Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

না দেয়া চিঠি - ২

না লেখা চিঠি

অনিন্দিতা,

তোমার কপালে সেদিন টিপ ছিলনা। কালো টিপ আমার ভীষণ পছন্দ। অথচ তুমি কালো টিপ পরতে না। কলঙ্কের দাগ নাকি কালো হয়, তাই তুমি সবসময় গাঢ় লাল টিপ পরতে। তুমি লাল টিপ পরলে সেটা বেশী জ্বলজ্বল করতো। ভীষণ মানিয়ে যেত। মাঝে মাঝে আমাকে বলতে তোমার নাকি সিঁদুরের টিপ পরতে খুব শখ হয়। আমি একথা শুনে একটা ছোট্ট রূপোর কৌটো তোমাকে উপহার দিয়েছিলাম, সিঁদুর রাখবে বলে। কৌটোটা কোন এক জমিদার বাড়ীর পুরোনো স্মৃতি। নওরোজ নামে আমার এ অফিস সহকারী গিফট্ করেছিল। জমিদার পরিবারের কেউ একজন সম্পর্কে ওর নানী হতো। সেই নানীর স্মৃতি আমার হাতে দিয়ে বলেছিল-  “স্যার এটা আপনি রাখুন। আমার নানীর স্মৃতি। যে অবস্থায় আছি এটা হারিয়ে যেতে পারে। আপনাকে দিয়ে দিলাম”। যাক সে প্রসঙ্গ। এবার টিপের কথাই বলি।

সিঁদুরের টিপ পরা নিয়ে তোমার মায়ের কড়া নিষেধ ছিল। কুমারী মেয়েদের নাকি কপালে সিঁদুরের টিপ পরতে নেই,তাতে অমঙ্গল হয়। তোমার মায়ের এক কথা, মুসলমান মেয়েদের কখনো সিঁদুর পরতে নেই। পুরাণকালে অজন্তা, ইলোরা, শকুন্তলা, মেনকা, দ্রৌপদী ওরা পুরুষদের মন ভোলাতে বাহারী বসন-ভূষণ পরতো, কপালে বড় টিপ দিত। আমাদের রক্ষণশীল সমাজে ওসব চলেনা। লোকে আড়াল থেকে নানা কথা বলে, আড় চোখে তাকায়। যদিও তোমার মধ্যে এসব কুসংস্কারের কোন বালাই ছিলনা। তুমি যথেষ্ট উদারমনা। তুমি কখনো শাড়ী পরলে কপালে একটা টিপ পরতে। লাল টিপ ছাড়া অন্য কোন টিপ আমার চোখে পড়েনি। অন্য টিপ পরার ব্যাপারে তোমার মায়ের তেমন আপত্তি ছিলনা শুধু সিঁদুরের টিপ পরতেই যত আপত্তি। তাই রূপোর কৌটাটা হয়তো কোন কাজে আসেনি।

অনিন্দিতা, মনে আছে- একদিন এক বান্ধবীর বাসায় যাবার কথা বলে আমার বাসায় এসেছিলে। বেশ সুন্দর একটা শাড়ী পরেছিলে। বাদামী জমিনের উপর সাদা সাদা বল প্রিন্ট। সাধারণ সূতী শাড়ী। সোজা আমার ঘরে এসে বললে, “দেখোতো এই শাড়ীতে কেমন লাগছে? আমি বললাম- “অনিন্দ্য সুন্দরী”।  মা তখন রান্না ঘরে। লক্ষ্য করলাম তোমার কপালে কোন টিপ নেই। শাড়ী পরেছো অথচ কপালে টিপ পরোনি দেখে অবাক হলাম। তোমার কাছে এগিয়ে গেলাম। আশে পাশে কেউ ছিলনা। সেই সুযোগে তোমার কপালে একটা চুমু এঁকে দিলাম। চুমু দিতেই তুমি একটু রাগত স্বরে বললে- ছিঃ ছিঃ একি করলে! তুমি আমার কপালে কলঙ্ক লেপে দিলে! আমি অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম! বললাম- “স্যরি, তোমাকে এতোটাই ভাল লাগছিল যে লোভ সামলাতে পারলাম না। তোমার কপালে টিপ নেই দেখে ভাবলাম শূন্যস্থানটা পূরণ করে দিই। তোমার কপালের লাল টিপটা বরাবরই লালবাতি হয়ে আমাকে থামিয়ে দিত। আজ আর কোন বাঁধা ছিলনা। নাহ্, কোন কলঙ্ক নয়- আমার শুভেচ্ছা ও ভালবাসা তোমার কপালে এঁকে দিলাম। দেখে নিও তুমি সৌভাগ্যবতী হবে”।

অনিন্দিতা, কতকাল পর সেদিন তোমার সাথে দেখা। তোমার গল্প আমি বন্ধুদের মুখে শুনেছি। আজ তোমার গাড়ী, বাড়ী, ঐশ্বর্য সবই আছে- আমারতো তেমন কিছু নেই। তোমার কপালে আজো সেই লাল টিপটা জ্বলজ্বল করছে। তোমার গালে কোন তিল ছিলনা, তবে নাকের ডগায় ছোট্ট একটা তিল ছিল। আমি অবাক হয়ে দেখতাম। বলতাম- “তুমি খুব স্বামী সোহাগী হবে। কী দারুন সৌভাগ্য তোমার”! তুমি বলতে- “আমি হিংসুটে, ঈর্ষাপরায়ণ”। সত্যিই কী তাই? একদিন তোমার কপালে ছোট্ট একটা চুমু এঁকে বলেছিলাম- “তুমি সৌভাগ্যবতী হও”। আজ তুমি সত্যিই সৌভাগ্যবতী। স্বামীর সংসারে রাজনন্দিনী হয়ে আছো। তোমার বিয়েতে যেতে পারিনি। কিছু দিতেও পারিনি। আমার সেই রূপোর কৌটাটা আছে কী? তাতে এক চিলতে সিঁদুর রেখে দিও। মনে করো সেটাই আমার আর্শীবাদ, আমার নির্মল ভালবাসা। তোমার জীবনের সকল অমঙ্গল ঐ রুপোর কৌটতে বন্দী থাক। তুমি ভাল থেকো।  

- আনন্দ

 

০ Likes ৬ Comments ০ Share ১১৯১ Views

Comments (6)

  • - ঘাস ফুল

    মাত্রই ফেবুতে পড়ে এলাম। কিন্তু ছেলেকে স্কুল থেকে জানতে যাবো বলে মন্তব্য করে আসতে পারি নাই। উৎসর্গ করার জন্য প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গেলাম শাহিদুল ভাই। একটু পর আবার আসছি। 

    - নীল সাধু

    হঠাৎ সাধুবাবা চিৎকার করে বলল, ‘ওরে বাছা, আর দেরি করিস না। যা। দিল দরিয়ায় ডুবে মর।’ 

    এই লাইনে আমি বারবার আটকে গেছি। ভেবেছি। 

    স্যাটায়ার ঢং এ লেখা পোষ্টটি ভালো লেগেছে শাহিদুল ভাই। শুভেচ্ছা জানবেন। 

    সুপ্রিয় ঘাস ফুলের জন্য ভালোবাসা রইলো 

    - সনাতন পাঠক

    আত্মহত্যা মহাপাপ  

     

    Load more comments...