শিরোনাম দেখে আপনারা কি ভাবছেন, তা জানি না। তবে আমি এই নিশ্চয়তা দিতে পারি যে, আমি এখন যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি- তাতে আমি যেমন আনন্দ লাভ করি, আপনারা ও সমানভাবে পাবেন। কারন আমি প্রথম থেকেই আপনাদের সাথে আমাদের 'রক্ত-সৈনিক'-এর সকল কর্ম-কান্ড শেয়ার করতে চেষ্টা করেছি এবং আপনাদের উৎসাহ-মূলক মন্তব্যে যথেষ্ট অনুপ্রানিত হয়েছি।
কথায় আছে- সুখ শেয়ার করলে তা বাড়ে আর দুঃখ শেয়ার করলে তা কমে। এবং আমি তাই করার চেষ্টা করি সবসময়।
আপনারা জানেন- এতদিন আমরা শুধু আমাদের এলাকা ভৈরবেই এই সংগঠনের কার্য-ক্রম চালিয়েছি। এবং আমি মনে করি, ভৈরবে আমরা মোটামুটিভাবে সফল। সফল বলছি এজন্য যে, আমরা যারা ২০০০ সাল থেকে এই সংগঠনটি শুরু করেছি- আমাদের কোন অফিস ছিল না, এমনকি এখনো তেমনভাবে নেই। একেক সময় একেক জায়গায় বসে কার্যক্রম চালিয়েছি।
বিভিন্ন গ্রামে-গঞ্জে-বাজারে-অলিতে-গলিতে ক্যাম্পিং করে বিনামূল্যে মানুষের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করে দিয়েছি। এমনকি প্রথম অবস্থায় এমনও হয়েছে যে, মানুষের বাসায় বাসায় গিয়ে তা করেছি।
আচ্ছা, পরীক্ষা তো করে দিলাম ব্লাড গ্রুপ। এখানেই কিন্তু কাজ শেষ নয়। আসল কাজ কিন্তু এখনো বাকি।
মটিভেশন- হ্যাঁ, মানুষকে বুঝানো, যে রক্ত দেওয়া কোন ব্যাপার না, প্রতি ১২০ দিন পর পর আমাদের লোহিত রক্ত কনিকা গুলো মারা যায়। তাই একজন মানুষ অনায়াসে প্রতি ১২০ দিন পর পর রক্ত দান করতে পারে। এতে তার যেমন কোন ক্ষতি হয় না, তেমনি একটি প্রাণও বেচেঁ গেল। আর আমাদের অস্থি-মজ্জা ও নতুনভাবে উজ্জীবিত হয় রক্ত উৎপন্ন করার জন্য।
তো মানুষ পাগল বলা শুরু করল। খেয়ে-দেয়ে আর কোন কাজ নাই তো তাই, ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াই।
হাসপাতালের কিছু ডাক্তার পর্যন্ত বলল যে, আচ্ছা- এরা কি পাগল ? ডাকলেই চলে আসে অথচ রিক্সা-ভাড়াটা পর্যন্ত নিল না।
যাই হোক, বন্ধু-বান্ধব এবং আশে-পাশের লোকজন একটু দূরত্ব সৃষ্টি করতে লাগল, কখন আবার তাদেরকে রক্ত দেয়ার জন্য চেপে ধরি।
তারা বুঝতে পারে না, আমাদেরকে পাগল বললে আমরা আরো তীব্রভাবে উৎসাহিত হই।
বিভিন্ন সময় আমাদের সাথে অনেকেই জড়িত হয়েছে, আবার একটা সময় তারা ঝিমিয়ে পড়েছে।
তবে এখন এমন কিছু সংগঠক পেয়েছি যে, আশা করছি ভৈরবে আর রক্তের কোন সমস্যা হবে না, মানুষকে অনেক সচেতন করতে পেরেছি।
কিন্তু এখন আমার খিদা যে বেড়ে গেছে !
আমি এখন রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে কাজ শুরু করতে চাচ্ছি।
ইতিমধ্যে আমি সন্ধানী, রেডক্রিসেন্ট, বাধনঁ, কোয়ান্টামের সাথে একটা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছি। তাদের সবার সাথে আমি ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করেছিলাম ২০০২ সালে যখন আমি রক্ত-সৈনিক গড়ে তুলি।
আমি তাদের সবার কাছে একটা আবেদন নিয়ে গিয়েছিলাম- যে আমাদের ভৈরবে তাদের কোন শাখা দেওয়া যায় কি না ?
সবাই আমাকে ব্যর্থ করেছিল। তাদের উত্তরঃ
সন্ধানীঃ আমরা শুধুমাত্র মেডিক্যাল এবং ডেন্টাল কলেজবেসড কাজ করি এবং ছাত্র-ছাত্রীরাই তা পরিচালনা করে। যেহেতু আপনাদের এখানে কোন মেডিক্যাল বা ডেন্টাল কলেজ নেই, তাই তা সম্ভব না।
রেডক্রিসেন্টঃ আমি নরসিংদী কলেজে অনার্স পড়াকালীন নরসিংদী জেলা রেডক্রিসেন্টের যুব সদস্য হিসেবে যোগ দেই। তাদের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরের আওরংগজেব রোডে রেডক্রিসেন্টের হেড-কোয়ার্টারে যোগাযোগ করি। ওখান থেকে আমাকে বলা হয় যে, অনেক জেলাতেই আমাদের এখনও ইউনিট নেই, আর ভৈরব তো একটি থানা।
বাধঁনঃ আমরা শুধুমাত্র বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারী কলেজের হোস্টেলগুলোতে ঐ প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী দ্বারা সংগঠন পরিচালনা করি। আর যেহেতু ভৈরবে কোন সরকারী কলেজও নেই, আর তার কোন হোস্টেলও নেই, তাই তা সম্ভব নয়।
কোয়ান্টামঃ আমরা শুধুমাত্র ঢাকাবেসড কাজ করি। ঢাকার বাইরে আমাদের পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব নয়।
আমার আরেকটা দোষ হল, এই যে- ব্যর্থতা আমাকে আরো উজ্জীবিত করে তোলে।
আমার চিন্তা হল প্রধানঃত গরীব রোগীদেরকে নিয়ে। কারন যে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে পারে, সে মোটামুটি রাস্তাঘাট চিনে। যে ঢাকায় থাকে বা ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা করবে, তারো অনেক চেনা-জানা থাকে।
বড়লোক বা ধনী ব্যক্তিদের রক্ত দেয়ার লোকের কোন অভাব হয় না। অভাব শুধু প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের নিরক্ষর সহজ-সরল রোগীদের জন্য। তাদেরকে ঠিকমত পরিচর্যাও করা হয় না হাসপাতালে।
আমি যতটুকু দেখেছি- সরকারী হাসপাতালগুলো হচ্ছে ঔষধ কোম্পানীগুলোর প্রধান শস্য-ভান্ডার।
প্রস্তাবনাঃ আমি এখন থেকে আমার জবের পাশাপাশি ঢাকাতে রাস্তায় রাস্তায় বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা কার্য-ক্রম চালিয়ে যাব। কারন ঢাকাতে পংগু হাসপাতাল এবং হার্ট ফাউন্ডেশনে এখনো রক্তের অভাবে অনেক গরীব ও ইমার্জেন্সী রোগী মারা যাচ্ছে। আরেকটা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে এই সুযোগে- কিছু অসৎ রক্ত-ব্যবসায়ীর সৃষ্টি হচ্ছে, যারা মাদকাসক্ত এবং দূষিত রক্তের ব্যবসায় নিয়োজিত এবং টাকার বিনিময়ে জীবানু ছড়িয়ে দিচ্ছে।
আর আমার মেইন টার্গেট হচ্ছে, পল্লী এলাকায় রক্ত-দান সংক্রান্ত সচেতনতার সাথে সাথে যতটুকু আমাদের পক্ষে সম্ভব স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া।
সুতরাং, আপনারা যে যেখানে আছেন দেশে-বিদেশে, সবাই আমাদের পাশে থাকবেন এবং আমাদের সাথে এই আনন্দময় পাগলামীতে মেতে উঠবেন, এই অনুরোধ আপনাদের সবার কাছে।
আসুন- আমরা ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থ এবং হানাহানি পরিত্যাগ করে মানুষের দিকে সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দিই, গরীবের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করি।
(বিঃ দ্রঃ- একেকটা অপারেশন পসিবল সফল হবার পরে বাসায় এসে আমার আনন্দে নাচতে ইচ্ছে করে। দয়া করে কেউ হাসবেন না। অনেক সময় নাচি-ও। তাই কে কে আমার সাথে থাকবেন হাত তুলুন---- )
Comments (29)
পাশা দা
২০১৪ নববর্ষের অনেক শুভেচ্ছা
আপনি যে গুলো বলেছেন সে গুলো আমি জানি। তাওমনে করিয়ে দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আপনি সম্ভবত শিরোনাম খেয়াল করেননি। প্রথমেই বলেছি গল্পটি বিদেশী। আমি অনুবাদ করেছি মাত্র। তবে হুবহু নয় কিছুটা বা কাছাকাছি। সেখানে এইরকম ছোট ছোট বাক্য দিয়েই লেখা। কোন কোন ক্ষেত্রে আরো ছোট বাক্য আছে যে গুলোকে একবাক্য করার চেষ্টা করেছি।
অনুবাদের ক্ষেত্রে এটাই আমার প্রথম অনুবাদ। একটু ট্রাই করলাম আরকি। শূভ কামনা ভাল থাকবেন।
পাশা ভাই,
শুভেচ্ছা নিবেন। গল্পটিতে আমার প্রধান সমস্যা মনে হয়েছে ছোট বাক্য এবং বাক্য গঠন।
১। ছোট ছোট বাক্য করে সাজালে পড়তে পাঠক বাধা পায় ফলে বিরক্ত হয়। আপনার এই গল্পটিতে এটির পরিমাণ বেশি।
২। বাক্য গঠন- যদি "আমি খাই ভাত" না লিখে যদি লিখি "আমি ভাত খাই " তবে পড়তে ও শুনতে বেশি ভাল লাগে।
আমি জানি আপনি এ ব্যাপারগুলো খুব ভালভাবেই জানেন। তবুও ধরিয়ে দিলাম পথ চলার সাথী হিসেবে। ভাল থাকুন। শুভেচ্ছা।
গল্পটি ভালো লাগলো। ভালোবাসার ইচ্ছা একে অন্যের কাছে অপ্রকাশিত রেখে জীবনের গতি পথ পাল্টে গেছে, এমন ঘটনা আমারও জানা আছে। তবে এই গল্পে দুর্ঘটনাজনিত কারণে ভালোবাসার এমন নির্মম পরিণতি মনকে বিদীর্ণ করে।
ধন্যবাদ, এস এম পাশা। নববর্ষের শুভেচ্ছা।
আপনাকেও অনেক অনেক শুভেচ্ছা আবু হেনা ভাই