(পূর্ব প্রকাশের পর)
তাকওয়ার পরকালীন উপকারিতা:
১. তাকওয়ার ফলে আখেরাতে আল্লাহর নিকট সম্মান লাভ হবে।
তিনি বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন।’ (সূরা হুজুরাত, আয়াত : ১৩)
২. তাকওয়া পরকালীন সফলতা ও কামিয়াবির চাবিকাঠি।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যে কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তার তাকওয়া অবলম্বন করে, তারাই কৃতকার্য।’ (সূরা হুজুরাত, আয়াত : ৫২)
৩. কিয়ামতের দিন তাকওয়ার ফলে আল্লাহর শাস্তি থেকে নাজাত মিলবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমাদের প্রত্যেককেই তা অতিক্রম করতে হবে, এটি তোমার রবের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তারপর আমি এদেরকে মুক্তি দেব যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে। আর যালিমদেরকে আমি সেখানে রেখে দেব নতজানু অবস্থায়।’ (সূরা মারইয়াম, আয়াত : ৭১-৭২)
অন্যত্র তিনি ইরশাদ করেন, ‘আর তা থেকে দূরে রাখা হবে পরম মুত্তাকীকে।’ (সূরা লাইল, আয়াত : ১৭)
৪. তাকওয়ার ফলে আমল কবুল হয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অন্যজন (হাবিল) বলল, ‘আল্লাহ কেবল মুত্তাকীদের থেকে গ্রহণ করেন।’ (সূরা মায়েদা, আয়াত : ২৭)
৫. তাকওয়ার ফলে আখেরাতে জান্নাতের মিরাস ও উত্তরাধিকার লাভ হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সেই জান্নাত, আমি যার উত্তরাধিকারী বানাব আমার বান্দাদের মধ্যে তাদেরকে যারা মুত্তাকী।’ (সূরা মারইয়াম, আয়াত : ৬৩)
৬. তাকওয়া অবলম্বনকারীদের জন্য আখেরাতে জান্নাতে সুদৃঢ় প্রাসাদ থাকবে, যার উপরেও থাকবে প্রাসাদ।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কিন্তু যারা নিজদের রবকে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে কক্ষসমূহ যার উপর নির্মিত আছে আরও কক্ষ। তার নিচ দিয়ে নদী প্রবাহিত। এটি আল্লাহর ওয়াদা; আল্লাহ ওয়াদা খেলাফ করেন না।’ (সূরা যুমার, আয়াত : ২০)
হাদীসে এসেছে, ‘নিশ্চয় জান্নাতের মধ্যে এমন কিছু প্রাসাদ রয়েছে, যার অভ্যন্তর বাহির থেকে দেখা যাবে এবং বাহির ভেতর থেকে দেখা যাবে। এক বেদুঈন জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসূল, এ প্রাসাদগুলো কার জন্যে হবে ? তিনি বললেন, যে সুন্দর কথা বলবে, খানা খাওয়াবে ও মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকবে, তখন সে সালাত পড়বে।’
৭. মুত্তাকীগণ তাকওয়ার ফলে কিয়ামতের দিন পুনরুত্থানের মুহূর্তে, হাশরের ময়দানে, চলার পথে ও বসার স্থানে কাফেরদের উপরে অবস্থান করবে। তারা জান্নাতের সুউচ্চ স্থানে সমাসীন হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা কুফরি করেছে, দুনিয়ার জীবনকে তাদের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে। আর তারা মুমিনদের নিয়ে উপহাস করে। আর যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে, তারা কিয়ামত দিবসে তাদের উপরে থাকবে। আর আল্লাহ যাকে চান, বেহিসাব রিযক দান করেন।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ২১২)
৮. তাকওয়ার ফলে আখেরাতে জান্নাত লাভ হবে, কারণ জান্নাত মুত্তাকীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে, যার পরিধি আসমানসমূহ ও জমিনের সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৩)
তিনি আরও বলেন, ‘আর যদি কিতাবিরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তবে অবশ্যই আমি তাদের থেকে পাপগুলো দূর করে দিতাম এবং অবশ্যই তাদেরকে আরামদায়ক জান্নাতসমূহে প্রবেশ করাতাম।’ (সূরা মায়েদা, আয়াত : ৬৫)
৯. আখেরাতে তাকওয়া গুনাহের কাফফারা হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যে আল্লাহকে ভয় করে তিনি তার গুনাহসমূহ মোচন করে দেন এবং তার প্রতিদানকে মহান করে দেন। (সূরা তালাক, আয়াত : ৫)
তিনি আরও বলেন, ‘আর যদি কিতাবিরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তবে অবশ্যই আমি তাদের থেকে পাপগুলো দূর করে দিতাম।’ (সূরা মায়েদা, আয়াত : ৬৫)
১০. তাকওয়ার ফলে আখেরাতে মনের চাহিদা পূরণ হবে ও চোখের শীতলতা লাভ হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘স্থায়ী জান্নাতসমূহ যাতে তারা প্রবেশ করবে, যার তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে নহরসমূহ। তারা চাইবে, তাদের জন্য তার মধ্যে তাই থাকবে। এভাবেই আল্লাহ মুত্তাকীদের প্রতিদান দেন। (সূরা নাহাল, আয়াত : ৩১)
১১. তাকওয়ার ফলে আখেরাতে ভয় ও পেরেশানি দূর হবে এবং কিয়ামতের দিন কোন অনিষ্ট মুত্তাকীকে স্পর্শ করতে পারবে না।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে তাদের সাফল্যসহ নাজাত দেবেন। কোন অমঙ্গল তাদেরকে স্পর্শ করবে না। আর তারা চিন্তিতও হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই, আর তারা পেরেশানও হবে না। যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করত।’ (সূরা ইউনুস, আয়াত : ৬২-৬৩)
১২. তাকওয়ার ফলে কিয়ামতের দিন মুত্তাকীদের অভিযাত্রী দল হিসেবে (বর যাত্রীর ন্যায়) উপস্থিত করা হবে। তারা বাহনে চড়ে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে, এরাই সর্বোত্তম অভিযাত্রী।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যেদিন পরম করুণাময়ের নিকট মুত্তাকীদেরকে সম্মানিত মেহমানরূপে সমবেত করব।’ (সূরা মারইয়াম, আয়াত : ৮৫)
ইবনে কাসীর (রহ.) নুমান ইব্ন বাশির (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘আমরা আলী (রা.) এর নিকট বসে ছিলাম, তিনি আমাদেরকে উপরোক্ত আয়াত তিলাওয়াত করে শুনালেন। তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ, তারা তাদের পায়ে ভর করে হাশরের ময়দানে উপস্থিত হবে না। আর অভিযাত্রীদের পায়ে হেঁটে উপস্থিত করানো হয় না, বরং এক ধরণের বাহন থাকবে, অনুরূপ বাহন কেউ দেখেনি। তার উপর স্বর্ণের শিবিকা থাকবে, তার উপর চড়ে তারা জান্নাতের দরোজাসমূহ অতিক্রম করবে।
১৩. আখেরাতে মুত্তাকীদের কাছে নিয়ে আসা হবে জান্নাত।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর মুত্তাকীদের জন্য জান্নাত নিকটবর্তী করা হবে।’ (সূরা শুআরা, আয়াত : ৯০)
তিনি আরও বলেন, ‘আর জান্নাতকে মুত্তাকীদের অদূরে, কাছেই আনা হবে।’ (সূরা ক্বাফ, আয়াত : ৩১)
১৪. আখেরাতে মুত্তাকীরা তাকওয়ার কারণে পাপী ও কাফেরদের বরাবর হবে না।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা ঈমান আনে ও নেক আমল করে আমি কি তাদেরকে জমিনে বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের সমতুল্য গণ্য করব? নাকি আমি মুত্তাকীদেরকে পাপাচারীদের সমতুল্য গণ্য করব?’ (সূরা সাদ, আয়াত : ২৮)
১৫. সকল বন্ধুত্ব কিয়ামতের দিন শত্রুতায় পরিণত হবে, শুধু মুত্তাকীদের বন্ধুত্ব ব্যতীত।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সেদিন বন্ধুরা একে অন্যের শত্রু হবে, মুত্তাকীরা ছাড়া।’ (সূরা যুখরুফ, আয়াত : ৬৭)
১৬. আখেরাতে মুত্তাকীদের জন্য নিরাপদ স্থান, জান্নাত ও ঝর্ণাধারা থাকবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে, বাগ-বাগিচা ও ঝর্নাধারার মধ্যে, তারা পরিধান করবে পাতলা ও পুরু রেশমী বস্ত্র এবং বসবে মুখোমুখী হয়ে। এরূপই ঘটবে, আর আমি তাদেরকে বিয়ে দেব ডাগর নয়না হুরদের সঙ্গে। সেখানে তারা প্রশান্তচিত্তে সকল প্রকারের ফলমূল আনতে বলবে। প্রথম মৃত্যুর পর সেখানে তারা আর মৃত্যু আস্বাদন করবে না। আর তিনি তাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করবেন।’ (সূরা দুখান, আয়াত : ৫১-৫৬)
১৭. আখেরাতে মুত্তাকীদের জন্য আল্লাহর নিকট তাদের তাকওয়া অনুপাতে বিভিন্ন আসন থাকবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে বাগ-বাগিচা ও ঝর্ণাধারার মধ্যে। যথাযোগ্য আসনে, সর্বশক্তিমান মহাঅধিপতির নিকটে।’ (সূরা কামার, আয়াত : ৫৪-৫৫)
১৮. মুত্তাকীরা তাকওয়ার ফলে আখেরাতে বিভিন্ন নহরে গমন করতে পারবে। যেমন পরিচ্ছন্ন পানির নহর, সুস্বাদু দুধের নহর যার স্বাদ কখনো নষ্ট হবে না এবং মজাদার শরাব, যা পানকারীদের জন্য হবে সুপেয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেওয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত হল, তাতে রয়েছে নির্মল পানির নহরসমূহ, দুধের ঝরনাধারা, যার স্বাদ পরিবর্তিত হয়নি, পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহরসমূহ এবং আছে পরিশোধিত মধুর ঝরনাধারা। তথায় তাদের জন্য থাকবে সব ধরনের ফলমূল আর তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা।’ (সূরা মুহাম্মদ, আয়াত : ১৫)
হাদীসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা যখন আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে, তখন জান্নাতুল ফেরদাউসের প্রার্থনা করবে। কারণ এটা মধ্যবর্তী ও সর্বোচ্চ জান্নাত, সেখান থেকে নহরসমূহ প্রবাহিত। তার উপরে রয়েছে আল্লাহর আরশ।
১৯. আখেরাতে তাকওয়ার ফলে মুত্তাকীরা জান্নাতের বৃক্ষসমূহের তলদেশ দিয়ে বিচরণ করবে ও তার ছায়া উপভোগ করবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে ছায়া ও ঝর্ণাবহুল স্থানে, আর নিজদের বাসনানুযায়ী ফলমূল-এর মধ্যে। (তাদেরকে বলা হবে) ‘তোমরা যে আমল করতে তার প্রতিদানস্বরূপ তৃপ্তির সঙ্গে পানাহার কর।’ (সূরা মুরসালাত, আয়াত : ৪১-৪৩)
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় জান্নাতে একটি বৃক্ষ রয়েছে, আরোহী যার ছায়া তলে একশত বছর ভ্রমণ করেও শেষ করতে পারবে না।’ (বুখারী)
২০. তাকওয়ার ফলে মুত্তাকীরা আখেরাতের মহাভীতির কারণে পেরেশান হবে না। তাদের সঙ্গে ফেরেশতারা সাক্ষাত করবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘শুনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুদের কোনো ভয় নেই, আর তারা পেরেশানও হবে না। যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করত। তাদের জন্যই সুসংবাদ দুনিয়াবি জীবনে এবং আখিরাতে।’ (সূরা ইউনুস, আয়াত : ৬২-৬৪)
২১. আখেরাতে মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে চমৎকার ঘর।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর নিশ্চয় আখিরাতের আবাস উত্তম এবং মুত্তাকীদের আবাস কতইনা উত্তম!’ ( সূরা নাহাল, আয়াত : ৩০)
২২. আখেরাতে মুত্তাকীদের তাকওয়ার কারণে তাদের নেকি ও প্রতিদান বহুগুন বর্ধিত করা হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তার রাসূলের প্রতি ঈমান আন, তিনি স্বীয় রহমতে তোমাদেরকে দ্বিগুণ পুরস্কার দেবেন, আর তোমাদেরকে নূর দেবেন যার সাহায্যে তোমরা চলতে পারবে এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।’ (সূরা হাদীদ, আয়াত : ২৮)
Comments (1)
এখনই গল্পটি পড়ছি। ব্লগে আসা যাওয়া অনিয়মিত বলে গীতিকারের লেখা গল্প তো আমার চোখেই পড়ে নাই!
হেনা ভাই বরাবরই কানে কম দেখেন। এইবার ঢাকায় এনে ভাল একজন ডেন্টিস্ট দেখাতে হবে। তখন সব ফকফকা দেখবেন।
সবাই কি আপনের মত বুকা?? জানব না ক্যান?? আর ভুট?? আপনের লেখায় পরসে তো। আমিও দিসি...
পিলিচ, ভুট মি ব্যাক ।
আমিও দিসি। তয় একটার বেশী দিতে দেয় নাই। জাল ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা থাকা উচিত।
মেজদা
এরকমি ঘটনা
বেশ লাগল
আমি ভোট দিতে গিয়ে জানলাম যে আমার গল্প প্রতিযোগিতায় আছে। ধন্যবাদ আলমগীর।