Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

"তবুও তুমি"

প্রতিদিনই এমন মনে হয় যেন আজ কিছু একটা হবে, কিন্তু দিনটা শেষ হওয়ার পরই বুঝতে পারি, এমন কিছুই হয়নি যেটা আমার অপছন্দ। অবশ্য আজকের কথা ভিন্ন, কেননা আজ কোনো কিছু বিরক্ত করুক সেটা মোটেও আমি চাই না। যদিও এখন বেঁচে থাকাটা এমন দাঁড়িয়েছে যে নতুন কিছু আমায় বিরক্ত করার সাহস পায় না। ব্রেকফাস্ট না করেই আজ অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। আজ মিষ্টি রোদের ঝলমলে দিন, খুবই চমৎকার। কিন্তু উপভোগ করতে পারলাম না যখন দেখলাম ও আমার দিকে এগিয়ে আসছে, আমি থমকে দাঁড়ালাম। ওর চোখদুটো আগের মতোই মায়াবী, খোলা চুলগুলো রোদে ঝলমল করছে, যেন হাজার হিরের টুকরোর মতো। ওর ভিজে ঠোঁট দুটো, অসাধারন ওর হাঁটার ভঙ্গি-এমন দৃশ্য চোখ থেকে মুছে ফেলা যায় কিন্তু হৃদয় থেকে কখনই নয়। আমার দিকে চোখ পরতেই ও মুহুর্তের জন্য থমকে দাঁড়ালো, কিন্তু সামনে এগিয়ে আসা ছাড়া আর কোনো পথ নেই। অতীতের কথা সহজে ভোলা যায় না, কিন্তু এমন বিব্রত পরিস্থিতি কেউ চাই না।
-"তুমি নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে কথা বলতে চাও না" সামনে এগিয়ে আসতেই ওকে অফার করলাম।
-"খুব সম্ভবত উত্তরটা দিতে গেলে কথা বলতে হবে আমাকে" মিষ্টি হেসে ও বলল। আমরা সামনের কফি হাউসের দিকে এগিয়ে গেলাম।
-"তোমার হাসি এখনও আমার ভেতরটা কাঁপিয়ে দেয়।"
-"তুমি নিশ্চয়ই এর জন্য আমাকে ক্ষমা করবে না। তুমি কি অতিতের কথা ভুলে যেতে পার না?" স্বর্না জিজ্ঞেস করল।
-"অতীত বাঁচিয়ে রেখেছে এই পৃথিবীতে আমাকে, তবে কি করে ভুলে যাব?"
-"নীরবতা কি তোমাকে কষ্ট দেয় না... তুমি কি নতুনভাবে জীবনটা গড়ে নিতে পার না?"
-"আমার কথা বাদ দাও, শুধু বলো স্বামী সন্তান নিয়ে কেমন চলছে তোমার সময়।"
-"ওরা খুব ভালো আছে।" বুঝতে পারলাম সহজ প্রশ্নের উত্তরটা ওর জন্য বেশ জটিল হয়ে গেছে।
-"তুমি কেমন আছ সেটাই বরং বল?"
-"ভালো আছি বলাটা তো এখন বেঁচে থাকারই একটা অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাই না স্বর্ণা!" আমি সামান্য হেসে বলার চেষ্টা করলাম আর স্বর্ণা সেভাবেই মাথা নিচু করে বসে আছে তখনও। আমি ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে মনে মনে ভাবলাম-কতটা অদ্ভুত এই বেঁচে থাকার অভিনয়! একটা কারন বলার অনিচ্ছায় সত্যটাকে কতটা সহজেই লুকিয়ে রাখতে হয়! আমি ভেবে পাই না, একজন মানুষ যখন ব্যাক্তির সুখে থাকার কারন জানতে চায় না তবে ভালো না থাকার কারনটা কেন জানা তাদের জন্যে এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেয়। আমি ভাবি আর নিজেকে শোনানোর মতো করেই বলি-তুমি অন্তত কারনটা জিজ্ঞেস করো না স্বর্ণা, অনেক তো অভিনয় হলো, আজ না হয় সত্যটা বলতে দাও, আমাকে বলতে দাও যে আমি ভালো নেই, কেউ ভালো থাকে না, আমি ভালো নেই। ভালো থাকার দিন ফুরিয়ে গেছে কবে, এখন সেটাও আমার কাছে অজানা...!
-"তুমি কি চাও অরন্য? পাঁচ বছর আগে বাবা-মার কথামত বিয়ে করে তোমাকে ধোঁকা দিয়েছি, সেটা জানি বলেই আজ আমি অনুতপ্ত। কিন্তু এখন তোমার কাছে চলে এলে আমার পরিবারকে ধোঁকা দেয়া হবে আর আত্মহত্যা করলে নিজেকে, তবে কি করব বলো?" কিছুটা রেগে গিয়ে ও বলল।
-"আত্মহত্যা কোনো সমস্যার সমাধান নয়, আর এমনিতেও তোমাকে আমার কাছে ফিরে আসতে বলিনি স্বর্ণা" আমি ওকে সত্যটা জানালাম।
-"তবে নিজেকে এভাবে কষ্ট দেয়ার কি মানে হতে পারে বলো?"
-"নিজেকে কষ্ট দিচ্ছি না, আমার এমন জীবনই পছন্দ বিশ্বাস করো" আমার স্বাভাবিক উত্তরটা খুব সম্ভবত ওর পছন্দ হয়নি। এজন্যই ঘড়ি দেখে ও বলল -"নিজের অবস্থা কী করেছ সম্ভব হলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখে নিও। যাই হোক,এখন আমাকে যেতে হবে, তুমি ভালো থেকো অরন্য।"
-"ভালো থাকতে বলছ! সেই পথ তো অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছি, এর পরিবর্তে কেন বলছ না যে জীবনটা তোমার প্রতি আরেকটু সহনীয় হয়ে উঠুক! সে যাই হোক, চলে যাবে? কিন্তু বিদায়টা সবসময়ই যন্ত্রণাময়, তাই না স্বর্ণা।"
-"যদি তুমি চাও এটা সহজ হতে পারে, শুধু একটা কাজ করো.. আমাকে ভুলে যাও।"
-"তুমি কি পেরেছ আমাকে এতটা বছরেও ভুলে যেতে? তুমি এখনও কতটা চিন্তিত আমার জন্য।" আমি হেসে বললাম।
-"মজা করোনা অরণ্য, শুধু জেনে রাখো, আমাকে স্মরনে এনোনা, বেঁচে থাকাটা তোমার জন্য সহজ হবে।" আমি নিচের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললাম-ওই দুঃখটাই কি যেটা অনুভব করা যায় না, আর শুধু ওকে বললাম "চেষ্টা করব।" ও আর অপেক্ষা করল না, "বিদায়" বলে চলে গেল। আমি অপলক তাকিয়ে রইলাম। চোখের সীমানা থেকে ও অদৃশ্য হয়ে যায়, কিন্তু হৃদয়ের গভীর থেকে আরও গভীরে ছড়ায়। ওকে বলা আর হলো না-যদি ওকে স্মরণে আনতে না হয় তবে সহজ বেঁচে থাকা আমি পছন্দ করব না।
স্বর্ণা চলে যায় আর আমি ফিরে আসি অনিচ্ছাসত্বেও আরো কয়েক ধাপ পিছনের অতীতের জগৎ থেকে, এগিয়ে যাই সামনের পথের দিকে কিন্তু পিছনেই পড়ে থাকে না স্বর্ণা কিংবা ওর স্মৃতি জড়িত সময়গুলো বরং চলে আসতে থাকে আমার সাথে সাথেই... অবিরত। আর দূর কোথাও থেকে তখনও আমার কানে ভেসে আসে ওয়ারফেজের গানের সুর....
তোমাকে মনে পড়বে যখনি জোস্না হাসে,.,
তোমাকে মনে পড়বে যখনি আকাশ ভেঙে বর্ষা কাঁদে...!
৩ Likes ৬ Comments ০ Share ৫১১ Views