সেদিন ছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারি। হরতাল থাকায় ক্লাস হবেনা। তাই নো চিন্তা, ডু ফুর্তি। ঘুম থেকে উঠেই অলিখিত ‘মুভি দিবস’ ঘোষণাপূর্বক বসে বসে আরাম করে মুভি দেখছিলাম। হঠাৎ মিলির ফোন এল।
- হ্যালো…
- অ্যাই ছেলে, তুমি কোথায়?
- আমি তো হোটেলে।
- হোটেলে মানে? কোন হোটেলে?
- কোন হোটেলে আবার- বাপের হোটেলে। হা হা হা...
- ফাজলামি করার আর সময় পাও না! আজ যে টিএসসিতে আমাদের দেখা করার কথা ছিল তা মনে আছে? ঝাড়ি দিয়ে উঠল মিলি।
- ইয়ে…মানে…কিন্তু আজকে তো হরতাল। বের হওয়া রিস্কি।
- ভীতুর ডিম কোথাকার! আমি কিচ্ছু জানিনা। আমার জন্য ভ্যালেন্টাইন গিফট নিয়ে এক ঘন্টার মাঝে টিএসসিতে আসবে, ব্যস।
- আরে……কিন্তু…
ফোন কেটে দিয়েছে মিলি। ধ্যাত, আজকের মুভি দিবসের ১২টা বাজল। কি আর করা, বাসায় নানা অজুহাত দেখিয়ে কোনমতে বের হলাম। এমনিতেই হরতাল বলে আশেপাশের দোকানপাট বন্ধ। শেষমেষ অনেক খুঁজে মিলির জন্য গিফট কিনে প্যাকেটে ভরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। রাস্তায় বাসও নেই। অনেকক্ষন পর দ্বিগুণ ভাড়ায় সিএনজি ঠিক করে তাতে উঠে বসলাম। মৌচাক পার হতেই কোত্থেকে ৫-৬ জন ছেলে এসে সিএনজি থামিয়ে শুরু করল চালকসহ আমাকে বেদম মার! দু-চারটা চড়-থাপ্পড় হজম করে পড়িমড়ি করে কোনমতে সিএনজি থেকে নেমে পাশের গলি বরাবর দিলাম ফ্রি স্টাইলে দৌড়।
কিন্তু অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকিয়ে যায়! হঠাৎ পুলিশের বাঁশি শুনে পেছনে ফিরে দেখি পুলিশ পিকেটার সন্দেহে আমাকেই তাড়া করছে! তার উপর আমার হাতে র্যাপিং কাগজে মোড়ানো সন্দেহজনক প্যাকেট। আর যায় কোথায়! পুলিশ ধরার পর নগদে পশ্চাদদেশে যে লাথিটা খেলাম সে জায়গায় আজো অম্যাবস্যার রাতে ব্যথা করে! সেবারের ভ্যালেন্টাইনস’ ডে টা আমার চৌদ্দ শিকের ভেতরেই কেটেছিল। পরদিন ছাড়া পাবার পর বাসায় গিয়ে সব ঘটনা খুলে বলতেই বাবা কর্তৃক টানা দ্বিতীয় দিনের মত ধোলাইয়ের শিকার হই। পিকেটার, পুলিশের পর বাবার ধোলাই খেয়ে মার খাওয়ার ষোল কলা পুর্ণ হল। এরপর আবার মিলির সাথে দেখা হলে কি হয় কে জানে!
চরম শিক্ষা হয়েছে। এই কানে ধরলাম, পরবর্তীতে গার্লফ্রেন্ড তো দূরের কথা স্বয়ং বারাক ওবামা ফোন দিলেও আর কোন প্যাকেট হাতে হরতালে বের হচ্ছি না।
Comments (8)
ভাল। ক্যামনে কি?
কেম্নে কি ? বুঝার দরকার কি?
এবার দেশ সঠিক হলেই বেঁচে যাই