Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

Shah Alam Badsha

৯ বছর আগে

তোমার হৃদয়ে আমি গরু হয়ে ঘাস খাই-১ (ছন্দ প্রকরণ)

তোমার হৃদয়ে আমি গরু হয়ে ঘাস খাই
ল্যাম্পোস্টকে জড়িয়ে বলি- ডার্লিং !!!!

মুক্তছন্দ ও গদ্যকবিতা

ওপরের লাইন দুটো উচ্চাংগের আধুনিক গদ্যকবিতা, যা মুক্তছন্দে লেখা। এটি মুক্তছন্দে লেখা হলেও ছন্দোবদ্ধ দুটো পঙক্তি বা লাইন। এখানে ছন্দ আছে কিন্তু অন্তমিল নেই। অল্পকথায় এই হলো মুক্তছন্দে লেখা গদ্যকবিতার বৈশিষ্ট্য। আমরা যখন ছড়া-কবিতা লিখতাম সেই ৭০ এর দশকে; জাতীয় পত্রিকায় আমার প্রথম ছড়া ছাপা হয় ১৯৭৭ সালে। আমার ছড়া/কবিতা, গল্প,রম্য, গান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ব্যতীত এদেশের দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদ, দৈনিক বাংলা, সংগ্রাম, আজাদ, দেশ, নব অভিযান, জনতাসহ সব জাতীয় পত্রিকায় নিয়মিত ছাপা হতো। ছন্দের জাদুকর রুকুনুজ্জামান খান দাদাভাই আমার ছড়া প্রথম ছাপেন ইত্তেফাকে।

তখন অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত, স্বরবৃত্ত ইত্যাদি ছন্দই ছিলো প্রতিষ্ঠিত এবং প্রচলিত। কিন্তু মুক্তছন্দের নামে পরে আস্তে আস্তে যা এসেছে---তাতেও কিন্তু ছন্দ ছিলোই এবং এখনো আছে। কবিতার নামের সাথে গদ্য শব্দটা থাকায় অনেকেরই ধারণা গদ্যকবিতায় ছন্দ নেই। তাহলে গদ্য আর পদ্যের মাঝে কী ফারাক, তা তারা  আদৌ ভাবেন না। কিন্তু যারা মুক্তছন্দে লেখেন তাদেরও অনেকেই এমন সব কবিতা লেখেন, যা দেখে-পড়ে ছন্দই খুঁজে পাওয়া যায়না। কবিতার নামে এসবও আমার কাছে একপ্রকার গদ্যই। ছন্দছাড়া ছড়া-কবিতা, গান হয়, তা ইদানিং শুনছি আমি।

ছন্দের ধারণা
আসলে ছন্দ হলো ছড়া-কবিতা-গানের প্রাণ। সুলিখিত ও উপযুক্ত উপমা, তাল, লয় এবং শব্দ-বাক্যে গঠিত ছড়া-কবিতা-গানকে আবৃত্তি বা পাঠের সময় যে রিদম ও দ্যোতনার ঢেউ সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের হৃদয়-মনকে উদ্বেলিত-আন্দোলিত করে, তাইতো ছন্দ। ছন্দের আকর্ষণেই ছড়া-কবিতা পড়তে মজা পাওয়া যায়।

অথচ অন্তমিলবিহীন মুক্তছন্দের নামে গদ্যলেখক অনেকেই আজকাল রাতারাতি কবি বনে যাচ্ছেন দেখে আমার মাঝে মাঝে হাসিও পায়। আবার যারা শুধু পাশাপাশি একাধিক পঙক্তির শেষের পদের মিলন বা অন্তমিলকেই ছন্দ মনে করেন--কবি মধুসুদনের ভাষায় অন্তমিলের নামে ''শব্দে শব্দে বিয়ে দিলেই কবিতা হয়না'', তারাও বোকামী করেন। এদের উচিৎ আধুনিক কবিতা বা গদ্যকবিতা বা মুক্তছন্দের কবিতা কী বা কাকে বলে, তা মধুকবির লেখা থেকে শিখে নেয়া। তার অন্তমিলবিহীন অনেক সনেট অথবা অমিত্রাক্ষর ছন্দের কবিতা পড়লেই তারা বুঝবেন যে, অন্তমিল ছাড়াও দারুণ ছন্দের মানোত্তী্র্ণ কবিতা-ছড়া হয়।

আসলে ছন্দছাড়া ছড়া-কবিতা ও গানের অস্তিত্বই যে নেই-এটা অনেকেই জানেন না, তবু কবিতা লেখেন। ছন্দছাড়া আর যা হয়--তা পদ্য নয় স্রেফ গদ্যই হয়ে যায়। তাকে কবিতার আকারে বা পত্রিকার কলামের মতোন সাজালেই কবিতা হয়ে যায়না। তাই যারা ভাবেন--পত্রিকার কলামের মতো কিছু লাইন কবিতার আকারে সাজিয়ে লিখলেই আধুনিক মুক্তছন্দের গদ্যকবিতা হয়ে গেলো, তারা ভুল করেন!

তাইতো দেখি--এখন কবিতার নামে পত্রিকার পাতা আজকাল ভরেই যায়; যেনো দেশের সবাই কবি এবং কবিতা লেখা কতোই না সহজ?? এসব লেখায় না থাকে ছন্দ না থাকে পড়ার আকর্ষণ আর না থাকে মুন্সিয়ানা। পড়তে চরম বিরক্তি লাগে। সংশ্লিষ্ট কবিছাড়া এসব লেখা আজকাল কেউ পড়ে বলে আমার মনে হয়না। তবে এর ফাকে কিছু কিছু ভাল কবির ভাল কবিতাও যে ছাপা হয়না, তা কিন্তু নয়। আমি নিজেই সেসব পড়ে রসাস্বাদন করি।

আমাদের সময় পত্রিকায় সাহিত্যপাতা বা শিশুপাতা দেখতেন একজন করে প্রকৃত সাহিত্যিক এবং অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে তবে সেসব পত্রিকায় আমাদের লেখা ছাপা হতো। ডাকে পাঠানো ছড়া-কবিতা দিনের পর দিন ছাপা হতোনা, আমাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হতো যে, আমরা প্রকৃতই লেখাখোর নাকি লেখাচোর! দু'বাংলার লিটলম্যাগে আমাদের প্রচুর লেখা ছাপা হতো এবং অন্য পত্রিকায় লেখা ছাপানো দেখেই তারা আস্থা পেতেন এবং লেখা ছাপতে শুরু করতেন। 

তখন দৈনিক ইত্তেফাকের শিশুতোষ পাতা দেখতেন রুকুনুজ্জামান খান দাদাভাই আর সাহিত্যপাতা আল মুজাহিদী, দৈনিক বাংলার শিশুপাতা দেখতেন কবি আফলাতুন, দৈনিক আজাদ দেখতেন আবু নসরত মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ, সংগ্রাম দেখতেন জয়নুল আবেদীন আজাদ ও ছড়াকার সাজ্জাদ হোসাইন খান প্রমুখ। কিন্তু এখন তার আর তেমন বালাই নেই। শিশু বা সাহিত্যপাতার বিভাগীয় সম্পাদক কবি-সাহিত্যিক না হলেও সমস্যা নেই।

মুক্তছন্দের নামে তথাকথিত গদ্যকবির যেমন অভাব নেই তেমনই প্রকৃত সাহিত্যিকরূপী বিভাগীয় সম্পাদক না থাকলেও সমস্যা হয়না। সেই পাতাগুলো চালানোর লোকের অভাব এখন নেই। বরং ভালোভাবেই তা চালিয়ে নেয়া হয়।

আমি মনে করি, মুক্তছন্দের নামে গদ্যকবিতার ছদ্মাবরণে যারা পত্রিকার কলামের মতো ছন্দহীন কিছু লাইন সাজিয়ে কবিতা বানান, তারা কোনোদিনই ভালো কবি হতে পারবেন না। আর তা পত্রিকায় ছাপা হলেই কিন্তু খুশি হবারও কারণ নেই। তাই কবিতা লিখতে হলে ছন্দ শিখতেই হবে। নতুবা কবি কবি ভাব, ছন্দের অভাব, থেকেই যাবে?? (চলবে)

১ Likes ২ Comments ০ Share ১০২৩ Views