Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

নওগাঁ জেলা ও গাঁজা

নওগাঁ জেলার অর্থনৈতিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এই জেলার নওগাঁ সদর, মহাদেবপুর ও বদলগাছী থানায় বৃটিশ আমলে গাঁজা চাষ হত। গাঁজা চাষের জন্য এই এলাকার মাটি উপযোগী হওয়ায় প্রায় ৯,০০০ হেক্টর গাঁজা চাষের আওতাভূক্ত করা হয়। প্রায় একশ বছর ধরে নওগাঁ থানার তিলকপুর, বোয়ালিয়া, বক্তারপুর, কীর্তিপুর, নওগাঁ , হাঁপানিয়া, বর্ষাইল, দুবলহাটি, বদলগাছী থানার বালুভরা, মহাদেবপুর থানার ধনজইল ও ভীমপুর এলাকায় গাঁজা চাষ হত। এই তিন থানা পৃথক জেলার অধীনে থাকায় ১২০ বছর পূর্বে গাঁজা চাষের সুবিধার্থে এই তিন থানাসহ অন্যান্য থানার সমন্বয়ে রাজশাহী জেলার অধীনে নওগাঁ মহকুমা গঠিতত হয়। তৎকালীন রাজশাহী জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পদাধিকারবলে গাঁজা সোসাইটির চেয়ারম্যান, মহকুমা প্রশাসক ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করতেন। বৃটিশ সরকার গাঁজার দাম নির্ধারণ করে দিলেও গাঁজা চাষীরা লাভ হতে বঞ্চিত হত না । গাঁজার মত আর কোন ফসল এত লাভও হত না। তাই নওগাঁ গাঁজা মহালের চাষীরা তৎকালীন বৃটিশ ইন্ডিয়ার সব থেকে স্বচ্ছল চাষী বলে গণ্য হতেন। গাঁজা সোসাইটির অফিস ভবন ও স্টাফ কোয়ার্টার ছিল নওগাঁ শহরের প্রথম দিককার সহাপনা। ভবনগুলোকে কেন্দ্র করে নওগাঁ শহরের গোড়াপত্তন হয়। গাঁজা সোসাইটির অবদানকে বাদ দিলে নওগাঁর অর্থনৈতিক ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যায় ।বৃটিশ সরকার নওগাঁর গাঁজা উৎপাদকদের কাছ থেকে বৎসরে ৬৬ লক্ষ টাকা রাজস্ব পেত। যা সরকারের রাজস্বের প্রধানতম উৎস বলে পরিগনিত হত। গাঁজা চাষীদের প্রতিষ্ঠান ’দি নওগাঁ গাঁজা গ্রোয়ার্স কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ’ সংক্ষেপে গাঁজা সোসাইটি।এই অর্থকারী  ফসল  শিক্ষা, স্বাসহ্য, পশুকল্যাণ, যোগাযোগ ব্যবসহার উন্নয়নে প্রধান ভূমিকা রাখত। নওগাঁ শহরের গুরুত্বপূর্ণ  এই সোসাইটির সম্পত্তিগুলোর সুষ্ঠু ব্যবসহাপনা করা হলো সোসাইটি তাঁর সস্যদের আর্থ সামাজিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধন করতে সক্ষম হবে।

ভিন্ন ভিন্ন নামে বিভিন্ন দেশে এর বিস্তার। গাঁজা গাছের শীর্ষ পাতা এবং ডাল যা এই উপমহাদেশে গাঁজা নামে পরিচিত একই জিনিস পশ্চিমা দেশ গুলোতে মারিজুয়ানা বা মারিহুয়ানা নামে পরিচিত। গাছের পাতা বা ডালের আঠালো কষ দিয়ে তৈরী এ অঞ্চলের নামের জিনিসটিই পশ্চিমা দেশের হাশিশ। ভাং, সিদ্ধি, পাট্টি, সব্জি, গ্রাস, মাজুন নানা নামে ডাকা হয় এই বিষাক্ত বস্তুটিকে।

এই মাদকটি গ্রহনে দৃষ্টিভ্রম, বাচালতা, মাংশপেশীর অনিয়ন্ত্রিত ও অপ্রয়োজনীয় সংকোচন, দিকভ্রান্ত হওয়া, মাথা ঘুরা, ক্ষুধা লাগা, গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে যাওয়া,সময়জ্ঞান হারানো থেকে শুরু করে প্রলাপ বকা, বিকার আসা এমনকি মানুষকে হত্যাকরার ইচ্ছাও জাগ্রত হতে পারে। মাত্রা বেশী হয়ে গেলে অনেক সময় হাত পা এর নড়াচড়ার নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলা, হাতে পায়ে ঝি ঝি ধরা এবং অবশ হয়ে যাওয়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া, মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে যাওয়া থেকে শ্বাস কষ্ট হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।নিয়মিত এবং বেশী মাত্রায় গাঁজা জাতীয় দ্রব্য সেবনে গাঁজা সাইকোসিস (Ganja-psychosis) নামে একধরনের লক্ষন হয়। এতে চোখে রক্তজমে চোখ লাল হয়ে যায়, ক্ষুধামন্দা, নির্জিবতা, শরীরের মাংস-পেশী শুকিয়ে যাওয়া, অত্যাধিক দুর্বলতা, হাত-পা অনবরত কাপতে থাকা, পুরুষত্বহীনতা থেকে শুরু করে পুরোপুরি মানসিক রোগী হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে।রানিং এমোক নামক আরেক ধরনের মানসিক বিপর্যয় ও গাঁজা সেবিদের পরিণতি হয়ে আসতে পারে। অবিরত গাঁজা সেবনের কারনে অনেক সময় এদের দৃষ্টিভ্রম (Hallucination), নির্যাতিত-বঞ্চিত হবার কল্পনা থেকে এরা হিংসাত্মক, আগ্রাসি সন্ত্রাসীর ভূমিকায় অবতীর্ন হতে পারে। রানিং এমক হলে লোকটি চোখের সামনে যাকে পায় তাকে তার কল্পিত শত্রু মনে করে অস্ত্র নিয়ে হত্যা করতে পারে এবং এই মানসিক অবস্থা কেটে যাবার আগ পর্যন্ত যাকে সামনে পায় ক্রমান্বয়ে তাকেই হত্যা করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। এই আবেশ কেটে গেলে একসময় সে আত্মহত্যা করতে যেতে পারে অথবা আত্মসমর্পনও করতে পারে।

গাঁজা শরীরের বিষ-ব্যথা সারায়। এ কথার বর্ণনা রয়েছে ভারতবর্ষের প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় চিকিৎসাশাস্ত্রে। তবে এ কথাও সুবিদিত যে, গাঁজা, ভাং ও মারিজুয়ানা গ্রহণ মানুষের স্মরণশক্তি হ্রাস করে এবং দীর্ঘ মেয়াদে মনোবৈকল্য ঘটায়। যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা এখন গাঁজা, ভাং ও মারিজুয়ানার ওপর গবেষণা করে জেনেছেন, এ সব মাদকদ্রব্য থেকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন ব্যথানাশক ওষুধ প্রস্তুত করা সম্ভব, যা মানুষের কোনো ক্ষতি করবে না। গবেষণাটি করেছে ফ্রান্সের বায়োমেডিকেল ইনস্টিটিউট। এর নেতৃত্ব দিয়েছে আইএনএসইআরএম। ফ্রান্সের গবেষকরা জানান, 'তারা ইঁদুরের মস্তিষ্কের যে অংশের কোষের নিউরনে গাঁজা বা মারিজুয়ানার মাদক ক্রিয়া করে তা ওষুধ প্রয়োগ করে নিষ্ক্রিয় করেন প্রথম। এর পর ওই ইঁদুরের শরীরে এসব মাদক প্রবেশ করিয়ে দেখা গেছে, তাতে ইঁদুরটি বেহুশ হয় না। বরং ওটির প্রাণচাঞ্চল্য ঠিকই থাকে। এ অভিজ্ঞতা থেকে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ব্যথানাশক হিসেবে গাঁজা বা মারিজুয়ানার ভালো গুণ মানুষের বিভিন্ন রোগের ওষুধ এবং অস্ত্রোপচারের জন্য চেতনানাশক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। শিগগিরই গাঁজা ও মারিজুয়ানার নির্যাস থেকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন এ ওষুধ প্রস্তুত হবে। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া ও আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এক গবেষণায় দেখেছেন, ভাং ও গঞ্জিকা সেবনে ফুসফুসের ক্ষতি তামাক পাতায় প্রস্তুত সিগারেট পানের চেয়ে কম।

০ Likes ০ Comments ০ Share ৫৯৮ Views

Comments (0)