Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

ঢাকাতেই ভ্রমণ (আহসান মঞ্জিল) প্রথম পর্ব

ঢাকা বসবাস করছি প্রায় তের বছর । কিন্তু কখনো আহসান মঞ্জিলে যাওয়া হয়ে উঠেনি । অনেক শখ কিন্তু কখনো সুযোগ হয় নি যাওয়ার । ফরিদাবাদে বসবাস করে এত কাছে থেকেও আহসান মঞ্জিল দেখা হতে এতদিন বঞ্চিত ছিলাম । গত শুক্রবার মানে ৩১-০১-২০১৪ তারিখে হঠাৎই প্লানটা হলো আহসান মঞ্জিল ঘুরার । বিকেল তিনটায় রওয়ানা হলাম আহসান মঞ্জিল দেখার উদ্দেশ্যে আমরা চারজন মানে আমি, বর আর টম জেরী (তা-সীন+তা-মীম) । যাওয়ার কথা শুনে মনটাই ভরে গেছিল। খুশি মনে রওয়ানা হলাম । শুক্রবার বলে কোন যানজটও ছিল না । রিক্সা করে গিয়ে সাড়ে তিনটায় পৌঁছলাম আহসান মঞ্জিলে । গেইটে পৌঁছেই মনটা খারাপ হয়ে গেল । যাচ্ছে তাই অবস্থা গেইটের এদিক সেদিক বৈদ্যুতিক তারের ছড়াছড়ি । দেয়ালে পোষ্টার উফ অসহ্য । একটা ঐতিহ্যবাহি জায়গার এই অবস্থা । যাই হোক টিকেট কেটে ভিতরে ঢুকলাম । উনি সঙ্গে যাওয়াতে ভাল ছবি উঠাতে পারিনি । মানে টম জেরীর বাপ । উনি বলেন ছবি পরে তুলো আগে দেখা শেষ হউক । দেখতে গিয়েও তাড়াহুড়া ধ্যত্তেরি ...... । তারপরও এলোমেলো কিছু ছবি তোলা হইছে । টম জেরী এসব দেখে তো খুব খুশি । তবে বড় ছেলে একটু জড়োসড়ো হয়ে থাকে কোন জায়গাতে গেলেই । হাত ছাড়ে না বলে সে নাকি হারিয়ে যাবে । অতিরিক্ত ভয় পায় ছেলেটা । ফার্মের মুরগির মত বড় হইছে তো তাই বোধয় এতটা জড়োসড়ো হয়ে থাকে ।
পুরান ঢাকারকালা পানি খ্যাত বুড়িগঙ্গা পাড়ে আহসান মঞ্জিলঅবস্থিত। নবাবদের প্রাসাদ অপূর্ব কারুকার্যে মন্ডিত প্রাসাদটি দর্শণার্থীদের মন কাড়ে সহজেই । এ প্রাসাদটি বর্তমানে যাদুঘর হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে ।

 

১. গেইট...... যা অবস্থা ছিল । ফটোশপ করে কালারটা ঠিক করেছি আর দেয়ালের পোষ্টার মুছে দিয়েছি ।

নওয়াব আবদুল গনি এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন । তার পুত্র খাজা আহসানুল্লাহ এর নামে প্রাসাদটির নাম রাখেন নওয়াব আব্দুল গনি । প্রাসাদটি ১৮৫৯ সালে শুরু হয়ে ১৮৬৯ সালে সম্পূর্ণ হয় । প্রাসাদের সাংস্কৃতিক ও ইতিহাস সংরক্ষণ করার জন্য ১৯৯২ সালের ২০ সেপ্টেম্বরে প্রাসাদটি যাদুঘর হিসাবে ব্যবহার করা শুরু হয় । মুঘল আমলে জামালপুরের শেখ এনায়েত উল্লাহর একটি বাগান বাড়ি এই জায়গায় ছিল ।

এনায়েত উল্লাহ ছিলেন অনেক শৌখিন ব্যক্তি । কুমারটুলির বড় এরিয়ার সাথে এই বাগান বাড়িটি সংযুক্ত ছিল । এখানে তিনি সুন্দর প্রাসাদ নির্মাণ করেন এবং এটার নাম দেন রংমহল । তিনি দেশ বিদেশ থেকে দামী অলংকার ড্রেস সংগ্রহ করতেন এবং সুন্দরী মেয়েদের ভোগ বিলাস করতেন (নাল্লত আগের দিনের রাজা বাদশাদের ছি ছি) । তিনি সুন্দরী নারীদের প্রতি আসক্ত ছিলেন খুব বেশী । কোন এক রাতে তাকে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হয়েছিল ।

প্রাসাদের উত্তরপূর্ব কোণে তার সমাধি স্থল অবস্থিত । পরবর্তীতে শেখ এনায়েত উল্লাহর পুত্র প্রাসাদটি ফরাসী বণিকদের কাছে বিক্রয় করে দেন । এখানে বাণিজ্য করা হতো তাই এটাকে অনেকদিন বাণিজ্যকুটিরও বলা হতো ।

 

পূর্ব দিকে এবং পশ্চিম দিকে : প্রাসাদ আহসান মঞ্জিল দুই ভাগে ভাগ করা হয় । অট্টালিকার পূর্ব ভবনকে রংমহল বলা হতো আর পশ্চিম দিকেরটাকে অন্দরমহল হিসাবে ব্যবহার হতো ।  উচ্চ অষ্টকোণী গম্বুজ প্রধান বৃত্তাকার রুমের উপর স্থাপন করা হয় । পূর্বদিকে বৃহৎ রুম, কার্ড রুম, লাইব্রেরি  অন্যান্য গেস্ট রুম ।  পশ্চিম দিকে অবস্থিত নৃত্যশালা এবং কয়েকটি আবাসিক কক্ষ ।

কাঠের তৈরি একটি সুন্দর খিলানযুক্ত কৃত্রিম ছাদও আছে । খুব সুন্দর লাগল প্রতিটি রুম । বৈঠকখানা এবং  একটি জলসাঘর খুব সুন্দর । ডাইনিং এবং দরবার হল এর মেঝে সাদা সবুজ ও হলুদ রঙের সিরামিক টাইলস দিয়ে সজ্জিত করা হয় ।    

গম্বুজ ঘরের উত্তরে সংযুক্ত করা হয় আকর্ষণীয় কাঠের সিঁড়ি দিয়ে ।  ক্ষুদ্র স্তম্ভ সিঁড়ি রেলিং গুলো লোহার তৈরি ।

আহসান মঞ্জিল বাংলাদেশ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য । প্রাসাদ দেয়ালে পুরুত্ব প্রায় ০.৭৮ মিটার । প্রাসাদ উত্তর ও দক্ষিণ দিকের ৫ মিটার উচ্চতার বারান্দা আছে । বিল্ডিং এর সম্মুখে বুড়িগঙ্গা নদী । নদীর দিকে একটি খোলা প্রশস্ত সিঁড়ি ।

 

ঘরের কাঠের ছাদ, জ্যামিতিক নকশা সঙ্গে সজ্জিত । মার্জিত রুচির বারান্দা এবং কক্ষগুলো মার্বেল দিয়ে করা হয়েছে ।

জেরী ও তার বাপে...... আমি আর টম পিছনে

১৮৮৮ সালে বিধ্বংসী টর্নেডোতে আহসান মঞ্জিল গুরুতর ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় । অবশেষে কলকাতা থেকে এক ইংরেজ প্রকৌশলী প্রাসাদ পরীক্ষা করতে আসেন । তিনি রংমহল ছাড়া অন্যান্য অংশ পুর্নগঠন করার মতামত   দেন । তখন খাজা আব্দুল গণি ও তার ছেলে আহসান উল্লাহ প্রাসাদ পুন: নির্মানে মনোযোগ দেন । নতুন নকশা নিয়ে স্থানীয় প্রকৌশলী গোবিন্দ চন্দ্র রায়ের তত্বাবধানে পুনরায় নির্মাণের কাজ শুরু হয় । পুন: নির্মিত হলে দুটি ভবনের ভিতর চলাফেরার জন্য কাঠ দিয়ে সংযোগস্থল তৈরী করা হয় । সেই সময়ের তৈরী অপূর্ব সুন্দর প্রাসাদ আহসান মঞ্জিল । প্রাসাদের ছাদের উপর সুন্দর গম্বুজ আছে। এক সময় এই গম্বুজের চূড়াটি ছিল ঢাকা শহরের সর্বোচ্চ।

উপর থেকে তুলেছি । বিকেলের পরিবেশ । .......বাচ্চার কি সুন্দর খেলতেছে

মূল ভবনের বাইরে ত্রি-তোরণবিশিষ্ট প্রবেশদ্বারও দেখতে চমৎকার অপূর্ব সুন্দর কিন্তু বর্তমানে এসব তত্বাবধান এর অভাবে সব কিছু মলিন হয়ে যাচ্ছে । একইভাবে উপরে ওঠার সিঁড়িগুলোও সবার দৃষ্টিআকর্ষণ করে। পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে দু’টি মনোরম খিলান আছে যা সবচেয়ে সুন্দর। আহসান মঞ্জিলের অভ্যন্তরে দু’টি অংশ আছে। বৈঠকখানা ও পাঠাগার আছে পূর্ব অংশে। পশ্চিম অংশে আছে নাচঘর । দেখে আমি তো অবাক । বড় ফটোতে দেখি নৃত্যশালায় কিভাবে নাচ করা হতো । খুব সুন্দর দৃশ্যটা । একজন আর একজনকে ধরে নাচতেছে । এত আগেও এসব নাচের প্রচলন ছিল যা এখনো বহাল আছে । অন্যান্য আবাসিক কক্ষ। নিচতলারদরবারগৃহ ও ভোজন কক্ষ রয়েছে। ভোজন কক্ষটাও আমার মন কেড়েছে । বড় ডাইনিং হলে সিরামিকের সুন্দর বাসনপত্র দেখে মাথা চক্কর দেয়ে । কতটা শৌখিন ছিলেন আগের রাজা বাদশারা এসব দেখলেই বুঝা যায়

১৯০১ সালে খাজা আহসান উল্লাহর মৃত্যুর পর আহসান মঞ্জিলের গৌরব শেষ হয়ে যায় তাঁর উত্তরাধিকারীদের আভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে । পরবর্তীতে তারা এটা বস্তিতে পরিণত করেন ভাড়া দিয়ে । ঢাকা নওয়াব কোর্ট ১৯৫০ সালে সরকারের সম্পত্তি তত্বাবধানে নিয়ে যায় । ১৯৮৫ সালে ঢাকা জাতীয় যাদুঘর তৈরী করা হয় ।

 

সুন্দর কারুকাজ মন্ডিত ছাদ......

পিছনের দিকের মাঠ

আরেকটি সিড়ি ..... । যদিও বন্ধ করে রাখা হয়েছে ।

সামনের বড় সিঁড়ি

সামনের বড় মাঠ

সামনের প্রশস্ত সিঁড়ির একাংশ

সামনের মাঠ অপরদিকের

প্রাসাদের সামনের অংশ

বাকী অংশটুকু কাল........
বাংলা উইকি আর ইংলিশ উইকি থেকে ঘটনাগুলো সংগৃহীত
(প্রতিযোগিতার জন্য)
০ Likes ৬ Comments ০ Share ৬৮৮ Views

Comments (6)

  • - পিপীলিকা

    লেখাখানা ভালো কিন্তু আপনি গুছাইয়া লিখিতে ব্যর্থ হইয়াছেন। বানান বিভ্রাটের কারণে সুখপাঠ্যতা নষ্ট হইয়াছে। এক অনুচ্ছেদে না লিখিয়া কয়েকটা অনুচ্ছেদ করিতে পারিতেন।

    আল্লাহ্‌ যে আমাদের রিযিক দাতা তাহা অস্বীকার করে কেবল যারা নাস্তিক। উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে ইকো সিস্টেম তৈরি করিয়া রাখিয়া আল্লাহ্‌ আমাদের রিযিক প্রদান করিতেছেন। সুবাহানাল্লাহ।