ব্যান্ড সংগীত এখন আর নতুন কিছু নয়। এল আর বি এর আইয়ুব বাচ্চু এবং নগর বাউলের জেমস এর পর অনেক তরুণই এ জগতটাকে ভালোবেসে ব্যান্ড সঙ্গীত করতে আসে। সেরকমই এক ব্যান্ড কনস্ট্যান্ট। মূলত রাজশাহীতে গড়ে উঠা এই ব্যান্ডটি স্থানীয় সর্বত্রই গান গেয়ে আসছে। এখন রাজশাহী পেরিয়ে ঢাকায় আলো ছড়াতে শুরু করেছে ব্যান্ডটি। ব্যান্ডের যাত্রা, বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে আমাদের নক্ষত্র প্রতিবেদকের মুখোমুখি হয়েছিলেন ব্যান্ডের বেস গিটারিস্ট আকিকের। কথায় কথায় তিনি জানিয়েছেন ব্যান্ডের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ঘটে যাওয়া নানান কাহিনী এবং ব্যান্ড নিয়ে তাদের স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা।
নক্ষত্র : আপনাদের সম্পর্কে বলুন।
আকিক : আমাদের বলতে গেলে খুব ভালোই যাচ্ছে। সবাই খুব ব্যস্ততা আর অনুশীলনের মধ্যে সময় কাটাচ্ছে। কারণ সামনে একটি টিভি চ্যানেলে আমাদের গান পরিবেশন করতে হবে। তাছাড়া এই সময়ের মিউজিকের ধারার সঙ্গে সম্পূর্ণ মানিয়ে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করছি।
নক্ষত্র : আপনাদের ব্যান্ড কিভাবে তৈরি হল?
আকিক : আমাদের ব্যান্ডের যাত্রা শুরু ২০০৩ সালে। ব্যান্ডের বয়স এখন ১০ বছর। সদস্যদের একত্রিত হওয়ার ব্যাপারে একটু পিছনের কিছু ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে হবে। প্রাপ্ত ও রাব্বী দুই বন্ধু গিটার নিয়ে টুং টাং করতো ওদের রাজশাহী উপশহরের বাসার ছাদে। তখন ঈমন সঙ্গীতের সাথে যুক্ত ছিল না। কিন্তু তাদের সাথে সেই ছাদের আড্ডায় যোগদিত এবং গিটারে সাথে গলা মিলাত। আর আমরা সবাই সবার বন্ধু ছিলাম। ওই সময় আমি সালভেশন ব্যান্ডের লিড গিটারিস্ট পলিন ভাইয়ের কাছে গিটারের তালিম নিতাম। ঠিক সেই সময় প্রাপ্ত আর রাব্বি হুট করে ব্যান্ড গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই স্বপ্ন নিয়ে তারা শুরু করে কঠোর অনুশীলন এবং বন্ধুত্বের খাতিরে আমিও তাদের সাথে মাঝে মধ্যে প্র্যাকটিস প্যাডে জ্যাম করতে যেতাম।
প্রথমে ঈমন আমাকে ব্যান্ড এ গিটারিস্ট হিসেবে বাজানোর জন্য আমন্ত্রন জানাই । বন্ধুত্বের এই অটুট সম্পর্কটাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আমিও রাজি হয়ে যায়। ও হ্যাঁ একটা কথা বলতে ভুলে গেছি যে রাব্বীর শুরু গিটারিস্ট হিসেবে কিন্তু কোন ড্রামার না খুজে পাওয়ার কারনে ব্যান্ড এর জন্য রাব্বী কে ড্রামস প্লে করতে হয় । আমি জয়েন করার পরে গিটারিস্ট হিসেবে বাজানো শুরু করি তখন আমাদের বেস গিটারিস্ট ছিল না কোন শো থাকলে আমরা অতিথি বেস গিটারিস্ট নিয়ে কাজ চালাতাম । আর আমার বেস গিটারিস্ট হিসেবে বাজানোর ঘটনাটা বেশ ঘটনা বহুল, তখন রাজশাহীর একজন সিনিয়র একজন মিউজিসিয়ান নাম উল্লেখ করবনা আমাদের সাথে অতিথি হিসেবে বেস গিটার প্লে করতো আমাদের একটা শো ছিল রাজশাহী জিলা পরিষদ মিলনায়তনে। এই শো এর জন্য আমরা সবাই একসাথে অনুশীলন করি। কিন্তু শো এর দিন সেই সিনিয়র গিটারিস্ট বিশ্বাসঘাতকতা করে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ রাখে। শো এর তখন বাকি আছে মাত্র ১ ঘণ্টা। উপায় না দেখে তড়িঘড়ি করে আমি বেস গিটার কাঁধে তুলে নেই এবং এখন পর্যন্ত ব্যান্ড সদস্যদের অনুরোধে বেস প্লে করছি । আর বাকি থাকল আমাদের ব্যান্ডের সর্বশেষ সদস্য কি-বোর্ড বাদক শোভন এর কথা। শিক্ষা আর পেশাগত কারণে আমরা ব্যান্ডের সব সদস্য রাজধানী ঢাকাতে শিফট করি। আমাদের একটা কনসার্ট ছিল ইউডা ইউনিভার্সিটিতে যেখানে শোভন আমাদের সাথে অতিথি কি-বোর্ড বাদক হিসেবে বাজাতে আসে প্র্যাকটিস প্যাডে, সেই শো তে শোভনের সাথে আমাদের পরিচয় হয় আর দিন দিন শোভনের সাথে আমাদের সখ্যতা বাড়তে থাকে এবং ব্যান্ড সদস্যদের সাথে সম্পর্কটা গাঢ় হয়। সেই থেকে শোভন আমাদের সাথে কি-বোর্ড প্লে করছে । আমাদের আরো একজন সদস্য হচ্ছে সুমন সে আমাদের ব্যান্ড এর অফিসিয়াল ফটোগ্রাফার। আসলে আমরা ছয়জন একটি পরিবারের মত আর আমাদের ব্যান্ড এর যাত্রা এইভাবেই শুরু হলো।
ব্যান্ড লাইন-আপঃ প্রাপ্ত (লিড গীটার), রাব্বি (ড্রামস/ ভয়েস), ইমন (লিড ভয়েস), আকিক (বেস্//রিদম), শোভন ( কি বোর্ড), সুমন (অফিসিয়াল ফটোগ্রাফার)
নক্ষত্র : ব্যান্ডের বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে বলুন?
আকিক : বলতে গেলে ব্যান্ডের সদস্যরা এখন সবাই খুব ব্যস্ত। এখন আমরা মিক্সড আর সোলো অ্যালবামের রেকর্ডিং নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি। এই অ্যালবামে মেঘবালিকা, মনজানালা, ক্ষমা, আঁধার, ফেরা, তবু কেন? সাদাকালো ইত্যাদি গানগুলো থাকবে। সামনে দেশের সর্ববৃহৎ ৭১ টি ব্যান্ড নিয়ে মিক্সড অ্যালবাম “আমাদের ৭১” এ আমাদের একটি দেশের গান থাকছে।এই অ্যালবামটি প্রযোজনা করছেন দূরবীন ব্যান্ডের দলনেতা শহীদ ভাই। অ্যালবামটি আগামী স্বাধীনতা দিবসে শ্রোতারা বাজারে আসবে এওবং সেখানে "স্বাধীনতা" শিরোনামে আমাদের একটি গান রয়েছে। এছাড়া আমাদের অপ্রকাশিত গান বিভিন্ন এফ এম রেডিওতে নিয়মিত প্রচার করা হয়।
নক্ষত্র : ব্যান্ড নিয়ে স্বপ্ন?
আকিক : ব্যান্ড নিয়ে স্বপ্ন অনেক। ব্যান্ডকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাই। শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরের মানুষ যেন আমাদের গান শুনবে এটাই আমাদের সবার স্বপ্ন।
নক্ষত্র : ব্যান্ড ছাড়া অন্যকিছু করতে হলে?
আকিক : ব্যান্ড ছাড়া লাইফটা সবার খুব ব্যস্ত সময়ের মধ্যে কাটে আর আমরা ব্যান্ড ছাড়া লাইফ চিন্তা করতে পারিনা।
নক্ষত্র : ব্যান্ড নিয়ে কোনো মজার ঘটনা?
আকিক : মজার ঘটনা অনেক আছে কিন্তু উল্লেখ করার মতো একটা ঘটনা না শেয়ার করে পারছি না। আমাদের শো ছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে। সেই শো আমরা শোভনকে ছাড়াই করেছিলাম। আমরা যখন সাউন্ড চেক করতে মঞ্চে উঠলাম, দর্শক সারি থেকে একজন কী-বোর্ড নাই দেখে বলল যে ‘এই যে ভাই ঐ এতো বড় প্লাস্টিকের হারমোনিয়াম আনেন নি?’
নক্ষত্র : শেষ কথা সংক্ষেপে?
আকিক : ব্যান্ড নিয়ে অনেক দূর যেতে চাই। আসলে যে পথের কোন শেষ নেই। ফেসবুক ফ্যান পেজের লিংক শ্রোতাদের জন্য দিচ্ছি যেখানে ক্লিক করলে আমাদের সব তথ্য শ্রোতারা খুব সহজেই পেয়ে যাবে।
এরপর তিনি তাদের একটি গান আমাদের খালি গোলায় গেয়ে শোনানঃ
“ দূরে দূরে ছুটে চলি আমি কোন কিছু খুজে পাইনা...একা একা ছুটে চলি আমি,পথ কেন খুজে পাইনা”
(www.facebook.com/Constant.Band)
Comments (12)
আরিব্বাস
চা খান ... তাহমিদ ভাই :D
Bha dhrun kobi,,,,,,,,,darun!!
ধন্যবাদ... নেন আপনি ও চা খান
একলা পথিক,
একলা মনের বিষণ্ণতায় লোনা জলে ছবি আকা
খুব খুব ভাললাগা। শুভেচ্ছা রইলো ...
ধন্যবাদ :)