Site maintenance is running; thus you cannot login or sign up! We'll be back soon.

তৌফিক মাসুদ

১০ বছর আগে

চোর

  

 

গ্রামে চোরের উপদ্রব বেড়েছে। এলাকার সবাই তাই পাহাড়া বসিয়েছে। রাস্তার মোড়ে উঠতি জোয়ান ছেলেদের ভাব সাব দেখলে মনে হচ্ছে, যুদ্ধ লেগেছে বুঝি। বাড়ির মহিলারাও কাস্তে শাবল মাথার কাছে রেখে ঘুমুতে গেছে। এমন কি গ্রামের কুকুরগুলোও চোর ধরার জন্য পেট পুরে খেতে পেয়েছে। 

রাত দুইটা। চারদিকে নিস্তব্ধ। অপেক্ষায় থাকতে থাকতে গ্রামের যুবকেরা ঘুম ঘুম চোখে একে অন্যের দিকে চেয়ে আছে। কেউ ঘুমাচ্ছে তো তাকে টেনে উঠানো হচ্ছে। কিন্তু চোর না আসলে এভেবে আর কতক্ষন জেগে থাকা যায়। তাই কেউ কেউ প্রায় ঘুমিয়ে পড়ল। বেশ কিছুক্ষণ এরকম কেটে গেল। চোরের নাম নিশানও নেই। উঠতি বয়সের কিছু ছেলে বাড়িতে চলে যাবার জন্য প্রস্তুত হল। এমনই সময় হঠাৎ করে মৃধাদের এক বিয়ে বাড়ি থেকে ‘চোর’ ‘চোর’ বলে চিৎকার আসতে থাকল। প্রায় ঘুমিয়ে যাওয়া গ্রাম মূহুর্তের মধ্যেই জেগে উঠল। মিনিট না পেরুতেই চারদিক থেকে নানা মানুষের ‘চোর’ ‘চোর’ বলে আওয়াজ আসতে থাকল। এমনকি মেয়ে মানুষ আর ছোট পিচ্চিরাও ‘চোর’ ‘চোর’  বলে চিৎকার করতে থাকল। বিভিন্ন দিক থেকে এত চিৎকারের মাঝে চিৎকারের মূল উৎসই হাড়িয়ে গেল। কোথায় চোর, আর কোথায় চোরকে ধরতে যাবে তাই কেউ বুঝলনা। এদিকে মসজিদের মুয়াজ্জিন মাইকে ঘোষণা দিতে লাগল। কিন্তু কোন বাড়িতে চোর এসেছে তা সেও বুঝতে পারেনি। গ্রামে চোর পড়েছে শুধু এই বলেই সে চিৎকার করছিল। এত চেচামেচির মধ্যে চোর কোথায় আছে তা বুঝতে না পেরে সবাই মসজিদের মুয়াজ্জিনের কাছে গেল। সেও বলতে পারেনা চোর কোথায়। তবে মসজিদে আসায় বিফল হতে হলনা। সকল মানুষ এক সাথে হওয়ায় আসল কথা বেড় হল। তারপর দল বেধে মৃধা বাড়ির বিয়ে বাড়ি ঘেরাও করল। বাড়িতে নতুন জামাই এসেছে, কনের গায়ে অলংকার আছে কয়েক ভরী। সকলের সন্ধেহ ঘনীভূত হল। চোর ব্যাটা বড় দান মারতেই ঘরে ঢুকেছে। 

বিয়ে বাড়ির সব ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজেও চোর পাওয়া গেলনা। শুধু বাকি রয়েছে কনের ঘর। কিন্তু কেউ সেই ঘরে যেতে নারাজ। এমন কি উঁকি দিতেও নারাজ। অবশেষে পাশের বাড়ির চাচী আম্মাকে এই দায়িত্ব দেয়া হল। তিনি উঁকি দিয়ে দেখে সাথে সাথেই চোখ ফিরিয়ে নিলেন। সবাই ভাবল, কী জানি দেখে ফেলেছে বুড়ি! কিন্তু বুড়ির মুখে কথা নাই। কয়েক সেকেন্ড পরে কথা বলল। কনে নাকি খাটের নিচে মেঝেতে পড়ে আছে। সাথে সাথে কান্নার রোল পড়ে গেল। সবার সন্ধেহ জামাই বাবু চোর চোর বলে চিৎকার দেওয়াতে, চোর বুঝি দুই জনকেই মাইরে ফেলছে। এই বাড়িতে মানুষ জন কম। তাই সাহস হয়নি চোরের মোকাবেলা করার। অগ্যতা দরজা ভাঙ্গা হল। বাতি জ্বালিয়ে সবাই দেখল জামাই বাবু নিশ্চিন্তে খাটের উপর ঘুমিয়ে আছে। আর কনে খাটের পাশে মেঝেতে ঘুমিয়ে আছে। ধাক্কা দিতেই দুইজনেই জেগে উঠল। বাইরে এত শব্দ হচ্ছে কিন্তু তাদের ঘুম ভাঙ্গেনাই কেন সেটাই বুঝতে পারলনা কেউ। কনের কানে তুলা দেওয়া। এটা আবিস্কার করা গেল যে,কনে কেন ঘুম থেকে জাগেনি?কিন্তু সে নিচে ঘুমিয়ে ছিল কেন?আর কেনই বা জামাই বাবু চোর ধরতে বাইরে বেরিয়ে আসেনি সেটা জিজ্ঞেস করতেই, জামাই বাবুর সাথে আসা দশ বছরের আক্কেল আলী চিঁচিঁ গলায় বলে উঠল, “আমাগো কিছলু মামার ঘুম খুইব বেশি, আর তার ঘুমের মধ্যি কথা বলার বদ অভ্যিস আছে, সেটাই সইতে না পাইড়া মামীজান নিচে গুমায় ছিল”।

 

এতক্ষনে সবাই বুঝল চোর চোর চিৎকারের মূল উৎস কোথায়। কিন্তু সকলে যে চোর পেটাবে বলে এসেছিল। কেউ সাহস করে বাইরে থেকে বলেই ফেলল, “ এই ব্যাটা কুম্ভকর্নকে বাইরে নিয়ে আয়, আইজকা জামাই পিটাইয়া চোর পেটানোর স্বাদ মেটামু”।

০ Likes ১১ Comments ০ Share ৫৪০ Views

Comments (11)

  • - চারু মান্নান

    আমার শ্রদ্ধা।

    • - নূর মোহাম্মদ নূরু

      ধন্যবাদ চারু মান্নান ভাই

    - ঘাস ফুল

    ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের পথিকৃৎ মহান শহীদ আসাদুজ্জামানের ৪৫তম শাহাদাৎবার্ষিকীতে আমার গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি। 

    এই অকুতোভয় বীর সেনানী সম্বন্ধে অনেক কিছু জানলাম। নিচের দুটো লাইন স্ববিরোধী হয়ে গেলো না নুরু ভাই? 

    এক জায়গায় বলেছেন, " ১৯৬৭ সালে তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিভাগে এম এ ডিগ্রী অর্জন করেন।"

    অন্য জায়গায় আবার বলেছেন,  "মৃত্যুকালীন সময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে এম.এ শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।" 

    ব্যাপারটা একটু খতিয়ে দেখবেন নুরু ভাই। ধন্যবাদ। 

    • - নূর মোহাম্মদ নূরু

      জনাব ঘাস ফুল আপনাকে ফাঁকি দেবার বা পাইকারীতে কিছু বলার অবকাশ নাই।
      তাই আপনার মন্তব্যের পর আমাকে পুনরায় বিশুদ্ধ/সম্পাদনা করতে হয়। যা হোক
      প্রকৃত ঘটনা হলোঃ
      ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ ডিগ্রী অর্জন করেন। কিন্তু আরো ভালো ফলাফলের জন্যে ১৯৬৮ সালে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো এম.এ বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জনের জন্য চেষ্টা করছিলেন। সে কারণে ১৯৬৯ সালে মৃত্যুকালীন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে এম.এ শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। আশা করি ব্যাপরটা পরিস্কার হয়েছে আপনার কাছে।

    • Load more relies...