(আজ ৪ঠা জানুয়ারি সহব্লগার বন্ধু গোলাম মোস্তফা'র একমাত্র মেয়ে জাইফার জন্মদিন। শিশুতোষ গল্পটি জাইফাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা হিসাবে উৎসর্গ করা হল। শুভ জন্মদিন মামুনি। দোয়া করি অনেক বড় হও আর দশ ও দেশের মুখ উজ্জ্বল করো।)
জাইফা তার আব্বু এবং আম্মুর সাথে বসুন্ধরা মার্কেট এসেছে। সামনের শুকবার তার ষষ্ঠ জন্মবার্ষিকী। তার জন্য নতুন কাপড় চোপড় কেনার জন্যই মুলত এই মার্কেটে আসা। তার ছোট চাচ্চু ইতিমধ্যেই তার জন্য জন্মদিন উপলক্ষ্যে বড় একটা কেকের অর্ডার দিয়েছে। ওপরে তার নাম সুন্দর করে লেখা থাকবে। এটা চার চাচ্চু তাকে নিশ্চিত করেছে। সব কাপড় চোপড় কেনা হল তার আব্বু আর আম্মুর পছন্দে। শুধু এক সেট কাপড় কেনা হল তার পছন্দ অনুযায়ী। ইতিমধ্যে আত্মীয়স্বজন এবং ঘনিষ্ঠজনদের দাওয়াত দেয়া হয়ে গেছে। জাইফা তার স্কুলের বন্ধুবান্ধবদের নিজেই কার্ড দিয়ে দাওয়াত করেছে।
আজ শুক্রবার। জাইফার জন্মদিন। সন্ধ্যার পর পার্টি। এখন বাজে সকাল দশটা। দূরের আত্মীয়স্বজনের কয়েকজন গতরাত্রেই এসে পড়ায় বাড়িতে সকাল থেকেই আনন্দের জোয়ার বইছে। ছোট চাচ্চু তার বন্ধুদের নিয়ে পুরো বাড়ি সাজানো নিয়ে ব্যস্ত। জাইফার প্রতিবেশী কিছু বন্ধু তার কথামতো সাত সকালেই এসে হাজির। তাদের নিয়ে সে ছোট চাচ্চুকে যতটা পারছে সাহায্য করছে। যদিও সেগুলো আসলে কোন কাজেই দিচ্ছে না। বরং কাজের আরো ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। কিন্তু আজ তার জন্মদিন। তাই সবাই উপরোন্ত তার কাজের প্রশংসা করছে। জাইফা আর তার বন্ধুরাও তাই দ্বিগুণ উৎসাহে কাজের ব্যাঘাত ঘটিয়ে চলছে। তারপরও কাজ এগিয়ে চলছে বেশ তোরে জোড়ে। কিছুক্ষণ পর পর জাইফা তার বন্ধুদের খোঁজ খবর নিচ্ছে। কে এলো। কে এলো না। কে কে বাকী আছে। যারা এখনো আসে নাই, কেন এখনো দেরি করছে। আব্বুকে বলে, আম্মুকে বলে ফোনে খোঁজ নিচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি আরও অনেক কিছু। দেখতে দেখতে সকাল গড়িয়ে, দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো। আর ঘণ্টা দুই বাকী। বাড়িঘর মোটামুটি সাজানো গোছানো শেষ। জাইফা মহাখুশি।
মাগরেবের নামাজের এক ঘণ্টা পর কেক কাটা হবে। ড্রয়িং রুমের টেবিলের ওপর কেকটা রাখা হল। বিশাল আকারের একটা কেক। জাইফার খুব পছন্দ হয়েছে। ঠিক যেমনটি সে চেয়েছিল, ছোট চাচ্চু ঠিক তেমন কেকই অর্ডার দিয়েছে। তার নামটাও কেকের ওপর খুব সুন্দর করে লেখা আছে। কেকের ওপর ছয়টা মোমবাতি জ্বালছে। সবাই এসে টেবিলের চারপাশটা ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু জাইফাকে হঠাৎ পাওয়া যাচ্ছে না। সংবাদটা মুহূর্তের মধ্যে সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়লো। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন এখানে সেখানে খোঁজতে লাগলো। ছোট চাচ্চু তাকে দোতালায় বারান্দায় খুঁজে পেল। সেখান থেকে সামনের রাস্তাটা অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। জাইফা সেদিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
-কিরে মামুনি তুই এখানে একা একা দাঁড়িয়ে কি করছিস? সবাই ড্রয়িং রুমে কেক নিয়ে তোর জন্য অপেক্ষা করছে।
-চাচ্চু আমার একজন বন্ধু এখনো আসেনি। আমি তার জন্য অপেক্ষা করছি।
-তোর সব বন্ধুরাই তো এসে পড়েছে। তুই আবার তোর কোন বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করছিস?
-আমার আরও একজন বন্ধু আছে চাচ্চু। তার সাথে রোজ আমার টিফিন ভাগাভাগি করে খাই। আমাদের স্কুলের কাছাকাছি যে রেল ষ্টেশন আছে, ঐখানে ওর বাবা কুলির কাজ করে। তাকে দাওয়াত করেছি। আমি তাকে বলেছি, সে যদি না আসে আমি তাহলে কেক কাটবো না। কিন্তু সেতো এখনো এলো না চাচ্চু? কথাগুলো বলতে বলতে জাইফা কেঁদে ফেললো।
ছোট চাচ্চু জাইফাকে বুকে জড়িয়ে নিল। তার কপালে একটা চুমো খেলো। এমন সময়ে জাইফার আব্বু আম্মুও সেখানে এসে উপস্থিত হল। ছোট চাচ্চু সব কিছু তাদের খুলে বলল। আব্বু আম্মু দুজনেই জাইফাকে জড়িয়ে ধরে অনেক আদর করলো। আমি আসছি বলে ছোট চাচ্চু চোখ মুছতে মুছতে মুহূর্তের মধ্যে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। ঘণ্টাখানেক পর সে জাইফার বন্ধুকে নিয়ে এসে হাজির হল। জাইফার পছন্দে যে কাপড় সেট কেনা হয়েছিল, সেটা পড়িয়ে তাকে ড্রয়িং রুমে নিয়ে আসা হল। তারপর সবাই মিলে মহা আনন্দে কেক কাটলো।
ছবির জন্য কৃতজ্ঞতাঃ ফেরদৌসী বেগম (শিল্পী) আপা
Comments (56)
তথ্যপুর্ন লেখা। ভাল লেগেছে দিদি
এ মামলা আলোর মুখ হয়তো দেখবেও না।
ভাল লাগা রইল আপনার লেখায় পুরো দেশটাই প্রভাবশালীদের লুটপাটের স্বর্গ রাজ্য
অনেক অনেক শুভ কামনা জানবেন