ফুলবাগানে নিত্য গমনাগমন মাধবীর। এ যে ফুলেরই বয়স। কানন বালাদের কাননে কাননে যখন পুস্পেরা স্বরুপে হাজির রুপ যৌবন আর সুবাস নিয়ে তখন সেথায় মাধুকর আসে, আসে হুল বিনাশীদের দল। সেথায় মাধবীর যাত্রা সকাল থেকে সন্ধ্যা অব্দি। যতটা সখ্যতা তার ফুলের সহিত ততটাই আকাংখা প্রজাপতি পাখায় হাত দিয়ে রংয়ে রঞ্জিত হওয়ার। এমনি দিন যদি কেটে যায় যাকনা। তাতে কার কি ক্ষতি?
পুস্পেরা সুবাস ছড়ায় নানা রঙ্গের মাতম তুলে হুল ফুটানো মৌমাছির সন্ধানে। সেথায় মাধবীর স্থান কোথায়? মাধবী যে মানবী। সেথায় কোমলতা হাসে, দৃশ্যমান অদৃশ্যেরা খেলা করে দৃশ্যমান পতঙ্গের সাথে, সেথায় মাধবী কেমন করে যাবে? মাধবীর পাখা নেই, রং নেই রুপ রস গন্ধ নেই। সত্যটা নিহীতই ছিল কিন্তু তার উপলব্দ হয়েছে যখন ততক্ষনে ঢের দেরী হয়ে গেছে। তার স্থান এখন মন খারাপদের দলে। কাননের যত ফুলবৃক্ষ আছে তারা মৃত্তিকা থেকে আশ্রয় গ্রহন করে, গ্রহন করে মাধবীর হস্তের জল। নিজেরা হৃষ্ট পুষ্ট হয়ে ফুলদ ফলদ হয়ে উঠে কিন্তু তাকে হত্যা করার কোন অধিকার মাধবীর নেই।
এক গোছা সন্ধ্যামালতী ফুল তুলে মাধবীর পড়ার টেবিলে ফুলদানিতে রেখে দিলে মাধবীর মনটা আনন্দে নেচে উঠে। ফুলের সুগন্ধে বিমোহিত রাত কাটে তার। রাত্রিবাস শেষে ঝরে পরে একগোছা সন্ধ্যামালতী । মাধবীকে এক রত্তি সুখ সাগরে ভাসিয়ে নেয়ার জন্য এক গোছা রজনীগন্ধার মৃত্যু ঘটে। আমরা এর কতটুকু খবর নিয়েছি। মাধবীও নেয়ার সময় পায়নি। তবুও মাধবী অবাক হয়ে ভাবে কাননে ফুলের গায়ে প্রজাপতি কতইনা মাখামাখি অথচ সে একবার ঘরে এসে দেখেনা এখানে প্রতিদিন ফুলদানিতে সাজানো হয় এক গোছা রজনীগন্ধা নয়তো গোলাপ কিংবা কখনো গাদাফুলের এক গোছা।
সময় আটকে থাকেনা। থাকেনি মাধবীরও। একদিন মাধবী নিজেই ফুল হয়ে ফুটতে শুরু করে। প্রথমে এতে ভড়কে গেলেও পুস্প কাননে তার উত্তর মিলে। খুব মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করে মাধবী তার মাধবী লতা হয়ে উঠার। সে এক বিস্ময়কর পরিবর্তন। যখন শুধুই বৃক্ষ কে তার খবর রাখে? গোলাপ গাছে কাটা আছে কি নেই তা নিয়ে কারো প্রশ্ন নেই। একসময় পরিবর্তন ঘটে নতুন শাখের শীর্ষে। এরপর ক্রমশ একটা ঝুটি। সেই ঝুটির বুক চিড়ে বেরিয়ে আসে একটা কলি। তখনও কেউ কাছে আসেনা। কিন্তু অপেক্ষা করে এই কলি কবে পুর্ন হয়ে উঠবে। সময় শেষ করে অপেক্ষার পালাকে পিছনে ফেলে। গোলাপে হাত দিয়ে অনুভব করে এখানেও কাটা আছে। ফুটে গেলে মনের অলক্ষ্যে আহ করে যখন শব্দটা বেরিয়ে কান পর্যন্ত পৌছায় তখন কলি আর কলিতে নেই সামনে কি সুন্দর ভুবন বিমুগ্ধকারী মনোহরন কারী এক টকটকে রক্ত গোলাপ। এই সৃষ্টি পরিবর্তনের। এই সৃষ্টির বিস্ময়ের।
মাধবীও একদিন ফুল হয়ে উঠে ঠিক সন্ধ্যামালতী কিংবা লাল গোলাপের মত। কেউ কেউ দেখে বিমোহিত হয়। অস্থিত্ব জানান দেয়, হুল কিংবা কাটা ফুটানোর ভয়কে উপেক্ষা একটু কাছে এসে সুগন্ধীর গভীরতা মেপে যায়। কেউ ফিরে যায় আর কেউ সাথে করে নিয়ে যায়। সাজিয়ে রাখে টেবিলের উপরে রাখে ফুলদানিতে। এরপর ফিরে যাবার পালা। এভাবেই মাধবী আর মাধবী থাকেনা। লতা হয়, ফুল হয়, ফুলের গোছা কিংবা মালা হয়ে মনকে রাঙ্গায়।
শুনেছি পৃথিবীতে মাধবীই প্রথম যে কিনা প্রথমে লতা হয় এরপর দেহের বাকে বাকে কুঁড়ি গজিয়ে ফুল হয়ে ফুটে।
Comments (10)
ইশ্বর সকলের ভাষাই বুঝেন। কিন্তু উনি উনার শেখানো ভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বললে গ্রহন করেন না।
ধন্যবাদ পাশা ভাই
কত দূর থেকে আমায় দেখে ঈশ্বর বাঁকা হাসি হাসে
সেটি দেখার বৃথা চেষ্টায় আমি চাতক পাখি হয়ে বসে থাকি।
সুন্দর।
শুভেচ্ছা নিন। কবিতাটি ভালো লেগেছে খুব।
ধন্যবাদ।
আপনারদের এমন ভাল লাগাই আমার ছোট্ট এ লেখক জীবনে অনেক বড় পাওয়া। ভাল থাকেবন
চারদিকে নবান্ন সুখ ছড়িয়ে পড়ুক!
পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ কবি