Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

Nusrat Jahan

১০ বছর আগে

নগ্ন মৃত্তিকার বীভৎস চিৎকারে।

গাঢ় নীল ফ্রকের ভাঁজের আড়ালে সদ্য কৈশরে ওঠা মিতার মুখখানা সূর্যের আলোয় আরো উজ্জ্বল দেখায় । মধ্যাহ্নের তীব্র আলোকরশ্মি ওর গাল বেঁয়ে ছুঁয়ে যায় , মনে হয় আস্ত একটা তরতাজা আপেল । সেই লাল টুকটুকে মেয়েটি ঘাড়ে এক গাদা বইয়ের বোঝা নিয়ে বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে পৌঁছে যায় অংক শিক্ষকের দোর গোড়ায় ।

ঘরের দরজাখানা আধ খোলাই ছিল । ভেতরে উঁকি মারতেই চোখে পড়ে উঠতি কিশোরের উৎসুক চাহনী । যে বান্ধবী প্রতিদিনকার সফরসঙ্গী হয় সে আজ অনুপস্হিত । তার প্রতীক্ষায়ই এমন বেলা হয়ে গেল । অংকের শিক্ষক আলতো হাত রাখলেন মাথায় ,”কি হলো,বই খুলে অংক কর ”। বলতে বলতেই মিতাকে জায়গা করে দিলেন ঠিক তার বাঁ পাশে ।

একে একে বিদায় নিল বালককূ’ল । অংক শিক্ষক নিজ হাতেই দরজার মুখ বন্ধ করলেন । চোমকে উঠবার মতো বুদ্ধি মিতার তখনো হয়নি ।আপন মনেই লিখে যায় (১০+৯/৩-৩এর ৫) অংক শিক্ষক আরো বেশী মনযোগে সরল রেখা টানেন মিতার কেশের গোড়ায় । হাতের আঙ্গুল দিয়ে জ্যামিতিক রেখা কাটেন পিঠের বক্ররেখায় । আস্তে আস্তে সে হাত ৬০ ডিগ্রী কোনে উঠে আসে ওর গ্রীবায় ,আবার নেমে আসে সদ্য প্রস্ফুটিত বক্ষ চূড়ায় , পুনরায় নামতে থাকে নীচের দিকে । মিতার সমস্ত শরীর ভয়ে কাঁপতে শুরু করেছে । কিন্তু চিৎকার করবার মতো এক ফোটা শক্তিও নেই ; কারন ওর মুখখানা শিক্ষকের অন্য হাতের তালুতে বাঁধা ।

মেডিসিনের আঁশটে গন্ধে কেমন গুমোট হয়ে আছে ঘরটা । জানালা বলতে যে ফাঁকা টুকু আছে তাও রঙীন কাপড়ে মোড়ানো । ঘরের ভ্যাপসা বাতাসটুকু বের হবার কোন পথই আর খোলা নেই । মিতাকে কালো রাবারের একটা ট্রলিতে শোয়ানো হয়েছে; কোমর বরাবর ঝুলছে ৮০০ ওয়াটের তীব্র আলো । সাদা অ্যাপ্রনে ঢাকা মধ্যবয়সী একজন মহিলা এসে পরনের কামিজ উঠিয়ে তলপেটে হাত রাখলেন । এরপর একের পর এক তীর্যকভাবে কিছু প্রশ্ন এসে রিতার বুকে ধাক্কা খেল ।মহিলা ডাক্তার নাকি র্নাস ঠিক বোঝা যাচ্ছে না । কিছুক্ষন পর খালার দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন ,”তিনমাস ”। সাদা চোখে খালা দাঁড়িয়ে থাকলো, ভাঙা ভাঙা গলায় বললো ,"এখন কি করতে হবে?”

-আমি ওষুধ দিয়ে দিচিছ,ভর্তি করিয়ে দিন । রাতে ডি.এন.সি করবো ।

মেডিকেল সায়েন্স সম্পর্কে যদিও মিতার তেমন ধারনা নেই ,তবুও কি করে বাচ্চা পেটে আসে সে গল্প একটু আধটু সে জেনেছে বান্ধবীদের কাছে। কিন্তু কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাস্তবতা তাকে এ রুপ দেখাবে সপ্নেও ভাবেনি। ছোট্ট ভীরু হৃদপিন্ড শুধু বুঝতে পারছে ;ভয়ংকর কিছু ঘটতে যাচ্ছে।

শ্যালোয়ার বুকে ধরে মিতা অপরাধির মতো মাথা নিচু করে বসে আছে । ছোটখালা এটা ওটা নিয়ে ব্যস্ত,কিছুতেই ওর মুখের দিকে তাকাচ্ছে না । ওদিকে এমন তেষ্টা পেয়েছে,একটু পানি চেয়ে খাবে সে সাহসো তার নেই । এরি মধ্যে খালা বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে করে হয়রান । মিতার বাবার কোন দেখা নেই ঘটনা জানাজানির পর থেকেই ,যত অশ্রাব্য ভাষা একা বয়ে বেড়াচ্ছে মিতার মা। কিন্তু মিতার পাশে এসে বসার মতো মনের জোর তার নেই । মোবাইলের সেটে ধাক্কা খেয়ে একটা বাক্য ফিরে এলো মিতার কানে ,"গু ছড়াবে তোমাদের মেয়ে আর পরিষ্কার করবো আমি! ”

ভালোবাসা এক অদ্ভুৎ তরল পর্দাথ ,তাপ একটু বাড়লেই সহসা উড়ে যায় আকাশে । লেবার রুমের শক্ত বিছানায় পড়ে আছে মিতার দেহ ।তীব্র আলোর নির্দয় বিচ্ছুরণ এবড়ো থেবড়ো করে দিচ্ছে সমাজের পাপের ফসল টিকে । মোটা সিরিন্জের মাঝ বরাবর বেরিয়ে আসছে পৈশাচিকতার জলোজ্যান্ত স্মাক্ষর । র্দীঘ বিশ মিনিট মিতার জরায়ূর ভিতর চলতে থাকা যন্ত্রগুলো একসময় থেমে যায় । পাপের প্রায়শচিত্তের এক ধাপ সাঙ্গ হয় বুঝি । ভোরের আলো একটু একটু করে আভা ছড়াতে শুরু করেছে। বহু দূর থেকে ভেসে আসা মোয়াজ্জিনের কন্ঠ ছুঁয়ে যায় মিতার শরীর ।
ইনজেকশনের মায়া আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে। অসহনীয় যন্ত্রনা নিয়ে মিতা চোখ মেলে ।অবাক বিস্ময়ে দেখতে পায় রক্তে ভেসে যাচ্ছে পায়ের হাটু অব্দি ,প্রচন্ড পিপাসা-"পানি খাব” বলেই উঠে বসবার চেষ্টা করে । কিন্তু ঝিম ধরা মাথাটা নড়াতে পারেনা একবিন্দু । আয়া এসে হাত রাখে মাথায় ,"এখন না আপু ,বমি হয়ে যাবে । আমিই একটু পর দেব ।”এই প্রথম কোন একজন পরম যত্নে মিতাকে বিছানায় শুইয়ে দেয় । দু'চোখের আল বেয়ে গড়াতে থাকে জলের ধারা, মিতা আয়ার হাত খামছে ধরে। শরীরের যন্ত্রনার সাথে মনের যন্ত্রনা এক হতে থাকে । ভেতরটা কেবলি শূণ্য হয়ে যায় ।

(আলোর মিছিলে প্রকাশিত আমার প্রথম উপন্যাসের কিছু অংশ।)

০ Likes ১৩ Comments ০ Share ৪১৪ Views

Comments (13)

  • - কামরুন নাহার ইসলাম

    বিদায় হে বিশ্ব নেতা, শ্রদ্ধা হে বিশ্ব নেতা। সারা বিশ্ব তোমা থেকে শিক্ষা নিয়েছে। তুমি সার্থক শাষক। তুমি সারা পৃথিবীর সবার হৃদয়ে আসন পেতেছ। সান্তিতে পেয়েছ বিশ্বের সর্বোচ্চ পুরস্কার !!! তুমি সার্থক একজন মানুষ !!! 

    কিন্তু তুমিও এক জায়গায় বিফল হে বিশ্বনেতা। চেয়ে দেখ তুমি বাংলাদেশের দিকে। এই নেতারা একে অপরকে শ্রদ্ধা করতেও জানে না। ক্ষমতার জন্য মানুষের জীবন নিয়ে খেলে। আমরা হতভাগা, তোমাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাই। 

    শুভেচ্ছা ঘাস ফুল ভাই।