Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

তিন বন্ধু ও শেখ মুজিব

১৯৬০ দশকের শেষের দিকে শেখ মুজিব দেশের নানা অঞ্চলে কড়া ভাষণ দিচ্ছেন। তার ভাষণে পূর্ব বাংলার মানুষের কাছে বঞ্চনার হিসেব পরিষ্কার হচ্ছে। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে সবাই শুনছে তার কথা। স্বপ্ন দেখছে  বঞ্চনাহীন জীবনের। সেই সময় এক মফস্বল শহরের তিন বন্ধু, সকলেই ক্লাস সেভেনে পড়ে, ঠিক করলো, শেখ মুজিবের ভাষণ শুনবে।

লোকাল ট্রেনে চড়ে শুনতে গেলো তারা শেখ মুজিবের ভাষণ। ফিরে এলো বুকে আগুন নিয়ে; মোহিত হয়ে। রেলস্টেশনে নামার পরই দুইজন পাকড়াও হলো যার যার বাবার কাছে। তৃতীয়জনের মা নেই, বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে দ্বিতীয় ঘরের ছেলেমেয়ে নিয়ে ব্যাস্ত, তার খবর রাখে না। যে দুইজন পাকড়াও হলো তার একজন পিটুনি খেতে খেতে আর গালি শুনতে শুনতে বাড়ী পৌঁছাল। দ্বিতীয়জনের বাবা বললো 'এতদূর যাবি, বলে যাবি না?'

যে পিটুনি খেলো বাবার কাছে, তার মা রাতের খাবার দিলো না শাস্তি স্বরূপ। দ্বিতীয়জনের মা ভাত বেড়ে দিতে দিতে বললো 'কি কইলরে শেখ সাব?' তৃতীয়জন বাড়ী ফিরে ঘুমিয়ে পড়লো। সৎ মা আর আপন বাবা জানলোনা তার না খেয়ে শুয়েপড়া যেমন জানে না তার অন্যান্য বুক ভরা অভিমান।

প্রথমজন, যিনি পিটুনি খেতে খেতে আর গালি শুনতে শুনতে বাড়ী পৌঁছেছিলেন, প্রথমলগ্নে জাতীয়পার্টি, দ্বিতীয়লগ্নে বিএনপি করে স্থির হলেন আওয়ামী লীগে। অগ্নিসংযোগ আর জমি দখলের ঘটনা দিয়ে তার পোর্টফলিও পরিপূর্ণ। বিএনপিতে থাকাকালীন সময়ে হিন্দু মেরে সোয়াব কামিয়েছেন অনেক। আর ১৯৮০ দশকে জাতীয়পার্টি করার সময় খুন করে সংবাদ পত্রে দুবার হাই ভোলটেজ কভারেজ পেয়েছিলেন।

দ্বিতীয়জন, যার মা ভাত বেড়ে দিতে দিতে প্রশ্ন করেছিলেন 'কি কইলরে শেখ সাব?'; একটা আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে এখন পলিটিকাল সাইন্স পড়ান । ক্লাসে প্রায়ই শেখ মুজিবের এবং বাংলাদেশের উদাহরণ টেনে আনেন তিনি; ছাত্র ছাত্রীরা মুগ্ধ হয়ে শুনে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও একটা দেশের জন্ম হবার গল্প। শুনে কীভাবে একটা জাতীকে শেখ মুজিব স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছেন এবং  স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন।

তৃতীয়জন অনেক বছর ধরে ফ্রান্সে আছেন। ছবি আঁকেন, ছবি বিক্রি করেন। একটা ছোট বুকশপ ও  চালান তিনি। ইউরোপিয়ানরা তার কাছ থেকে হঠাৎ কিনে নিয়ে যায় এমন বিমূর্ত ছবি যার ভিতরে নিংড়ানো আছে শেখ মুজিবের অস্তিত্ব। তার বুকশপ এ  হঠাৎ ঢুকে পড়ে ভ্রমনরত বাংলাদেশীরা। বাংলাদেশের উপর বই দেখে অবাক হয়।

... আমি বলছিনা সেই দিন তাদের বাবা-মার ব্যবহার ঠিক করে দিয়েছিল তাদের ভবিষ্যত পথ। আমি এও বলছিনা সেদিনের ঘটনাবলী তাদের ভবিষ্যত পথ ঠিক করে দেয়নি।
১ Likes ২ Comments ০ Share ৪০৭ Views