Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

জনপ্রিয় বাংলা ব্যাণ্ডদল দলছুটের অন্যতম প্রধান সদস্য, সংগীতশিল্পী ও সাংবাদিক সঞ্জীব চৌধুরীর ৭ম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি



স্বনামধন্য সংগীতশিল্পী ও সাংবাদিক সঞ্জীব চৌধুরী। সঞ্জীব চৌধুরীর পরিচিতি শুধুমাত্র গায়ক-সুরকার-গীতিকার হিসেবেই সীমায়িত নয়, বরং বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সঞ্জীব চৌধুরীর বিচরণ ছিল সৃজনশীল বিভিন্ন কর্মকান্ডে। একাধারে তিনি ছিলেন লেখক-কবি, সংগঠক, অভিনেতা ও খ্যাতনামা সাংবাদিক। সঙ্গীত চর্চার পাশাপাশি বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ ও যায়যায়দিনএ কাজ করেন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠিত অনেক সাংবাদিক, যারা আজকের কাগজ কিংবা ভোরের কাগজ সঞ্জীব চৌধুরীর সহকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন তাদের অনেকেরই সাংবাদিকতার হাতে খড়ি সঞ্জীব চৌধুরীর কাছে। রাজনীতিতেও তার সংশ্লিষ্টতা ছিল ঘনিষ্ট। স্কুল জীবন থেকেই ছাত্র রাজনীতির সংস্পর্শে আসেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হন। কলেজ জীবনেও তিনি এ সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকে ছাত্র ইউনিয়নের নিবেদিত প্রাণ ও সক্রিয় সংগঠক হিসেবে কাজ করেন। গড়ে তোলেন শক্তিশালী সাংস্কৃতিক টিম। তিনি এ সংগঠনের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন। ৯০-এর স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এই আলোচিত শিল্পী। সে সময় প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত সঞ্জীব গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে তাৎণিক গান লিখে সুর দিতেন আর রাজপথ কাঁপাতেন গান গেয়ে। আজ সঞ্জীব চৌধুরীর ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৭ সালের আজকের দিনে তিনি ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ বিভাগে মারা যান। জীবিত থাকতে সমাদৃত না থাকলেও যখনই দরজার ওপাশে চলে যাওয়ার পর থেকেই শুরু হয় প্রশংসা, পুস্পাঞ্জলি আর শ্রদ্ধা নিবেদনের ছড়াছড়ি। মৃত্যুর ৬ বছরের ব্যবধানে স্তিমিত হয়ে আসছে সেই প্রতিযোগীতা। আত্মীয় স্বজন আর গুটি কয়েক শুভান্যুধায়ী ছাড়া হয়তো কেউ মনে রাখেনা তার জন্ম-মৃত্যুদিন। সঙ্গীত পিপাশু অগনীত ভক্তদের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

সঞ্জীব চৌধুরী ১৯৬২ সালের ২৫ ডিসেম্বর বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার মাকালকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তবে সঞ্জীব চৌধুরীর আদি বাড়ি সিলেট জেলার বিশ্বনাথ থানার দশঘর গ্রামে। ওখানকার জমিদার শরৎ রায় চৌধুরী ছিলেন তাঁর দাদা। তাঁর বাবা স্বর্গীয় ননী গোপাল চৌধুরী এবং মা প্রভাষিনী চৌধুরী। ৫ ভাই ৪ বোনের মধ্যে সঞ্জীব চৌধুরীর অবস্থান সপ্তমে। তার ডাক নাম ছিলো কাজল। স্থানীয় হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে বৃত্তি লাভ করেন। নবম শ্রেণীতে এসে ভর্তি হন ঢাকার বক্শী বাজার নবকুমার ইন্সটিটিউটে। ১৯৭৮ সালে সেখান থেকে মাধ্যমিক পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করে মেধা তালিকায় ১২তম স্থান লাভ করেন। এরপর ১৯৮০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষায়ও স্থান করে নেন মেধা তালিকায়। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরুতে তিনি গণিত বিভাগে ভর্তি হন কিন্তু বিভিন্ন কারণে তা শেষ না করে পাস কোর্সে স্নাতক পাস করেন। তারপর সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রী করেন। কর্মজীবনে তিনি বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ ও যায়যায়দিনএ কাজ করেন। সঞ্জীব চৌধুরীর পরিচিতি শুধুমাত্র গায়ক-সুরকার-গীতিকার হিসেবেই সীমায়িত নয়, বরং বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সঞ্জীব চৌধুরীর বিচরণ ছিল সৃজনশীল বিভিন্ন কর্মকান্ডে। ছাত্রজীবনে শঙ্খচিল নামে একটি গানের দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তাঁর প্রথম পদচারণা। ১৯৯৬ সালে বাপ্পা মজুমদারের সঙ্গে একত্রিত হয়ে গঠন করেন ব্যান্ড দলছুট। ” আহা ” এ্যালবামের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ হয় কিংবদন্তি সঞ্জীব চৌধুরী এবং বাপ্পা মজুমদারের দলছুটের। এরপর ‘হৃদয়পুর’। এ অ্যালবামটি পেলো আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা। শাহ আবদুল করীমের ‘গাড়িচলেনা..চলেনা..চলেনা..রে..গাইলেন সঞ্জী্ব আর বাপ্পা মজুমদার’। এরপর তার সলো এলবাম ‘আমি তোমাদের বলে দেবো’। আমাদের সত্যিই কিছু বলে দিলেন তিনি। আকাশচুড়ির বায়োস্কোপ দেখা গেলো এরপর। ‘স্বপ্নবাজি’ আর ‘জোস্নাবিহার’ বাংলা গানের একটা অসম্ভব সুন্দর কিছু কথামালায় সাজানো সঞ্জীব চৌধুরীর কল্পলোক। সঞ্জীব চৌধুরীর আরো কিছু জনপ্রিয় গানঃ ১। সমুদ্র সন্তান, ২। চাঁদের জন্য গান, ৩। রিক্সা, ৪। গাড়ি চলে না, ৫। বায়স্কোপ, ৬। নষ্ট শহরে, ৭। হাতের উপর হাতের পরশ. ৮। বয়স হল সাতাশ, ৮। তোমার ভাঁজ খোলো আনন্দ দেখাও, ৯। আমি ফিরে পেতে চাই, ১০। আমি তোমাকেই বলে দেবো, ১১। দুঃখ ব্যথায় মুখটা যে নীল, ১২। একটু খানি সবুজ, ১৩। জোছনা বিহার, ১৪। সাদা ময়লা রঙ্গিলা, ১৫। নেশা, ১৬। আহ!, ১৭। নৌকা ভ্রমণ ইত্যাদি।

গীতিকার ও সুরকার সঞ্জীব চৌধুরী ছাপিয়ে গিয়েছেন শিল্পী সঞ্জীব চোধুরীকে, আর তাই গীতিকার ও সুরকার হিসেবে তাঁর জনপ্রীয়তা ছিল বহুগুন বেশি। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনেক গীতিকারই তাঁর দ্বারা প্রভাবিত। গানের পাশাপাশি কবিতাও লিখতেন সঞ্জীব চৌধুরী। তিনি কবিতাতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করতেন। দেশের প্রায় সব দৈনিকে তাঁর কবিতা ছাপা হয়েছে। তার একমাত্র কাব্যগ্রন্থের নাম রাশপ্রিন্ট। কবিতার পাশাপাশি সঞ্জীব চৌধুরী বেশ কিছু ছোট গল্প ও নাটকের স্ক্রিপ্টও লিখেছেন। সঞ্জীব চৌধুরী অভিনীত একমাত্র নাটক “সুখের লাগিয়া”। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরে মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ জনিত কারণে আকস্মিক অসুস্থতার পর (১৮ নভেম্বর রাত ১২.১০ মিঃ ) ১৯ নভেম্বর ঢাকার এ্যাপোলো হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ বিভাগে মারা যান জনপ্রিয় শিল্পী সঞ্জীব চৌধুরী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৪৫ বছর। এসময় তিনি স্ত্রী আলেমা নাসরীন (প্রজ্ঞা নাসরীন নামে যিনি অধিক পরিচিত) একমাত্র কন্যা কিংবদন্তী ও হাজার হাজার ভক্ত শ্রোতা রেখে যান। তার মৃত্যুতে সাহিত্য-সংস্কৃতি, গানপাড়া, সাংবাদিক অঙ্গনসহ সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। শ্রেণী বৈষম্য সমাজ হতে সাম্যবাদী সমাজে উত্তরণের স্বপ্ন দেখতেন সঞ্জীব চৌধুরী। সে কারণে বাম রাজনীতিতে জড়িয়ে পরেন এবং সঙ্গত কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে হয়ে ওঠেন ছাত্র ইউনিয়নের নিবেদিত প্রাণ সংগঠক ও সক্রিয় কর্মী। বিশেষ করে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সেই উত্তাল রাজনীতিতে ছাত্র ইউনিয়নের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে সঞ্জীব চৌধুরীর সংশ্লিষ্টতা হয়ে ওঠে অনিবার্য।

মানুষের প্রতি ভালোবাসাই ছিলো তার রাজনীতির উৎস। তার লেখা কবিতা, গানেও প্রতিফলিত হয়েছে ওর এই জীবনমুখী চেতনা। সম্ভবত: এই চেতনাই ওকে উদ্বুদ্ধ করেছিল মৃত্যুর পর তার মরদেহ মানব কল্যাণে কাজে লাগাতে। তাই সকল সংস্কারের উর্দ্ধে ওঠেও তার মরদেহ দান করে যেতে পেরেছিলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমী বিভাগে- চিকিৎসকদের গবেষণার জন্য। সত্যি, মৃত্যুতেও সঞ্জীব চৌধুরী হয়ে রইলেন চিরঞ্জীব! বিপুল জনপ্রিয় এ সাংবাদিক, গায়ক ও কবি সঞ্জীবচৌধুরীর আজ ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী। ঘুড়ি ব্লগের সংশ্লিষ্ট সঞ্চা্লক, ব্লগার, পাঠক ও শুভান্যুধায়ী সকলের পক্ষ থেকে দলছুটের অন্যতম প্রধান সদস্য, সংগীতশিল্পী ও সাংবাদিক সঞ্জীব চৌধুরীর মৃত্যুদিনে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
০ Likes ১ Comments ০ Share ৭২৫ Views

Comments (1)

  • - এস আহমেদ লিটন

    বেশ ভাল লাগলো। ধন্যবাদ।

     

    - সুলতানা সাদিয়া

    শিরোনাম ও কবিতা দুটাই সুন্দর।