Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

নিশিযাত্রা (পর্ব ১)

এক

 

মেস থেকে বের হয়েই রফিক বুঝতে পারল এসময়ে বের হওয়া একদম ঠিক হয় নাই। পশ্চিম আকাশ ঘন কাল মেঘে ছেয়ে গেছে।রিক্সায় বসেই ভাবতে থাকে সে ফিরে যাবে নাকি? তারপর ফিরে না যাওয়ার সিন্ধান্ত নেয় সে। রিক্সা এগুতে থাকে। রিক্সাওয়ালা মধ্যবয়সী। বাতাসের ঝাপটায় রিক্সা নিয়ে বেশি জোরে এগুতে পারছে না সে। কিছুটা ক্লান্তও মনে হয়। তার উপর খুক খুক কাশি। রফিক বিরক্তবোধ করছে। ঠিক এসময় বাতাসের বেগ বাড়তে থাকে। বাতাস মনে হচ্ছে রিক্সাকেই উড়িয়ে নিয়ে যাবে। পাশে বালির স্তুপ থেকে বালি উড়ে এসে পড়ল রফিকের শরীরে। খিস্তি ঝাড়ল সে। কার উপর করল তা বুঝার উপায় নাই। রিক্সাওয়ালাকে জোরে রিক্সা চালাতে নির্দেশ দেই সে। রিক্সাওয়ালাও যথাসাধ্য চেষ্টা করতে থাকে। রফিকের প্যান্টে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়তে থাকে। শালার বৃষ্টি তো আজকে ভিজিয়ে দিবে মনে হচ্ছে। মনে মনে ভাবে সে। তারপর রিক্সাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করে পলিথিন আছে নাকি? রিক্সাওয়ালা পলিথিন আছে জানায় কিন্তু এও বলে তাতে কোন কাজ হবে না। খুব জোরে বৃষ্টি আসবে বলে জানায় সে। বরং আশেপাশে কোন জায়গায় কিছুক্ষন দাঁড়ানো্র কথা বলে সে। রফিক সাই দেয় সে কথায়। কিন্তু আশেপাশে দোকানপাট নেই বললেই চলে। শহরের এ পাশ এখনো কিছুটা গ্রামের মত। রিক্সাওয়ালা সামনেই একটা চায়ের দোকান আছে বলে জানায়। রফিক দ্রুত চালাতে বলে রিক্সাওয়ালাকে। এরইমধ্যে সে কিছুটা ভিজে গেছে। রিক্সার হুড তুলে দিয়ে যতটা সম্ভব নিজেকে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচাতে থাকে সে।

 

রিক্সা দোকানটার কাছে আসতেই রিক্সা থেকে নেমে দোকানের দিকে দৌঁড় দেয় রফিক। ধুর শালা, ভিজেই গেলাম। আবারো খিস্তি ঝাড়ে সে। দোকানে লোকজন ভালই। প্রায় জনাবিশেক। বেশিরভাগই খেটে খাওয়া মানুষ। কিছু ছোট বাচ্চাও আছে। মূলত তারাই কথা বলে চলেছে। বৃষ্টির ব্যাপারে তাদের কোন মাথাব্যাথা নেই মনেহয়। উপরন্তু কি একটা ব্যাপার নিয়ে কথা কাটাকাটি করছে নিজেদের মধ্যে। রফিক দোকানের বেঞ্চিতে বসে বাইরের দিকে মনযোগ দেয়। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এসময় রফিকের সিগারেটের তৃষ্ণা পায়। রফিক দোকানদারের দিকে এগিয়ে যায়। দোকানদার একজন মহিলা। সাহায্যকারী হিসেবেও রয়েছে একটা মেয়ে। সম্ভবত সেই মহিলাটিরই মেয়ে। রফিক একটা গোল্ড লিফ সিগারেট আরাম করে ধরায়। ইদানিং সে নিয়মিতই সিগারেট খাচ্ছে। পকেটের মোটা অংশ এর পিছনেই যাচ্ছে আজকাল।

 

রফিক টিউশনির জন্যে বের হয়ছিল এই সকালবেলায়। বৃষ্টি এসে সবকিছু ভন্ডুল করে দিয়েছে। আজকের মত টিউশনিতে যাওয়া ক্ষান্ত দেয় সে। বৃষ্টি এখনো থামেনি। রিক্সা নিয়ে কোথায় যাবে ভাবতে থাকে রফিক। এসময় একটা ছোট বাচ্চা এসে রফিকের শরীরের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে। বিরক্তবোধ করে সে। বাচ্চাগুলোর চেঁচামেচি শুনে বুঝতে পারে, বাচ্চাগুলো ওদের ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে আলোচনা করছে। কত টাকার খেলা হবে, এই নিয়েই তাদের মূল আলোচনা। কিন্তু হতচ্ছাড়া বৃষ্টির জন্য ওদের খেলা হচ্ছে না। একসময় রফিকও ঠিক এদের মত কত ক্রিকেট খেলে বেড়িয়েছে। রফিকের বাবা ছিল সরকারী চাকুরে। সেই সূত্রে সে চিটাগাং, রংপুর, রাজশাহী, সিলেট, কত জায়গায় না কত স্মৃতি তার। অনেক জায়গায়ই তাকে হায়ার করে খেলতে নিয়ে যেত। সে খেলতও ভাল বটে। কোথায় হারিয়ে গেল সেই দিনগুলো।

 

এবার খেটে খাওয়া মানুষগুলো রফিকের নজরে আসে। প্রায় প্রত্যেকের হাতেই বিড়ি। পাশে কোথাও নতুন বিল্ডিংয়ের কাজ হচ্ছে। ওরা সেখানেই কাজ করে মনেহয়। সবগুলো লোকের হাতে পায়ে কাদামাটি লেগে আছে। তাদের কথার বিষয়বস্তু অবশ্য তাদের গাঁয়ের কথা। এভাবে বৃষ্টি হলে এবার আমের মুকুল সব ঝড়ে পড়ে যাবে। ধানের ফলনও খারাপ হবে। ওদের কথার ভাষা শুনে চাঁপাই নবাবগঞ্জের লোক বলে ধারনা করে রফিক। ঢাকায় নতুন বিল্ডিংয়ের কাজ হলে সেইদিকের লোকই কেন যেন বেশি দেখা যায়। ঐদিকের লোকগুলো কি বেশি গরীব? নাকি শুধু ঐদিকের লোকগুলোই ভাল বাড়ি বানাতে জানে? কে জানে?

 

রফিকের সিগারেট শেষ হয়ে আসে। সাথে বৃষ্টিটাও কমে এসেছে। সে আরো দুইটা গোল্ড লিফ সিগারেট কিনে রিক্সাআলাকে যাওয়ার জন্যে তাগাদা দেয়। এই ফিট ফিট বৃষ্টিতেই রওনা দিয়ে দেওয়া যেতে পারে। অবশেষে রফিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাসাবোতে খালার বাসায় যাওয়ার। অনেকদিন যাওয়া হয় নাই। সাথে দুপুরের খাওয়াটাও পাওয়া যাবে যদি ভাগ্য ভাল থাকে। পয়সার যা টানাটানি তাতে একবেলা ফ্রি খাবার পাওয়া ভাগ্যের কথা। রফিক রিক্সায়ালাকে তাড়াতাড়ি টানতে বলে। এরমধ্যে আবার বৃষ্টির মধ্যে পড়তে চায় না ও। ওর আবার বৃষ্টির পানি মাথায় পড়লেই জ্বর আসে। তখন আবার অযথা খরচ। গত মাসেই অসুস্থ হয়েছিল। মাসের সব টাকাই বেড়িয়ে গিয়েছিল সেইজন্যে।

 

খিলগাঁ ফ্লাইওভারের কাছে জটলা দেখতে পাই সে। দূর থেকে যা বোঝা গেল তা হচ্ছে সম্ভবত কোন এ্যাক্সিডেন্ট। এই ঘটছে আজকাল সবসময়। সবাই আছে তাড়াহুড়োয়। এর সাথে ও লাগাচ্ছে তো সে আরেকটার সাথে। তারপর আহত হলে তো কথায় নেই, চলে একঘন্টা ধরে চলে ঝগড়া। সেই জটলা সাইড কাটিয়ে রিক্সা এগুতে থাকে। খালার বাসায় যাওয়ার আগে মুখে চুইংগাম মত কিছু দেওয়া দরকার। রিক্সা থামিয়ে সে দুইটা সেন্টার ফ্রেশ কিনে নেয়। তারমধ্যে একটা মুখে পুড়ে দেয়।

 

রফিক যখন খালার বাসায় পৌঁছায় তখন বারটা বেজে দশ। ওর ভাগ্যটা খারাপ। খালাদের বাসায় তালা ঝুলছে। রফিক কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে সেদিকে। দরজায় লাথি মারার সুপ্ত একটা ইচ্ছা দমন করে বৌ্দ্ধ মন্দিরের দিকে হাঁটা দেয় সে।     

০ Likes ১ Comments ০ Share ৪২২ Views

Comments (1)

  • - নাসির আহমেদ কাবুল

    ভাবের আরও গভীরে যেতে হবে। সঠিক শব্দচয়ন আর ছন্দে প্রকাশ হতে হবে ঋদ্ধ। কবিতা এটুকু দাবি করে।

    শুভ কামনা।

    - কল্পদেহী সুমন

    ধন্যবাদ

    - পিয়ালী দত্ত

    ভাল লাগল কবিতা

    Load more comments...