Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

শামীম চৌধুরী

১০ বছর আগে

পত্রমিতা

 

বন্ধুত্ব মধুর। বন্ধু চিরন্তন। বন্ধু ছাড়া জীবন অচল। তাই সব মানুষই বোধহয় একজন ভাল বন্ধুর খোঁজ করে আজীবন।
গল্প, কবিতায়, দর্শনে বিভিন্নভাবে বন্ধুত্বের সঙ্গা দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এরিস্টটল বলেছেন, ‘দুটি দেহে একটি আত্মার অবস্থানই হলো বন্ধুত্ব।' গ্রীক নাট্যকার ইউরিপিদিস বলেছেন, একজন বিশ্বাসী বন্ধু দশ হাজার আত্মীয়ের সমান।’ কিন্তু নিটসের কথাটা সবচেয়ে সুন্দর বলে মনে হয়েছে, ‘বিশ্বস্ত বন্ধু হচ্ছে প্রাণরক্ষাকারী ছায়ার মতো। যে তা খুঁজে পেলো, সে একটি গুপ্তধন পেলো।’
চিরন্তন বন্ধুতে¦র অনেক দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে বিদ্যমান। যা বলে শেষ করা যাবে না। বন্ধুত্ব বিভিন্নভাবে হয়। দুজন মানুষ দীর্ঘদিন কাছাকাছি অবস্থান করলে তাদের অন্তরের একাত্মাতেই বন্ধুত্বের সূচনা হয়। আবার শুধুমাত্র পত্রের মাধ্যমেও বন্ধুত্ব হয়। পত্রের মাধ্যমে বন্ধুত্বকে বলা হয় পত্রবন্ধুত্ব।
একটা সময় ছিল যখন দেশ বিদেশে সম্পূর্ণ অপরিচিত দু’জন মানুষের মধ্যে শুধুমাত্র চিঠি আদান প্রদানের মাধ্যমে হৃদয়ের পরিপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠতো। বন্ধুত্বের তীব্র আকাঙ্খা থেকেই এমন একটি বিষয়ের উদ্ভব। সে সম্পর্ক হতো কত নিবিড়, অটুট। হতো এতই দৃঢ় যে, একজন আর একজনের জন্য জীবনও উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকতো। পত্রবন্ধুত্বের মাঝে পাওয়া যায় একটি বিচিত্রতার স্বাধ। আজকের এই ই-বন্ধুত্বের ভীড়ে হারিয়ে গেছে সেই পত্রবন্ধুত্বের মধুর সময়।
আবার পত্রবন্ধুত্বকে উপেক্ষার চোখেও দেখা হয়েছে। বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুত্বকে সমাজ কখন্ও মেনে নিতে চায়নি। তবে সমলিঙ্গের বন্ধুত্ব অমলিন। হোক না সে পত্র আর মৌখিক।  
পত্রবন্ধুত্বের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দুই নোবেল বিজয়ী নারী। প্রথম জন সেলমা লেগারলফ আর দ্বিতীয় জন নেলি সাক্স। দু’জন ছিলেন দুইদেশের অধিবাসি। সেলমা লেগারলফ সুইডেনের আর নেলি সাক্স ছিলেন জার্মানির।
১৯০৯ সালে প্রথম নারী সাহিত্যিক হিসাবে সেলমা লেগারলফ নোবেল পুরস্কার অর্জন করলে তার প্রতি নেলি সাক্সের আকর্ষণ তৈরী হয়। বন্ধুত্ব করার প্রয়াসে মাত্র পনের কি ষোল বছর বয়সে চিঠি আদান প্রদান শুরু করেন। একসময় সেটা গভীর বন্ধুত্বে রুপ নেয়।
১৯৬৬ সালে ৬ষ্ঠ নারী সাহিত্যিক হিসাবে নেলি সাক্স নিজেই নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। এই দুজন প্রথিতযশা নারীর মধ্যে এমন বন্ধুত্ব হয়েছিল যে, একজন আর একজনকে প্রাণে বাঁচিয়েছিলেন।
তখন ১৯৪০ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজছে। আকাশে বাতাসে যুদ্ধের আগুন। নেলিকে জু-এর অপরাধে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার সব বন্দোবস্ত করা হয়। বেগতিক দেখে নেলি আর একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মাধ্যমে সেলমার কাছে খবর পাঠালেন, সুইডেনে যেন তার এবং তার মায়ের জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়। খবর শুনে একাশি বছর বয়সি অসুস্থ সেলমা ছুটে যান তৎকালীন সুইডেনের রাজপরিবারের কাছে। কথা বলেন সবার সাথে। যুবরাজ ইউজিন ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দিয়ে সেলমাকে সহযোগিতা করেন এবং নেলিকে সুইডেনে আসার জন্য ভিসার ব্যবস্থা করে দেন। নাজি বাহিনির অত্যাচারে ভীত নেলি ততদিনে বাকরুদ্ধ হবার অবস্থা। সেলমার সাড়া পেয়ে কোনরকমে মাকে নিয়ে সুইডেনের উদ্দেশ্যে যে প্লেনটিতে চড়ে বসেন, সেটি ছিল জার্মান থেকে শেষ যাত্রীবাহি বিমান। সেলমা তার জন্য দুই কামরার একটি এ্যাপার্টমেন্টের ব্যবস্থাও করে রাখেন। নেলি নিরাপদে সেখানে পৌছান। কিন্তু অত্যন্ত দু:খজনক যে, দু’জনের সাক্ষাৎ ঘটার আগেই সেলমা মারা যান। কারো সাথেই আর জীবদ্দশায় দেখা হয় না। শুধুমাত্র পত্রের মাধ্যমে যে দুই মহিয়সী নারীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল, তাদের সাথে দেখা না হওয়ার করুন স্মৃতি নেলি সারাজীবন বয়ে বেড়ান। অতপর তিনি সে দেশেই স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন।
আমি যখন এইচ এস সি তে পড়ি, পত্রবন্ধুর সখ আমার ভিতর তখন প্রবল। পত্রিকায় লেখালেখির সুবাদে কিছু মানুষের সাথে এমনই বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল। যা কালের থাবায় স্থায়ী রুপ নেয়নি। আজ বিশ বছর পর মনে পড়ছে সেইসব বন্ধুদের। যাদের সাথে কোনদিন দেখা হয়নি। কিন্তু আজও রয়ে গেছে স্মৃতির পত্রসমুহ। রয়ে গেছে নানা ধরনের গল্পের শুমার আর অজানা তথ্যের ঝুলি।
অবশেষে বলতে হয়, এমন বন্ধুত্বই গড়ে উঠুক মানবের মাঝে,যা ব্যক্তি, দেশ ও দশের মঙ্গল বয়ে আনে। সর্বপরি মানুষের কল্যানে প্রসারিত হোক বন্ধুত্বের হাত, শত্রুর নয়।
শুভমিতার একটি গানের দুলাইন দিয়ে আজকের লেখা শেষ করি। “যদি বন্ধু হও যদি বাড়াও হাত, জেনো থামবে ঝড়, মুছে যাবে এই রাত, হাসি মুখ তুলে, অভিমান ভুলে, রাঙা সূর্য বলবেই সুপ্রভাত”।

২ Likes ১৫ Comments ০ Share ৭৫৭ Views

Comments (15)

  • - নীল সাধু

    বাহ!

    বেশ সুন্দর লিখেছেন।

    ভালো লাগা রইল।

    শুভকামনা নিরন্তর - সঙ্গে এনিমেটেড ছবিটাও ভালো।

    আপনার আঁকা রঙ্গিন কুর্চি বেশ ভালো লেগেছে সেটা কি জানেন?

    • - এই মেঘ এই রোদ্দুর

      আন্তরিক ধন্যবাদ নীল দা

      রঙ্গিন কুর্চি আপনাকে দিয়া দিলাম :)

    - চারু মান্নান

    Bha sundor tho

    • - এই মেঘ এই রোদ্দুর

      ধন্যবাদ চারুদা

    - কামরুন নাহার ইসলাম

    দারুন কবিতা আপনার, বেশ ভাল লাগল।

    একদিন আমিই লিখেছিলাম, "সাহিত্যের সব ক্ষেত্রেই আপনার বলিষ্ঠ পদচারনা।"

    আজও তাই বলব।

    ভাল থাকুন সব সময়।

    • - এই মেঘ এই রোদ্দুর

      ধন্যবাদ আপু ....... দোয়া করবেন