Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

এম রহমান

৯ বছর আগে

তারকাটাঃ বাংলা সিনেমা রিভিউ

গালের ডানপাশে জ্বর থাকায় অনেকক্ষন ধরে সিদ্ধান্ত নিলাম সিনেমা দেখতে যাওয়া ঠিক হবে কিনাঅবশেষে জ্বর কে থোড়াই কেয়ার করে জীবনের ঝুকি নিয়ে সিনেমা শুরু হওয়ার১৫মিনিট আগেই হলে হাজির হলাম। হলে তখন হিন্দী গানের সুর নকল করে ফালতুলিরিক্সের বাংলা গান বাজছে (আসলেই গানের ক্ষেত্রেও সেন্সর করা উচিত যাতেএইসব আউল ফাউল গান শুনতে না হয়) । একেতো বিরক্তিকর গান তার উপর গরম। তাইভিতরে বসে না থেকে বাইরে চলে এলাম। সিনেমা শুরুর মিনিট খানিক আগে সিটে গিয়েবসলাম।

জাতীয় সঙ্গীত বাজার সাথে সাথেই সিট ছেড়ে উঠে দাড়ালাম। এমন সময় পেছন থেকেআওয়াজ আসলো, "পোলাপাইন স্কুল কলেজে জাতীয় সঙ্গীতে দাড়ায় না আর হলের ভিতরেদাড়াইতে আইছে"
পেছনে তাকিয়ে আওয়াজকারীর উদ্দেশ্যে বললাম, "এই বয়সেই মাজায় সমস্যা? বাকী জীবন তো পড়েই আছে"
কি বুঝলো না বুঝলো জানিনা। পেছনের ছেলে গুলো উঠে দাড়ালো। ততক্ষনে আশেপাশেরঅনেকেই উঠে দাড়িয়েছে। যাই হোক যথারীতি সিনেমা শুরু হল। তারকাটা একটিসাদামাটা গল্প নিয়ে তৈরি। এই নকলের ভীড়ে সাদামাটা গল্প টাকে পজিটিভ ভাবেইনিচ্ছি। তবে পরিচালক এই সাদামাটা গল্প কেই খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

সিনেমার শুরুতেই স্ক্রীনে একটি বড় হাতুড়ী নিয়ে আবির্ভূত হয় আরিফিন শুভ।যে এই সিনেমার মূল চরিত্র ইব্রাহীম। আরিফিন শুভ বেশ দারুন ভাবেই ইব্রাহীমচরিত্র টিকে ফুটিয়ে তুলেছেন। তার গেটআপ এবং চরিত্রের সাথে একেবারে মানানসইএক্সপ্রেশনে দর্শক সিটি দিতে বাধ্য ছিল। জাদরেল সন্ত্রাসী ইব্রাহীম আসলামেরছোট ভাইকে খুন করে তার সাথে একটি ঝামেলা তৈরী করে। ইব্রাহীমের এইসন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য তার বোন মৌসুমী তাকে ভাই বলে পরিচয় দেয়না। অথচএই ইব্রাহীমই যখন একজন সাধারন যুবক ছিল, তখন সে ছিল মৌসুমীর নয়নের মনি।
এর পরে পর্দায় আবির্ভাব হয় বিদ্যা সিনহা মিমের। এবং যা হওয়ার কথা তাই হল, ইব্রাহীম চাঁদের মানে মিমের প্রেমে পড়ে যায়। মিম কে শিল্পী বানানো এবং পরেতারই সেক্রেটারী হিসেবে কাজ করা, পুরোনো শত্রুতার জেরে আসলামের সাথে বারবারঝামেলা, বোনের অবহেলা ইত্যাদী কাহিনী নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে সিনেমা (কাহিনীআর কমুনারাজ ভাই পিটাইতেও পারে)

বাংলা সিনেমার বর্তমান পরিস্থিতিতে এধরনের সিনেমা নিয়ে সমালোচনা করাউচিত নয়। কারন একের পর এক বস্তাপঁচা সিনেমার মাঝে কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকেইহাজির হয়েছে তারকাটা। তবুও এই সিনেমার ভালো না লাগার দিক গুলো তুলে ধরলাম।
সিনেমায় কিছুক্ষন পরপর লম্বা গানের ব্যবহার কিছুটা খারাপ লেগেছে। মনে হলমিউজিক্যাল ফিল্ম দেখছি। তারকাটা এ্যাকশন ফিল্ম হলেও এতে এ্যাকশনের মাত্রাখুব কম ছিল এবং ফাইট দৃশ্য গুলো একেবারেই সাদামাটা। এই জন্য তারকাটা টীম কেমাইনাস।
মৌসুমীর সাথে একটি গানে শুভর ন্যাকামীটা চোখে বেধেছে। শুভ কে ললিপপ বেবি বানিয়ে দেয়ার কোনো মানে ছিলনামূল ভিলেন হিসেবে ফারুক আহমেদ কে দেখে একটু অবাক হয়েছিলাম। ভিলেন হিসেবেসে চরিত্রটিকে ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেনি। পুরো চরিত্রটাতেও সেঅট্টহাসি দিয়ে গেছে যেন সে দিনে তিন বেলা লাফিং গ্যাস খায়। পুরো সিনেমায়প্রান আপআর সিম্ফোনি মোবাইলের ব্যবহার ছিল মাত্রাতিরিক্ত। পোলাপাইন রেপ্রান আপের বোতল দেয়া, প্রান আপ মিউজিক এওয়ার্ড, প্রান আপের সৌজন্যেকনসার্ট এইগুলা কে বেশি বেশি মনে হয়েছে। আবার বারেবারে সিম্ফোনি মোবাইল কেফোকাস করা, সিম্ফোনির সৌজন্যে ইন্টার্ভাল এগুলোও ছিল বাড়াবাড়ি।
মিম কে এতবড় শিল্পী বানানোর পিছনে কার অবদান সে সম্পর্কে জানার কোনো আগ্রহ মিমের মাঝে দেখা যায় নি।
মিম কে ডা. এজাজ আম্মিজি বলে ডাকতো আর শুভ কে বলতো ছোট ভাই। ছোট ভাইয়েরগার্লফ্রেন্ড কে আম্মিজি বলা উচিত নয় এইটা তার বোঝা উচিত ছিল। মৌসুমীরচরিত্রটি এই সিনেমায় একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তবে মাঝে মাঝেই মনে হয়েছেতিনি যেন চরিত্রের মাঝে ঢুকতে পারেননি। হঠাত করে তাকে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালেভর্তি হতে দেখা গেল আবার তারপরই তাকে সুস্থাবস্থায় দেখা গেল। পণ্যেরমাত্রাতিরিক্ত প্রচারের নমুনা স্বরুপ এক দৃশ্যে দেখা গেল তিনি ভাটিকা তেলেরবোতল জড়িয়ে ধরে কাদছেন(!)
সিনেমাটির গল্পটি মৌলিক হলেও প্রথমদিকে চোরাবালি সিনেমার ছায়া পাওয়া গেছে।আর মিমকে বারে গাইতে গাইতে সুপারস্টার বানিয়ে দেয়ার বিষয় টা আশিকি টুসিনেমার সাথে তুলনা করা যায়। আমার মনে হয় এই কাজ টা করার কোনো দরকারই ছিলনা।
পুরো সিনেমায় আসলামের সাঙ্গপাঙ্গো হিসেবে ২-৩জনকেই ঘুরে ফিরে দেখা গেছে।এদিকে আরো কিছু সহশিল্পীকে নিলে বিষয়টা দৃষ্টিকটু লাগতো না। ইন্টার্ভালেরআগের অংশটুকু বেশ ধীরগতিতেই চলছিল কিন্তু ইন্টার্ভালের পর সব হুটহাট করেহয়ে যেতে থাকে। শুভ ও মিম কে যখন একসাথে আটকে রাখা হয় তখন শুভর একটা উক্তিছিল, "ওই কই যাস? খুলে দিয়ে যা" এমন পরিস্থিতিতে এই ধরনের দূর্বল ডায়লগভালো লাগেনি। শুভ আর মিমের রোমান্সের অংশগুলো একটু কম হয়ে গেছে। শেষদিকেএসে হুটহাট কিডন্যাপ হয়ে যাওয়া সিনেমার সবচেয়ে বাজে দিক ছিল। প্রথমেমৌসুমির মেয়ে দিয়া কিডন্যাপ হল, তারপর মিম কে কিডন্যাপ করলো। এবার মিমকেবাচাতে গিয়ে শুভও আটকা পড়ে গেল। হিসাব অনুযায়ী শুভ কে আটকে না রেখে মেরেফেলা উচিত ছিল। আরে ব্যাটা তোর ভাইরে যে মারছে তারে বারবার সুযোগ পাওয়ারপরও মারতাছোস না ক্যান? এরপর আবার মৌসুমীকেও কিডন্যাপ করা হল। মিম এর একটাবোন থাকলে দেখা যেত তাকেও কিডন্যাপ করা হয়েছে।

অনেক খারাপ দিক নিয়ে বলে ফেলেছি, এবার কিছু ভালো দিকও বলি। চারিদিকে যখননকলের ভীড় তার ভিতর পরিচালক সাহস করে মৌলিক গল্প নিয়ে সিনেমা বানিয়েছেন এরজন্যই রাজ ভাই কে প্লাস দেয়া উচিত। সবার অভিনয় দারুন ছিল। আরিফিন শুভ বেশদারুন ভাবে তার চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছেন। তার অভিনয় দেখে মনে হয়েছে সত্যিইকোনো নায়কের অভিনয় দেখছি পাশাপাশি তার বডি ফিটনেস, গেটআপ তো আছেই। পিস্তলমাথার এক পাশে ধরে ডায়লগ বলে যাওয়া ভালো লেগেছে। আবার মৌসুমী যখন শুভ কেবলল, "ভয় পাস না কেন?" তখন শুভর ভয় পাওয়ার অভিনয় টা দারুন ছিল।
মিম তো এই সিনেমায় তার আগের সব কাজ কে ছাপিয়ে গেছে। তাকে বেশ গ্ল্যামারাসলাগছিল। বাংলাদেশের নায়িকাদের সমস্যা হল তারা চরিত্রের ভিতর ঢুকতে পারেনা, অভিনয়টা কেমন যেন ম্যাড়ম্যাড়া বা বিরক্তিকর আহ্লাদী টাইপের হয়ে যায়। কিন্তুমিম এদিক দিয়ে বেশ সাবলীল ভাবে কাজ করেছে। মিম কে যেন আরো অনেক সিনেমায়পাওয়া যায় সেই আশায় থাকবো।
সিনেমায় শুভর সহকারী হিসেবে রাজু নামে একজন কে দেখা গেছে যে পুরো সিনেমায়তোতলামী(নাকে কথা) করে সিনেমাটাকে আরো উপভোগ্য করে তুলেছে। ছোটখাটো চরিত্রথেকে পারফেক্ট অভিনয় পাওয়াই যায়না আমাদের সিনেমায়, কিন্তু রাজু এদিক থেকেব্যতিক্রম। আর মিমের সহকারী হিসেবে যে মেয়েটা ছিল সে যেন কথার রেলগাড়ি। একনি:শ্বাসে সাধু চলিত আঞ্চলিক মিশ্রিত কথা বলে সে সবাইকে আনন্দ দিয়েছে।
শিশুশিল্পী হিসেবে দিয়ার অভিনয় কে আমি সবার চেয়ে এগিয়ে রাখবো। এতটুকুবাচ্চা যেন বাস্তবেই সব কিছু করে যাচ্ছিল। তার অভিনয়টা মোটেও কৃত্রিম মনেহয়নি।
এই সিনেমার চিত্রগ্রহণ অন্য যেকোনো সিনেমা থেকে অনেক অনেক গুন ভালো। খায়েরখন্দকার দেখিয়ে দিয়েছেন তার ক্যামেরার জাদু। সিনেমার কালার গ্রেডিং খুবইসুন্দর ছিল। আসল কথা এই সিনেমা তে আসল সিনেমেটিক ফ্লেভার পাওয়া গেছে।অন্যান্য সিনেমাগুলোতে এতটা সিনেমেটিক ফ্লেভার পাওয়া যায়না। সঙ্গীত পরিচালকহিসেবে আরিফিন রুমি কে এ প্লাস দেবো। গান গুলো দারুন ছিল। "রূপে আমার আগুনজ্বলে" , "পৃথিবীর ভেতর একটাই জীবন "
, "তুই যে আমার নয়ন মনি" ,
"কি যে শুন্য শুন্য লাগে তুমি হিনা"
, "হৃদয়ের যত দু:খ " , "আমি রদ্দুর হব " প্রতিটা গানই শ্রুতিমধুর।

সিনেমার সাদামাটা গল্পকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন, দারুন অভিনয় এসব দিকবিবেচনা করে সবাইকে সিনেমাটি দেখার আহ্বান জানাবো। (আপনি বেশি খুতখুতে হলেআবার সমস্যা)

রিভিউ লিখেছেনঃ ব্লগার বিকল কপোট্রন

 

০ Likes ৭ Comments ০ Share ১১৭২ Views