Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক এবং গল্পকার জহির রায়হানের ৪৩তম অন্তর্ধান দিবসে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি


বাংলাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক এবং গল্পকার জহির রায়হান। ১৯৬১ সালে তিনি তাঁর প্রথম ছবি ‘কখনো আসেনি’ নির্মান করেন। এরপর একে একে পরিচালনা করেন সোনার কাজল, কাঁচের দেয়াল, জীবন থেকে নেয়া ইত্যাদি। বাংলাদেশের প্রথম সিনেমাস্কোপ ছবি ‘বাহানা ’ তাঁর সৃষ্টি। ইংরেজি ছবি ‘লেট দেয়ার বি লাইটে’র কাজ শেষ না হতেই শুরু হল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ, কলকাতায় তৈরি করেন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর গণহত্যার প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘স্টপ জেনোসাইড’। তাঁর লেখার মধ্যে হাজার বছর ধরে, আরেক ফাল্গুন, বরফগলা নদী, শেষ বিকেলের মেয়ে, আর কতদিন, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ১৯৭১ সালের ৩০ জানুয়ারি মিরপুরে নিখোঁজ ভাই শহীদুল্লা কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি জহির রায়হান। এই মহান সৃষ্টিশীল মানুষটির ৪৩তম অন্তর্ধান দিবস আজ। সু-সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের অন্তর্ধান দিবসে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট বর্তমান ফেনী জেলার অন্তর্গত মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন প্রখ্যাত কথাশিল্পী ও চলচ্চিত্র পরিচালক জহির রায়হান। তাঁর পারিবারিক নাম আবু আবদার মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ। তবে ছেলেবেলায় তাঁকে ডাকা হতো জাফর বলে। বাবা-মা: বাবা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ। মা সৈয়দা সুফিয়া খাতুন। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর তিনি তার পরিবারের সাথে কলকাতা হতে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) স্থানান্তরিত হন।

নিজ পরিবারেই জহির রায়হানের পড়াশুনার হাতেখড়ি হয়। শৈশব-কৈশোর ও স্কুল জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে কলকাতায়। ১৯৪০ সালে তিনি কলকাতা মডেল স্কুলে ভর্তি হন। তাঁর বাবা তখন কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। মডেল স্কুলে তিনি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর তাঁকে মিত্র ইনস্টিটিউশনে (মেইন) ভর্তি করা হয়। এখানে সপ্তম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়ে তিনি আলীয়া মাদ্রাসার অ্যাংলো-পার্শিয়ান বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর বাবার সঙ্গে মজুপুর গ্রামে চলে আসেন। ওই সময় তিনি গ্রামের আমিরাবাদ স্কুলে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া শুরু করেন। গ্রামের আমিরাবাদ হাই স্কুল থেকে ১৯৫০ সালে তিনি প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। ঢাকা কলেজে পড়াশুনার সময় তিনি ভাষা আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৫৩ সালে জহির রায়হান ঢাকা কলেজ থেকে আই.এসসি. পাস করেন। ওই বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হন। এক বছর পর তিনি অর্থনীতি ছেড়ে বাংলা বিভাগে সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি দ্বিতীয় শ্রেণীতে অনার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর এম.এ. ক্লাসে ভর্তি হন।

তাঁর সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি 'খাপছাড়া' পত্রিকায়। তিনি তাঁর বড় বোনের স্বামী এমএ কবীর ও ড. আলিম চৌধুরী সম্পাদিত 'যাত্রিক' পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৫৬ সালে 'প্রবাহ' নামক পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন তিনি। 'এক্সপ্রেস' পত্রিকার কার্যকরী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া জহির রায়হান 'সমকাল', 'চিত্রালী', 'সচিত্র সন্ধানী', 'সিনেমা', 'যুগের দাবী' প্রভৃতি পত্রিকার সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি 'চিত্রালী'-তে 'প্রবেশ নিষেধ' শিরোনামে কিছুদিন একটি ধারাবাহিক ফিচার লিখেছিলেন।

ছাত্রজীবন শেষ হবার আগেই '৫৬ সালের শেষদিকে প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক এ জে কারদারের সঙ্গে পরিচিত হন। সে সময়ে কারদার 'জাগো হুয়া সাবেরা' ছবি করার জন্য ঢাকায় আসেন। কারদার জহির রায়হানকে এই ছবির সহকারী পরিচালক নিযুক্ত করেন। এখান থেকেই শুরু হয় জহির রায়হানের চলচ্চিত্র জীবন। 'জাগো হুয়া সাবেরা'র পর তিনি পরিচালক সালাউদ্দিনের 'যে নদী মরুপথে' এবং পরিচালক এহতেশামের 'এদেশ তোমার আমার' ছবিতে সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৬ সালে ঢাকায় স্থাপিত হয় ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (এফডিসি)। এবার তিনি নিজেই ছবি তৈরিতে হাত দিলেন, সহকারী নয়- পরিচালক হিসেবে। ১৯৬১ সালে তার প্রথম পরিচালিত ছবি 'কখনো আসেনি' মুক্তি লাভ করে। এরপর তিনি পরিচালনা করলেন 'সোনার কাজল' (১৯৬২), 'কাঁচের দেয়াল' (১৯৬৩), 'সঙ্গম' (উর্দু : ১৯৬৪), 'বাহানা' (১৯৬৫), 'বেহুলা' (১৯৬৬), 'আনোয়ারা' (১৯৬৭) এবং 'জীবন থেকে নেয়া' (১৯৭০)।

চিত্র পরিচালনার পাশাপাশি জহির রায়হান অনেকগুলো ছবি প্রযোজনা করেন। সেগুলো হলো, 'জুলেখা' (১৯৬৭), 'দুই ভাই' (১৯৬৮), 'সংসার' (১৯৬৮), 'সুয়োরাণী-দুয়োরাণী' (১৯৬৮), 'কুচবরণ কন্যা' (১৯৬৮), 'মনের মত বউ' (১৯৬৯), 'শেষ পর্যন্ত' (১৯৬৯) এবং 'প্রতিশোধ' (১৯৭২)।

এর আগে ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থানে অংশ নেন জহির রায়হান। তাঁর 'আর কতদিন' উপন্যাসের ইংরেজি ভাষান্তরিত ছবি 'লেট দেয়ার বি লাইট' সমাপ্ত হবার আগেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন। এ সময় তিনি পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অত্যাচারকে কেন্দ্র করে তৈরী করেন প্রামাণ্যচিত্র 'স্টপ জেনোসাইড' ও 'বার্থ অব আ নেশন'। তাঁর তত্ত্বাবধানে বাবুল চৌধুরীর 'ইনোসেন্ট মিলিয়ন' এবং আলমগীর কবীরের 'লিবারেশন ফাইটারস' নামক প্রামাণ্যচিত্র দু'টি নির্মিত হয়। কলকাতায় তার নির্মিত চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেওয়ার বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হয় এবং চলচ্চিত্রটি দেখে সত্যজিত রায়, মৃণাল সেন, তপন সিনহা এবং ঋত্বিক ঘটক প্রমুখ ভূয়সী প্রশংসা করেন। সে সময়ে তিনি চরম অর্থনৈতিক দৈন্যের মধ্যে থাকা সত্ত্বেও তার চলচ্চিত্র প্রদর্শনী হতে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থ তিনি মুক্তিযোদ্ধা তহবিলে দান করে দেন।

(শহীদুল্লাহ কায়সার)
দেশ স্বাধীন হবার পর জহির রায়হান তাঁর নিখোঁজ ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে শুরু করেন, যিনি স্বাধীনতার ঠিক আগমুহূর্তে পাকিস্তানী আর্মির এদেশীয় দোসর আল বদর বাহিনী কর্তৃক অপহৃত হয়েছিলেন। ১৯৭১ সালে তাঁর চেষ্টায় গঠিত হয় বুদ্ধিজীবী হত্যা তদন্ত কমিটি। ১৯৭১ সালের ৩০ জানুয়ারি জহির রায়হান নিখোঁজ ভাইয়ের সন্ধানে মীরপুরে যান এবং সেখান থেকে আর ফিরে আসেননি। মীরপুর ছিল ঢাকা থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত বিহারী অধ্যুষিত এলাকা এবং এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে যে সেদিন বিহারীরা ও ছদ্মবেশী পাকিস্তানী সৈন্যরা বাংলাদেশীদের ওপর গুলি চালালে তিনি নিহত হন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নিখোঁজ ভাইকে খুঁজতে গিয়ে নিজেই চিরকালের জন্যে নিখোঁজ হয়ে গেলেন জহির রায়হান।আজ তাঁর ৪৩তম অন্তর্ধান দিবস। সু-সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের অন্তর্ধান দিবেসে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

সূত্রঃ India-forums.com
জহির রায়হানের জীবনী

১ Likes ৩ Comments ০ Share ৬৬৪ Views

Comments (3)

  • - শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

    ভাল লাগল। ধন্যবাদ

    • - আল ইমরান

      শুভকামনা।

    - ফেরদৌসী বেগম ( শিল্পী )

    জাফলং এ যাওয়ার অনেক দিনের সখ, দেশে থাকাকালীন যাওয়া হয়নি ওখানে। ভাবছি দেশে আসলে ওখানে যাব ইন শা আল্লাহ! কিছুটা তো আপনার এই চমৎকার পোষ্টে দেখে নিলাম। শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ইমরান ভাই। অনেক অনেক ভালোলাগা আর শুভকামনা রইলো। it...

    • - আল ইমরান

      অসংখ্য ধন্যবাদ।

    - আলমগীর সরকার লিটন

    দাদা

    প্রথম ভোট দিলাম

    আামাকেও ভোট দিয়েন কিন্তু

    বেশ লাগল--

    • - আল ইমরান

      অবশ্যই। শুভকামনা থাকল।

    Load more comments...