Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

নতুন এক ইতিহাস গড়লো গত কাল

নতুন এক ইতিহাস গড়লো গত কাল । আমাদের অনেক বছর ধরে ঝুলে থাকা সীমান্ত সমস্যার সমাধান হয়েছে ।প্রথমবারের মতো ঢাকা সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক ও ২২টি চুক্তি সমঝোতা স্মারক এমওইউ এবং দলিল স্বাক্ষরের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি । ভারতের এই প্রধানমন্ত্রী ৪১ বছরের পুরনো স্থলসীমান্ত সমস্যার সমাধান করে সত্যিই যেন বাংলাদেশের মন জয় করলেন । স্থল সীমান্ত চুক্তির মতোই তিস্তা এবং ফেনী নদীর পানি বণ্টনের বিষয়েও আশ্বাস দিয়েছেন মোদি । এ ছাড়াও বাংলাদেশকে ২০০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার ঘোষণাও দিলেন তিনি ।
আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবুজ পতাকা উড়িয়ে ঢাকা শিলং গুয়াহাটি এবং কলকাতা ঢাকা আগরতলা বাস উদ্বোধন করেন । শেখ হাসিনা নরেন্দ্র মোদি এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব ড. এস জয়শঙ্কর দুই দেশের মধ্যে ১৯৭৪ সালের স্থল সীমান্ত চুক্তি ও ২০১১ সালের প্রটোকল অনুসমর্থন এবং এটি বাস্তবায়নের পদ্ধতি বিষয়ে দুটি দলিল স্বাক্ষর ও বিনিময় করেন ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক টুইট বার্তায় বলেন স্বাধীনতার ৬৮ বছর পরে আমার ছিটমহলের ভাইবোনেরা নতুন করে স্বাধীন হলো । সবাইকে অভিনন্দন ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী দুই দিনের সফরে গতকাল শনিবার সকালে ঢাকায় আসেন । এরপর তিনি জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান । বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রথমে একান্ত বৈঠক করেন নরেন্দ্র মোদি । পরে তাদের নেতৃত্বে দুই দেশের প্রতিনিধিদলের মধ্যে বৈঠকের পর তারা দুজন গণমাধ্যম ও উপস্থিত সবার সামনে বক্তব্য দেন । দুই প্রধানমন্ত্রী উপহার বিনিময় করেন এবং বেশ কয়েকটি প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করেন । রাতে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আয়োজিত রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় অংশ নেন ।
নরেন্দ্র মোদি তার বক্তব্যের শুরুতেই বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাবনা ও বৈঠকের জন্য ধন্যবাদ জানান । বাংলাদেশের উষ্ণ আতিথেয়তার প্রশংসা করে তিনি বলেন ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দেশ সফর করা চমৎকার এক অনুভূতি ।
নরেন্দ্র মোদি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যুগের মহান নেতা বলে আখ্যায়িত করেন । সোনার বাংলা গড়তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শন নেতৃত্ব মানবতাবাদ এবং আত্মত্যাগের প্রসঙ্গ তুলে ধরে মোদি বলেন তার স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও প্রতিভাবান বাংলাদেশিদের দ্বারা বাস্তবায়িত হচ্ছে ।
দুই দেশের মধ্যে নতুন নতুন বাসসেবা চালুর কথা উল্লেখ করে মোদি বলেন এর ফলে দুই দেশ ও জনগণ আরো নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত হবে । এই ঘটনা দুই দেশের অভিন্ন মূল্যবোধ এবং আন্তসংযোগ লক্ষ্যের প্রতিফলন ।
মোদি বলেন বাংলাদেশ সফর তার জন্য এক বিশেষ মুহূর্ত । এ দেশের অগণিত মানুষের শুভ কামনায় তার এই সফর সমৃদ্ধ হয়েছে । তিনি বলেন আমরা কেবল প্রতিবেশী নই । আমরা উভয় দেশ ইতিহাস ধর্ম সংস্কৃতি ভাষা আত্মীয়তা এবং অবশ্যই ক্রিকেটের আবেগের বন্ধনে আবদ্ধ । স্বাধীন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র গড়তে একসঙ্গে সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের বন্ধনেও আমরা আবদ্ধ ।
নরেন্দ্র মোদি বলেন এখন আমরা উন্নয়নের পথে একসঙ্গে চলছি । প্রতিবেশীদের অভিন্ন সমৃদ্ধির বিষয়ে আমরা যা বিশ্বাস করি তাই আমাদের ক্রমবর্ধমান সহযোগিতা । আর এ কারণে আমি ভারতকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখি, সেই স্বপ্ন বাংলাদেশকে নিয়েও দেখি ।
নরেন্দ্র মোদি বলেন দুই দেশ যখন রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা জোরদার এবং সমৃদ্ধ উত্তরাধিকার উদ্যাপন করছে তখন আমাদের অর্থনীতিগুলো আরো বেশি সমন্বিত হচ্ছে যোগাযোগ বাড়ছে মানুষে মানুষে । আর এর ফলে দুই দেশ আরো সমৃদ্ধ হবে । তিনি আর বলেন ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ খুলছে । আর এটি আমাদের দুই দেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় আরো সমন্বিত করবে এবং উদ্যমী প্রাচ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করবে ।
নরেন্দ্র মোদি বলেন বাংলাদেশ সার্কের ভাবনা উপহার দিয়েছে । জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সর্ববৃহৎ অবদান রাখা দেশগুলোর মধ্যে আমরা আছি । আর আমরা আমাদের অঞ্চলকে আরো নিরাপদ ও সমৃদ্ধ এবং সাগরকে আরো সুরক্ষিত করতে পারি । বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক শুধু দুই দেশ নয় পুরো অঞ্চলের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ । এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে তিনি এ সফর করছেন । স্বাধীনতার পর থেকে ঝুলে থাকা সীমান্ত সমস্যা তারা নিষ্পত্তি করেছেন ।
আমাদের দুই দেশ সীমান্ত ঠিক করেছে । এটি আমাদের সীমান্তগুলোকে আরো সুরক্ষিত এবং জনগণের জীবন আরো স্থিতিশীল করবে । তিনি আরো বলেন ভারতের সংসদে স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুমোদনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে দেশটির ঐকমত্য প্রতিফলিত হয়েছে । গত বছর সমুদ্রসীমার সমাধানকে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি দুই দেশের অভিন্ন অঙ্গীকার এবং সম্পর্কের পরিপক্বতা হিসেবে অভিহিত করেন তিনি ।
নরেন্দ্র মোদি আরো বলেন দুই দেশের সম্পর্ক সম্ভাবনাময় এক মুহূর্তে আছে । আমরা একে বাস্তবে রূপ দিতে একসঙ্গে কাজ করবো । বন্ধুত্বের চেতনা এবং পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থার সঙ্গে আমরা আমাদের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করবো ।
উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াবে । ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের উৎসাহী করবে । সীমান্ত হাট ঐতিহ্যবাহী অর্থনৈতিক যোগাযোগগুলোর ওপর জোর দেবে । সাগর অর্থনীতি এবং সমুদ্রবিষয়ক সহযোগিতায় অর্থনৈতিক সুযোগ বাড়বে । এখন মহাকাশ খাতেও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা উচিত ।
নরেন্দ্র মোদি বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সব কিছু করার আশ্বাস দেন ।
আগামী দুই বছরের মধ্যে ভারত থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানির পরিমাণ ৫০০ মেগাওয়াট থেকে বেড়ে এক হাজার ১০০ মেগাওয়াটে দাড়াবে । রামপালে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ এ দেশের আইন এবং বিধান অনুযায়ী এগিয়ে চলছে । বিদ্যুৎ খাতে আমরা এ দেশে ও ভারতে একসঙ্গে আরো কাজ করতে পারি ।
ভারতের উত্তর পূর্ব রাজ্যগুলোতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উপকরণ ও খাদ্যশস্য ট্রানজিটের অনুমতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানবিক মূল্যবোধ এবং দুই দেশ মিলে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা প্রতিফলিত হয়েছে ।
অবৈধ কর্মকাণ্ড মানবপাচার এবং অবৈধ চলাচল রোধে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দুই দেশেরই রাজনৈতিক ইচ্ছা ও পারস্পরিক আস্থা আছে বলে আমি নিশ্চিত ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে মোদি বলেন অনেক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও আপনার দেশের অগ্রগতির প্রশংসা ভারতের জনগণ করে থাকে । আমরা চাই আপনার ২০২১ ও ২০৪১ সালকে ঘিরে লক্ষ্য সফল হোক । বাংলাদেশের সাফল্য এ অঞ্চল ও বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ।
বাংলাদেশ ও ভারতের অংশীদারির সাফল্যও এ অঞ্চল ও বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ । আমরা আমাদের সম্পর্ককে নতুন গন্তব্য ও উচ্চতায় নিয়ে যাব । আমি নিশ্চিত যে আজ আমরা এটি করেছি ।
সন্ত্রাস ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে কোনো ছাড় দেবে না বাংলাদেশ : হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে বলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আজ আমাদের মাঝে পেয়ে আমরা সত্যিই আনন্দিত এবং গর্বিত । এ এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত । আমরা যৌথভাবে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন সম্ভাবনার যুগে ও অধিকতর উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছি ।
কিছুক্ষণ আগে আমরা স্থল সীমান্ত চুক্তি ১৯৭৪ অনুসমর্থনের পত্র বিনিময় করেছি । এর মাধ্যমে ৬৮ বছরের মানবিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হওয়ায় আমরা অত্যন্ত আনন্দিত । এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বের প্রশংসা করছি । ভারতের জনগণ এবং ভারতের সব রাজনৈতিক দলকে এ চুক্তির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানানোর জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমরা ।
তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ঐতিহাসিক ভূমিকা এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অবদানের কথা গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন । একই সঙ্গে গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তিনি স্মরণ করেন বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অপরিসীম অবদানের কথা ।
১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন যে দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি এবং আমাদের জনগণের লাভের জন্য ভালো প্রতিবেশী হিসেবে এবং গঠনমূলক নীতির ব্যাপারে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করতে চাই । শেখ হাসিনা বলেন দক্ষিণ এশিয়ার বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বঙ্গবন্ধুর ওই সুদূরপ্রসারী বক্তব্যে প্রতিফলিত হয়েছে । আমি বিশ্বাস করি সম্মিলিতভাবে আমরা এই অঞ্চলের জনগণের জন্য অধিকতর শান্তি প্রগতি এবং সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারি যা ছিল বঙ্গবন্ধুর আজন্মলালিত স্বপ্ন ।
শেখ হাসিনা বলেন ভারত আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ এবং একই সঙ্গে আমরা পরস্পরের উন্নয়ন সহযোগী । বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন ভারতের সঙ্গে খুবই ফলপ্রসূ এবং গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন আমরা পরস্পরের উদ্বেগ এবং অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত । দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব দিক নিয়েই আমাদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে ।
২ Likes ০ Comments ০ Share ৪০৯ Views

Comments (0)