Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

পোখরা - নেপাল রানী

তখন ২০১২ সাল। কর্তা আমার, নেপালে কর্মরত।  নেপালের পূর্বাঞ্চলীয় শহর “ধারান”-এ তার অবস্থান।  আমি বাংলাদেশে। নেপাল দেখবার বহু বছরের শখটা আবারও নড়েচড়ে উঠছে। একদিন উঠে পড়লাম বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজে। এক ঘন্টা পনের মিনিটের উড়াল। তারপরেই কাঠমান্ডু “ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর”। কর্তা এসেছেন ধারান থেকে কাঠমান্ডুতে। আমি নিরাপদেই পৌছুলাম নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে। প্রোগ্রাম ঠিক করা হলো, এক সপ্তাহ কাঠমান্ডু থেকে, নেপালের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখে, তারপর ফিরব ধারান। দেখব, কাঠমান্ডুর পশুপতিনাথ মন্দির, বুদ্ধাস্তুপা, পাটান দরবার স্কয়ার, সয়্যম্ভুনাথ, ভক্তপুর, হনুমানধোকা, পোখরা, শরনকোট, নাগরকোট। সবগুলোই দেখেছিলাম। আজ লিখছি পোখরার কিছু দর্শনীয় স্থান দেখবার অনুভূতি।      

 

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর পোখরা শহরকে "নেপালের ভূস্বর্গ" ও "নেপাল রানী" বলা হয়। শহরটি নেপালের উত্তর পশ্চিমে, কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অবস্থিত। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ৮৮৪মিটার উচ্চতায় শহরটি। কাঠমুন্ডুর পরেই নেপালের অন্যতম শহরগুলোর একটি। এই সুন্দর শহরটি গড়ে উঠেছে পাহাড়ী লেককে ঘিরে। এতে আছে ঘন সবুজ লতা-পাতায় ঘেরা পাহাড়, পাহাড়ী নাম না জানা ফুলের সমাহার, পাহাড়ী নদি।    

 

নেপাল পর্যটন বিভাগের একটি শ্লোগান আছে," তোমার নেপাল দেখা পূর্ণ হবে না, যদি না তুমি পোখরা দেখ।" পোখরা থেকে বিশ্বের দীর্ঘতম (১৪০কিলোমিটার) সারিবদ্ধ হিমালয় পাহাড়ের সারি দেখা যায়। পোখরাকে,"মাউন্টেন ভিউ"-এর শহরও বলা হয়। এখান থেকে 'অন্নপূর্ণা' ও 'মাছা পুছা (fish tail )' পর্বতশৃঙ্গ দেখা যায়, যা বিশ্বখ্যাত চারটি পর্বতশৃঙ্গের একটি।  এই পোখরাতেই আছে অনেক দর্শনীয় স্থান।  বিস্ময়ের শুরু আমার এখান থেকেই।   

 

ফিউয়া লেকঃ- এটি নেপালের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক লেকের একটি। দৈর্ঘে ৪কিলোমিটার এবং প্রস্থে ১.৫কিলোমিটার। প্রথমটির নাম "রারা লেক", এটা নেপালের পশ্চিমের মুগু জেলার দুর্গম অঞ্চলে অবস্থিত। ফিউয়া লেকটি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু, আদর্শ বিনোদন কেন্দ্র। রঙ বেরঙের নৌকা ভাড়ায় পাওয়া যায়, প্যাডেল বোট ও পালতোলা নৌকাও পাওয়া যায়। সময় হিসেব করে ভাড়া মেটাতে হয়। লেকের প্রবেশ পথেই টিকেটের ব্যবস্থা রয়েছে। ভিনদেশী পর্যটকদের চেয়ে সার্কভুক্ত দেশের জন্য টিকেটের দাম অনেক কম রাখা হয়। লেকের মাঝে একটি মন্দীর আছে, নাম "বারাহি হিন্দু মন্দির"। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবাই নৌকায় পার হয়ে মন্দিরে যায়, অনেক পর্যটকও যায় ওখানে। নৌকা নিয়ে বেড়াতে ভীষণ ভাল লাগে।  

 

 

ফিউয়া লেক   

 

 

ফিউয়া লেকের পেছনেই আকাশ, পাহাড় ও মেঘের মাখামাখি    

 

ডেভিস ফলঃ- ফিউয়া লেকের পানি থেকেই উৎপন্ন ডেভিস ফল। এই লেকের পানিই ঝর্ণাধারার মত নেমে আসে। বর্ষাকালে যখন প্রচুর পানি উপর থেকে পড়ে, বাস্পের মত জলকণা ছড়িয়ে যেতে থাকে বা বাতাসে তা উড়তে থাকে, সূর্য্যের আলোতে তখন রংধনু তৈরি হয়। সে এক অসাধারণ অনুভূতি!!! মোহনীয় পরিবেশ!!!    

 

ডেভিস ফল-এর সামনের সাইনবোর্ড   

 

 

 

ডেভিস ফল   

 

মহেন্দ্র গুহাঃ- ডেভিস ফল-এর বিপরীতে চুনা পাথরের গুহাটিকে মহেন্দ্র গুহা বলে। এই গুহাটি মৃত রাজা মহেন্দ্র বির বিক্রম শাহাদেব-এর নামে, নামকরণ করা হয়। এর ভিতরে ছোট ছোট স্বল্প পাওয়ারের বাল্ব লাগানো আছে। ভিতরে ঢুকতে একজন গাইড এবং জনপ্রন্তি একটি করে টর্চের প্রয়োজন হয়। হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসীরা গুহার ভিতরে তাদের প্রধান যুদ্ধ দেবতা মহাদেবের মুর্তি স্থাপন করেছেন। সেখানে একজন পুরোহিতও আছেন। এটি তাদের একটি ধর্মীয় উপাসনালয়ও। ভিতরে পায়ের নিচে বড় বড় পাথর, স্বল্প আলো, হাতে টর্চ, সাথে গাইড, গা ছমছম পরিবেশ, আমাদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা !!! আরো কিছু দূরে আরেকটি গুহা আছে, যার নাম "চামেরি গুহা"। এর ভিতরে প্রচুর বাদুরও আছে। এবারে চামেরি গুহা দেখা হলো না।    

 

মহেন্দ্র গুহাতে ঢোকার গেট   

 

 

এটাই মহেন্দ্র গুহাতে ঢোকার মুখ    

 

 

পর্যটকের ভিড় গুহায়  

শরনকোটঃ- পোখরার শরনকোট পর্যটকদের কাছে সব চেয়ে আকর্ষণীয় ভিউ  পয়েন্ট, যেখান থেকে পর্বতমালার অপূর্ব দৃশ্য, পোখরা ভ্যালী ও ফিউয়া লেক দেখা যায়। শরনকোট পোখরা থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে, সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১৫৯২ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এখানে পর্যটকেরা মূলতঃ আসে,পর্বতশৃঙ্গে সূর্য্যের প্রথম আলোর বর্ণালী দেখতে। একদিকে নতুন সুর্য্য, আরেকদিকে অন্নপূর্ণা, ফিস টেইল। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য!!  জীবনে প্রথম দেখা পর্বতশৃঙ্গ, বিধাতার এক অপূর্ব সৃষ্টি!!!    

 

সূর্য্য ওঠার আগে অন্নপূর্ণা ও ফিস টেইল   

 

 

নুতন সূর্য্য   

 

 

সূর্য্য ওঠার পরে অন্নপূর্ণা   

 

 

সূর্য্য ওঠার পরে ফিস টেইল   

 

ইন্টারন্যাশনাল মাউন্টেন মিউজিয়ামঃ- পোখরা শহরের কেন্দ্রস্থলে, বিমানবন্দর থেকে  ১.৫ কিলোমিটার দক্ষীণে এই মিউজিয়ামটি অবস্থিত। এখানকার অন্যতম বৈশিষ্ট হলো, এখান থেকে তিনটি পর্বতশৃঙ্গ দেখা যায়। যার নাম, ধওলাগীরি, অন্নপূর্ণা ও মানাস্‌লু। এই মিউজিয়ামের প্রধান বৈশিষ্ট হলো, এতে পর্বতারোহনের কলা কৌশল, বিশ্বব্যাপি প্রধান পর্বতমালার তথ্য সমূহ, পর্বতমালার ভৌগলিক অবস্থান,বিশ্বব্যাপি পর্বতারোহীদের ব্যবহৃত সরঞ্জামাদী, পোশাক-আশাক এবং আরোহনের ইতিহাস প্রদর্শন করা আছে।   

 

মিউজিয়ামের গেট   

 

 

মিউজিয়ামের ভিতর থেকে তোলা প্রথম এভারেষ্ট বিজয়ী হিলারির ছবি  

 

মিউজিয়ামের ভিতর থেকে তোলা প্রথম এভারেষ্ট বিজয়ী তেনজিনের ছবি    

 

 

মিউজিয়ামের ভিতর থেকে তোলা পর্বতশৃঙ্গ এভারেষ্টের ছবি    

 

গুরখা মেমোরিয়াল মিউজিয়ামঃ- এই মিউজিয়ামটিও পোখরা শহরেই অবস্থিত। এখানে বিশ্ববিখ্যাত গুরখা সৈন্যদের যুদ্ধজয়ের কাহিনী, পোশাক, ব্যাচ, ব্যবহৃত অস্ত্র, অন্যান্য সরঞ্জামাদি বর্ণনা সহ প্রদর্শণ করা আছে। গুরখাদের আদীবাস পোখরার কাছেই, যা বর্তমানে গুরখা ল্যান্ড নামেই পরিচিত।   

 

গুরখা মিউজিয়ামের ভিতরে   

 

 

গুরখা মিউজিয়ামের বাইরে (আমাদের ড্রাইভার ও গাইড ওম বাহাদুর কারকী)   

 

তিব্বতিয়ান বুদ্ধীজম মোনাষ্ট্রীঃ- পোখরার শহরতলীতে, বিমানবন্দর থেকে চার কিলোমিটার দূরে শ্বেতি নদির পাশে অবস্থিত। এটি বৌদ্ধদের একটি উপাসনালয়।   

 

তিব্বতিয়ান বুদ্ধীজম মোনাষ্ট্রী   

 

 

তিব্বতিয়ান বুদ্ধীজম মোনাষ্ট্রীর ভিতরে  

০ Likes ২৪ Comments ০ Share ১৯০০ Views