Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

রাজু আহমেদ

১০ বছর আগে

দার্শনিক ভিত্তির উদাস কিছু কথা

 

পৃথিবীর সৃষ্ট লগ্ন থেকে সত্য এবং মিথ্যার দ্বন্দ্ব চলে আসছে । এ দ্বন্দ্ব পৃথিবীর ধ্বংস হওয়ার পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত চলবে । সত্য  এবং মিথ্যার দ্বন্দ্ব চিরকালের চিরন্তন । বিধাতা সত্যকে সৃষ্টি করার সাথে মিথ্যাকেও বোধ হয় তার সাথে গেঁথে দিয়েছেন । তার এ সৃষ্টির মধ্যে এক অসীম রহস্য বিদ্যমান । যা ভেদ করা কোন সৃষ্টির পক্ষে সম্ভব নয় । পৃথিবীতে শতাব্দীর পর শতাব্দীকাল ধরে চলতে থাকা সত্য মিথ্যার দ্বন্দ্বে কখনও সত্য আবার কখনও মিথ্যা জয়ী হয়েছে । পৃথিবীর কোন ইতিহাসে সত্য বিজয়ী হয়ে বেশিদিন স্থায়ী হওয়ার সুযোগ পায় নি । যুগে যুগে মিথ্যার দম্ভ সত্যকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছে । সত্য কখনো স্তিমিত হয়ে যায়নি । সত্য গোপন হয়েছে ঠিক তবে সময়মত সত্য তার স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়েছে । মানুষ এবং মানবতার বিজয় নিশ্চিত করেছে । কালক্রমে এমনভাবেই সত্য-মিথ্যার লড়াইয়ের স্বাক্ষী হয়েছে বিশ্বের মস্ত মস্ত সভ্যতা । কোন কোন সভ্যতা সত্যকে ভিত্তি আঁকড়ে গড়ে ওঠেছে আবার অনেক সভ্যতা মিথ্যাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে । সত্য প্রকৃত সূখ দেয় এরকম কথা প্রচলিত আছে । একথা আসলেও সত্য তবে সত্যের সে সূখ বড়ই করুণ । অনেক শোধনের পর সত্য যে সূখ দেয় সে সূখকে তখন অমৃত মনে হলেও সত্যের সূখকে আলিঙ্গন করার পূর্বে মিথ্যা এমনভাবে মাথা উঁচিয়ে থাকে যেন মিথ্যার  কাছে সত্যের কোন মূল্য নাই । কথায় বলে সত্য মানুষকে মুক্তি দেয়, সত্য কথা তিক্ত হয়, সত্যবাদীকে সবাই ভালবাসে । শুধু বিশ্বাস নয় এ চিরন্তন বানীগুলো সবাই অন্তরে ধারণ করে । এবং সত্য কেন্দ্রিক জীবন গঠনে সকলেই কম বেশি চেষ্টা করে ।

এক হাজার বা তারও আগের কথা টেনে এনে উপমা দেয়ার সৎ সাহস আমার নাই । আমি সত্যকে বিচার করব বর্তমান সময়ের অভিজ্ঞতায় ।  বর্তমানে সত্য কি মানুষকে মুক্তি দেয়, সত্য কথার তিক্ততার মাত্রা কেমন, সমাজের কতসংখ্যক লোক সত্যকে ভালবাসে ??  বাস্তবতাকে অস্বীকার করে কেউ জঙ্গলে গিয়ে বাস শুরু করতে পারবে না । জীবনের বাস্তবতাকে সকলের অনিচ্ছাসত্ত্বে হলেও আলিঙ্গন করতে হবে । আমরা প্রত্যেকেই যদি প্রত্যেকের বিচার করি তবে দৈনন্দিন যে কথাগুলো বলি তার কত শতাংশ সত্য বলি কখনো কি হিসাব করে দেখেছি ? এই সমাজে যে সকল মানুষগুলো বিপদ গ্রস্থ তারা কি সত্য বলে না ?  সত্য কথা বলতে গেলে কেন আপন মানুষের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ ঘটে ? সমাজের সত্যবাদীরা কি মানুষের ভালবাসার পাত্র নাকি শত্রুতার  আঁধার ।  আমাদের আশপাশের সমাজের বিচার করলে খুব সহজেই দেখতে পাব খুব কম সংখ্যক লোক সত্য কথা বলে । বিচারের স্বার্থে ধরে নিলা-  আমি, আমার আত্মীয় স্বজন এবং আমার প্রতিবেশীরা সবাই সত্য কথা বলে । শুধু আমি এবং আমার পার্শ্ববর্তীরা সত্যবাদী নয় বরং পৃথিবী নামক গৃহের সকল মানুষকেও যদি সত্যবাদী মনে করি তাহলেও কোন ক্ষতি নাই ।  সবাই যদি সত্যবাদী হত তবে জগৎময় সূখে ভরে থাকত ।  কিন্তু জগতের সর্বত্র অশান্তি এবং বিশৃঙ্খলা ।  কাজেই আমাকে সিদ্ধান্তে আসতে হবে জগতের সকলে সত্য বলে না ।  আমার পরিবারের মধ্যেও যেহেতু বিশৃঙ্খলা এবং অশান্তি বিরাজমান সুতরাং আমার পরিবারের সকলেও সত্য বলে না ।  শুধু বাকি থাকলাম আমি । আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমি কখনো সত্য বিমূখ হই না । অন্যায়ের সাথে আপোষ করি না ।  আমি সত্যবাদী কিংবা মিথ্যাবাদী সেটা মাপার নির্দিষ্ট কোন মানদন্ড থাকলেও মোটামুটি সহজ একটি তত্ত্বের বিচারে সেটা দেখতে পারি । আচ্ছা নিজের মধ্যে কি কখনও কামনার দ্বন্দ্ব হয় । বলতে হবে অবশ্যই হয় ।  একই সময়ে আমার অনেক কিছু পেতে ইচ্ছা করে অথচ আমার সাধ্যের একটি সীমাবদ্ধতা আছে । আমি ইচ্ছা করলেই কাল্পনিক সুপার ম্যান হতে পারি না । অসীম স্্রষ্টার সসীম সৃষ্টি হিসেবে সর্বত্রই আমার সীমাবদ্ধত । দু’টো সত্য আমার সামনে উপস্থিত হলে একটি সত্যকে বর্জন করে অন্য সত্যটিকে গ্রহন করতে হয় । দু’টো সত্যকে গ্রহন করার ক্ষমতা আমার নাই । কাজেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমি একটি সত্যের সামনে আত্মবিসর্জিত হই । এ বিসর্জন কি সত্যকে অস্বীকার করা নয় ।
 
সত্যবাদীকে সবাই ভালবাসে এ কথা আমি বিশ্বাস করি না । সত্যকে কেবল সত্যবাদীরাই ভালবাসতে পারে । যারা মিথ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত তারা কখনো সত্যবাদীকে ভালবাসতে পারে না । তাদের প্রধান শত্রুই সত্য । মিথ্যাবাদীরা পৃথিবীতে মিথ্যাকে জয়ী দেখতে চায় । মিথ্যাকে জয়ী করতে পারলে মিথ্যার সম্্রাজ্যের তারা  রাজত্ব করতে পারবে ।  সত্যবাদীতা এবং মিথ্যাবাদীতার এক ছাদের নিচে দাঁড়াতে পারে না । সুতরাং সত্যবাদীকে সবাই ভালবাসে একথা বলা চরম মিথ্যাবাদীতা । সত্যকে কিছু মানুষে ভালবাসতে পারে তাই বলে সবাই নয় । সত্য মানুষকে মুক্তি দেয় একথাটা এখন আর সত্য নাই বরং মিথ্যা মানুষকে মুক্তি দেয় । আগে শুনতে পেতাম একটি মিথ্যা প্রতিষ্ঠা করতে গেলে দশটি মিথ্যা বলতে হয় কিন্তু এখন একটি সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে দশটি মিথ্যা বলতে হয় । সমাজে সত্যবাদীর ভোগের কোন সীমা নাই । সত্যবাদীকে সমাজের সর্বদিক দিয়ে এমনভাবে নির্যাতন করা হয় যেন সত্যের নিভূ নিভূ অবস্থা ।  পূর্বে মানুষ সত্য বলে ন্যায়ের পক্ষে থেকে আত্মতৃপ্তিতে ভূগতো কিন্তু সে দিন এখন আর নাই । এখন মিথ্যা বলে অপরাধ করে মানুষ আত্মতৃপ্তিতে ভোগে, চরম সূখ পায় । তাহলে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রে কার ক্ষমতা বেশি সত্যের নাকি মিথ্যার ? সকল তর্কের পরেও সবাই সত্ত্বের ক্ষমতার কথা বলবে ।  সত্যের ক্ষমতা যদি থেকেই থাকে তবে সত্যবাদীদের এমন দুরাবস্থা কেন ?

রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।

০ Likes ১ Comments ০ Share ৫৬৫ Views

Comments (1)

  • - মাসুম বাদল

    চমৎকার...

    • - জাকিয়া জেসমিন যূথী

      অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। আরেকটু বিস্তারিত মন্তব্য করলে আরও বেশি ভালো লাগতো। 

      ভালো থাকবেন। 

    - তাহমিদুর রহমান

    আমিও ভাবছিলাম গল্প দিমু। কিন্তু অতিক্রম করব কিভাবে চিন্তায় আছি।

    • - জাকিয়া জেসমিন যূথী

      অতিক্রম করার কথা কি, ভাইয়া? 

    - ঘাস ফুল

    ‘এত গৌরবময়, এত বেদনাময় বছর বাঙ্গালীর জীবনে আগে কখনো আসে নি। বছরটি উনিশ শো একাত্তর! ভীরু, কাপুরুষ, কর্মবিমুখ, যুদ্ধবিদ্যায় অনভিজ্ঞ, ভেতো বাঙালি হিসেবে পরিচিত এই বাংলীরাই নয় মাস যুদ্ধ করেছিলো শুধু মাত্র ভাষার জন্য; ছিনিয়ে এনেছিলো স্বাধীনতার সোনালী সূর্য। লাখো লাখো মা বোনের অপমানের প্রতিশোধ নিতে ঝাপিয়ে পরেছিল এ দেশের আপামর জন সাধারণ। স্বাধীনতার জন্য প্রাণের আবেগ যখন দূর্দমনীয় হয়ে ঊঠে তখন আবেগের কাছে তুচ্ছ হয়ে যায় যেকোন শক্তিশালী মারণাস্ত্রই। সেই প্রমাণই দেখেছিলো একাত্তরে গোটা বিশ্ব!’

    আপনার ওপরের প্যারাটাতে বাঙালীকে হেয় করা হয়েছে। বাঙালী কোন কালেই ভীরু, কাপুরুষ ছিল না।নয় মাস যুদ্ধ করেছি স্বাধীনতার জন্য, ভাষার জন্য নয়। সুতরাং ভাষার জন্য কথাটা না দিলে ভালো হবে। যেহেতু প্যারাটা কোট করা আছে, তাই ঠিক জানি না, এটা কী আপনার বক্তব্য না অন্য কারো। তবে যারই হোক, আমি এই পুরো বক্তব্যের সাথে একমত না। 

    নামকরণটা নিয়ে আরও একটু ভেবে দেখতে পারেন।  

    এমনিতে গল্প ভালো লেগেছে। অনেক শুভ কামনা রইলো যূথী। 

    • - জাকিয়া জেসমিন যূথী

      আপনার পুরো বক্তব্যের সাথে সহমত পোষণ করছি। 

      অশেষ ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা রইলো। 

    Load more comments...