ছোট বেলায় কোন কারণে মায়ের কথার অবাধ্য হলে কিংবা বিকেলের ঘুম ফাঁকি দিয়ে খেলতে গেলে রাতে ঘরে ফিরেই বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ঘুমের ভাব ধরতাম। এর পরও মাঝে মাঝে মা বেশি রেগে থাকলে বাবা মাকে শান্ত করতেন এই বলে ‘ঘুমন্ত ব্যক্তিকে কখনো মারতে হয়না সে যত বড় শত্রুই হোক, ওরে এখনকার মত ছেড়ে দাও।’
এর পর থেকেই ‘ঘুমন্ত ব্যক্তিকে মারতে হয়না’ এই অজুহাত কাজে লাগিয়ে জীবনে কত শতবার যে মায়ের হাতের কানমলা হতে পারপেয়ে গেছি তার সঠিক হিসাব উইকিলিসও কোন দিন বের করতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে।
একটু বড় হবার পর যখন প্রাইমারি পেড়িয়ে হাই স্কুলে প্রবেশ করলাম তখন কোন এক রাতে আমি ‘জনকণ্ঠ’ কিংবা ‘ইনকিলাব’ পত্রিকায় ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতের ঘটনার বিশদ বর্ননা পড়ে বাবা কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম ‘আচ্ছা সবাইতো রাতে ঘুমাচ্ছিল তাহলে পাকিস্তানিরা রাতের বেলায় মানুষ মারল কেন? সেদিন আমার প্রশ্ন শুনে বাবা বলেছিলেন, পাকিস্তানিরা কাপুরুষতো এই জন্যে।’
আরো বড় হবার পর যখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গুলো নিজে নিজে পড়তে শুরু করলাম, স্বাধীনতা আন্দোলন সম্পর্কে আরো বেশি জানতে শুরু করলাম তখন থেকে মার্চ মাসের ২৫ তারিখ আসলেই আমার মনে হয়, সে দিনও বুঝি এমন করেই সন্ধ্যা নেমেছিল, সারাদিনের হাড়ভাঙ্গা খাটুনি শেষে ক্লান্ত পূর্ব বাংলার নিরীহ, নিরস্ত্র মানুষ গুলো আহার শেষে চলে গিয়েছিল ঘুমের রাজ্যে। বাংলার সহজ-সরল মানুষগুলো স্বপ্নেও কোনদিন ভাবতে পারেনি যে ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের উপর এমন বিভীষিকাময় আক্রমণ কেউ চালাতে পারে.....।
সে রাতের প্রহর যেন ফুরাতে চায় না চারদিকে লাশ আর লাশ, রক্তে ভেজা রাস্তা, চারিদিকে বারুদের গন্ধ, চিৎকার, কান্না, ভয়ার্ত মানুষের ইতস্ত ছোটাছুটি অত:পর করুণ মৃত্যু। দৃশ্য গুলো কল্পনা করতে গেলেই কেমন জানি শরীরটা গুলিয়ে ওঠে। অস্বস্তি লাগতে শুরু করে। পর মুহূর্তেই সেই অস্বস্তি রূপ নেয় ক্রোধে। এ দেশের ঘুমন্ত, নিরপরাধ মানুষগুলোর উপর সেদিন যারা বিনা বিচারে এমন ন্যাক্কারজনক হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল আমার শরীরের প্রতিটি রক্ত বিন্দু তাদের সবসময় ‘কাপুরুষ’ বলে গালিদেয়। পাকিস্তান তুমি সেদিও কাপুরুষ ছিলে, আজো আছ এবং পৃথিবী ধ্বংসের আগ পর্যন্ত তুমি কাপুরুষই থেকে যাবে.....
Comments (2)
আজিজ দাদা
আপনার কবিতায় মন্তব্য করার ভাষা আমার জানা নেই
এক স্যালুট ছাড়া কিছুই দেওয়ার নেই
ভাল থাকুন সব সময়---
খুব খুব ভাললাগা জানালাম।
সালাম ও শুভকামনা...
অসাধারণ ভাল লাগলো।