Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

সুমন আহমেদ

১০ বছর আগে

দ্রিমিতা

বাইরে অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে। তুমুল বৃষ্টির শব্দে মেয়েটির ঘুম বোধ হয় ভেঙ্গেই যাবে। হাসপালের শাদা ধবধবে বেডে শুয়ে থাকা দ্রিমিতাকে খুব অপূর্ব লাগছে, শুধু মাত্র মুখখানিতে যেন রাজ্যের বিষণ্নতা এসে ভর করে আছে। চোখ দুটোর নিচে কালি পড়ে গেছে তারপরও দেখতে পরীর মতো লাগছে। এমন মিষ্টি মেয়েটার এ রকম একটি কঠিন অসুখ হয়েছে ভাবতেই দু’চোখ ছলছল করে উঠলো শিহাবের। এতক্ষণ ধরে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছিল। বৃষ্টির শব্দ ক্রমশ বাড়তেই জানালা থেকে সরে পাশে বসে ডান হাতটা ওর কপালে খুব আলতো করে রাখলো আর ওতেই খানিকটা কেঁপে উঠলো সে, ঘুমটাও ভেঙ্গে গেছে। শিহাব ওর দিকে খানিকটা ঝুঁকে হাত দুটো চেপে ধরলো। শিহাবের দিকে খুব করুণ দৃষ্টিতে তাকালো দ্রিমিতা । বেঁচে থাকার আকুতি ভরা সেখানে তা না বললেও বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। শিহাবের চোখ দুটো জলে ভরে উঠলো। জলের একটা ফোঁটা ওর কপালে এসে পড়লো। ততক্ষণে দ্রিমিতার চোখেও রাজ্যের জল এসে ভর করেছে; কয়েক ফোঁটা চোখের দু’পাশ বেয়ে গড়িয়েও পড়লো। শিহাব হাত দুটো ছেড়ে দিয়ে চোখের জল মুছে দিল।
এই তো কয়েক মাস আগেও লেখাপড়ার অবসরে কতো আনন্দেই না দিন গুলো কেটে যাচ্ছিল ওদের। মাঝে মাঝে ওরা দল বেঁধে বেড়িয়ে পড়ত উদ্দেশ্যহীন ভাবে। দ্রিমিতার ছবি আঁকার নেশা ছিল খুব, শিহাবের গিটার। দ্রিমিতা প্রকৃতির সান্নিধ্য পেলেই হুট করে বসে পড়তো আর্ট পেপার আর রঙ তুলি নিয়ে আর শিহার ওর পাশে বসে গিটার বাজাতো। মাঝে মাঝে শিহাবের গিটারের মায়াবী সুরে দ্রিমিতা মুগ্ধ হয়ে অপলক তাকিয়ে থাকতো ওর আঙ্গুলের দিকে। ঠিক সে সময়ে বাতাস এসে চুল গুলো এলোমেলো করে দিত ওর। অদ্ভুত এক সৌন্দর্য এসে ভর করতো চুলে ঢেকে দেয়া মুখখানিতে! শিহাবের মায়াবী সুর আরো বেশি মায়াবী হয়ে উঠতো।
নাহ! এভাবে আর সময় নষ্ট করা যাবে না, যে করেই হোক বাঁচাতে হবে। ও না থাকলে যে তারও বেঁচে থাকা অর্থহীন হয়ে যাবে। ভাবতে ভাবতে উঠে দাঁড়াল। উদ্দেশ্য টি.এস.সি। ওখানে বন্ধুরা অপেক্ষা করছে। সবাই মিলে ঠিক করেছে দেশবাসীর কাছে সাহায্য চাইবে। মাত্র চল্লিশ লক্ষ টাকা হলেই দ্রিমিতা বেঁচে উঠবে, আবারো টি.এস.সি. শাহবাগ, অপরাজেয় বাংলায় ওরা দল বেঁধে আড্ডা দেবে। ওদের সবার চোখে এখন একটাই স্বপ্ন দ্রিমিতাকে বাঁচানো।

একুশের বইমেলা চলছে। দ্রিমিতার বন্ধুরা সারিবদ্ধ হয়ে মেলায় প্রবেশ ও বের হবার পথে বিষণ্ন প্লাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছে। “দ্রিমিতাকে বাঁচাতে প্লিজ আপনার হাতটা বাড়াবেন কি? ওকে বাঁচাতে চল্লিশ লাখ টাকা প্রয়োজন। আপনার মাত্র ক’টা টাকা পারে ওকে এই অপূর্ব সুন্দর পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রাখতে। পারে আমাদের প্রিয় বন্ধুকে আমাদের মাঝে আবার ফিরিয়ে দিতে। প্লিজ, আমাদেরকে সাহায্য করুন।”
এমন করুণ আকুতি দেখে কেউই ফিরিয়ে দিচ্ছে না ওদের। মেলায় আগত সবাই যে যেমন পারছে সাহায্য করছে। কারো কারো চোখে জলও চলে আসছিল। দু’একজন লোক বাজে মন্তব্যও করছিল। ভদ্রতার বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করে একজন তো বলেই ফেললেন আজকাল এমন টাকা তোলা হরহামেশাই ঘটছে! মানবিকতার দোহাই দিয়ে মানুষের কাছ থেকে চাঁদা তুলে সে টাকায় আমোদ-ফুর্তি করে বেড়ায় মর্ডান ছেলে-মেয়ে গুলো! লোকটির এমন মন্তব্যে ওদের হৃদয় ভারাক্রান্ত হলেও ঠিক এ মুহূর্তে নোংরা মুখের কথা গুলো ছাপিয়ে দ্রিমিতার অসহায় মুখ খানি ভেসে উঠছিল বারবার। বন্ধুর মলিন আর বাঁচার আকুতি ভরা মুখ খানি ওদের একমাত্র স্বান্তনার ওয়ে উঠছিল এ সময়ে।

দ্রিমিতার জন্যে পত্রিকায় সাহায্য চেয়ে ব্যাংক একাউন্ট নম্বর খোলা হয়েছে। সেখানেও প্রতিদিন জমা পড়ছে। দিন শেষে সংগ্রহীত টাকা ওরা ব্যাংকে জমা রাখছে। আস্তে আস্তে জমানো টাকা স্ফীত হচ্ছে আর ওদের স্বপ্নও একটু একটু করে মুঠো বন্ধী হতে চলেছে। দ্রিমিতা আবারো সেরে উঠবে ভাবতেই বন্ধুদের সবার আনন্দে চোখে জল এসে পড়ছিল।

সন্ধ্যের পর সবাই মিলে হাসপাতালে গিয়েছিল দ্রিমিতাকে দেখতে। ও তখন ঘুমুচ্ছিল। ডক্টরের নিষেধ আছে জাগানো যাবে না। তাই এক এক করে নিঃশব্দে ওর রুমে প্রবেশ করে দেখেই বের হয়ে যাচ্ছিল। শুধু শিহাব অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়েছিল বেডের পাশে। নার্স এসে ওকে বের হয়ে যেতে অনুরোধ করতেই বেরিয়ে গেল। তারপর যে যার মতো বের হয়ে চলে এলো আগামী দিনটির জন্য। দেখতে দেখতে বইমেলা শেষ হয়ে আসছে। এদিকে ব্যাংক জানান দিয়েছে আর মাত্র লাখ দুয়েক হলেই স্বপ্ন পূরণ হয়ে যাবে ওদের। ডক্টরও প্রস্তুত অপারেশনের জন্যে। সবকিছু ঠিকঠাক মতো চললে আগামী সপ্তাহেই অপারেশন হবে।

ঘুম আসছিল না কিছুতেই শিহাবের। বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছিল। কাল অপারেশন। মাঝখানে রাতটাই ব্যবধান। অথচ রাতটা যেন কিছুতেই শেষ হচ্ছিল না। শিহাবের মোবাইলটা হঠাৎ করে বেজে উঠলো, হাসপাতাল থেকে ফোন এসেছে। বুকটা ধুকধুক করতে লাগলো। ফোনটা রাখতেই ওর মুখটা বেশ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। এক্ষুণি হাসপাতালে যেতে হবে। রাত্রি প্রায় দুটোর মতো। দ্রিমিতা ভালো নেই। আজ রাতেই অপারেশন করতে হবে। শিহাব দ্রুত ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়ে।

হাসপাতালের পরিবেশটা শিহাবের কেন যেন বেশ ভারি বলে মনে হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে একটা শংকাও বেড়ে চলছে। নাহ্ এসব কিছু ভাবতে চাইছে না এ মুহূর্তে। দ্রিমিতার রুমের দরজার সামনে সব বন্ধুরা মেঝেতে এলোমেলো বসে আছে, সবার চোখ বেয়ে অঝোরে জল ঝরছে। শিহাবকে দেখতেই সবার জল গুলো আরো সশব্দে ঝরতে লাগলো। ওর বুঝতে বাকি রইলো না দ্রিমিতা আর বেঁচে নেই! কিন্তু এ মুহূর্তে ওর চোখে কোন জল নেই। শিহাব দ্রুত হাসপাতাল থেকে বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে টি.এস.সি এসে থমকে দাঁড়াল। রাতের অন্ধকারে সবকিছুই কেন যেন অচেনা মনে হচ্ছিল। না, আর পারছিল না, এবার সশব্দে ওর চোখ বেয়ে বৃষ্টির জলের মতো অবারিত ধারা প্রবাহিত হতে লাগলো। আর সে শব্দে রাতের কয়েকটা পাখি হকচকিয়ে অন্ধকার আকাশে উড়ে গেল, খানিকটা ভয়ে খানিকটা দ্বিধায়।

০ Likes ৮ Comments ০ Share ৩৩৭ Views

Comments (8)

  • - তাহমিদুর রহমান

    সমসাময়িক ছড়া

    • - মোকসেদুল ইসলাম

      ধন্যবাদ পাঠ করার জন্য

    - সনাতন পাঠক

    সুন্দর লেখা

    • - মোকসেদুল ইসলাম

      ধন্যবাদ বরাবরের মতোই পাশে থেকে প্রেরণা দেয়ার জন্য

    - এই মেঘ এই রোদ্দুর

    ভাল লাগল

    • - মোকসেদুল ইসলাম

      ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম আপু

    Load more comments...