Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

Shahidul Islam Pramanik

৯ বছর আগে

প্যাঁ প্যাঁ পাগলার পরী কাহিনী


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

প্যাঁ প্যাঁ পাগল আমাদের গ্রামের পূবের গ্রামে বাস করতেন। গ্রামের নাম মইন্যা পাড়া। পাগলের আসল নাম কি তা কেউ জানে না। কারণ পাগোল কথা বলতে পারতেন না। যে কোন কথা বলতে গেলে শুধু প্যাঁ প্যাঁ শব্দ করতেন। কাউকে কোন কথা বললেও প্যাঁ প্যাঁ করতেন এবং কারো কথার উত্তর দিলেও প্যাঁ প্যাঁ করতেন। তবে বয়স্ক লোকজন তাকে ওসমান পাগল বলে ডাকতো। কিন্তু ওসমান নামে ডেকে কেউ কোনদিন তার নজর কারতে পারেনি। পিছন থেকে ওসমান নামে যতই ডাকা হোক না কেন সে সামনের দিকে চলতেই থাকতো। তাকে ফিরাতে হলে দৌড়ে সামনে গিয়ে ইশারা দিয়ে ফিরাতে হতো।

পাগল দেখতে মাঝারি গড়নের। গায়ের রং হলুদের মত ফর্সা। মুখে কাঁচাপাকা অল্প দাড়ি। মুখমন্ডলের জৌলুস সুন্দর। বয়সকালে তিনি যে দেখতে সুন্দর সুপুরুষ ছিলেন মাঝ বয়সেও সে নমুনার কমতি ছিল না।

মাথায় সব সময় টুপি পরতেন। গায়ে কখনও কোড়া গেঞ্জি, কখনও ছেঁড়া বা আধাপুরানো পঞ্জাবী, কখনও উদোম গায়ে থাকতেন। রাস্তা পথে চলার সময় হাতে সবসময় একটি বাঁশের লাঠি রাখতেন। হাতে লাঠি আর কাঁধে কাপড়ের ঝোলা এই লেবাসে ভিক্ষা করে বেড়ানো তার স্বভাব ছিল। কোমর ডান দিকে সামান্য বাঁকা ছিল।

লোকমুখে শোনা যায় পাগল নাকি আগে ভাল ছিল। সুন্দর করে কথা বলতে পারতেন। হাসি-ঠাট্টা নাচ-গান করতেন। তরুণ বয়সে বাঁশি বাজানোর শখ ছিল। খুব সুন্দর বাঁশি বাজাতে পারতেন। গভীর রাতে একা একা মাঠের মাঝে নিরালায় নিরিবিলি বসে বাঁশি বাজানো তার একটা নেশা ছিল।

এক চৈত্র মাসের নিশি রাতের ঘটনা। মাঠের মাঝে কদম গাছের তলায় বসে পাগোল বাঁশি বাজাচ্ছেন। তার বাঁশির সমুধুর সুর দিগন্ত জোড়া মাঠের প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে যাচ্ছিল। বাঁশির সুর যতদুর পৌছেছিল ততদুর পর্যন্ত লোক তন্ময় হয়ে বাঁশি শুনছিল। বাঁশির সুর মানব কুল ছাড়িয়ে একসময় পরী রাজ্যে গিয়ে পৌঁছে। পরীরা বাঁশির সুরে মোহিত হয়ে ধরায় নেমে আসে। পাগলের বাঁশির সুরের তালে তালে কদম তলায় পরীরা নাচতে থাকে। পরীরা কতক্ষণ এভাবে নাচানাচি করছে পাগল বলতে পারে না। পাগল চোখ বন্ধ করে বাঁশি একটানা বাজিয়েই যাচ্ছে। হঠাৎ নুপুর নিক্কনের শব্দ কানে আসতেই চোখ মেলে তাকায়। চোখ খুলতেই দিশেহারা। একদল অপরুপ সুন্দরী তার চারপাশে ঘুরে ঘুরে নাচানাচি করছে। পাগল অপরুপ সুন্দরী পরীদের চেহারা দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়। জীবনে অনেক সুন্দরী মেয়ে দেখেছে, কিন্তু এত অপরুপ সুন্দরী কখনও চোখে পড়েনি। পাগল বাঁশি বাজনো বন্ধ করে পরীদের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ বাঁশি বন্ধ হওয়ায় পরীদের নাচ থেমে যায়। বাঁশি বাজানো বন্ধ করায় পরীরা ক্ষেপে যায়। তারা বারবার পাগলকে বাঁশি বাজাতে অনুরোধ করে। কিন্তু পরীদের অপরুপ রুপে মুগ্ধ হয়ে পাগল বাঁশি বাজানো ভুলে যায়। শত চেষ্টা করেও আর বাঁশি বাজাতে পারে না। পরীদের দিকে অপলক দৃষ্টিতে শুধু হা করে তাকিয়ে থাকে। 

পরীদের অনুরোধ সত্বেও পাগল বাঁশি না বাজানোর কারণে পরীরা ভীষণ ক্ষেপে যায়। তাদের রাগন্বিতভাব দেখেও পাগল হা করে তাকিয়ে থাকে। এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত পরীগণ পাগলকে দু’হাত দিয়ে উপরে তুলে নিচের দিকে আছাড় মেরে ফেলে দেয়। পরীদের হাতে আছাড় খেয়ে পাগল জ্ঞান হারায়।

অজ্ঞান অবস্থায় কদম গাছের তলে সারারাত পড়ে থাকে। সকাল বেলা গ্রামের কৃষকরা মাঠে গিয়ে পাগলকে অজ্ঞান অবস্থায় পায়। কয়েকজন কৃষক পগলকে ধরাধরি করে বাড়ি নিয়ে আসে। মাথায় পানি ঢেলে ওঝা-বদ্যি ডেকে জ্ঞান ফিরালেও কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। কোন কথার উত্তর দিতে পারে না। শুধু মানুষের মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। এভাবে কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর কোন একদিন হঠাৎ কথা বলা শুরু করে। উৎসুখ লোকজন কিভাবে তার এ দশা হলো তা জিজ্ঞেস করায় কদম তলায় বাঁশি বাজানো আর পরীদের কাহিনী বলার পরেই আবার অজ্ঞান হয়ে যায়। এরপর জ্ঞান ফিরলেও আর কথা বলার ক্ষমতা ফিরে পাননি। সেই থেকে মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত জবানহীন ছিলেন । শুধু প্যাঁ প্যাঁ করেছেন।

তার কমর বাঁকা হওয়ার কারণও এখান থেকেই। পরীরা দু’হাত দিয়ে উপরে তুলে আছাড় দিলে কোমরে প্রচন্ড আঘাত পান। এই আঘাতের পর থেকে মৃত্যুর পূর্বমুহুর্ত পর্যন্ত আর কোমর সোজা করে হাঁটতে পারেননি।
কদম গাছের তলায় পরীদের সাথে এই ঘটনা ঘটার পর থেকেই তিনি বোবা। সারা জীবন একা একা থেকেছেন। কোন বিয়ে শাদী করেননি। বিয়ে করানোর জন্য গ্রামের লোকজন অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু পাগোল কখনই বিয়ে করতে রাজী হননি।

বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। একার সংসার। রাতে মসজিদে ঘুমান আর দিনের বেলা ভিক্ষা করেন। ভিক্ষা করারও তার নিয়ম ছিল। আজ যে বাড়িতে ভিক্ষা নিয়েছেন এক সপ্তাহের মধ্যে না খেয়ে মরলেও ওই বাড়িতে আর ভিক্ষা নিতে যাননি। পরের সপ্তাহে গিয়েছেন। একদিন ভিক্ষা করার পর ঐ ভিক্ষার চাল যতদিন চলবে ততদিন আর কারো বাড়িতে ভিক্ষা করতেন না এবং একবেলা খাবার থাকলেও ঐদিন আর ভিক্ষায় বের হতেন না। ঘরের খাবার সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার পর ভিক্ষায় বের হতেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়তেন। ওয়াক্ত অনুযায়ী মসজিদে মোয়াজ্জিন না থাকলে পাগোল নিজেই আজান দিতেন। আজানের কথাগুলো কিছুই বোঝা যেত না তবে লম্বা সুরে প্যাঁ---- প্যাঁ ---- শব্দ হতো। তাঁর প্যাঁ প্যাঁ সুরের আজান শুনে এলাকার ছোট বড় সব ধরনের লোক নামাজ পড়তে আসতো। তার আজান বোঝা না গেলেও কেউ কখনও এ নিয়ে অভিযোগ করতো না।

পাগল মারা গেলে তার কাছে কোন টাকা পয়সা ছিল না। গ্রামের সবাই পাগলের উপর খুশি ছিল। তার মৃত্যুতে সাধ্যমত সবাই টাকা পয়সা দিয়ে সৎকার করেছে। জীবনে অনেক পাগল, অনেক ভিক্ষুক দেখেছি, কিন্তু এরকম নীতিবান জবানহীন পাগল ভিক্ষুক আর একটিও এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি। ভবিষ্যতে এরকম পাগল আর একটি দেখতে পাবো কিনা জানিনা।
১ Likes ১ Comments ০ Share ৪১৯ Views

Comments (1)

  • - ফজলে রাব্বি জেমস

    আমাদের রাজনীতি এখন হয়ে গেছে রাজার নীতি। নীতির রাজা যেদিন হবে সেদিনইি আমাদের রাজনীতি জয়।

    - এই মেঘ এই রোদ্দুর

    ভোট দিয়ে গেলাম