Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

আহসান কবির

৮ বছর আগে

জাতীয় পার্টির একাল-সেকাল

ছোটকালে একটা ছবি দেখেছিলাম যার নাম ছিল সখি তুমি কার? এই ছবিটারবাস্তবতা আবারও ফিরে এসেছে বাংলাদেশে। এখন এই প্রশ্নটা করা যায় এভাবে-জাতীয় পার্টি তুমি কার?
মাঝে মাঝেই আলোচনায় থাকার কিংবা আলোচনা জন্মদেওয়ার জন্য এরশাদ সাহেব বিভিন্ন ঘটনার জন্ম দেন অথবা অনেকের মতে ঘটনাএরশাদের সামনে চলে আসে! হতে পারে সেটা মরিয়ম মেরীকে বিয়ে করার ঘটনা অথবাবিদিশার সঙ্গে প্রেম, বিয়ে এবং শেষমেষ আবারও ঘর ভাঙা। হতে পারে সেটা জনতাটাওয়ার মামলা কিংবা জেনারেল মঞ্জুর হত্যাকাণ্ড। শেষমেষ আবারও আলোচনায় আসলেনরওশন আর জিএম কাদের কাকে বেশি ভালোবাসেন সেই আলোচনার জন্ম দিয়ে।
২০১৪সালের জুন মাসে হোসেইন মুহম্মদ এরশাদকে উদ্দেশ করে তার ভাই জিএম কাদেরবলেছিলেন- আপনি ইতালির গোলকিপার হবেন আবার একই সঙ্গে স্পেনের স্ট্রাইকারহবেন তা হবে না। আপনাকে যে কোনও একদলে নির্দিষ্ট অবস্থানেই খেলতে হবে।সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি সরকার না বিরোধী দলে থাকবেন!এরশাদ সাহেব জিএমকাদেরকে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান করার পর ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসেকাদের সাহেব এখনও এই বক্তব্য দেবেন কিনা সেটা একটা কোটি টাকা দামের প্রশ্ন!তবে এখনও তিনি আশা করে আছেন সরকার হয়তো মধ্যবর্তী নির্বাচন দেবে। সেইনির্বাচনে জাতীয় পার্টি সরকারে, পুরোপুরি বিরোধী দলে নাকি বর্তমানেরগৃহপালিত বিরোধী অবস্থানে থাকবে সেটা বোধ করি এরশাদ সাহেব ছাড়া আর কেউজানেন না!
আসলে জাতীয় পার্টির বর্তমান অবস্থাটা কী? আমরা একটু দেখার চেষ্টা করি!
এক.২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর থেকেই জাতীয় পার্টিতে রওশনপন্থীহিসেবে পরিচিত কয়েকজন নেতা এরশাদকে দল থেকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন। তারাএকেবারেই এরশাদের প্রভাবমুক্ত জাতীয় পার্টি গড়তে চেয়েছিলেন। জাতীয় পার্টিরঅন্তত পাঁচজন এমপি এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত আছেন জেনে জিএম কাদেরবলেছিলেন-এইটুকু জানি জাতীয় পার্টিকে বেহাত করার একটা তৎপরতা আছে। তারারওশনকে ব্যবহার করতে পারেন!

পাঠকদের মনে করিয়ে দেই, ‘জাতীয় পার্টি-৬এমনিতেই ভাংচুর পার্টি। ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জন্ম নেওয়ার পর জাতীয়পার্টি এরশাদের জীবদ্দশাতেই পাঁচ-পাঁচ বার ভেঙেছে। প্রথমবার ভেঙেছিলেন এমএমতিন যিনি চক্ষু মতিন নামেই পরিচিত ছিলেন। একদা দারুণ ভালো ছাত্র এবং তারচেয়ে বহুগুণ ভালো চোখের ডাক্তার এমএ মতিন দল ভাঙাতেও বেশ ভালো ছিলেন।এরশাদের প্ররোচনায় সাত্তারের আমলে বিএনপিকে প্রথম ভেঙেছিলেন মতিন সাহেব।এরপর তিনি প্রথম ভাঙেন জাতীয় পার্টিকে। দ্বিতীয়বার ভাঙেন কাজী জাফর ও শাহমোয়াজ্জেম এবং এই দুজনার পার্টির নাম হয় জাতীয় পার্টি (জা-মো)। দল ভাঙারপরে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে শাহ মোয়াজ্জেম বলেছিলেন,‘একজীবনে যতোবার এরশাদকেডেকেছি ততোবার আল্লাহকে ডাকলে অলি আউলিয়া হয়ে যেতাম!যদিও পরবর্তীকালেকাজী জাফর এরশাদের কাছেই ফিরেছিলেন এবং ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসের একতরফানির্বাচনে এরশাদের দোদুল্যমানতার কারণে পঞ্চম বারের মতো তিনি জাতীয় পার্টিভাঙেন।

তৃতীয় ও চতুর্থবার জাতীয় পার্টি ভাঙেন দুই মঞ্জু। এর মধ্যেনাজিউর রহমান মঞ্জু এরশাদের মুক্তির জন্য ভিক্ষা করতেও রাজি ছিলেন। সেইতিনি ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের বেশ আগেই এরশাদের দল ভেঙে চারদলীয় অর্থাৎবিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেন। তার মৃত্যুর পরে তার পুত্র আন্দালিবপার্থ বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি নিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গেই আছেন। আর আনোয়ারহোসেন মঞ্জু জাতীয় পার্টি ভেঙে একলা চলোর নীতি নিয়েছিলেন। একবার নিজের দলসম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আমরা ছোট দল, খুঁদ খাওয়া মুরগির মতন। খুটে খুটে খাই!সে যাই হোক,২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসের কলংকজনক নির্বাচনে আনোয়ার হোসেনমঞ্জুর দল অংশ নিয়েছে এবং মঞ্জু সাহেব বন ও পরিবেশমন্ত্রী হিসেবে বহালআছেন।

দুই. সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় ক্ষমতা দখল করেছিলেন এরশাদ।ক্ষমতার স্বাদ কী জিনিস সেটা তিনি সবচেয়ে ভালো বোঝেন। দেশবাসীর কাছে রওশনেরসঙ্গে যতোই দূরত্ব তৈরির নাটক দেখান না কেন, ক্ষমতার কাছ থেকে তারা মোটেইদূরে যেতে চান না। ভেতরে ভেতরে তাদের এই ক্ষমতাকেন্দ্রিক ভালোবাসাতে কখনোইচিড় ধরে না। সে কারণেই জাতীয় পার্টির ভেতরে যারা এরশাদ ও রওশনকে সামনে রেখেবিভাজিত হন, গ্রুপিং করেন, শেষমেষ তারাই বিপদে পড়েন, রওশন আর এরশাদেরকিছুই হয় না! জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সংসদ সদস্য ফিরোজ রশীদ বলেছেন, ‘রওশন ও এরশাদ ৬০ বছর সংসার করেছেন। এতো কিছুর পরেও তাদের সংসার ভাঙেনি, তারা এখনও এক আছেন। একারণে কেউ যদি তাদের নিয়ে খেলেন তাহলে তারাই বিপদেপড়বেন

তিন. নতুন করে আলোচনায় আসার জন্য এরশাদ রওশনের সঙ্গে দূরত্বতৈরি করেছেন, জিয়াউদ্দিন বাবলুকে মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন, ফিরিয়েএনেছেন রুহুল আমীন হাওলাদারকে। জি এম কাদেরকে এরশাদ তার রাজনৈতিকউত্তারাধিকারী এবং জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছেন। রওশন গোস্বাকরলেই সিদ্ধান্ত থেকে খানিক সরে এসে রওশনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবেওনিয়োগ দিয়েছেন এরশাদ।

আসলে জাতীয় পার্টি আর পল্টিবন্ধুদুজনেদুজনার। এরশাদকে ছাড়া জাতীয় পার্টিকে কল্পনাই করা যায় না। তাই এরশাদবিহীনজাতীয় পার্টির অস্তিত্ব নিয়েই টানাটানি পড়বে। কারণ, নিজেকে আর কখনো যেনজেলে যেতে না হয় সেজন্য এরশাদ জাতীয় পার্টিকে ইতোমধ্যেই ক্লাউন পার্টিতেরূপান্তর করেছেন।

চার. ক্যান্টনমেন্টে এদেশের প্রথম জন্ম নেওয়া দলেরনাম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি। জিয়াউর রহমানের সব কিছু অনুসরণ করেঅর্থাৎ প্রথমে হ্যাঁ না ভোট এবং পরবর্তীতে (১৯৮৬ সালের পহেলা জানুয়ারি)এরশাদ সাহেব দল গঠন করেন যার নাম জাতীয় পার্টি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকেদলছুট হয়ে ক্ষমতার হালুয়া রুটির লোভে যারা বিএনপিতে যোগদান করেছিলেন তাদেরবেশির ভাগ এরশাদের দলে যোগ দেন শুধুমাত্র ক্ষমতার হালুয়া রুটির ভাগটানিয়মিত করার জন্য! সেকারণেই জাতীয় পার্টি স্বাভাবিক ভাবে গড়ে ওঠা কোন দলনয়। ক্ষমতার স্বাদ নেওয়ার জন্য এটা রাজনৈতিক ভাবে কিছু চরিত্রহীন মানুষেররাজনৈতিক ক্লাব!

রাজনৈতিক ভাবে অনেকে এখন জাতীয় পার্টির স্বরূপ বাঅবস্থানকে হিজড়াদের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন। জাতীয় পার্টি কী সরকারে আছেনাকি বিরোধী দলে? একসঙ্গে কী দুই অবস্থানে থাকা যায়? বাংলাদেশ ছাড়া অন্যকোনও দেশে এমন দ্বৈত অবস্থানের বিরোধী দলের অস্তিত্ব কী আছে?

সম্ভবত নেই।

পাঁচ.১৯৯০ সালে ক্ষমতা হারানোর পর এরশাদকে সবচেয়ে বেশি দ্বৈত অবস্থানে এবং কথাদিয়ে কথা না রাখা কিংবা কথা বদলে ফেলার নজির দেখা যায় ২০১২ ও ২০১৩ সালে।এসময়ে তিনি সকালে ঘোষণা দিতেন আওয়ামী লীগের অধীনে একতরফা নির্বাচনে অংশ নানেওয়ার কিন্তু রাতের বেলা সেটা আবার বদলে ফেলতেন! এক সময়ে এরশাদ সাহেব বলেইফেললেন নির্বাচনে না গেলে সংবিধানের বরখেলাপ হবে আবার নির্বাচনে অংশ নিলেমানুষ আমার (এরশাদের) মুখে থুথু দেবে। এই কথার কারণে এরশাদের নাম হয়ে যায়থুথুবাবা। কিন্তু এরশাদ হঠাৎ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে নাযাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন এবং তার দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন পত্রপ্রত্যাহার করার আহবান জানিয়েছিলেন। এরপর চিকিৎসার নামে এরশাদকে কম্বাইন্ডমিলিটারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় আর পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে ভিন্নভূমিকায় নেমেছিলেন রওশন এরশাদ। এর ফলে যারা এরশাদের কথায় মনোনয়ন পত্রপ্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন তারা কোনঠাসা হয়ে পড়েন। জাতীয় পার্টির আর যেসবসদস্য মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করেননি তারা রওশন এরশাদের নেতৃত্বে নির্বাচনেঅংশ নেন এবং ৩৪টি আসন লাভ করেন। এরপর জাতীয় পার্টির কয়েকজন সদস্যকেমন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হয়। খোদ এরশাদ হয়ে যান শেখ হাসিনার উপদেষ্টা!উপদেষ্টা হওয়ার পরেও এরশাদ বলতে পারেন জাতীয় পার্টি সংকটে আছে তবে মহাসংকটেনেই! তবে তিনি যেটি বলতে পারেননি সেটা হচ্ছে এই যে জাতীয় পার্টির কাগুজিনেতৃত্বে তিনি থাকলেও বাস্তবে আছেন রওশন এরশাদ। এখন থেকে এমন দ্বৈতনেতৃত্বে জাতীয় পার্টি কতোদিন চলবে ওপরওয়ালা ছাড়া কেউ জানে না! এমন কী তিনিখানিকটা বিপ্লবী হয়ে ঊঠলে তাকে বশ করার জন্য মেজর জেনারেল মঞ্জুর হত্যামামলা নিয়ে ভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। আর তাই দ্বৈত চরিত্রের ভূমিকা থেকেএরশাদের বেরিয়ে আসার কোনও সম্ভাবনা নেই, আপাতদৃষ্টিতে সম্ভাবনা নেই জাতীয়পার্টির বদলে যাওয়ার।

ছয়. তাহলে কী দাঁড়ালো ব্যাপারটা? এরশাদবিহীনজাতীয় পার্টির মূলমন্ত্র কী? উত্তর হয়তো মিলবে এমনআওয়ামী লীগ ও বিএনপিতেযোগ দেওয়ার দীর্ঘতম অনুশীলন!

সারা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠান বা দলই বড় হয়েথাকে। ব্যক্তি বড়জোর খানিক সময়ের জন্য দল বা প্রতিষ্ঠানের চালিকা শক্তি।ব্যতিক্রম বড় বড় মানুষ। যেমন-লেনিন বা স্ট্যালিন। জোসেফ ব্রজ টিটো কিংবাফিদেল কাস্ত্রো। ইয়াসির আরাফাত কিংবা নেলসন ম্যান্ডেলা। মহাত্মা গান্ধীকিংবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। এরা দলের চেয়ে বড় হয়ে উঠতে পেরেছিলেনইতিহাসকে বদলে দিতে পারার কারণে। কিন্তু ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশে। এখানেযেন ব্যক্তিই বড় কথা। শেখ হাসিনা আর খালেদা জিয়া যা বলেন সেটাই দলের জন্যআইন। এরশাদের বেলাতেও একই কথা প্রযোজ্য। তার কথাই জাতীয় পার্টির জন্য আইনকানুন! তিনি যেন সব কিছুর ঊর্ধ্বে। জাতীয় পার্টি পলিটিক্যাল ক্লাব, দল নয়।আর তাই কথিত পার্টির ভেতর দলের অনুশীলন না থাকার কারণে নেতা, কর্মী আরসমর্থকরা ইতোমধ্যে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে আছেন। কোনও একদিন দুই দলে পুরোপুরিবিভাজিত হয়ে তারা আওয়ামী লীগ বা বিএনপিতে বিভাজিত হয়ে যাবেন!

এরশাদ সেদিন কোন আসনে থাকবেন তা সময়ই বলে দেবে! তবে কেউ কেউ এরশাদের কবিতা কিংবা প্রেম মিস করতে পারেন!

 

০ Likes ০ Comments ০ Share ৪২২ Views

Comments (0)

  • - মাসুম বাদল

    emoticonsemoticonsemoticons