প্রিয় মা,
হৃদয় চৌধুরী-মা জানামতে খুব শখ করে নামটা রেখেছিলে তুমি। কারন আমি নাকি তোমার চোখের মণি, হৃদয়ের গহীণে ছিলাম। কিন্তু এখন আমার এই নামটা কেউ তাচ্ছিল্য করার উদ্দেশ্যে ব্যাবহার করলে তার গালে কষে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিতে ইচ্ছে করে যদিও এমনটি করার মত সাহস এবং ক্ষমতা কোনটাই আমার নেই। তবুও এর আগে সবকিছু ঠিকই চলছিল কিন্তু মা তুমি চলে যাওয়ার পর থেকেই সবকিছু যেন ওলোট-পালোট হয়ে গেল! এতটা আগে অথচ অবুঝ বয়সে তুমি চলে গিয়েছ যে মায়ের প্রকৃত আদর কি আমি তা কখনও বলতেই পারব না। কিন্তু মা জানো আমি কতটা বড় হয়ে গিয়েছি এখন? আমি এখন অনেক বড় হয়ে গিয়েছি। তোমার সেই ছোট্ট হৃদয় এখন বিশ্ব-বিদ্যালয়ে পড়ে। কিন্তু এই বিশাল পথ পাড়ি দিতে গিয়ে আমাকে যে কি কি সহ্য করতে হয়েছে তা বলার অপেক্ষা কখনই রাখে না।
যখন ক্লস টু অথবা থ্রী-তে পড়ি তখন থেকে মা নেই বলে সহপাঠীদের নিকট কতটা যে লাঞ্চিত, বঞ্চিত, অপমানিত হতে হয়েছিল তা বলা মানে নিজের দুঃখটাকেই অযথা বাড়িয়ে দেয়া।
মা জানো, আমার কথা ভেবেই তো বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করলেন আর নতুন মা, তিনিও ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন তার নতুন রূপ দেখাতে। বাবার অলক্ষে নতুন মায়ের আদেশে সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনীর ধকল সহ্য করে ফলে নতুন মার দেয়া নিয়মিত রুটিনটার সামান্য ব্যাঘাত যদি কোনদিন ঘটে সেদিন আমার উপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন আর অশ্রব্য গালিগালাজের ফুলঝুরি কিংবা রাতের পচা-বাসি খাবার দ্বারা উদারপূর্তি। জানো মা তবুও প্রতিবাদহীন ভঙ্গিমায় তার অশ্রাব্য কথাগুলোকে হজম করতে হয় প্রতিনিয়ত। কখনো যদি ভিতর থেকে একটা বুকফাটা কান্না বেরিয়ে আসতে চায় তবে ঢোক গিলে সেটাকেও গলার ভিতর আটকে রাখি আবার কখনো চাপা দীর্ঘনিঃশ্বাসের মাধ্যমে সেটাকে ফিরিয়ে দেই। এতো কিছুর পরও যখন রাত হয়, দিনের সূর্যের সাথে নিজের জীবনের সূর্যাস্ত ঘটে, যখন পাখিরা নীড়ে ফেরে কিংবা যখন শহরের সমস্ত মানুষের চোখ গভীর ঘুমে বন্ধ হয়ে যায়, যখন সকল করমব্যাস্ততার অবসান ঘটে এবং ঘুম নগরীর একাকী নির্ঘুম আমি একাকিত্ব ও বিষন্নতায় অসহনীয় হয়ে উঠি তখন মা তোমাকে সত্যিই ভীষন মিস করি। প্রতিটি নির্ঘুম রাতে তোমাকে ভেবে কত যে চিঠি আমি লিখেছি কিন্তু সেই চিঠিগুলো আজও পূর্ণতার সন্ধান পেল না শুধুমাত্র তোমার অজ্ঞাত ঠিকানার কারনে। তবুও লিখে চলেছি শত অভিমান, চাপা কষ্ট, বেদনা কিংবা আর্তনাদ নিয়ে প্রতিনিয়ত যেমন এখন লিখছি।
আচ্ছা মা আমার কথা কি তোমার একটুও মনে পড়ে না? তোমাকে ছাড়া যে আমি মোটেও ভালো নেই তুমি কি তা একটুও বুঝতে পারো না? তোমাকে নিয়ে লেখা আমার এত্তগুলো চিঠির একটিও কি তুমি হৃদয় দিয়ে পড়ে নিতে পার না? তুমি কত নিষ্ঠুরভাবে আমাকে ভুলে গেছ। আর আমি! কতদিন দেখিনি তোমায়, আমার নজড় প্রতিটি মুহূর্ত কেবল তোমাকে খুঁজে বেরায়, একটিবারের জন্যে হলেও তোমার সেই স্বর্গীয় মুখো দর্শনের ইচ্ছায়! মা তুমি কি জানো এই নদীর ছলাৎ ছলাৎ ধ্বনি, পাখির গান গেয়ে যাওয়া সবকিছু আগের মতই আছে, শুধু না জানি কতটা সময় পেরিয়ে গেছে তোমাকে না দেখে! এই বাতাসের বহমান ধারা, সময়ের নিজের গতীতে চলে যাওয়া সবকিছু আগের মতই আছে, শুধু না জানি কতটা মুহূর্ত পেরিয়ে গেছে মা তোমাকে না দেখে! এই হৃদয়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মা এসো না তুমি একটিবারের জন্যে, একটি সেকেন্ডের জন্যে নয়ত শুধু একটি মুহূর্তের জন্যে। এক পলকের জন্যে দেখি তোমায়, না জানি কতগুলো ঋতু পেরিয়ে গেছে তোমাকে না দেখে! মা তুমি হয়ত জানো না, কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা শুভ্র ভোরে আমারো যে খুব ইচ্ছে করে তোমার হাতের বানানো পিঠা খেতে আর তোমার কোলে মাথা রেখে রূপকথার গল্প শুনে ভয় পেয়ে তোমার আঁচলে মুখ লুকোতে!
মা জানো? সবাই বলে তুমি নাকি আকাশের তারা হয়ে গেছ? আচ্ছা মা, তুমি কি তারা হয়ে আমাকে দেখতে পাও? মা জানো, ওরা বলে আমি নাকি আর কখনই তোমাকে খুঁজে পাব না। ওরা মিথ্যে বলে আমি জানি। কারন তুমি তো আমার হৃদয়ের মাঝে রক্তপ্রবাহের সাথে মিশে আছো গভীরভাবে তাই তুমি তো পার্থিব জগত থেকে মুক্তি পেলেও এ থেকে মুক্তি কি করে পাবে বলো! তুমি তো আমার জীবনে এমন নও যেটার অস্তিত্ব ক্ষণস্থায়ী এবং এমনও নও যেটা সম্পর্কিত আমার নিঃশ্বাসের সাথে বরং এমন যেটা সম্পর্কিত আমার আত্মার সাথে। কেননা কেবল এটাই যার অস্তিত্ব থাকে অনন্তকাল এমনকি মৃত্যুর পরেও। মা জানো, নায়াগ্রা জলপ্রপাত কোনদিন সাহারা মরুর মতো শুকিয়ে গেলেও আমার হৃদয়ে তোমার জন্যে ভালোবাসা থাকবে চিরসবুজ, সজীব, অক্ষয়। শুধু জেনে নিও মা অনেক বেশী ভালোবাসি তোমাকে...
রাত প্রায় শেষের দিকে। জানিনা এই চিঠিটা তোমার কাছে পৌঁছুবে নাকি আগের মতই বক্সে রাখা পুরনো চিঠির ন্যায় একটা নতুন সংখ্যা বৃদ্ধি করবে! জানি আসবে না তবুও তোমার অপেক্ষায় অভিমানী মন নিয়ে তোমাকে লিখে যাব প্রতিনিয়ত...
ইতি
তোমার অপেক্ষায় তোমার অভিমানী ছেলে।
হৃদয় চৌধুরী-মা জানামতে খুব শখ করে নামটা রেখেছিলে তুমি। কারন আমি নাকি তোমার চোখের মণি, হৃদয়ের গহীণে ছিলাম। কিন্তু এখন আমার এই নামটা কেউ তাচ্ছিল্য করার উদ্দেশ্যে ব্যাবহার করলে তার গালে কষে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিতে ইচ্ছে করে যদিও এমনটি করার মত সাহস এবং ক্ষমতা কোনটাই আমার নেই। তবুও এর আগে সবকিছু ঠিকই চলছিল কিন্তু মা তুমি চলে যাওয়ার পর থেকেই সবকিছু যেন ওলোট-পালোট হয়ে গেল! এতটা আগে অথচ অবুঝ বয়সে তুমি চলে গিয়েছ যে মায়ের প্রকৃত আদর কি আমি তা কখনও বলতেই পারব না। কিন্তু মা জানো আমি কতটা বড় হয়ে গিয়েছি এখন? আমি এখন অনেক বড় হয়ে গিয়েছি। তোমার সেই ছোট্ট হৃদয় এখন বিশ্ব-বিদ্যালয়ে পড়ে। কিন্তু এই বিশাল পথ পাড়ি দিতে গিয়ে আমাকে যে কি কি সহ্য করতে হয়েছে তা বলার অপেক্ষা কখনই রাখে না।
যখন ক্লস টু অথবা থ্রী-তে পড়ি তখন থেকে মা নেই বলে সহপাঠীদের নিকট কতটা যে লাঞ্চিত, বঞ্চিত, অপমানিত হতে হয়েছিল তা বলা মানে নিজের দুঃখটাকেই অযথা বাড়িয়ে দেয়া।
মা জানো, আমার কথা ভেবেই তো বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করলেন আর নতুন মা, তিনিও ব্যাস্ত হয়ে পড়লেন তার নতুন রূপ দেখাতে। বাবার অলক্ষে নতুন মায়ের আদেশে সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনীর ধকল সহ্য করে ফলে নতুন মার দেয়া নিয়মিত রুটিনটার সামান্য ব্যাঘাত যদি কোনদিন ঘটে সেদিন আমার উপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন আর অশ্রব্য গালিগালাজের ফুলঝুরি কিংবা রাতের পচা-বাসি খাবার দ্বারা উদারপূর্তি। জানো মা তবুও প্রতিবাদহীন ভঙ্গিমায় তার অশ্রাব্য কথাগুলোকে হজম করতে হয় প্রতিনিয়ত। কখনো যদি ভিতর থেকে একটা বুকফাটা কান্না বেরিয়ে আসতে চায় তবে ঢোক গিলে সেটাকেও গলার ভিতর আটকে রাখি আবার কখনো চাপা দীর্ঘনিঃশ্বাসের মাধ্যমে সেটাকে ফিরিয়ে দেই। এতো কিছুর পরও যখন রাত হয়, দিনের সূর্যের সাথে নিজের জীবনের সূর্যাস্ত ঘটে, যখন পাখিরা নীড়ে ফেরে কিংবা যখন শহরের সমস্ত মানুষের চোখ গভীর ঘুমে বন্ধ হয়ে যায়, যখন সকল করমব্যাস্ততার অবসান ঘটে এবং ঘুম নগরীর একাকী নির্ঘুম আমি একাকিত্ব ও বিষন্নতায় অসহনীয় হয়ে উঠি তখন মা তোমাকে সত্যিই ভীষন মিস করি। প্রতিটি নির্ঘুম রাতে তোমাকে ভেবে কত যে চিঠি আমি লিখেছি কিন্তু সেই চিঠিগুলো আজও পূর্ণতার সন্ধান পেল না শুধুমাত্র তোমার অজ্ঞাত ঠিকানার কারনে। তবুও লিখে চলেছি শত অভিমান, চাপা কষ্ট, বেদনা কিংবা আর্তনাদ নিয়ে প্রতিনিয়ত যেমন এখন লিখছি।
আচ্ছা মা আমার কথা কি তোমার একটুও মনে পড়ে না? তোমাকে ছাড়া যে আমি মোটেও ভালো নেই তুমি কি তা একটুও বুঝতে পারো না? তোমাকে নিয়ে লেখা আমার এত্তগুলো চিঠির একটিও কি তুমি হৃদয় দিয়ে পড়ে নিতে পার না? তুমি কত নিষ্ঠুরভাবে আমাকে ভুলে গেছ। আর আমি! কতদিন দেখিনি তোমায়, আমার নজড় প্রতিটি মুহূর্ত কেবল তোমাকে খুঁজে বেরায়, একটিবারের জন্যে হলেও তোমার সেই স্বর্গীয় মুখো দর্শনের ইচ্ছায়! মা তুমি কি জানো এই নদীর ছলাৎ ছলাৎ ধ্বনি, পাখির গান গেয়ে যাওয়া সবকিছু আগের মতই আছে, শুধু না জানি কতটা সময় পেরিয়ে গেছে তোমাকে না দেখে! এই বাতাসের বহমান ধারা, সময়ের নিজের গতীতে চলে যাওয়া সবকিছু আগের মতই আছে, শুধু না জানি কতটা মুহূর্ত পেরিয়ে গেছে মা তোমাকে না দেখে! এই হৃদয়ের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মা এসো না তুমি একটিবারের জন্যে, একটি সেকেন্ডের জন্যে নয়ত শুধু একটি মুহূর্তের জন্যে। এক পলকের জন্যে দেখি তোমায়, না জানি কতগুলো ঋতু পেরিয়ে গেছে তোমাকে না দেখে! মা তুমি হয়ত জানো না, কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা শুভ্র ভোরে আমারো যে খুব ইচ্ছে করে তোমার হাতের বানানো পিঠা খেতে আর তোমার কোলে মাথা রেখে রূপকথার গল্প শুনে ভয় পেয়ে তোমার আঁচলে মুখ লুকোতে!
মা জানো? সবাই বলে তুমি নাকি আকাশের তারা হয়ে গেছ? আচ্ছা মা, তুমি কি তারা হয়ে আমাকে দেখতে পাও? মা জানো, ওরা বলে আমি নাকি আর কখনই তোমাকে খুঁজে পাব না। ওরা মিথ্যে বলে আমি জানি। কারন তুমি তো আমার হৃদয়ের মাঝে রক্তপ্রবাহের সাথে মিশে আছো গভীরভাবে তাই তুমি তো পার্থিব জগত থেকে মুক্তি পেলেও এ থেকে মুক্তি কি করে পাবে বলো! তুমি তো আমার জীবনে এমন নও যেটার অস্তিত্ব ক্ষণস্থায়ী এবং এমনও নও যেটা সম্পর্কিত আমার নিঃশ্বাসের সাথে বরং এমন যেটা সম্পর্কিত আমার আত্মার সাথে। কেননা কেবল এটাই যার অস্তিত্ব থাকে অনন্তকাল এমনকি মৃত্যুর পরেও। মা জানো, নায়াগ্রা জলপ্রপাত কোনদিন সাহারা মরুর মতো শুকিয়ে গেলেও আমার হৃদয়ে তোমার জন্যে ভালোবাসা থাকবে চিরসবুজ, সজীব, অক্ষয়। শুধু জেনে নিও মা অনেক বেশী ভালোবাসি তোমাকে...
রাত প্রায় শেষের দিকে। জানিনা এই চিঠিটা তোমার কাছে পৌঁছুবে নাকি আগের মতই বক্সে রাখা পুরনো চিঠির ন্যায় একটা নতুন সংখ্যা বৃদ্ধি করবে! জানি আসবে না তবুও তোমার অপেক্ষায় অভিমানী মন নিয়ে তোমাকে লিখে যাব প্রতিনিয়ত...
ইতি
তোমার অপেক্ষায় তোমার অভিমানী ছেলে।