অ্যালার্মের শব্দে ঘুম থেকে জেগে উঠলো অমি। যদিও অ্যালার্মটা ও দেয়নি। অ্যালার্মটা দিয়েছে নয়ন। শীতের কারনে নয়ন আর অমি একসাথে ঘুমিয়েছে। দুইজনের কম্বল একসাথে করে নিয়েছে, যেন শীতটা একটু কম লাগে। কিন্তু, তাতে লাভ তেমন হয়েছে বলে মনে হয় না। শীতে ঠক ঠক করে কাঁপছে দুই জনই। সকাল প্রায় নয়টা বাজে। কিন্তু, রোদ উঠার কোন নামই নেই। এদিকে দশটায় ক্লাস। কোনরকমে কম্বলের নীচ থেকে বের হলো অমি। শীতে কাঁপতে কাঁপতে বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে আসলো ও। রুমে এসে দেখে ওর রুমমেট ব্যয়াম করছে। স্বাস্থ্য ভাল করার জন্য না, শীত ঠেকানোর জন্য! পদ্ধতিটা খারাপ না। এদিকে আরেক রুমমেট, লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে মোবাইলে “ঘুটুর ঘুটুর” করে কথা বলছে। যদিও, সে কথা বলছে এতই আস্তে যে, তার কানের কাছে না গেলে বোঝারই উপায় নেই যে সে কথা বলছে। যাইহোক, রুম থেকে বের হয়ে ক্লাসের দিকে এগোল অমি। রাস্তায় দেখা নাজমুলের সাথে। যদিও মানুষটা যে নাজমুল, সেটা বোঝা গেল অনেক পরে। কুয়াশায় ঢাকা প্রকৃতি, একেবারে কাছে না আসলে বোঝাই যায় না কিছু। নাজমুল তার অ্যান্ড্রয়েড সেটে দেখালো ঐ মুহূর্তের তাপমাত্রা, ৩.২ ডিগ্রী!! চমকে উঠলো অমি। তিন দশমিক দুই ডিগ্রী তাপমাত্রা!! এরকম তাপমাত্রার কথা এই জীবনে শোনেনি ও! কেউ একজন জানালো, দশমাইলে দুই বাসের সংঘর্ষ হয়েছে কুয়াশার কারণে। কেউ মারা যায়নি, তবে আহত হয়েছে অনেকে।
রাস্তায় নেমে অমি একটু অবাকই হলো। প্রেমিক প্রেমকারা রিকসায় একই চাদর গায়ে জড়িয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ঘনিষ্ট হওয়ার জন্য উপলক্ষ্যটা খারাপ না! এদিকে, বিসিএস নিয়ে মহা ব্যস্ত সাম্য অমিকে ডাক দিয়ে বললো, “গত ছাপ্পান্ন বছরের মধ্যে আজই বাংলাদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা, দিনাজপুরে, ৩.২ ডিগ্রী; তারিখটা মনে রেখ ৭ই জানুয়ারী, ২০১৩।”
শীতটাকে কেন্দ্র করে অনেক কিছুই ঘটছে চারপাশে। প্রকৃতিকে সবসময় এত গুরুত্ব দেই না আমরা। কিন্তু, এই শীত যেন দুনিয়াটাকেই “শীতভিত্তিক” করে ফেলেছে! গুরুত্ব না দিয়ে কোন উপায় নেই। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এখন অনেক অ্যকটিভ। শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্রবিতরণের জন্য তারা গত কয়দিন ধরে অনেক টাকা তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক সয়াব্র কাছ থেকে। সেই টাকা দিয়ে কেনা বেশ কিছু কম্বল মাত্রই কিনে আনা হয়েছে।
*******
রকিবের আজ শীত লাগছে। কারনটা বুঝতে পারছে না সে। রাস্তার টোকাই ও। তাই, শীত ওর কখোণই লাগে না। জানুয়ারি মাসের ঠান্ডায়ও দিব্যি খালি গায়ে ঘুরে বেড়ায় ও! কিন্তু, আজ পারছে না। শীত যেন হাড়ে কাঁপন তুলেছে ওর! শীত বস্ত্র বিতিরনের সময় বরাবরই বেশ ভাল কাপড়গুলো ও পায়। এই ব্যপারে ওর ভাগ্য বেশ ভালই বলতে হবে। কিন্তু, এই বছর কী হয়েছে কে জানে। গরম কাপড় বিতরণের কোন খবরই নেই; ব্যপার কি? এদিকে রকিবের ছোট বোনের অবস্থা খুব খারাপ। জ্বরে কাঁপছে মেয়েটা। আজ কি শীত খুব বেশি পড়লো? কী করবে ও? একটা কম্বল না হলে যে আর চলছে না! কাগজ কুড়ানোর জন্য বরাবরের মত আজও রকিব ঢুকলো ভার্সিটি ক্যম্পাসে। হঠাত কিছু একটা দেখে চোখ একদম স্থির হয়ে গেল ওর। একটা ছেলে ঘাড়ে একগাদা কম্বল নিয়ে এসে মসজিদের সামনে রেখে ভেতরে ঢুকলো। এই মুহূর্তে আশেপাশে কেউ নেই। এমন সুযোগ হাতছাড়া করাটা কি ঠিক হবে??
*****
অমির মোবাইলে কল আসছে। কল করেছে মাসুদ। নিশ্চই আর্জেন্ট কিছু। ফোন রিসিভ করতেই মাসুদ হরবর করে বলতে শুরু করলো, “দোস্ত তুই কোই? মসজিদের সামনে ওয়েল ফেয়ার ফান্ডের জন্য কেনা কম্বলগুলো রেখে মাত্র ঢুকছি একটু ভেতরে, এসে দেখি কম্বলের প্যকেট খোলা! কয়টা চুরি হইছে কে জানে!! আরে আজ বিকালেইতো বিতরণ করার কথা!” “শিট!” এছাড়া আর কিই বা বলতে পারে অমি! কিন্তু, হঠাত কি যেন চিৎকার শুনতে পেল। ভাল করে বুঝার চেষ্টা করলো ও। বেশ কিছু ছেলে চিৎকার করছে, “চোর, চোর, চোর......”
****
প্রান ভয়ে দৌড়াচ্ছে রকিব। হাতে ধরা আছে একটা নীল কম্বল। ওইটা হাত থেকে ফেলে দিতে পারে, কিন্তু তাতে লাভ? চুরির দায়ে মার খেতেই হবে। তাই, যতক্ষন পারে, কম্বলটা হাতে রাখা উচিত। তবে, ধরা পরা যাবে না। পাবলিকের মার বড় কঠিন জিনিষ। ভর্তা বানিয়ে ফেলবে ওকে, যদি ধরতে পারে। অবশ্য কিছুটা দূরে আছে লোকগুলো। ছুটটে রকিব।
সামনে একটা পুকুর! বুদ্ধি আসলো মাথায়। সোজা লাফদেবে পুকুরে। তারপর ঘাপটি মেরে থাকবে জলের নীচে। লোকগুলো দেখতে পাবে না ওকে, নিশ্চিত। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পানির নীচেই থাকবে। লোকগুলো খুজে না পেয়ে চলে যাবে। সুতরাং আর দেরী না।
এক লাফে সোজা পুকুরের পানির নীচে রকিব!
****
বিকাল হয়ে এসেছে। কম্বল চোর পাওয়া যায়নি। কিন্তু, এরই মাঝে মনে হয় কিছু একটা ঘটেছে নতুন। পুকুর পার থেকে হৈচৈ আসছে। অমি ছুটে গেলো দেখতে। যা দেখলো তাতে শিউরে উঠলো ওর সারা শরীর। একটা ছেলের লাশ তোলা হয়েছে পুকুর থেকে। মারা গেছে ছেলেটা। মৃত্যুর পরও হাতে শক্ত করে ধরে আছে একটা নীল কম্বল!
Comments (29)