সময় এই হাসির কি অর্থ হতো আমি জানি না।কিন্তু আজ কেন জানি আমার সকল উত্তর লুকিয়ে প্রকাশমান ছিল সেই হাসিতে। মিষ্টি একটি মেয়ে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখল... পরম নির্ভরতায়... সকল ভাললাগা আর আবেগে মাখামাখি হয়ে র হৃদয়টা দিয়েই যেন আমাকে ধরে রেখেছেফাগুনের প্রথম দিনে বসন্ত ছুঁয়ে গেলো  আমাদের চকিতে... সেই ছিল আমাদের প্রথম প্রহর!!

 

২৩ Likes ৪৬ Comments ০ Share ৪৪৯ Views