Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

দীপঙ্কর বেরা

৮ বছর আগে

তোমার ভাবনা তুমি ভাবো ( সৃজনশীল ব্লগিং প্রতিযোগিতা ২০১৬ ক্যাটাগরি ৩ প্রবন্ধ)

 

 

ভাবো আর ভাবনা কাজে লাগাওঅলস মন্থর হয়ে বসে থাকে অনেকেই। ফালতু সময় কাটায়। ভাবলেই ভাবা যায়। আর ভাবা কাজে লেগে যায়

যে যা করে সে যদি সেটা নিয়ে ভাবতেই থাকে তাহলে কিছু একটা তো হবেইভাবা অভ্যাসটাই আসল ব্যাপারভাবা বন্ধ করে শুধু যদি যাই হোক করে কাজটা শেষ করা যায় তাহলে সেই কাজটা পুরোপুরি সম্পন্ন হয় নাযেটুকু যতটুকুই হোক ততটুকুতেও ভাবতে থাকলে অনেক উচ্চতায় অনেককিছু করা যায়

ছাত্র তার পড়াশুনা নিয়েই ভাববে, শিক্ষক পড়ানো নিয়ে ভাববেখেতে বসতে যেতে আসতেশুধু ভাববে। তাহলে শিক্ষা তার নিজের জায়গা খুঁজে পাবেডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার প্রফেসর কৃষক মজুর কুলি মজুতদার আড়তদার প্রত্যেকে তার নিজস্ব কর্মকুশলতা নিয়ে ভাবলে উন্নতির সোপান তার নিজস্বতা খুঁজে পাবে

আমরা প্রত্যেকেই আদতে তা করি নাছাত্র শিক্ষক ডাক্তার ইঞ্জিনিয়র কেরাণি প্রত্যেকেই নিজস্ব কাজ নিয়ে যতটুকু ভাবে তার চেয়ে বেশি ভাবে এতে তার কতটা ফায়দা। সে নিজে কি পাবে? কতটা বেশি পাবে? আর সেই ফায়দা নিয়েই ভাবতে থাকে।

ফলে ছাত্রের জ্ঞান লাভ উধাও চাই নম্বর। শিক্ষকের শিক্ষাদান উধাও শুরু গুরুগিরির অধিকার ফলানো। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারের আরও গভীরতা উধাও চাই গাড়ি বাড়ি স্ট্যাটাস। কেরাণির কাজের ফাঁকিতে আরও আয় উপায়ের ধান্ধা। চাকরের মালিক ঠকানো আর মালিকের যতটা বেশি পারে কাজ বাগিয়ে নেওয়া। কন্টাকটরের কম মালে বেশি পয়সা তোলা আর মজুরের যাই হোক করে সেরে দেওয়া। খেলোয়াড় খেলায় ফাটকাবাজিতে চালাতে গিয়ে আসছে আর যাচ্ছে। কিছুজন তো ঘষে মেজে পড়ে থাকছে।

সবার ক্ষেত্রে একটাই বাস্তব চিন্তা থাকে, তা হল কি করে আরও বেশি টাকা পয়সা গাড়ি বাড়ি গুছিয়ে নেওয়া যায়। ফলে যে যার কাজের শ্রীবৃদ্ধি নিয়ে আদৌ ভাবে না। আরও ভাল কি করে করা যায় ভাবে, কিন্তু তা কেবল আরও কিভাবে বেশি আয় করা যায়।

এই অনিচ্ছা দায়সারা টানাপোড়েনের বাইরেও অনেকে দাঁড়িয়ে, তাদের জন্য আজও দেশ দশ সংসার চলছে। তবে তারাও ফাঁকি দিচ্ছে না ভাবছে ঠিকই, কিন্তু তারাও বড্ড নাম প্রত্যাশী। তাহলেও ভাবনা ঘুরে যাচ্ছে এক রাস্তা থেকে অন্য পথে।

ভাবনার এই রাস্তা বদল এবং তার পরিপেক্ষিতে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির মানবিকতার বিচারে উন্নতি সাধন বিন্দুমাত্র হচ্ছে না। আরও বড় ইমারত ঝাঁ চকচকে অবস্থান সবই হচ্ছে আর লোপাট হয়ে যাচ্ছে মনুষ্যত্ব। একে ধরে রাখার একটাই উপায় ভাবনা।

যে যে পেশাতেই আছে সেই পেশা নিয়ে ভাবা। সেই পেশায় কি ফায়দা তা নয়। আমি কৃষক। আমার ছেলেকে কৃষক হতে দেব না। সে আরও বড় অফিসার হবে। খুব ভাল কথা, তাহলে কৃষক কে হবে? সবাই যদি এইভাবে ভাবে তাহলে মুচি মেথর কামার কুমোর জেলে ঝাড়ুদার কে হবে? এসবের কি দরকার নেই? স্বচ্ছ অভিযান একদিন ঝাড়ু হাতে ধরে পোষ্ট করলেই সব পরিস্কার হয়ে যাবে?

তা হয় না। সব কাজই দরকার। ফুলবাবু হয়ে ঘুরলে হবে? খাওয়ার পরে এঁটোকাঁটা কে ধোবে শুনি? লোক তো মিলবে? কিন্তু সেভাবেই হবে? তাই প্রত্যেকেরই ভাবা দারকার। একই কাজ একটু ঘুরিয়ে নিয়ে একেবারে অন্যরকম। সবাই যদি নিজের ফায়দা না ভেবে অবস্থান নিয়ে ভাবে তাহলে একই অবস্থানে অনেক কিছু বদলে যায় পাওয়াও যায়। যে ফায়দা আর গাড়ি বাড়ি অবস্থান তাও পেছনে পেছনে ঠিকই চলে আসে। আর সবচেয়ে বড় কথা নিজেকে পাওয়া যায়।

ফায়দার কথা ভাবতে শুরু করলে গাড়ি বাড়ি ব্যাঙ্ক ব্যালান্স পেয়েও মনে হবে আরও চাই আরও চাই। আর আরও কি যেন পাওয়া হল না। আর এই চাহিদার শুরুও নেই শেষও নেই। আরও আরও। কিন্তু একবার নিজেকে পাওয়া হয়ে গেলে আর কিছু চাই না। গাড়ি বাড়ি খুবই সাধারণ মনে হবে।

এরকম ভাবনা সম্বল কিছু মানুষ আছে। তার বাইরেও আছে। তবে এ রকম ভাবনা প্রত্যয়ীরা  খুব নাম প্রত্যাশী। এরা আরও বেশি ভয়ঙ্কর। নামের জন্য কি না করতে পারে। ধরাকে সরা জ্ঞান করে। আর ভাবতে ভাবতে এত ব্যতিব্যস্ত করে নিজেকে আর পারিপার্শ্বিককে যে সবাই অতীষ্ঠ হয়ে পড়ে। অনেকটা লুকানো ছলের মত। রাজনীতিতে যা হয়ে থাকে। এই দেখো, আমিই দিলাম। মনে হবে সত্যিই তো। দিল বলেই তাই পেলাম। কত ভাবে আমাদের জন্য। যার নিল তাকেই দিল, মাঝখান থেকে গর্বটা কিনে নিল। বাপরে! কতবড় ভাবুক! মস্তবড় দরদী!

এ ব্যাপারে কবি সাহিত্যিক শিল্পী এই জাতীয় ভাবুকদের উল্লেখ্য করতেই হয়। এরা এত ভাবে যে সেই উচ্চতা পেরোতে পেরোতে অনেকেরই সময় কাবার। আবার সেই ভাবনা ছড়িয়ে পড়ে খুবই কম। কেন না তাদের নিজস্ব কার্যকলাপ সেই ভাবনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত নয়। শিল্প সংস্কৃতির সম্পূর্ণ বিভাগ বিষয় ভাবনার সঙ্গেই জড়িতখুব ভাল দিক। কিন্তু এই ভাবনা উড়ু উড়ু আকাশ পেরিয়ে মাঠে মেঠো রাস্তায় নামে না। জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে যায় না। শুনলাম, জানলাম ভাল লাগল, ব্যাস এটুকুই।

তারপর ঘরে ফিরে আর চিত্রপটে মিলছে না। মেলাতে যে ধ্বনির দরকার আর জড়পাথরে যে ভাবনার কুঠারাঘাত দরকার তা নিতান্তই কম। কিন্তু এর সাথে জড়িত ভাবুকের অভাব নেই। রোজই নিজস্ব ফায়দায় হাত ধুচ্ছে। ভাবনা রাস্তাজুড়ে কাঁদছে।

তাই ভাবো আরও ভাবো। যে যেখানে আছে সেখানের সেটুকুই ভাববে। তাতেই মঙ্গল।  

১ Likes ০ Comments ০ Share ৩১২ Views