Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

পুনে (ইন্ডিয়া)...... ভ্রমন (৩য় পর্ব)

আজ একটু আবোল তাবোল বকবকানি......... 
সেদিন ঘুমাতে ঘুমাতে রাত দুইটা বেজে গেছিল । আর আমাদেরকে আলাদা আলাদা রুমে থাকতে দিছিলো । আমি কখনো একা ঘরে ঘুমাইনি । দরজা বন্ধ করতেই এমন ভয় লাগতেছিল.... সব লাইট জ্বালাইয়াও দেখি ঘুম আসে না । শেষে আমার সামনের রুমের আপাকে ডাক দিলাম আর বললাম আপা ঘুমাতে পারি না ডর লাগে । ছোট বিছানা তাও আপা বলল আচ্ছা ঠিকাছে দুইজন মিলে ঘুমাই........ কষ্ট করে দুইজন ঘুমালাম কিন্তু আমার ঘুম ভেঙ্গে গেছে সূর্য উঠার আগেই । ভাবলাম আচ্ছা দেখি বাইরে যেয়ে কেমন এলাকা আর লোকজন কেমন ।

আনুষঙ্গিক কাজকর্ম সেড়ে দরজার বাইরে আসতেই মনটা ভরে গেল.......
১।
এই হোস্টেলই আমাদের জন্য বরাদ্দ ছিল...... সামনে সবুজ একটা খেজুর গাছ কি সুন্দর
২।
মনোরম পরিবেশ । ছিমছাম সাজানো গোছানো পরিবেশ । সবুজে সবুজাভ প্রকৃতি...... ভেজা দুর্বা ঘাস । গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে পাতাগুলো নির্মল স্নিগ্ধতায় ভরা সবুজ.......
দেখেন কি সুন্দর .....কথাটা কিন্তু মিছা না যে কারো মন ভাল হয়ে যাবে এই পরিস্থিতিতে
(এই ছবিটা সবাই জাগার পর তুলেছিলাম)

৩।
তখনো কেউ ঘুম থেকে উঠেনি । সাহস করে বের হয়ে গেলাম...... ভেজা ঘাসে হাটতে খুব মন চাইছিল..... কি আর করা এখানে কেউ কিচ্ছু বলবে না তাই স্যান্ডেল খুলে রেখে দিছি ....

৪।
তার একা একা ভেজা ঘাসে অনেক্ষন হাটলাম...... অনেক মজা ...... ফিলিংস অসামমমমমমমমমমমমম

(ক্যামেরা তো অলটাইমই সাথে...... ক্লিকাইতে ক্লিকাইতে ক্লান্ত হইনি এত সুন্দর পরিবেশ দেখে)
৫।
এই পথ ধরে হাটতে লাগলাম...... কোথাও কেউ নেই ........ ধুধু শুণ্যতা চারদিকে কিন্তু আমি ডরাইনি কেন যে এত সাহস হইল সে সময়........
৬।
হাঁটতে হাঁটতে কিছুদুর যেতেই দেখি একটা শিউলী গাছ....... কি আর বলব ভাষায় বুঝাতে পারব না । এত সুন্দর সাদা হয়ে আছে গাছের নিচে.... ফুলে ফুলে চারদিকে যেন মউ মউ করছে মাদকতার ঘ্রাণে.....
অবশ্য পরে দেখলাম এখানেই আমাদের ক্লাস হইছিল........
৭।
গাছে আটকে শিউলী ফুল ......
৮।
অসহ্য সুন্দর আর অসহ্য ভালা লাগা নিয়ে অনেকগুলো ফুল আমার ওড়নায় নিলাম তখনো কেউ জাগেনি । ভেজা ভেজা ফুলগুলো কি সুন্দর লাগছে....
সেই মেয়েবেলায় হারিয়ে গেলাম যেন........
৯।
সবুজ সবুজ গাছে সাদা সাদা ফুল.........
১০।
কিছুক্ষন একা একা বসে আবারও হাঁটা শুরু করলাম..... সিকিউরিটি গার্ডগুলো তখন জায়গায় জায়গায় দাঁড়ানো ।
এনআইবিএম ট্রেনিং ইনস্টিউট টা এত বড় হবে কল্পনায়ই আসে নি । ৬৫ একর জায়গা নিয়ে তৈরী....... কিন্তু কোথাও কোন অগোছালো বা নোংরা পরিবেশ দেখতে পাইনি । সাজানো গুছানো পরিবেশ ।
১১।
রাস্তার পাশের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজে যেন আরো কোমল লাগছিল । আমি পাতাগুলো ছোঁয়ে ছোঁয়ে যাচ্ছিলাম । হাত আর জামা কাপড় ভিজে গেছিল । এখানে বৃষ্টি হয় কিছুক্ষন পর পরই । তবে ঝুম বৃষ্টি না গুরি গুরি বৃষ্টি..... রাস্তা ঘাট কাঁদায় কর্দমাক্ত হয় না । গাছগুলো সজীবতায় ভরা একেবারে । এখানকার নিয়মটা এমন...... এখানে বৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু একটু দুরে দেখা যায় সেখানে কোন বৃষ্টি নেই আবার কতদুর গেলে দেখা যায় সেখানে বৃষ্টি হচ্ছে ।

১২। একা একা গাইছিলাম রবীন্দ্রসংগিত.......
"আমি কান পেতে রই ও আমার আপন হৃদয়গহন-দ্বারে বারে বারে
কোন্ গোপনবাসীর কান্নাহাসির গোপন কথা শুনিবারে- বারে বারে ।।
ভ্রমর সেথা হয় বিবাগি নিভৃত নীল পদ্ম লাগি রে,
কোন্ রাতের পাখি গায় একাকী সঙ্গীবিহীন অন্ধকারে বারে বারে ।।"

রাস্তার আশে পাশে যেমন রোপন করা ফুলের বাগান আবার বুনোফুলও অসংখ্য .... বিভিন্ন কালারের ফুল চারদিকে ফুটে আছে আহ ..... চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাই । এসব ফুলের ছবি আলাদা টপিকে দিব  । আমার দেয়ার কাজ দিয়ে দিব ফুলের ফটো আগামী টপিকে ।

১৩।
রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে একটা অন্য রকম গাছ পাই যার নাম কৈলাশপতি । সুন্দর লাল ফুল....... আর এত সুন্দর ঘ্রান মাতাল করা ঘ্রান...

১৪।
এই সেই গাছ

১৫।
সেই গাছের ফুল...... লাল টুকটুকে
১৬।
কেমন জানি জংগল জংগল ভাব...... পাখির কলকাকলি । বিভিন্ন ধরণের পাখিও দেখতে পাই যদিও অনেক চেষ্টা করেও পাখির একটা ছবি তুলতে পারি নাই । তবে ময়ূয়ের ছবি তুলেছি । আমাদের হোষ্টেলের ছাদে এসে বসছিল । কাছে গেলেই ভেগে যায় বেচারা । সারাদিনই ময়ূরের ডাক শুনতে পাচ্ছিলাম (ময়ূরের ছবি পরে দিব)
১৭।
বৃষ্টি ভেজা ঘাসে একা একা অনেক্ষন হেঁটেছি । কেউ নাই কোথাও.... আফসোস বিরাট আফসোস
১৮।
হর কই মেরে তরা নেহি হে । কিউ..... সব লোক শ্রিফ ট্রেনিং অর শপিং অর স্লিপিং....... প্রকৃতিকো কই নেহি মেরি তরা পছন্দ নেহি করতা....... :')
১৯।
প্রথমদিনের হাঁটাহাটি পর্ব শেষে ফিরে এসে দেখি তখনো সুনসান নিরবতা...... চারদিকে
তখনো অঘোর ঘুমে ঘুমায়িত লোকজন স্লিপিং পিল খাইয়া ঘুমাইছে সবগুলান্তে
২০।
সূর্য উঁকি মারছে দেখি তখন আকাশে......
২১।
সবুজ ঘাসে সোনালী ঝিলিকে জানান দিল......... ব্যস্ততা শুরু হবে এখনি
আকাশটাও বেশ সুন্দর লাগতেছিল....
২২।
হাঁটাহাঁটি শেষে গাছের নিচ থেকে কুঁড়িয়ে এনেছিলাম চালিতা, কৈলাশপতি ফুল আর শিউলী ফুল.......

২৩।
সবাই উঠার পর শুরু হল ব্যস্ততা নাস্তা পানি শেষে প্রথম ক্লাসে যাওয়ার জন্য । ক্লাস শুরু হওয়ার পর দেখি ঘুমে আর তাকাতে পারছি না । আমি মনে করছিলাম আমি একাই বুঝি ক্লান্ত আশে পাশে চাইয়া দেখি সবার চোখ ঘুমে ঢুলু ঢুলু ।  একদিন স্যার ঘুম সম্পর্কে বলল...... আমি যদি আপনাদের জায়গায় থাকতাম তাহলে আমারও ঘুম পেত । এয়ছাই হোতাহে হর ট্রেনিং পর...........

প্রথম দিনের ক্লাস শেষে সবাই প্রস্তুতি নিলাম মার্কেট যাওয়ার....... আমরা পাঁচজন মহিলা ছিলাম । ঠিক করলাম তিন জন তিনজন করে সিএনজি উঠব এবং সে মার্কেটের নাম ওখান থেকে বলছিল সেখানে গিয়ে সবাই জড়ো হবো । হায়রে কপাল আমি আর এক আপার আর এক ভাইয়া সিএনজি নিয়া দেখি কাউরেই খুইজ্যা পাইনা । তার মানে সবাই সবাইরে হারায়ে ফেলছি । যাই হোক তিন জন মার্কেট ঘুরা শুরু করলাম প্রথমেই সিম কিনতে গিয়ে নাজেহাল অবস্থা । প্রায় এক থেকে দেড় ঘন্টা সময় নষ্ট করে শেষ পর্যন্ত সিম না কিনে আবার কেনাকাটার উদ্দেশ্যে হাঁটতে লাগলাম । মার্কেটের এলাকার নাম এমজি মার্কেট । আঁকাশ ছোয়া দাম কিছুই কেনাকাটার মত না । কপাল রে কপাল এত দাম দিয়া ত বাংলাদেশেই কিনতে পারি । তো আমরা বুদ্ধি করলাম আজকে দেখে যাই তারপর কাল অন্য মার্কেটে যাওয়া যাবে ।
এইযে দামী একটা মার্কেট

২৪।
মার্কেটে ঢুকে দেখি কসমেটিক জিনিসপত্র আর সানগ্লাস । আমি ভাইয়াকে বললাম আমার একটা সানগ্লাস কেনার ইচ্ছা ছিল..... উনি একটা সানগ্লাস হাতে নিয়ে দাম চাইলে বলে ১২০০০ টাকা । উনি আমাকে বললেন আপা চোখে দেন তো দেখি কেমন লাগে । চোখে দিতেই আমার সাথের আপা বলতেছে ছবিকে তো অনেক সুন্দর লাগছে কিন্তু ভাইয়া বললেন আরে না কোনভাবেই ভাল লাগছে না দেখতে (তার মানে এত দাম দিয়া কিনুম না) চলেন অন্য দোকানে যাই
মার্কেটের ফ্লোর কি ঝকঝকে.....
মার্কেটে মার্কেটে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে গেছি । ক্লান্ত হওয়ার কারণ আমার পায়ে হিল জুতা ছিল । আর পারছি না হাঁটতে শেষ পর্যন্ত জুতা হাতে নিয়া হেঁটেছি । আসলেই এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক ভাল ছিল । রাস্তায় কোন রকম যানজট নাই । ছিনতাইয়ের ভয় নাই । যে যার মত হেঁটে যাচ্ছে । সুন্দর সুন্দর মেয়েরা জিন্স, টাইলস আর গেঞ্জি পরে পাঁয়ে স্যান্ডেল পড়েই যে যার গন্তব্যে যাচ্ছিল । রাস্তায় ওভারট্যাকিং নাই, যানজট নাই, ট্রাফিক পুলিশ নাই, সিগন্যাল মেনে চলছে সবাই । রিক্সা নাই, ঝাঁকে ঝাঁকে হুন্ডা চলছিল রাস্তা জুড়ে । কিন্তু কারো মধ্যে তেমন তাড়াহুড়া দেখতেছিলাম না । মেয়েরা শাড়ি পড়ে হুন্ডা চালাচ্ছিল । পিচ্ছি পিচ্ছি মেয়েরাও স্কুটি নিয়ে রাস্তায় । রাস্তা পার হতে কোন রকম টেনশনই ছিল না ।
ঘুরতে ঘুরতে তখন রাত প্রায় ৮.৪৫ বাজে । আমরা অবশ্য বের হওয়ার সময় সবাইকে বলেছিলাম আজকে কেনাকাটা কিছু করে সবাই এক সাথে সিনেমা দেখব । কিন্তু কেউ কাউকে খুঁজে পাইনি বিধায় আমরা তিনজনে সিনেমা দেখব বলে ভাইয়াটা প্রস্তাব রাখল । কিন্তু আমার সাথে বড় আপা বাঁধ সাধলো তিনি সিনেমা দেখবেন না কোনভাবেই । আমার ইচ্ছাটা ছিল প্রবল সিনেমা হলে বসে সিনেমা দেখব উফ ভাবতেই ভাল লাগছিল (আরেরর তখনো মুক্ত পাখি ছিলাম) । তখন ভাইয়াটা বলল আপনারা দুইজন ট্যাক্সি করে চলে যান আমি সিনেমা দেখবই দেখব । আমি বললাম রাস্তাতো চিনি না যদি হারিয়ে যাই তখন কি হবে । তখন আপাকে বললাম আপা যদি রুমে ফিরে দেখি সবাই সিনেমা দেখতে গেছে তখন আমাদের কেমন লাগবে বলেন । আর আমরা দুইজন একলা একলা এত রাতে রুমে ফিরবো কিভাবে । চলেন না একদিনই তো দেখে যাই সিনেমা টা । অবশেষে তিনি রাজি হলেন । আহা কি শান্তি.......... ভাইয়াটা ৩০০ রুপি করে তিনটা টিকেট কাটল আর সাথে পর্পকর্ণ আর কোকাকোলা কিনল ।

তারপর ঠিক নয়টায় ঢুকলাম সিনেমা হলে........ লালে লাল দুনিয়া...... (সিনেমা হলের নাম ছিল আইনক্স, সিনেমার নাম চেন্নাই এক্সপ্রেস, লোকজন বেশী ছিল না তাই তাড়াহুড়া বা হইহুল্লোড়ও ছিল না । কোন উচ্ছৃঙ্খলতা ছিল না সুন্দর পরিবেশে বেশ উপভোগ করেছি সিনেমা, আর বড় পর্দায় সিনেমা আমি তেমন একটা দেখিনি দেশে, তাই হয়তো বেশীই মজা পেয়েছিলাম)
আমার পরনেও ছিলা লালা ড্রেস । ছবি তুলতে গিয়ে দেখি সিটের সাথে আম মিশে গেছি.. আবার বড় আপাও লাল শাড়ি.... সুন্দরই লাগছিল........সবাইকে)

রাত বারোটায় ফিরেছিলাম সেদিন সিনেমা শেষ করে ।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

১ Likes ১০ Comments ০ Share ১৭৬৫ Views

Comments (10)

  • - মোকসেদুল ইসলাম

    কবিতা পুরুষকে যেমন বোঝে
    নারীকেও বোঝে;
    সর্বোপরি কবিতা মানুষের কথা বোঝে
    মানুষ-জাতি’র কথা বোঝে।

    ভাল লাগল কবি ও কবিতার বিশ্লেষণ। ভাল থাকবেন

    - মাসুম বাদল

    শুভকামনা জানবেন, ভাই!!! 

    - তাহমিদুর রহমান

    • - মাসুম বাদল

    Load more comments...