Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

তাহমিনা রশিদ

৯ বছর আগে

ট্রাইসাইকেল

ছোট বেলা থেকেই সাইকেলের প্রতি তীব্র দুর্বলতা। একটা ট্রাই সাইকেলের খুব শখ ছিল।কখনই বাবাকে বলিনি এই কথা। বললেই হয়ত কিনে দিতেন কিংবা দিতেন না। জানি না। এমন না বাবার কেনার সামর্থ্য ছিল না। ছিল। ভালোভাবেই ছিল। বাবা ব্যাংক ম্যানেজার। একটা ট্রাই সাইকেল কেনা হয়ত তার জন্য কোন বড় ব্যাপার হত না। তবু ও চাইনি।

 

ছোট বেলা থেকেই আমাদের শিখানো হয়েছে অপ্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য বায়না না ধরতে। খেলনা কেনা বিলাসিতা মাত্র। বড় ভাই বোন দের খেলনা দিয়েই খেলে কাটিয়েছি ছোট বেলাটা। সেই উত্তরাধিকার প্রাপ্ত খেলনার তালিকায় কোন ট্রাই সাইকেল ছিল না। কয়েকটা খালি স্নো ক্রিমের ডিব্বা, কিছু পুতুল, কয়েকটা গাড়ি। এই রকম কিছু খেলনা দিয়েই ছোট বেলাটা রঙিন।

 

এমনই এক দিনে আমাদের কলোনির পাশের বাসায় বদলি হয়ে এলেন থানা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। এক MBBS ডাক্তার। সাথে আমার ছোট বোনের বয়সি তাদের একমাত্র মেয়ে। সুন্দর। তবে আমার বোনের মত অত সুন্দর না। প্রথম টক্করেই আমি জিতলাম ভেবে সেই রকম এক চাহুনি দিয়ে বোনটাকে নিয়ে ওদের বাসার সামনে সারা বেলা ঘুর ঘুর করলাম। আর একটু পর পর অহংকারী এক চাহুনি দিয়ে ঘায়েল করার চেষ্টা করলাম।

ঘটনা ঘটল পরদিন বিকেল বেলা। হায়! হায়! কি সুন্দর এক গোলাপি সাইকেল!

তাতে বসা সেই পিচ্চি। তাকে ঠেলে ঠেলে নিয়ে ঘুরছে তাদের বাসার কাজের মেয়েটা। আর সেই পিচ্চি রাজ রানীর মত বসে আছে। লোভী বিড়ালের মত হা করে তাকিয়ে থাকলাম। কথা বলব কিনা ওদের সাথে বুঝতে পারছিলাম না। আমার বোনটা যেন একই চিন্তা করছিল।

আমরা কি ওদের সাথে খেলব, বুলি?

আরে নাহ!

ওরা আগে আসুক আমাদের সাথে খেলতে। চল, তুই আর আমি খেলি। নিজেদের ডিব্বা ডাব্বি নিয়েই খেলতেবসে গেলাম। আর একটু পর পর হা করে সাইকেল দেখি।

 এমন করেই সপ্তাহ পার। আমাদের কাজ হল বিকেল বেলা ঐ সাইকেল আর তার গতি বিধি দেখা। মাঠে খেলতে যাই না।

সন্ধ্যায় পিচ্চির মা এলেন, বাসা গোছগাছ নিয়ে ব্যাস্ত থাকায় এ ক'দিন আসতে পারেন নি। আমরা মহা খুশি। এইবার পিচ্চি আমাদের সাথে কথা বল্বে।ভাব হবে।

ফাজিল পিচ্চি, একটা কথা ও বল লনা।

কি আর করা! পরদিন বিকেলে আমরাই গেলাম। পিচ্চি আর তার সাইকেলের কাছে।

বলব, নাকি বলব না- করেও বলে ফেললাম। তোমাদের সাইকেলে আমাদের বসতে দেবে? এই ইট টু...

 না। না। খালাম্মা মানা করছে। ওরে সাইকেল থাইকা নামাইতে।

বদ কাজের মেয়ে। একটু বসতে ও দিল না। এক্তুপরেই পাশের বাসার কাজের মেয়েটা ঐ বদ কাজের মেয়েটা কে ডাকল আড্ডা দেবার জন্য।

এই বার!

আমি গিয়ে হাজির। তুমি জাও।কথা বল। আমি পিচ্চির সাইকেল ঠেলি। কিন্তু আমাকে একটু সাইকেলে ঘুরতে দিতে হবে।

আড্ডা পাগল মেয়ে সাথেসাথেই রাজি। আমার খুশি দেখে কে।

আমি সাথে সাথেই  সাইকেল ঠেলতে লেগে গেলাম। যত  সহজ ভেবেছিলাম তত সহজ না। রীতিমত ঘাম ছুটানো কষ্ট। তবুও সাইকেল চড়ার লোভে ঠেলে গেলাম।

আড্ডা শেষে মেয়েটা ফিরতেই বললাম, এই বার আমাকে বসতে দাও। আমার অনেক কষ্ট হইছে।সে মুখ ভেংচি কেটে বলল, তুমি যেই ভোঁটকা, সাইকেলে বসলে সাইকেল ভাইঙ্গা যাইব। বসন যাইব না।

ওমা! এই গুলা কি কথা! তুমি বলছ, আমারে বসতে দিবা। আমি মরিয়া হয়ে শেষ চেষ্টা করলাম। তখন ও হাঁপাচ্ছি।

না, দিব না। যাও।

তখনি আমার মাথায় বুদ্ধি এলো। তাইলে আমার ছোট বোন টারে বসতে দাও। ও তো চিকন, আর ছোট।

উসখুস করতে করতেই সে রাজি হল। আইচ্ছা।, তবে শুধু একটু চড়বা।

আমি তাতেও রাজি। খুশিতে চকচক করা দুই চোখ নিয়ে আমার ছোট বোনটা দৌড়ে হাজির।

ও কি ভীষণ খুশি। আমাকে বলল, তুই কেমনে বুঝলি আমি ও সাইকেলে উঠতে চাই? আমি হাসলাম। ভাবখানা এই, তোর জন্যই তো এত কষ্ট করলাম। ওর চোখে কৃতজ্ঞতা।

 যেই ও সাইকেলে বসতে যাবে, বাসার ভিতর থেকে আনটি ওদের ডাকল।

সন্ধ্যা হয়েছে, ঘরে এসো।

বদ কাজের মেয়েটা আমাদের দিকে একবার ও না তাকিয়ে সাইকেল টা নিয়ে বাসায় চলে গেল।

আমি মূর্তির মত দাড়িয়ে। এটা কি হল! আমার তখন ও সাইকেল থেলার কারনে বের হওয়া ঘামগুলো শুকায় নি। ছোট কপালের চুল গুলো ঘামে ভেজা। চোখ ফেতে কান্না আসছে। আমাদের কেন সাইকেল নাই? লজ্জায় ছোট বোনটার মুখের দিকে তাকাচ্ছিলাম না। আমার পরীর মত সুন্দর বোনটার ওর মত একটা সাইকেল কেন থাকবেনা?

 

ও আমার হাত ধরে বলে, চল বাসায় যাই। সাইকেলে উঠা লাগব না। দেখিস না, ওর সাইকেলের সিট টা কেমন হাগু কালারের। ইয়াক। চল, বাসায় চল।

আমি কিছুই বলিনি। বাসার সামনে এসেই ওকে বল লাম,

আমি তো ভালো ছাত্রী। ফাইভে দেখবি ঠিক বৃত্তি পাব। বৃত্তি পেলে সেই টাকা দিয়ে তোরে একটা সাইকেল আমি ঠিক কিনে দেব। এর চাইতে ও অনেক সুন্দর। হাগু কালারের সিট ওয়ালা না। তুই দেখিস...  

০ Likes ৩ Comments ০ Share ৬২৯ Views