Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞান লেখক, বিজ্ঞান কর্মী আবদুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দিনের ১৫তম মৃত্যু বার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

বাংলাদেশের জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক, শিক্ষাবিদ এবং ছোটদের মধ্যে বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার পথিকৃৎ আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিন। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা প্রসারে আল-মুতী শরফুদ্দিনের অবদান অসামান্য। বাংলাদেশের বিজ্ঞান লেখকদের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় যিনি ইউনেস্কো কলিঙ্গ পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৮ সালের আজকের দিনে আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিন মৃত্যুবরণ করেন। আজ তাঁর ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার অগ্রদূতের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি। 

আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিন ১৯৩০ সালের পয়লা জানুয়ারি সিরাজগঞ্জ জেলার ফুলবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আবদুল্লাহ আল-মুতী নামেই সমধিক পরিচিত। তার পিতা শেখ মইন শরফুদ্দিন এবং মা হালিমা শরফুদ্দিন। ৫ ভাই ৬ বোনের মধ্যে আবদুল্লাহ আল-মুতী সবার বড়। ৯৪৫ সালে ঢাকার মুসলিম হাই স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন (এখনকার এসএসসি পরীক্ষা) পরীক্ষায় কলকাতা বোর্ডে ২য় স্থান লাভ করেন। ১৯৪৭ সালে ১১ তম স্থান নিয়ে সাফল্যের সঙ্গে আই এ পাশ করেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পদার্থবিজ্ঞানে বিএসসি(অনার্স) ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর বৃত্তি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং সেখানে শিক্ষাবিষয়ে পড়াশুনা করেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ১৯৬০ সালে এমএ ডিগ্রি এবং ১৯৬২ সালে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। 

যৌবনে বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিন। ১৯৪৮ ও ১৯৫৪ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছিলেন। পরে রাজনীতি ছেড়ে দেন। কর্মজীবনে তিনি প্রথম প্রবেশ করেন সরকারী শিক্ষাবিভাগে। ১৯৪৭ সালে মুকুল ফৌজ আন্দোলনে যোগ দিয়ে পরবর্তী বছরে মুকুল নামে কিশোর পাক্ষিক পত্রিকা বের করেন। কেন্দ্রীয় কচি কাচার মেলা -এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। ইত্তেফাক, আজাদ, মোহাম্মদী পত্রিকার নিয়মিত লেখক ছিলেন। জাতীয় শিশু-কিশোর সংস্থা সহ নানা সংঠনের উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৫৪ সালে রাজশাহী সরকারী কলেজে পদার্থবিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন এবং ছয়মাস পরেই অধ্যাপক হন। সেখান থেকে ঢাকার টিচার্স ট্রেনিং কলেজে বদলি হন ১৯৫৬ সালে। ছয়বছর পর পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও প্রধান হয়ে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে চলে যান । ১৯৭৫ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যুগ্মসচিব হিসেবে যোগ দেন। তারপর শিক্ষা প্রশাসন ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে গুরু দায়িত্ব পালন করেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন ১৯৮৬ সালে। তার প্রকাশিত বিজ্ঞান ও শিক্ষা বিষয়ক মৌলিক গ্রন্থের সংখ্যা ২৭, অনুদিত গ্রন্থের সংখ্যা ১০, সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ১০। এছাড়াও কিছু পান্ডুলিপি রয়েছে, যার অনেক গুলো এখনও অপ্রকাশিত। রেডিও এবং টিভিতে তাঁর উপস্থাপিত অনুষ্ঠান বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়েছিল। তিনি লেখালেখি শুরু করেন ছাত্রজীবন থেকেই। বিজ্ঞানের জটিল, সূক্ষ বিষয়কে সহজ ভাষায় সর্বজনবোধ্য করে তোলার জন্য তার দক্ষতা ও সাফল্য ছিল তুলনাহীন। শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য অঙ্গনে অজস্র সংগঠন প্রতিষ্টানের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন আমৃত্যু। 

(আবদুল্লাহ আল-মুতী, খালেদ চৌধুরী, দ্বিজেন শর্মা এবং হায়াত মাহমুদ)

আবদুল্লাহ আল-মুতী জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষা সংস্কার ও আধুনিকরণের কর্মকান্ডে তিনি প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থেকে উজ্জ্বল অবদান রেখে গেছেন। তিনি জাতীয় শিশু-কিশোর সংস্থা সহ নানা সংঠনের উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৮৮-৯০ সাল পর্যন্ত সভাপতি হিসেবে এশিয়েটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ১৯৮৬-৯০ পর্যন্ত বাংলা একাডেমী ও বিজ্ঞান শিক্ষা সমিতির সভাপতি ছিলেন। তিনি আরো যেসব দায়িত্ব পালন করেছেন সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- প্রধান উপদেষ্টা, প্রথম ঢাকা মহাকাশ উৎসব "বেক্সিমকো স্পেসফেস্ট ১৯৯৬', চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের দশম বর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটি (১৯৯৮), উপদেষ্টা, দ্বিতীয় ঢাকা মহাকাশ উৎসব স্পেসফেস্ট ১৯৯৯। প্রধান উপদেষ্টা, ঢাকা প্রস্তাবিত স্পেস সেন্টার, উপদেষ্টা, মেঘনাদ সাহা বিজ্ঞান তথ্যকেন্দ্র ও গ্রন্থাগার (১৯৯৭-৯৯)। 

এসব গুরুদায়িত্ব পালনের পাশাপাশি প্রচুর লেখালেখি করেছেন আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিন। তিনি লেখালেখি শুরু করেন ছাত্রজীবন থেকেই। বিজ্ঞানের জটিল, সূক্ষ বিষয়কে সহজ ভাষায় সর্বজনবোধ্য করে তোলার জন্য তার দক্ষতা ও সাফল্য ছিল তুলনাহীন। তিনি বড়দের জন্যে লিখেছেন বিজ্ঞান ও মানুষ (১৯৭৫), শিক্ষা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (১৯৭৫), এ যুগের বিজ্ঞান (১৯৮১), বিচিত্র বিজ্ঞান (১৯৮৫), বিপন্ন পরিবেশ (১৯৮৫), প্রাণলোকঃ নতুন দিগন্ত (১৯৮৬), বিজ্ঞানের বিস্ময় (১৯৮৬)। অনুবাদ ও সম্পাদনা করলেন কিছু। আর ছোটদের জন্যে লিখেছেনঃ জানা-অজানার দেশ (১৯৭৬), সাগরের রহস্যপুরী (১৯৭৬), আয় বৃষ্টি ঝেঁপে (১৯৮০), মেঘ বৃষ্টি রোদ(১৯৮১), ফুলের জন্য ভালোবাসা (১৯৮২), সোনার এই দেশ (১৯৮৩), তারার দেশের হাতছানি (১৯৮৪), ছবিতে আমাদের পরিবেশ (প্রথম ভাগ ১৯৮৭, দ্বিতীয় ভাগ ১৯৯০), টেলিভিশনের কথা (১৯৮৭), কীটপতঙ্গের বিচিত্র জগৎ (১৯৮৮), বিজ্ঞান এগিয়ে চলে (১৯৯১), চোখ মেলে দেব (১৯৯২), ফারিয়া নাদিয়ার মজার সফর (১৯৯৬), আকাশ অনেক বড় (১৯৯৮)। এছাড়াও তিনি আরও অনেক বই লিখেছেন। 

শিক্ষাক্ষেত্রে অবদানের জন্য তিনি বহু পুরস্কার ও্ সম্মাননা লাভ করেছেনঃ

১৯৫৯ সালে ইউনেস্কো সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৬৯ সালে টিকিউএ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার,সাহিত্যের জন্য ইউবিএল পুরস্কার, ১৯৭৫ সালে সাহিত্যে বাংলা একাডেমী পুরস্কার, ১৯৮৩ সালে বিজ্ঞান জনপ্রিয়করার জন্য ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক কলিঙ্গ পুরস্কার, ১৯৮৫ শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রাখায় বাংলাদেশ সরকারের একুশে পদক, ১৯৯৫ সালে স্বাধীনতা পদক, শিশু একাডেমি পুরস্কার, ১৯৭৯ সালে বিজ্ঞানবিষয়ক রচনার জন্য কুদরাত‌-ই‌-খুদা স্বর্ণ পদক, ১৯৮১ সালে শিক্ষার জন্য জিয়াউর রহমান জাতীয় পুরস্কার, ১৯৮২ সালে শিশু সাহিত্যের জন্য শহীদুল্লাহ কায়সার স্মৃতি পুরস্কার, ১৯৮৩ সালে শিশু সাহিত্যের জন্য শাব্বির ফাউন্ডেশন পুরস্কার, ১৯৮৫ সালে আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৮৭ সালে বিজ্ঞানে কাজী মাহবুব উল্লাহ স্বর্ণপদক ছাড়াও অগ্রণী ব্যাংক পুরস্কার, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ কীর্তির জন্য ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী পুরস্কার এবং প্রযুক্তি জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে ১৯৯৩ সালে আইডিই পদক লাভ করেন। 

শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য অঙ্গনে অজস্র সংগঠন প্রতিষ্টানের সঙ্গে সম্পৃক্ত আবদুল্লাহ আল-মুতী ১৯৯৮ সালের ৩০শে নভেম্বর আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিন মৃত্যুবরণ করেন। আজ তাঁর ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার অগ্রদূতের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০ Likes ৬ Comments ০ Share ৭১২ Views

Comments (6)

  • - ঘাস ফুল

    লেখাটি কী পুরো আসে নাই বাসুদেব দা? নাকি আমার কম্পুতেই সমস্যা দেখাচ্ছে। ছড়াটির মাত্র চার লাইন এসেছে। তবে এই চার লাইনের গুরুত্বও কম না। বেশ গভীরতা আছে। 

    মনে হয় ছবি দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু আসে নাই। এখানে আলো ব্লগের চাইতে একটু ভিন্ন। আপনি অনলাইনের যে কোন ছবির ওপর রাইট বাটন ক্লিক করেল যে উইন্ডো আসবে সেখানে 'copy image' একটা অপশন পাবেন, সেটাতে ক্লিক করে পোস্টে যে জায়গায় ছবি দেখতে চান, সেখানে পেস্ট করে দিলেই ছবি চলে আসবে। চেষ্টা করে দেখতে পারেন। না পারলে ইনবক্সে পাশা ভাইয়ের সাথে কথা বলে নিতে পারেন। ইনবক্সটা ফেবুর মতো। তাই সাথে সাথেই কথা চালাচালি করতে পাড়বেন যদি পাশা ভাই লাইনে থাকেন। ধন্যবাদ।