ছোবহানের দুই মেয়ে সন্তান ভুমিষ্ঠ হওয়ার পর একটা পুত্র সন্তানের জন্য মনটা আকুলি বিকুলি করে। হঠাৎ করে সে নামাজ পড়া শুরু করে। সকাল আটটার আঘে সে ঘুম থেকে জাগতো না। এখন ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে। স্ত্রী রাহেলাকেও ডেকে দেয় নামাজ পড়তে।
রাহেলাও কি আর করে,কষ্ট করে ঘুম থেকে উঠে পড়ে। স্বামীকে দেখানোর জন্য হলেও জায়নামাজে বসে পড়ে। ছোবহান মাজারে গিয়ে একটি তাবিজ এন রাহেলার বাম হাতে পড়িয়ে দেয়। তাকে নিয়ে ছোবহান বাড়ির পিছনে যায়। রাহেলা কিছুটা অবাকই হয় স্বামীকে এই রকম পরিবর্তন দেখে। যেদিন পুত্র সন্তান হবে সেই দিন রাজশাহীর একটা ফজলি আমের গাছ লাগাবে। যেখানে একসময় বাড়ির আবর্জনা ফেলা হতো সেখানে এখন পরিষ্কার করা হয়েছে। ছোবহান সেখানেও মাঝে মাঝে নফল নামাজ পড়ে। সময় ঘনিয়ে আসে। রাহেলা চাঁদের মতো ফুটফুটে পুত্র সন্তান প্রসব করে। ছোবহান খুশি হয়ে মাজারে খিচুরি করে পাঠায়। মসজিদে মিলাদ দেয়। নার্সারি থেকে একটা ফজলি আমের চারা এনে সেই জায়গায় লাগিয়ে দেয়।
পৃথিবীর মতো ছোবহানের বয়স বেড়ে যায়। আগের মতো শরীর চরে না। অফিস এবং পুত্রকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে। মাঝে মাঝে আম গাছটাকে দেখতে যায়। গাছটাতে বেশ ফল ধরেছে। তবে ফজলি আম নয় সাধারন আম। তাতে ছোবহানের দুঃখ হয় না। আম ধরেছে এই বেশী। কয়েক বছর থেকে কমতে কমতে এখন আম ধরেই না। ছোবহান আবার আম গাছটা দেখতে যায়। গাছের ডালগুলিতে পোকা লেগেছে। কোন কোন ডালে পরগাছায় ভরে গেছে। সে লোক নিয়ে এসে পরগাছা কেটে ফেলে। গাছে ঔষধ দেয়। গোড়ায় নিয়মিত পানি দেয় সার দেয়। একজন উদ্ভিদ বিজ্ঞানীকে নিয়ে এস গাছটাকে পরীক্ষা করায়। বিজ্ঞানী পরামর্শ দেয় গাছটাকে কেটে ফেলতে।
মন খারাপ করে ছোবহান ঘরে এস বসে। রাহেলাকে বলে,পুত্রকে ডেকে দিতে। রাহেলা ছোবহানকে পাশের ঘরে যেতে বলে। ছোবহান পাশের ঘরে গিয়ে দেখে পুত্র নেশায় বিভোর। পুত্রের চোখে ঝাপসা আলো। সে আলোয় বাবাকেও চিনতে পারে না।