Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

M Jahirul Islam

১০ বছর আগে

তাকওয়ার উপকারিতা (পর্ব-১)

তাকওয়া এমন এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, আল্লাহ তাআলা যার অসিয়ত তার পূর্বাপর সকল বান্দাকে করেছেন ও তা গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমি নির্দেশ দিয়েছি যে, তোমরা ‎আল্লাহকে ভয় কর। আর যদি কুফরি কর, তাহলে আসমানসমূহে যা আছে এবং যা আছে জমিনে সব আল্লাহরই। আর ‎আল্লাহ অভাবহীন, প্রশংসিত।’ (সূরা নিসা, আয়াত : ১৩১)
রাসুল (সা.)ও তার উম্মতকে তাকওয়া গ্রহণ করার ‎নির্দেশ দিয়েছেন।
হাদীসে এসেছে, হযরত আবু উমামা সুদাই ইব্ন আজলান আল-বাহেলী বলেন, ‘আমি রাসুলকে (সা.) বিদায়ী হজে খুতবা ‎দিতে শুনেছি। রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের রবের তাকওয়া অর্জন কর, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত (নামাজ) আদায় কর, তোমাদের ‎রমযানে সিয়াম (রোজা) পালন কর, তোমাদের সম্পদের যাকাত আদায় কর, তোমরা তোমাদের নেতাদের অনুসরণ কর, অতঃপর তোমরা তোমাদের রবের জান্নাতে প্রবেশ কর।’
অনুরূপভাবে তিনি যখন কাউকে যুদ্ধাভিযানের দায়িত্ব দিয়ে পাঠাতেন, তাকে তিনি বিশেষভাবে নিজের ব্যাপারে আল্লাহর তাকওয়া গ্রহণ করা ও মুসলিমদের ব্যাপারে কল্যাণ ‎কামনা করার আদেশ দিতেন।
আমাদের আদর্শ পূর্ব পুরুষরা তাদের চিঠি-পত্র, বয়ান-বক্তৃতা ও মৃত্যুর সময় তাকওয়ার নির্দেশ দিনে।
ওমর ‎ইবনে আব্দুল আযীয তার ছেলে আব্দুল্লাহকে লেখেন, ‘অতঃপর... আমি তোমাকে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করার অসিয়ত ‎করছি, যার সঙ্গে তোমাকে অবশ্যই সাক্ষাত করতে হবে, তিনি ব্যতীত তোমার কোনো আশ্রয় নেই, তিনিই দুনিয়া-‎আখেরাতের মালিক।’
আরেক বুজুর্গ তার এক দীনি ভাইকে লেখেন, ‘অতঃপর... আমি তোমাকে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করার ‎নির্দেশ দিচ্ছি, যিনি তোমার গোপনের সঙ্গেী, প্রকাশ্যের পর্যবেক্ষক, অতএব রাত-দিনের প্রতি মুহূর্তে তুমি তার কথা তোমার অন্তরে রাখ। তিনি তোমার যত কাছে এবং তোমার ওপর তার যে পরিমাণ ক্ষমতা রয়েছে, সে পরিমাণ তুমি তাকে ভয় কর। জেনে ‎‎রেখ, তুমি তার সামনেই আছ, তার কর্তৃত্ব থেকে বের হয়ে কারো কর্তৃত্ব যাওয়ার তোমার কোনো সুযোগ নেই, তার রাজত্ব থেকে মুক্ত হয়ে কারো রাজত্বে যেতে পারবে না, সুতরাং তার ব্যাপারে তুমি খুব সতর্ক থাক এবং তাকে খুব ভয় কর।’
তাকওয়ার অর্থ: বান্দা যে জিনিসকে ভয় করে তার থেকে বাঁচা ও তার থেকে আড়াল হওয়ার ঢাল গ্রহণ করার নাম তাকওয়া।
আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করার অর্থ: বান্দা যে জিনিসকে ভয় করে, যেমন আল্লাহর গোস্বা, শাস্তি ও অসন্তুষ্টি থেকে বাঁচা ও তার থেকে সুরক্ষার জন্য আল্লাহর আনুগত্য করা ও তার নাফরমানি থেকে বিরত থাকা।
তাকওয়ার অর্থ আরও স্পষ্ট করার জন্য আমাদের মনীষীদের কিছু সংজ্ঞা আপনার সামনে পেশ ‎করছি,
ইবনে আব্বাস (রা.) তাকওয়া অর্জনকারী মুত্তাকীর সংজ্ঞায় বলেছেন, ‘মুত্তাকী তারা, যারা আল্লাহ ও তার শাস্তিকে ভয় করে।’
তালক ইবনে হাবীব বলেছেন, ‘তাকওয়ার অর্থ : আল্লাহর নির্দেশমতো তুমি তার আনুগত্য কর ও তার ‎সাওয়াবের আশা রাখ এবং তার নির্দেশমতো তার নাফরমানী ত্যাগ কর ও তার শাস্তিকে ভয় কর।
ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন আল্লাহর নিম্নের বাণী, ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যথাযথ ‎ভয়।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তাকওয়া হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্য করা তার নাফরমানী না করা, আল্লাহকে স্মরণ করা তাকে না ভুলা, তার ‎‎শোকর আদায় করা তার কুফরি না করা।’
আপনি আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করার ব্রত গ্রহণ করুন। মনে রাখুন তিনিই একমাত্র ভয় ও সম্মানের পাত্র। তাকে ‎আপনার অন্তরের মণি কোঠায় বড়ত্বের মর্যাদায় আসীন করুন।
নিম্নে তাকওয়ার কতক ইহকাল ও আখেরাতের উপকারিতা উল্লেখ করছি, যা আমাদের মুসলিম ভাইদেরকে তাকওয়া অর্জনে আগ্রহী করবে ও জীবনের সর্বক্ষেত্রে তাদেরকে তাকওয়া গ্রহণে উৎসাহ দেবে।
তাকওয়ার ইহকালীন উপকারিতা: ১. তাকওয়ার ফলে পার্থিব জগতে আল্লাহ মানুষের কাজগুলো সহজ করে দেন, তারা তাদের জরুরি প্রয়োজন সহজে সম্পাদন করতে সক্ষম হয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন।’ (সূরা তালাক, আয়াত : ৪)
তিনি আরও বলেন, ‘সুতরাং ‎‎যে দান করেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে, আর উত্তমকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছে, আমি তার জন্য সহজ পথে চলা ‎সুগম করে দেব।’ (সূরা লাইল, আয়াত : ৫-৭)
২. তাকওয়া পার্থিব জগতে মানুষকে শয়তানের সব অনিষ্ট থেকে সুরক্ষা দেয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে যখন তাদেরকে শয়তানের পক্ষ থেকে কোন কুমন্ত্রণা স্পর্শ করে তখন তারা ‎আল্লাহকে স্মরণ করে। তখনই তাদের দৃষ্টি খুলে যায়।’ (সূরা আরাফ, আয়াত: ২০১)
৩. দুনিয়াবাসীর তাকওয়ার ফলে আসমান ও যমিনের বরকত উন্মুক্ত হয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যদি জনপদসমূহের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি অবশ্যই আসমান ও যমিন ‎‎থেকে বরকতসমূহ তাদের উপর খুলে দিতাম।’ (সূরা আরাফ, আয়াত : ৯৬)
৪. বান্দা তাকওয়ার ফলে হক ও বাতিলের মাঝে পার্থক্য করতে সক্ষম হয় ও তা বুঝার তাওফিক লাভ করে।
আল্লাহ তাআলা ‎বলেন, ‘হে মুমিনগণ, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তাহলে তিনি তোমাদের জন্য ফুরকান প্রদান করবেন।’ (সূরা ফুরকান, আয়াত : ‎‎(২৯))
ফুরকান অর্থ হক ও বাতিল এবং সত্য ও মিথ্যা পার্থক্য করার জ্ঞান।
তিনি আরও বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তার রাসূলের প্রতি ঈমান আন, তিনি স্বীয় ‎রহমতে তোমাদেরকে দ্বিগুণ পুরস্কার দেবেন, আর তোমাদেরকে নূর দেবেন যার সাহায্যে তোমরা চলতে পারবে।’ (সূরা ‎হাদীদ, আয়াত : ২৮)
৫. তাকওয়া অর্জনকারী মুত্তাকী ব্যক্তি তার তাকওয়ার ফলে কষ্টের জীবন থেকে মুক্তি পায় এবং এমন জায়গা থেকে রিযক লাভ ‎করে, যা তার কল্পনার ঊর্ধ্বে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন ‎যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।’ (সূরা তালাক, আয়াত : ২-৩)
‎৬. তাকওয়ার দ্বারা পার্থিব জগতে বান্দা আল্লাহর বন্ধুত্ব অর্জন করতে সক্ষম হয়। কারণ তিনি মুত্তাকীদের বন্ধু ঘোষণা করেছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তার অভিভাবক (বন্ধু) তো শুধু মুত্তাকীগণ।’ (সূরা আনফাল, আয়াত : ৩৪)
তিনি আরও বলেন, ‘আর নিশ্চয় যালিমরা মূলত একে ‎অপরের বন্ধু এবং আল্লাহ মুত্তাকীদের বন্ধু।” (সূরা জাসিয়া, আয়াত : ১৯)
৭. পার্থিব জগতে মুত্তাকী তাকওয়ার ফলে কাফেরদের অনিষ্ট থেকে নিরাপত্তা লাভ করে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যদি তোমরা ধৈর্য ধর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তাহলে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কোনো ক্ষতি করবে না।’ (সূরা ‎আলে ইমরান, আয়াত : ১২০)
৮. তাকওয়ার ফলে মুসিবত ও দুশমনের মোকাবিলার মুহূর্তে আসমান থেকে সাহায্য অবতীর্ণ হয়।
আল্লাহ ‎তাআলা বলেন, ‘আর অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে বদরে সাহায্য করেছেন অথচ তোমরা ছিলে হীনবল। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় ‎কর, আশা করা যায়, তোমরা শোকরগুজার হবে। স্মরণ কর, যখন তুমি মুমিনদেরকে বলছিলে, ‘তোমাদের জন্য কি যথেষ্ট ‎নয় যে, তোমাদের রব তোমাদেরকে তিন হাজার নাযিলকৃত ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করবেন? হ্যাঁ, যদি তোমরা ধৈর্য ধর ‎এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, আর তারা হঠাৎ তোমাদের মুখোমুখি এসে যায়, তবে তোমাদের রব পাঁচ হাজার চি‎হ্নিত ‎‎ফেরেশতা দ্বারা তোমাদেরকে সাহায্য করবেন।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১২৩-১২৫)
সাহায্য ও শক্তিবৃদ্ধির ঘোষণা একটি সুসংবাদ, যার ফলে অন্তর প্রশান্ত হয় এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্যের ঘোষণার কারণে নিজেদের মনোবল বাড়ে ও শক্তি সঞ্চয় হয়।
এরপর আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহ তোমাদের জন্য তা কেবল সুসংবাদস্বরূপ নির্ধারণ করেছেন এবং যাতে তোমাদের অন্তরসমূহ এর দ্বারা প্রশান্ত ‎হয়। আর সাহায্য কেবল পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১২৬)
৯. তাকওয়ার ফলে আল্লাহর বান্দাগণ মুসিবত ও সীমালঙ্ঘন থেকে নিরাপত্তা লাভ করে।
আল্লাহ তাআলা বলেন:, ‘সৎকর্ম ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা কর। মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা করো নাঅ।’ (‎সূরা মায়েদা, আয়াত : ২)
মারইয়াম আলাইহিস সালামের ঘটনায় আল্লাহ তাআলা বলেন, “তখন আমি তার নিকট আমার রূহকে (জিবরীল) প্রেরণ ‎করলাম। অতঃপর সে তার সামনে পূর্ণ মানবের রূপ ধারণ করল। মারইয়াম বলল, ‘আমি তোমার থেকে পরম করুণাময়ের ‎আশ্রয় চাচ্ছি, যদি তুমি মুত্তাকী হও।’ (সূরা মারইয়াম, আয়াত : ১৭-১৮)
১০. তাকওয়া অর্জনকারী প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর নিদর্শনাবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এটাই হল আল্লাহর বিধান, যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে, নিঃসন্দেহে তা অন্তরের তাকওয়া থেকেই।’ (সূরা ‎হাজ্জ, আয়াত : ৩২)
১১. তাকওয়ার ফলে আমল বিশুদ্ধ হয় ও গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে এবং পাপ মোচন হয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজগুলোকে শুদ্ধ ‎করে দেবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে, সে ‎অবশ্যই এক মহা সাফল্য অর্জন করল।’ (সূরা আহযাব, আয়াত : ৭০-৭১)
১২. মুত্তাকী তার তাকওয়ার কারণে রাসুল (সা.) এর সামনে আদব প্রদর্শনে সক্ষম হয়, অর্থাৎ তার সামনে তার আওয়াজ অনুচ্চ থাকে। জীবিত অবস্থায় তো বটেই, মৃত্যুর পরও তার নির্দেশ অতিক্রম করে না।
আল্লাহ তাআলা বলেন:, ‘নিশ্চয় যারা আল্লাহর রাসূলের নিকট নিজদের আওয়াজ অবনমিত করে, আল্লাহ তাদেরই অন্তরগুলোকে তাকওয়ার জন্য ‎বাছাই করেছেন।’ (সূরা হুজুরাত, আয়াত : ৩)
১৩. তাকওয়ার দ্বারা আল্লাহর মহব্বত লাভ হয়। এ মহব্বত যেমন দুনিয়াতে লাভ হয়, অনুরূপ আখেরাতেও লাভ হবে।
‎হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন, ‘আমি বান্দার উপর যা ফরয করেছি, তার চেয়ে উত্তম জিনিসের মাধ্যমে কোনো বান্দা আমার নৈকট্য অর্জন করতে ‎পারেনি। বান্দা নফলের মাধ্যমে আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে, এক সময় আমি তাকে মহব্বত করি। আমি যখন তাকে ‎মহব্বত করি, তখন আমি তার কর্ণে পরিণত হই, যে কর্ণ দিয়ে সে শ্রবণ করে, তার দৃষ্ট শক্তিতে পরিণত হই, যা দিয়ে ‎‎সে দেখে, তার হাতে পরিণত হই যা দিয়ে সে পাকড়াও করে এবং তার পায়ে পরিণত হই যা দিয়ে সে চলে। সে ‎যদি আমার কাছে প্রার্থনা করে আমি তাকে অবশ্যই দেব এবং সে যদি আমার ওসিলায় আশ্রয় প্রার্থনা করে আমি তাকে ‎অবশ্যই আশ্রয় প্রদান করব।’ (বুখারী, হাদিস নং- ৬৫০২)
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই যে নিজ প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করে এবং তাকওয়া অবলম্বন ‎করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে ভালবাসেন।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ৭৬)
১৪. তাকওয়ার ফলে ইলম ও জ্ঞান অর্জন হয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং আল্লাহ তোমাদেরকে শিক্ষা দেবেন।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ২৮২)
১৫. আল্লাহর অনুগ্রহে ইসলামের হিদায়েত লাভ করার পর কেউ যদি পূর্ণ তাকওয়া অবলম্বন করে, তাহলে তার দ্বীনের সঠিক বুঝ অর্জন হয় ও সে পথভ্রষ্টতা থেকে সুরক্ষা পায়।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর এটি তো আমার সোজা পথ। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ কর এবং অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, তাহলে তা ‎‎তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে। এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা তাকওয়া ‎অবলম্বন কর।’ (সূরা আনআম, আয়াতা : ১৫৩)
১৬. তাকওয়া দ্বারা আল্লাহর রহমত লাভ হয়। এ রহমত যেরূপ দুনিয়াতে লাভ হবে, অনুরূপ আখেরাতেও লাভ হবে।
আল্লাহ ‎তাআলা বলেন, ‘আর আমার রহমত সব বস্তুকে পরিব্যাপ্ত করেছে। সুতরাং আমি তা লিখে দেব তাদের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে ‎এবং যাকাত প্রদান করে। আর যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে।’ (সূরা আরাফ, আয়াত : ১৫৬)
১৭. তাকওয়ার ফলে পার্থিব জগতে আল্লাহর সংঘ ও সাথীত্ব অর্জন হয়। বান্দার সঙ্গে আল্লাহর সাথীত্ব দু’প্রকার।
সাধারণ সাথীত্ব : এটা আল্লাহর সব বান্দার জন্য ব্যাপক, যেমন তার শুনা, দেখা ও জানা সবার জন্য সমান। তিনি সবার কাজকর্ম সমানভাবে প্রত্যক্ষ করেন, সব কিছু শুনেন ও সবার অবস্থা সম্পর্কে সম্যক অবগত রয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আর তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তিনি তোমাদের সঙ্গেই আছেন।’ (সূরা হাদীদ, আয়াদ : ৪)
তিনি আরও বলেন, ‘তুমি কি ‎লক্ষ্য করনি যে, আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে নিশ্চয় আল্লাহ তা জানেন? তিন জনের কোন গোপন পরামর্শ হয় না ‎যাতে চতুর্থজন হিসেবে আল্লাহ থাকেন না, আর পাঁচ জনেরও হয় না, যাতে ষষ্ঠজন হিসেবে তিনি থাকেন না। এর চেয়ে ‎কম হোক কিংবা বেশি হোক, তিনি তো তাদের সঙ্গেই আছেন, তারা যেখানেই থাকুক না কেন।’ (সূরা মুজাদিলা, আয়াত : ৭)
এসব আয়াতে আল্লাহর সাথীত্ব বা সঙ্গে থাকার অর্থ তিনি বান্দার অবস্থা জানেন, তাদের কথা শ্রবণ করেন, তাদের সবকিছু তার নিকট স্পষ্ট।
দ্বিতীয় সাথীত্ব : এটা হচ্ছে আল্লাহর বিশেষ সংঘ বা সাথীত্ব : এ সাথীত্ব আল্লাহর সাহায্য, সমর্থন ও সহায়তার অর্থ প্রদান করে।
আল্লাহ ‎তাআলা বলেন, ‘তুমি পেরেশান হয়ো না, নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন।’ (সূরা তওবা, আয়াত : ৪০)
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা ভয় করো না। আমি তো তোমাদের সঙ্গেই আছি। আমি সবকিছু শুনি ও দেখি।’ (সূরা ত্বহা, আয়াত : ৪৬)
এসব আয়াতে আল্লাহ সঙ্গে আছেন বা তার সাথীত্ব অর্থ হচ্ছে সাহায্য ও সমর্থন। আল্লাহর এ জাতীয় সাথীত্ব একমাত্র তার বিশেষ বান্দাদের সঙ্গে খাস।
তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ ‎তাদের সঙ্গে, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মশীল।’ (সূরা নাহাল, আয়াত : ১২৮)
তিনি আরও বলেন, ‘এবং জেনে ‎রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের সঙ্গে আছেন।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৯৪)
১৮. শুভ পরিণতি বা শেষ ফল তাকওয়ার অধিকারী আল্লাহর মুত্তাকী বান্দাগণ লাভ করেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর শুভ পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্য।’ (সূরা ত্বহা, আয়াত : ১৩২)
তিনি অন্যত্র বলেন, ‘আর মুত্তাকীদের ‎জন্য অবশ্যই রয়েছে উত্তম নিবাস।’ (সূরা সাদ, আয়াদ : ৪৯)
তিনি আরও বলেন, ‘নিশ্চয় শুভ পরিণাম কেবল মুত্তাকীদের জন্য।’ (‎সূরা হুদ, আয়াত : ৪৯)
১৯. তাকওয়ার অধিকারী মুত্তাকীরা পার্থিব জগতে সুসংবাদ লাভ করেন। যেমন সে ভাল স্বপ্ন দেখল অথবা মানুষের ব্যাপক মহব্বত, প্রশংসা ও সম্মান লাভ করল ইত্যাদি।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করত। তাদের জন্যই সুসংবাদ দুনিয়াবি জীবনে এবং আখিরাতে।’ (সূরা ‎ইউনুস, আয়াত : ৬৩-৬৪)
২০. নারীরা যদি তাকওয়া অবলম্বন করে এবং কথা ও কাজে তার বাস্তবায়ন ঘটায়, তাহলে যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে তারা তাদের ওপর লোভ করার সুযোগ ও সাহস পায় না।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে নবীপত্নিগণ, তোমরা অন্য কোনো নারীর মত নও। যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে (পরপুরুষের সঙ্গে) ‎‎কোমল কণ্ঠে কথা বলো না, তাহলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে।’ (সূরা ‎আহযাব, আয়াত : ৩২)
২১. যাদের অন্তরে তাকওয়া রয়েছে, তারা অসিয়ত ও ভাগ-বণ্টনে কারো ওপর যুলুম করে না।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের উপর ফরয করা হয়েছে যে, যখন তোমাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হবে, যদি সে কোন সম্পদ রেখে যায়, তবে ‎পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের জন্য ন্যায়ভিত্তিক অসিয়ত করবে। এটি মুত্তাকীদের দায়িত্ব।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৮০)
২২. পুরুষের মধ্যে তাকওয়া থাকলে তালাকপ্রাপ্তা নারী তার জরুরি খোর-পোষ ও বরণ-পোষণ লাভ করে। অর্থাৎ মুত্তাকী পুরুষেরা তাদের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীদের ওপর শরীয়তের নির্দেশ মোতাবেক খরচ করে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তালাকপ্রাপ্তা নারীদের জন্য থাকবে বিধি মোতাবেক ভরণ-পোষণ। (এটি) মুত্তাকীদের উপর আবশ্যক।’ (সূরা বাকারা, আয়াত ‎‎: ২৪১)
২৩. তাকওয়ার ফলে দুনিয়া ও আখেরাতের কোনো প্রতিদান নষ্ট হয় না।
ইউসুফ (আ.) তার ভাই ও পরিবারের ‎সঙ্গে একত্র হয়ে বলেন, ‘নিশ্চয় যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করে এবং সবর করে, তবে অবশ্যই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না।’ (সূরা ইউসুফ, আয়াত : ৯০)
২৪. তাকওয়ার ফলে হিদায়েত লাভ হয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আলিফ-লাম-মীম। এই সেই কিতাব, যাতে কোন সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য হিদায়েত।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১-২)
(বাকী অংশ আগামীকাল-ইনশাআল্লাহ)

০ Likes ০ Comments ০ Share ৫৪৪ Views

Comments (0)

  • - নুসরাত জাহান আজমী

    মেজদা, এমন মন খারাপ করা গান লিখসেন ক্যান???

    • - মেজদা

      সত্যকে মেনে নেয়ার সাহস রাখতে হবে। খারাপ লাগলে চলবে না। 

    - মেজদা

    মন খারাপ হবে কেন, এ তো চির সত্য বুবুজান। 

    - নুসরাত জাহান আজমী

    এই জন্যই তো, মনে পড়লে খারাপ লাগে...

    Load more comments...