এই নাটকীয় ঘটনা উমার (রাঃ) দ্বারাই ঘটানো হয়েছিল। মদিনায় খেলাফতের রচিত প্রাথমিক গোলযোগ থেমে গেলে এবং পরিস্থিতি খেলাফতের অনুকূলে আসার পর দেখা গেল হাসেমিগন এবং কিছু আনসার খেলাফতের নিকট বায়াত গ্রহণ করেনি। তারা আলী (আঃ) কে তাদের নেতারুপে গ্রহণ করেই আছে। এমন অবস্থায় ওমারের (রাঃ) নেতৃত্বে একটি ‘মশাল মিছিল’ আলীর (আঃ) বাড়ির দিকে রওয়ানা হয়। একে খেলাফতের যুবদল বলা যেতে পারে। ওমার (রাঃ) ভাল করে জানতেন যে, আলী (আঃ) কে বায়াত গ্রহণ করতে বাধ্য করা যাবেনা। তাঁহার রাজনৈতিক মর্যাদা লোক চোখে হেয় প্রতিপন্ন করে খেলাফতের জয় এবং মাওলাইয়াতের পরাজয় দেখিয়া দিয়া জনমত প্রতিষ্ঠিত রাখবার উদ্দেশ্যই ছিল এইরূপ ব্যবস্থা গ্রহণের একমাত্র কারণ। আলী (আঃ) এর বাড়িতে যেয়ে তারা আলী (আঃ) কে ধরে নিয়ে খলিফার কাছে নিয়ে যেতে চাইলে, ফাতেমা (আঃ) বললেনঃ “ তোমরা বাড়ি হতে চলে যাও; তোমাদের কত বড় স্প্রর্ধা যে, তোমরা আলী (আঃ) কে ধরে নিয়ে যেতে এসেছ? এই বলে তিনি দরজা বন্ধ করে দিলেন। ওমার (রাঃ) এক লাথিতে দরজা ভেঙ্গে ফেললেন। দরজার আঘাতে ফাতেমা (আঃ) মাটিতে পড়ে জান ও জ্ঞান হারান, এ সময় তিনি গর্ভবতী ছিলেন। ঘরে ঢুকে তারা আলী (আঃ) ও তাঁর এক খদেম কে জোর করে বেঁধে খলিফার কাছে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হয়।
কথিত আছে, খাদেম মনে মনে ভাবলেন; যুদ্ধক্ষেত্রে মাওলার সিংহ রুপ দেখেছি কিন্তু এমন মেষ রুপ ত কখনও দেখিনি। ইহা কেমন করে সম্ভব হল। আলী (আঃ) তার মনোভাব বুঝতে পেরে তাকে বলেন” হে বৎস, জেনে রাখ এটা পরিস্থিতির হেরফের। যে আলী কে তুমি দেখে আসছ এই আলী সেই আলী নয়”। দরজার আঘত এত জোরে লেগেছিল যে তার কয় দিন পরই মা ফাতেমা (আঃ) শহীদ হন। রাসুল (সাঃ) তিরধনের পর মহাম্মদি দ্বীন রক্ষায় তিনি প্রথম শহীদ।
শেষ পর্যন্ত প্রায় ছয় মাস পর বিভিন্ন সামাজিক দিক চিন্তা করে আলি (রাঃ) আবুবকরের (রাঃ) খেলাফত মেনে নেয়ায় ঐ বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। খেলাফত ‘মাওলাইতের’ জাহেরি অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছিল এবং জনগণকে আল্লাহ্র প্রতিনিধির অধীনতা থেকে ছাড়িয়া নিয়ে আবার মানবের অধীনতায় নিয়ে আসা হল। অবশ্য মাওলাইতের আধ্যাত্মিক অংশে খেলাফত কোনও প্রকার হস্তক্ষেপ তখনও করেনি। সুতরাং, মাওলা আলী তাঁহার আধ্যাত্মিক কার্যকলাপ এবং মোহাম্মদী দ্বীনের/ ইসলামের শিক্ষাদীক্ষা স্বাধীন ভাবে খেলাফত কালে প্রচার করেছিলেন। খেলাফত উহার উপর হস্তক্ষেপ করে নি। বিনিময়ে মওলা আলী (আঃ) কখনও খেলাফতের পার্থিব ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করেন নি।
(মাওলার অভিষেক ও ইসলাম ধর্মে মতভেদের কারন, সদর উদ্দিন আহমেদ চিশতী, পৃষ্ঠা-১২৮,১২৯)